
Home যশোর জেলা / Jessore District > কেশবপুর উপজেলা / Keshabpur Upazila
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100359 বার পড়া হয়েছে
কেশবপুর উপজেলা / Keshabpur Upazila
Keshabpur Upazila, Jessore
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
১৮০২ সালে কেশবপুর নামটি প্রথম শোনা যায়। যশোর তালা সড়ক ঐ সময় তৈরী হচ্ছিল। কেশবপুর খালের উপর জিতরাম সাহা (১৮৬০) একটি পুল তৈরী করেন। চার বছর পর কেশবপুর থানায় উন্নীত হয়। খালের উত্তর দিকে হাট বসতো পরে তা দক্ষিণ পাশেও বসে। প্রাচীন হাট অংশের মালিক ছিলেন সুখময় মুখার্জী এবং নবীন হাট অংশের (আলতাপোল) অতীত কেশব পাটনির জায়গায় সত্ববান ছিলেন সুখসিন্ধু ও সুধাসিন্ধু ব্যানার্জি।

ভৌগোলিক অবস্থান :
২৫৮.৫৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট কেশবপুর উপজেলা উত্তরে মনিরামপুর উপজেলা, দক্ষিণে তালা ও ডুমুরিয়া উপজেলা, পূর্বে ডুমুরিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে কলারোয়া উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। উপজেলার প্রধান নদীগুলো হচ্ছে হাটহার এবং চেংরাল। বিল আছে মোট ২০টি।
শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা :
৭টি মৌজা নিয়ে কেশবপুর শহর গঠিত। শহরের আয়তন ১৮৬৪ বর্গ কিলোমিটার।
শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫০.৮৮% ও মহিলা ৪৯.১২%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কি: মি: প্রায় ১২০০ জন। শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৩২.৯%।
প্রশাসন :
১৮৬৯ সালের ১৪ জুন এখানে থানা স্থাপিত হয়। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৮২ কেশবপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৪২ টি মৌজা এবং ১৪৩ টি গ্রাম নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান জনাব মো: গাজী এরশাদ আলী। প্রথম নির্বাহী অফিসার মো: সাজ্জাত হোসেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ :
শত তারকার চেয়ে এক চাঁদ যেমন উজ্জ্বল, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (সাগরদাড়ি) ঠিক তাই। একটি নাম গোটা যশোরকে বিশ্ব পরিচিতি দিয়েছে। অনেক কৃতি সন্তান জন্মেছেন এখানে। তাঁদের মধ্যে আছেন কথাশিল্পী মনেজ বসু (ডোংগাঘাটা), রাজনীতিবীদ জ্যোতিষ বসু (ডোংগাঘাটা), উপন্যাসিক রাম ভট্টাচার্য (পাজিয়া), কোলকাতা হাইকোর্টের প্রথম প্রধান বিচরপতি চারম্নচন্দ্র ঘোষ (বিদ্যানন্দকাঠি), কবি মানকুমারী বসু, অটল বিহারী দাশ, শিল্পী ধীরাজ ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে।
স্থাপত্য ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন :
ভরত রাজার রাজবাড়ী, নওয়াব মীর জুমলার বসতবাড়ী (১৭ শতাব্দী), সাগরদাড়িতে কবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের বাসস্থান, বিদ্যানন্দকাঠি গ্রামে প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ।
মুক্তিযুদ্ধের নির্দশন :
স্মৃতিসৌধ ১টি।
দর্শনীয় স্থানসমুহ :
সাগরদাড়ী (মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি), ভরতের দেউড় (গৌরীঘোষ), হাম্মান খানা (মীর্জা নগর, ত্রিমোহনী)।
জনসংখ্যা :
উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২১ লক্ষ। এর মধ্যে পুরুষ ৫১.১৬%, মহিলা ৪৮.৮৪%, মুসলমান ৮০.১৪%, হিন্দু ১৯.৫% এবং অন্যান্য ০.৩৬।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :
মসজিদ ৩২০টি, মন্দির ৮১টি এবং গীর্জা ২টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শেখ পাড়ায় নবাব বাড়ি মসজিদ।
সাক্ষরতা :
গড় সাক্ষরতা ৩১.৭%। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩.৫% এবং মহিলা ২৯.৮%।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
কলেজ ৫টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৩২টি, মাদ্রাসা ৯৭টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৫টি। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কেশবপুর ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৭), পাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
সাংস্কৃতিক সংগঠন :
প্রেসক্লাব ১টি, থিয়েটার গ্রুপ ৩টি, সিনেমা হল ১টি, গণগ্রন্থাগার ১টি, সাহিত্য সমিতি ১টি, মহিলা সংগঠন ৩টি, খেলার মাঠ ১০টি।
প্রধান পেশা :
কৃষি ৭৪.৮৪%, কৃষি শ্রমিক ২৬.৫২%, দিনমজুর (মজুরী শ্রমিক) ২.২৭%, ব্যবসা বাণিজ্য ৯.৪৩%, চাকুরী ৩.৪৫%, শিল্প ১.৫৪%, পরিবহন ২.৬২% এবং অন্যান্য ৬.৩৩%।
ব্যবহৃত মোট আবাদযোগ্য জমি :
মোট জমি ২০৪০৪.২৮ হেক্টর। এর মধ্যে পতিত জমি ২৯৭.৮৬ হেক্টর, একক ফসল ২৮%, দ্বি ফসল ৬১% এবং তিন ফসল ২১%। সেচের আওতায় চাষযোগ্য জমির ৬৩%।
ভূমি নিয়ন্ত্রণ :
চাষীদের মধ্যে ১২% ভূমিহীন, ৬৪% ক্ষুদ্র, ২২% মাঝারী এবং ২% ধনী। মাথাপিছু চাষযোগ্য জমি ০.১২ হেক্টর।
প্রধান ফসল :
ধান, গম, পাট, আলু, গম, আখ, তেল বীজ, মরিচ, হলুদ ও তরিতরকারী। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত শস্যের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ধান, অরহর, খেসারী।
প্রধান ফল :
আম, কাঁঠাল, জাম, সুপারী এবং নারিকেল।
যোগাযোগ সুবিধা :
পাকা সড়ক ৪১ কিলোমিটার, আধাপাকা ৫ কিলোমিটার, কাঁচা রাস্তা ৩৭৪ কিলোমিটার, জলপথ ৯ নটিকেল মাইল। ঐতিহ্যগত পরিবহনের মধ্যে রয়েছে পাল্কী ও গরম্নর গাড়ী। এ ধরনের পরিবহন বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত।
কলকারখানা :
কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত, স্বর্ণকার, কর্মকার, কুম্ভকার, কাঠের কাজ, দরজী এবং ওয়েল্ডিং।
হাট বাজার ও মেলা :
হাট বাজারের মোট সংখ্যা ২৩টি এবং মেলার সংখ্যা ৫টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাজিয়া, কাটাখালী, মঙ্গলকোট, চিংড়া বাজার, সরসকাঠি, ত্রিমহনী কপোতাক্ষ সসন মেলা, সাগরদাড়ি মধু মেলা।
প্রধান রপ্তানী :
ধান, পাট, কাঁঠাল, গম ও খেজুরের গুড়।
এনজিও তৎপররতা :
তৎপরতা চালাচ্ছে এমন এনজিওগুলো হচ্ছে ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, কারিতাস, সমাধান, সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও ঢাকা আহসানিয়া মিশন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র :
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯টি এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক ২টি।
অন্যান্য তথ্য :
ইউনিয়ন ভূমি অফিস ০৮টি, সেনিটেশনের আওতায় ৫০.৮১%।
তথ্য সূত্র :
বাংলা পিডিয়া ওয়েবসাইট
যশোর ইতিবৃত্ত (মনোরঞ্জন বিশ্বাস)
অনুবাদ :
কামাল নাসের, আরটিভি।
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
নভেম্বর ২০১১