
Home যশোর জেলা / Jessore District > যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99949 বার পড়া হয়েছে
যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮)
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১৮৩৮ সালে বৃটিশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী যশোর জিলা স্কুল। ৭.৮০ একর জমির উপর অবস্থিত বিদ্যালয়টির উত্তরে ১২ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন, এ ভবন সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে বিজ্ঞানাগারসহ ২ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন, তার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১টি দ্বিতল ভবন, নীচতলা সমাবেশ কক্ষ এবং উপর তলায় পদার্থ বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরী। এর দক্ষিণে ৮ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবনটি বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। এর দক্ষিণে প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন। তার দক্ষিণে শিল্পকলা বিভাগের কর্মশালা এবং সর্ব দক্ষিণে ১৪ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল একাডেমী ভবন। তার দক্ষিণে বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ক্লিনিক। এছাড়া বিদ্যালয়ের ১টি প্রাচীন মসজিদ, ১টি নব নির্মিত অডিটরিয়াম, ১টি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের বাসভবন, ৩টি ছাত্রাবাস আছে এবং ২টি পুকুর রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রশস্ত খেলার মাঠটি মনোরম। বিদ্যালয়টিতে একটি প্রাচীন সমৃদ্ধশালী গ্রন্থাগার আছে। প্রাচীন এই বিদ্যালয়টির প্রথম প্রধান শিক্ষক মিঃ জে. স্মিথ।
১৮১৭ খৃষ্টাব্দে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা হলে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা হয়। ১৮২৮ সালে লর্ড বেন্টিংক ভারত বর্ষের শাষনভার গ্রহণ করার পর ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের জন্যে এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উচ্চ ইংরাজী স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ফলে ১৮৩৮ সালে বৃটিশ সরকার কর্তৃক জন্মলাভ করে যশোরের সর্ব প্রাচীন বিদ্যাপিঠ “যশোর জিলা স্কুল”।
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে তৎকালীন স্থানীয় জমিদার পত্নী ক্যাত্যারিণীর কাছারী বাড়ীতে ১৩২ জন ছাত্র নিয়ে বিদ্যালয়টির শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়। তখন বিদ্যালয়টির নাম ছিল “যশোর সরকারী মডেল স্কুল”। ১৮৭২ সালে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “যশোর জিলা স্কুল”। বিদ্যালয়টির বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটি প্রথম হতেই উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃত ও সরকারী পরিচালনাধীন। যশোর জিলা স্কুলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রশাসনিক ভবনটি অতি প্রাচীন হওয়ায় ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সুপ্রশস্থ গাড়ী বারান্দাই ছিল এই ভবনের মূলতঃ আকর্ষণ। দূর থেকে এ ভবনটাকে কোন এক ঐতিহাসিক ভবন বলে মনে হত। স্কুলের উত্তর এবং দক্ষিণে দুটি বৃহৎ দ্বিতল ভবন রয়েছে। এককালে ভবন দুটি ছাত্রাবাস হিসাবে ব্যবহৃত হত। উত্তরদিকে দ্বিতল বাড়ীটি ছিল হিন্দু ছাত্রাবাস এবং দক্ষিণ দিকের দ্বিতল বাড়ীটি ছিল মুসলমান ছাত্রাবাস। মুসলিম ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মিঃ বুরটন। দেড় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই “যশোর জিলা স্কুল” বাংলাদেশের একটি আদর্শ বিদ্যাপিট হিসাবে সর্বজন স্বীকৃত।
যশোর জিলা স্কুলে সুপ্রতিষ্ঠিত কৃতি ও খ্যাতনামা ছাত্র বৃন্দের তালিকা:
# বিচারপতি লতিফুর রহমান : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
# প্রফেসর ড. এম. শমশের আলী : পরমানু বিজ্ঞানী, গবেষক, মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, আনবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য এবং সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
#রাধাগোবিন্দ চন্দ্র : জ্যোতিস্ক বিজ্ঞানী।
# প্রফেসর শরীফ হোসেন : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক ও যশোর সরকারী এম, এম কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
# প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান : বিশিষ্ট সাহিত্যিক, গীতিকার, কবি, গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান।
# মেজর জেনালের আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা ও গণপ্রজাতান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী।
# ক্যাপ্টেন ডাঃ জীবন রতন ধর : ভাতর সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী
# আব্দুল হক : বিশিষ্ট বামপন্থী রাজনীতিবিদ
# শহীদ মশিয়ুর রহমান : বিশিষ্ট আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ। পাকিস্তান সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী।
# তরিকুল ইসলাম : বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী।
# অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী - বিশিষ্ট সাহিত্যিক, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্চ ও বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা।
# মোঃ রফিকউজ্জামান : স্বনামধন্য গীতিকার, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, সংলাপ ও কাহিনী রচয়িতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, বেতার টিভির নাট্যকার, প্রযোজক, অভিনেতা, উপস্থাপক ও রেডিও বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিচালক।
# খালেদুর রহমান টিটো : বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি প্রাক্তন মন্ত্রী।
# রাশেদ খান মেনন : বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি।
# কাজী রফিকুল আলম : অহছানিয়া মিশনের পরিচালক ও আহছানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা।
# তসলীমুর রহমান : বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মহা-পরিচালক ও সাবেক সচিব।
# মোঃ মানিরুজ্জামান : শিল্প দপ্তরের প্রাক্তন সচিব।
# শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন : বিশিষ্ট সাংবাদিক।
# মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী : প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ।
# দিদার ইসলাম : কুইক রেডিও’র আবিষ্কারক।
# সালাউদ্দীন লাভলু : বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা ও নাট্য পরিচালক।
# আজিজুল হাকিম : বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা।
তথ্য সূত্র :
শিক্ষালয়ের ইতিকথা
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
শামিউল আমিন (শান্ত)