
Home জামাই-পুত্রবধু / Son-in-law & Daughter-in-law > প্রণব মুখার্জী / Pranab Mukherjee (1935)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100015 বার পড়া হয়েছে
প্রণব মুখার্জী / Pranab Mukherjee (1935)
প্রণব মুখার্জী
Pranab Mukherjee
Home District: West Bengal

কানাই লাল জানান ‘‘দুই বার জামাই বাবু এ বাড়িতে আসতে গিয়েও আসতে পারেননি। এখানে হ্যালিপ্যাড তৈরি করা হলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তবে দিদি (শুভ্রা মুখার্জী) এসেছিলেন ১৯৯৫ সালে। শুভ্রা মুখার্জী এখন আর বাংলাদেশের নাগরিক নন। তারপরও তিনি মনে রেখেছেন তাঁর গ্রাম নড়াইলের ভদ্রাবিলা গ্রামকে। কত দিন পর নিজ ভিটেই এসে দিদির সে কি উচ্

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখনও নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন দিদি। খোঁজ নেন দাদা বাবুও (প্রণব মুখার্জী)। আমাদের দেশের আম আর ইলিশ মাছ দাদা বাবুর খুব প্রিয়। প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে বাঙালি। আমরা তার জন্য গর্ববোধ করি।’’
শুভ্রা মুখার্জীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। পিতা অমরেন্দ্র ঘোষ ছিলেন একজন জমিদার। মায়ের নাম মীরা রানী ঘোষ। নড়াইল শহর থেকে সোজা দক্ষিণে ৮ কিলোমিটার দূরে নিভৃত ভদ্রবিলা। চিত্রা নদীর ধারে ছবির মতন সাজানো গোছানো গ্রামে পা রেখে শুভ্রা মুখার্জী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন, কেঁদে ফেলেছিলেন। তাঁর পিতার কাছারি বাড়িতে এখন তহসিল অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও একটি পোস্ট অফিস। বাড়ি সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী শ্রীকৃষ্ণের মন্দির।
বাড়ি এলে শুভা মুখার্জীকে এলাকার অগণিত নারী-পুরুষ স্বাগত জানান। পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে তাঁকে বরণ করা হয়। শৈশবের স্মুতিঘেরা নদীর তীর, প্রাচীন বৃক্ষ এগুলো গভীর আপন মমতা দিয়ে স্পর্শ করেন তিনি।
শুভ্রা মুখার্জী শৈশবে কিছুদিন ছিলেন মামাবাড়ি নড়াইল সদরের তুলারামপুর গ্রামে। তাঁর মা

বিদ্যালয়ে এসে সে সময় তিনি ১০ হাজার টাকার অনুদান দেন। ১৯৫৫ সালে শুভ্রা মুখার্জী ভারতে চলে যান। ৪০ বছর পর ১৯৯৫ সালে তিনি নড়াইলে এসে স্কুলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন তাঁকে এক নজর দেখার জন্য। চাঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি সেটি দ্রুত মেরামত করা হোক। নড়াইলের কার্তিক ঘোষ শুভ্রা মুখার্জীর সম্পর্কে পিসতুতো বোন। কার্তিক ঘোষ জানান, এখনও আমাদের সঙ্গে শুভ্রা মুখার্জীর নিয়মিত যোগাযোগ হয়।
শুভ্রা মুখার্জী তাঁর ছোট বেলার কথা ভুলতে পারেন না। প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে যখন বিয়ে হয় তখন শুভ্রা মুখার্জীর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। আর ২২ বছরের যুবক প্রণব মুখার্জী। প্রণব বাবুর বাড়ি ভারতের বীরভূমের মীরাটি বা কীর্ণহার। তাঁর পিতা ছিলেন প্রখ্যাত গান্ধীবাদী নেতা কামদা কিংকর মুখার্জী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন প্রণব বাবু একটি মর্নিং স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৬৯ সালের ৪ জুলাই প্রণব মুখার্জী বাংলা কংগ্রেসের পক্ষে রাজ্যসভার সদস্য হন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৭৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। একজন দক্ষ প্রশাসক এবং অর্থনীতিবিদ হিসেবে প্রণব মুখার্জী ইন্দিরা গান্ধীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হন। ১৯৮৪ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর তিনি ইন্দিরা মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতার শীর্ষে ওঠেন। নরসীমা রাও এর আমলে একজন মন্ত্রীর মর্যাদায় ভারতের যোজনা কমিশনের (পরিকল্পনা কমিশন) ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ১৯৯৩ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী এবং পরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও হন। বর্তমান কংগ্রেস সরকার তাঁকে অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিল।
প্রণব মুখার্জীর এ রাজনৈতিক উত্তরণের পেছনে শুভ্রা মুখার্জীর অবদানও কম নয়। বিভিন্ন সময় সুচিন্তিত মতামত দিয়ে তিনি স্বামীকে সাহায্য করেছেন। তবে শুভ্রা মুখার্জী স্বামীর প্রভাবপ্রতিপত্তিকে কখনও নিজের বা পারিবারিক স্বার্থে ব্যবহার করেননি। তিনি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গীতাঞ্জলীর প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে তিনি বহু দেশে ঘুরেছেন এবং এর মাধ্যমেই সাধ্যমতো তিনি তুলে ধরেছেন জম্মভূমির কথা। শুভ্রা মুখার্জী পরিচালিত ও হিন্দীতে রূপান্তরিত ‘চালিকা’ ভারতের হিন্দী বলয়ে জনপ্রিয়। গল্প, প্রবন্ধ ও নানা বিষয়ের ওপর অসংখ্য ফিচারও তিনি লিখেছেন। পুত্র অভিজিৎ মুখার্জী এবং কন্যা তাঁর কাজে বিভিন্ন সময় সাহায্য করেছেন। অভিজিৎ মুখার্জী বর্তমানে ভারতের এমএলএ।
রাজনৈতিক জীবন শুভ্রা মুখার্জীর ততটা পছন্দের নয়, কিন্তু স্বামী যেহেতু ব্যস্ত রাজনীতিক, ভারতের মতো বড় একটি দেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন, সেজন্য স্ত্রী হিসেবে তাঁকেও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। অবশ্য এখন থেকে নয়, প্রণব বাবু যেদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পান, সেদিন থেকেই দিল্লীর রাজনৈতিক জগতের রহস্যময় আঙ্গিনায় পা রাখতে হয় তাঁকেও। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে শুভ্রা মুখার্জীর গভীর সখ্য ছিল। বাংলাদেশের রান্না পছন্দ করতেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী। শুভ্রা মুখার্জী নিজ হাতে বাংলাদেশের রান্না করে ইন্দিরা গান্ধীকে আপ্যায়িত করতেন প্রায়ই।
সংগ্রহ:
সাজেদ রহমান,
সম্পাদক
যশোর খবর.কম।
/
শিমুল সুলতানা,
নিউজরুম এডিটর
বাংলাদেশ সময়