
Home যশোর জেলা / Jessore District > ক্যান্টনমেন্ট কলেজ যশোর (১৯৬৯)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100029 বার পড়া হয়েছে
ক্যান্টনমেন্ট কলেজ যশোর (১৯৬৯)
অবস্থান:
যশোর শহরের কেন্দ্র থেকে ২ কি: মি: উত্তর-পশ্চিমে ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। কলেজের পূর্ব দিকে রেল পথ, উত্তর দিকে বিমান বন্দর সড়ক, পশ্চিমে মিলিটারী পুলিশের চেক পোস্ট ও বেসামরিক আবাসিক এলাকা এবং দক্ষিণ দিকে উন্মুক্ত প্রান্তর রয়েছে।
কলেজের জমি ও গৃহাদির বর্ণনা:
সেনানিবাসের অভ্যন্তরে ২০ একর জমির উপর কলেজটি স্থাপিত। সমগ্র ক্যাম্পাসটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। কলেজের তিনটি ব্লকে ২৪টি শ্রেণী কক্ষ, ৯টি বিজ্ঞানগার, ৩টি সেমিনার কক্ষ, ৫টি অফিস কক্ষ, ১টি কমনরুম, ১টি ক্যান্টিন ও ১টি প্রার্থনা কক্ষ কয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
১৯৬৯ সনের জুন মাসে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে দাউদ পাবলিক স্কুলের দুইটি অপরিসর কক্ষে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন দাউদ পাবলিক স্কুলের শিক্ষক মরহুম মোজাম্মেল হকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও উর্দ্ধতন সামরিক কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরনায় মাত্র ৫জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজটি অগ্রযাত্রা আরম্ভ করে। তখন প্রতিষ্ঠানটি দাউদ পাবলিক স্কুল ও কলেজ নামে পরিচিত ছিল। প্রথম দিকে জনাব আব্দুর রব, আফসানা বেগম মুস্তারী, জনাব শফিকুল ইসলাম প্রমুখ শিক্ষকবৃন্দ প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে দাউদ পাবলিক স্কুল থেকে কলেজ শাখা বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ নামে আত্নপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠালগ্নে শুধুমাত্র মানবিক শাখা থাকলেও ১৯৭৭ সালে বিজ্ঞান শাখা এবং ১৯৮৫ সালে বাণিজ্য শাখা খোলা হয়। ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে ডিগ্রী পাস কোর্স খোলা হয়। অত:পর ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে তিনটি বিষয়ে যথা : বাংলা, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান সম্মান কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে এই তিনটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান করা হচ্ছে। কলেজটিকে বর্তমান পর্যায়ে উন্নীত করতে মরহুম অধ্যক্ষ জনাব জহির হাসান মারুফ ও অধ্যক্ষ জনাব মো: কামরুজ্জামান এর বিশেষ অবদান রয়েছে। এটা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কলেজে পরিনত হয়েছে।
কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা:
অত্র কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিদিন প্রাত:কালীন সমাবেশের মাধ্যমে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২বছরে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে থাকে। পরীক্ষাগুলি হচ্ছে প্রথম সাময়িক, বর্ষ উন্নয়ন, প্রাক-নির্বাচনী, নির্বাচনী ও প্রাক-চুড়ান্ত পরীক্ষা। প্রতিমাসে প্রতিটি বিষয়ে টিউটরিয়াল পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় এবং প্রাপ্ত নম্বর মূল পরীক্ষার সঙ্গে যোগ করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। কলেজের অভ্যান্তরীন পরীক্ষায় পাস মার্ক হচ্ছে ৪০%।
একটি শ্রেণীতে একজন শ্রেণী শিক্ষক রয়েছে। তাছাড়া প্রতি ২৫ জন ছাত্রের জন্য একজন গাইড শিক্ষক রয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও একাডেমিক তথ্যাদি সংরক্ষণ করেন এবং ছাত্রদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। প্রয়োজনে অবিভাবকদের সঙ্গে মত বিনিময় করে শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নে সহায়তা করে থাকেন। কলেজে সহপাঠ্য কার্যক্রমের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। কলেজে একটি বিতর্ক ক্লাস রয়েছে। নিয়মিত সোসাইটি ক্লাসের মাধ্যমে বক্তৃতা, বিতর্ক, গান, আবৃত্তি প্রভৃতি অনুশীলন করা হয়। কলেজে বি এন সি সি, রোভার, গার্লস গাইড, রেড ক্রিসেন্টের সক্রিয় শাখা রয়েছে।
কলেজ পরিচালনা কমিটি:
কলেজে বিশেষ ধরনের পরিচালনা কমিটি রয়েছে। সভাপতিসহ মোট ১২ জন সদস্য এর সমন্বয়ে কমিটি গঠিত। (৩ বৎসর মেয়াদি)।
সভাপতি | : |
(ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) কমান্ডার, ৫৫ আর্টিলারী ব্রিগেড |
যশোর সেনানিবাস | |||
সদস্য | : | স্টেশন কমান্ডার | " | |||
" | : | অধিনায়ক, সি এম এইচ | " | |||
" | : | জি এস ও - ২ শিক্ষা | " | |||
" | : | ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার | " | |||
" | : | ৩ জন অভিভাবক প্রতিনিধি | " | |||
" | : | ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি | " | |||
সদস্য সচিব | : | অধ্যক্ষ | " | |||
কলেজের প্রতিষ্ঠাকাল হতে অধ্যক্ষ বৃন্দের তালিকা | |||||
১) জনাব জহির হাসান মারুফ | ২০/১২/৭৩ | হইতে | ২৪/০৭/৮৭ | ||
২) মো: সাইদুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) | ২০/০৪/৮৭ | " | ১৯/০৬/৯১ | ||
৩) মো: মোজাম্মেল হক | ০১/১১/৮৭ | " | ১৯/১১/৯১ | ||
৪) আফসানা বেগম মুস্তারী (ভারপ্রাপ্ত) | ২০/৬/৯১ | " | ৩১/১১/৯১ | ||
৫) মো: কামরুজ্জামান | ০১/১১/৯১ | " | ০৬/০১/২০০১ | ||
৬) ফারুক আহ্মেদ | ২৪/০১/২০০১ | " | ১৭/১১/২০০২ | ||
৭) মো: কামরুজ্জামান | ১৭/১১/২০০২ | " | ৩০/১০/০৪ | ||
৮) মো: হুমায়ুন কবীর | ৩১/১০/২০০৪ | " | বর্তমান সময় পর্যন্ত |
অন্যান্য তথ্য | |||||
শিক্ষাদানের স্তর: | |||||
উচ্চ মাধ্যমিক | : | বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শাখা। | |||
স্নাতক (পাস) | : | বি এ, বি এস এস, বি কম, বি এস সি। | |||
স্নাতক (সম্মান) | : | বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান। | |||
শিক্ষক কর্মকর্তার সংখ্যা: | |||
সর্বোমোট ৬৫ জন। (২ ধরনের শিক্ষক রয়েছে। যথা: ডি এম এল এন্ড সি নিয়োগ প্রাপ্ত- ৪২ জন। |
|||
পরিচালনা পরিষদ নিযুক্ত - ২৩ জন। | |||
৩য় শ্রেণী কর্মচারী - ৫ জন। | |||
৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী - ৩১ জন। | |||
শিক্ষার্থী সংখ্যা | : | সর্বোমোট ১৭০০ জন। | |
দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সময়সূচী |
: |
সকাল ৮.০০ থেকে ২.৩০ পর্যন্ত দৈনিক ৯ পিরিয়ড ক্লাস হয়। |
|
হাউজ সমুহ | : | নজরুল হাউজ, জসিম হাউজ, মধুসূদন হাউজ। | |
শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম |
: |
আভ্যন্তরীন শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষর্থীদের জন্য সাপ্তাহিক সোসাইটি ক্লাস, শিক্ষাসফর প্রভৃতি। |
|
বি ক্লাব সমূহ | : | ডিবেটিং ক্লাব। নিয়মিত টেলিভিশন বিতর্কে অংশগ্রহণ। | |
খেলাধূলা | : |
ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, দাবা, আন্ত: ক্রীড়া ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। |
|
পরিবহন ব্যবস্থা | : |
ছাত্র/ছাত্রী পরিবহনের জন্য ১টি বড় বাস ও অফিসিয়াল কাজের জন্য মাইক্রোবাস ১ টি। |
|
অবিভাবক দিবস | : | বৎসরে দুইবার অভিভাবক দিবস পালন করা হয়। | |
ছাত্রাবাস | : |
কলেজের মোট ৩টি ছাত্রাবাস রয়েছে। ২টি ছাত্রদের জন্য, ১টি ছাত্রীদের জন্য। বাসাভাড়া করে ছাত্রাবাস পরিচালনা করা হয়। মোট ১০০জন শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। |
|
শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থা |
: |
অধ্যক্ষসহ মোট ১৩ জন শিক্ষকের পরিবারসহ থাকার জন্য কলেজের ১৩টি আবাসিক ফ্লাট রয়েছে। |
|
কলেজ পরিচালনা | : |
কলেজটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাময়িক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত। স্থানীয়ভাবে যশোর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এটা নিয়ন্ত্রণ করে। আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতই। |
|
বিশেষ অর্জন | : |
২০০২ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক জাতীয় পর্যায়ে “শ্রেষ্ঠ কলেজ” এর পুরস্কার পেয়েছে। ২০০২ সালে সেনানিবাস পাবলিক স্কুল ও কলেজে সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে বৎসরের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ফলাফলের ভিত্তিতে যশোর বোর্ডের সেরা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছে। |
|
ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এতদাঞ্চলের একটি আদর্শ বিদ্যাপিঠ। এখানে শিক্ষার্থীর পুথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি মানসিক উন্নয়ন ও নৈতিকতা উন্নয়নের প্রতিও সুন্দর পরিবেশের জন্য ক্যান্টনমেন্ট কলেজ নি:সন্দেহে একটি আশার আলোক বর্তিকা। এই বর্তিকা আরও উজ্জ্বলতর করার দৃঢ় প্রত্যয়ে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তথ্য সংগ্রহে:
হুমায়ুন কবীর, প্রাক্তন অধ্যক্ষ,
ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর।
সহযোগিতায়:
প্রফেসর মো: নূরুজ্জামান,
প্রাক্তন অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
সরকারী এম এম কলেজ, যশোর।