
Home যোদ্ধা-বিদ্রোহী / Fighters-Rebel > আবদুল মজিদ মিয়া / Abdul Majid Mia (1898 - )
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99873 বার পড়া হয়েছে
আবদুল মজিদ মিয়া / Abdul Majid Mia (1898 - )
আবদুল মজিদ মিয়া
Abdul Majid Mia
Home District: Narail, Kalia
পারিবারিক পরিচিতিঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বাঙালি পল্টনের একজন সৈনিক ছিলেন আবদুল মাজেদ মোল্লা বা আবদুল মজিদ মিয়া। মজিদ মিয়ার পিতা ছিলেন মর্দান মাহমুদ বা মদন মোল্যা। মাতার নাম আয়তন্নেছা। আনুমানিক ১৮৯৮ সালে আবদুল মজিদ মিয়া যশোর জেলার (বর্তমান নড়াইল জেলার) নড়াইল মহকুমার নড়াগাতি থানার (বর্তমান কালিয়া উপজেলা) ঐতিহাসিক কলাবাড়িয়া গ্রামের দশানি-মোল্যাপাড়ার প্রচীন জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতামহ জামিদার জকি মাহমুদ বা জকি মোল্যাহ ছিলেন নীলবিদ্রোহী, প্রপিতামহ কোরেশ মাহমুদ ১১৭৬ বাংলা সালের ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে সাধারণ প্রজার পক্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ২ খানি অন্য মতে ৩ খানি বৃহৎ চালের নৌকা লুটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মুঘল পূর্ব সুলতানি শাসন আমলে আবদুল মজিদ মিয়ার পূর্ব পুরুষেরা ডিহি কেলাবাড়ি ও পরে তরফ কেলাবাড়িয়ার ইজারাদার বা পত্তনি জমিদার ছিলেন। কেলাবাড়ি পরবর্তীকালে কেলাবাড়িয়া ও বর্তমান কলাবাড়িয়া নামে পরিচিতি।
আঃ মজিদ মিয়ারা দুই ভাই ও দুই বোন ছিলেন। তিনি ছিলেন পিতার কনিষ্ঠ পুত্র, তাঁর সহোদর ছিলেন আঃ সামাদ মিয়া। মজিদ মিয়া গত শতাব্দীর একেবারে প্রথম দিকে সেকালের বাংলার রাজধানী মহানগরী কলকাতায় বেড়াতে যান তার এক বন্ধুর সঙ্গে। দুই বন্ধু কলকাতা ফোর্ট উইলিয়মে বেঙ্গলিপল্টনের রিক্রটমেষ্ট লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মজিদ মিয়ার বন্ধুকে বাদ দেয়া হলেও মজিদ মিয়া পল্টনে যোগদান করেন। তবে মজিদ মিয়ার পরিবার দাবি করেন, মজিদ মিয়ার বন্ধু সামান্য পয়সা দালানি পেয়ে থাকে বাঙালি পল্টনে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। মজিদ মিয়ার পরিবার আরো জানিয়েছে, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে জোর করে পল্টনে নেয়া হয়েছিল। সে যাহোক, যুদ্ধ শেষে পল্টনের অন্য সেনারা যার যার বাড়িতে ফিরে যায়। কিন্তু মজিদ মিয়া আর ফিরে আসেননি। তিনি কীভাবে কোথায় মারা গিয়েছেন তা জানা যায়নি। অনেক অনুসন্ধানের পরে মজিদ মিয়ার সহোদর আঃ সামাদ মিয়া ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পল্টন সৈনিক মৃত মজিদ মিয়ার বিছানা পত্র ও বস্ত্রাদি নিয়ে ঘরে ফেরেন। মজিদ মিয়ার মৃত্যসংবাদ নিশ্চিত হলে তার মাতা মোসাম্মত আয়তন্নেসা পুরোপুরি উম্মাদিনী হয়ে যান। এরপর মজিদ মিয়ার জেষ্ঠ সহোদর আঃ সামাদ মিয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে মজিদ মিয়ার মৃত্যুতে তার মায়ের পক্ষে পেনসন চেয়ে দরখস্ত করেছিলেন। এই চিঠির জবাবে নড়াইলের এসডিও এস ব্যানাজি (পরবর্তীকালের রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানাজি) ৮/৪/১৯১৯ তারিখে মুসমত আয়তন্নেসাকে ভারতবর্ষের সেনা সংক্রান্ত আইনের ৪৫ ধারার নির্দেশ অনুসারে ফ্যামিলি পেনশন পাওয়ার অযোগ্যা বলে জানিয়ে দেন। মজিদ মিয়ার পরিবার চিরকাল সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জ্ঞাতি ভাইয়ের পৌত্র আবুল কালাম আজাদ ১৯৭১ সালে কালিয়া থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। মজিদ ছিলেন অকৃতদার তাঁর একমাত্র ভাইয়ের পৌত্র সত্তরদশকের অন্যতম কবি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা মহসিন হোসাইন। আঃ সামাদ ও পল্টন সৈনিক মজিদ মিয়া সেযুগের বিচারে উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি ছিলেন।
লেখক:
সুকুন্তলা হোসাইন খানমোল্যা