
Home যোদ্ধা-বিদ্রোহী / Fighters-Rebel > বীরপ্রতীক হাজারী লাল / Birpratik Hazari Lal
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100100 বার পড়া হয়েছে
বীরপ্রতীক হাজারী লাল / Birpratik Hazari Lal
বীরপ্রতীক হাজারী লাল
Birapratik Hazari Lal
Home District: Jessore, Chowgacha
মহা

হাজারী লাল চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রাণীয়ালী গ্রামের রসিকলাল তরফদারের ছেলে। হাজারী লাল তরফদার ওরফে গোসাই, এলাকায় সকলে তাকে গোসাই নামেই চেনেন। দারিদ্রতার কারণে পড়ালেখা খুব বেশি হয়নি। সেই আমলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন- লেখাপড়া করেই নেমে যান জীবন সংগ্রামে।
কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গ্রামের অন্য দশজন সহজ-সরল মানুষের মত তার জীবন ছিল সাধারণ। তিনি কোন রাজনীতির প্যাচ বুঝতেন না বা করতেনও না। কিন্তু তার বুকে ছিল অসীম সাহস। ১৯৭১ সালে বর্বর পাক সেনা বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর বর্বরোচিত হামলা শুরু করলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে পালিয়ে যেতে শুরু করে। সে সময় হাজারীলালও সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি দেখে তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে নাম লিখিয়ে ভারতের বিহারে ২৮ দিনের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পর প্রথম অপারেশন চালান দোশতিনা স্কুল মাঠের পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। এর পর এক অপারেশনে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেন তিনি। রণাঙ্গণে অসীম সাহসিকতার জন্য সরকার হাজারী লালকে বীরপ্রতীক খেতাবে সম্মানিত করেছেন।
হাজারী লালের যুদ্ধজয়ের দিনগুলি:
মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের বয়রা সাব সেন্টারের কমান্ডার নাজমুল হুদার অধীনে হাজারী লাল যুদ্ধ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার সাক্ষাৎকারে যুদ্ধজয়ের দিনগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের সকল স্মৃতিই তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তবে গঙ্গাধরপুরের যুদ্ধ তাকে বেশি নাড়া দেয়। এই ঘটনার দিন-তারিখ তিনি ঠিকমত উল্লেখ করতে না পারলেও ঘটনার বর্ণনা দেন। তার কথায়, বয়রা সাব সেক্টর কমান্ডার নাজমুল হুদার নির্দেশে চৌগাছা অপারেশন শেষে বয়রা ফেরার পথে কাগমারীরর রকিব উদ্দিনের মাধ্যমে খবর পান, গঙ্গাধরপুর-রাজাপুর এলাকায় বর্বর পাকসেনারা ঢুকে পড়েছে। এ খবর শোনার পর দেরি না করে পাকসেনাদের প্রতিরোধ করতে ক্যাপ্টেন হুদার নির্দেশ মত তারা ৪ জন গোলাবারুদ নিয়ে নৌকা যোগে রওনা দেন। এ চারজন হলেন- রকেট জলিল, আব্দুর রাজ্জাক, মশিয়ার রহমান ও হাজারী লাল। হাজারীলাল গঙ্গাধরপুরের একটি ইটের ভাটার ভিতর অবস্থান নেন। অসংখ্য পাকসেনা সেদিন একযোগে এই এলাকায় প্রবেশ করে। মাত্র ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিরোধ কৌশল এমন ছিল যে, পাকসেনারা ভেবেছিল তারা একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছে।। সেদিনের যুদ্ধে ৫৬ জন পাকসেনা খতম হয় । এক পর্যায়ে তিনি লক্ষ্য করেন যে, শত্রু সেনারা তাকে ঘিরে ফেলেছে। এ অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় শত্রুসেনার হাতে তিনি ধরা পড়েন। ওদের দুজনের একজন পাকসেনা ও একজন বিহারী রাজাকার। রাজাকারটির হাতে ছিল রামদা। সে ওই রামদা দিয়ে তাকে হত্যা করতে যাচ্ছিল। কিন্তু পাকসেনাটি তাকে জীবিত অবস্থায় ঘাটিতে নিয়ে যেতে চায়। এ অবস্থায় হাজারী লাল কিছুটা দূরে অবস্থান করা রকেট জলিলকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘জলিল বন্দি হয়ে শত্রু শিবিরে যাওয়ার চেয়ে মৃত্যু ভালো। তুই আমাকে গুলি কর।’ সঙ্গে সঙ্গে জলিল গুলি করেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেই গুলি হাজারী লালের গায়ে না লেগে পাকসেনার গায়ে বিদ্ধ হয়ে সে লুটিয়ে পড়ে। তক্ষুনি হাজারী লাল তার অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে রাজাকারটিকে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় একটি চাইনিজ রাইফেল ও একটি রামদা।
হাজারী লালের অসীম সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় ঝিকরগাছার শিমুলিয়ার অপারেশনে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাকসেনারা ঢুকে পড়ায় তা মেনে নিতে পারেনি হাজারী লাল। তিনি গ্রুপ কমান্ডার ওলিয়ার রহমানের সাথে পরামর্শ করে পাক ক্যাম্পের ভিতরে গিয়ে নিজেই নিখুঁত রেকি করার দায়িত্ব নিলেন। তিনি প্রথমে শিমুলিয়া মিশনে ঢুকে এক খ্রিষ্টানের কাছ থেকে ক্রুশবিদ্ধ যিশুমূর্তি ছিনিয়ে নিয়ে গলায় পরেন। সে সময় ওই খ্রিষ্টান ব্যক্তি কিছু না বলায় হাজারী লাল খ্রিষ্টানের ছদ্মবেশে পাক ক্যাম্পের ভিতর ঢুকে পড়ে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন। পরে পরিকল্পনা মাফিক অপারেশন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাক ক্যাম্পটি দখল করেন। মুক্তিযুদ্ধে বয়রা সাব সেক্টরের বিভিন্ন ভয়াবহ যুদ্ধে হাজারী লাল থাকতেন সবার আগে। পাক সেনাদের কাছে হাজারী লাল হয়ে ওঠেন মূর্তিমান আতংক। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে হাজারী লাল বিজয়ের পতাকা নিয়ে বাড়ী ফেরেন। স্বাধীন দেশের মাটিতে নতুন স্বপ্ন নতুন আশা নিয়ে আবার ফিরে যান জীবন সংগ্রামে।
শেষ হয়নি হাজারী লালের জীবন যুদ্ধ:
আজো শেষ হয়নি হাজারী লালের জীবন যুদ্ধ । ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত একটি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সেদিন তিনি অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়েন। তার অস্ত্রের আঘাতে শত্রুরা নিহত হলেও পিছু ছাড়েনি তার দারিদ্র। যুদ্ধপরবর্তী বছরের পর বছর দু‘বেলা দু‘মুঠো অন্ন এবং বস্ত্র, চিকিৎসা সেবার জন্য ঘুরতে হয়েছে দেশ-দেশান্তরে। স্বা
সূত্র:
চৌগাছা.ইনফো
লেখক: ইন্দ্রজিৎ রায়,
সাংবাদিক,
দৈনিক সমাজের কথা,যশোর।
সম্পাদনা: রেজওয়ানুল হক তপু।
তথ্য সহায়ক:
পাক্ষিক যশোরের কাগজ।
সর্বশেষ আপডেট :
৫ জুলাই, ২০১২ ইংরেজী