
Home ঝিনাইদহ জেলা / Jhenidah District > বুনো সম্প্রদায়ের আগমন / Arrival of barbarian
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99682 বার পড়া হয়েছে
বুনো সম্প্রদায়ের আগমন / Arrival of barbarian
বুনো সম্প্রদায়ের আগমন
Arrival of barbarian
নীল চাষ করতে স্থানীয় লোকজন অনাগ্রহ প্রকাশ করলে চতুর নীলকররা ভারতের বিহার প্রদেশের ছোট নাগপুর হতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্ত অধিবাসীদের আমদানী করে শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন নীলকুঠিতে নিয়োগ দিত। এই সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্ত লোকেরা দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত। একশ্রেণী বুনো ও অপরশ্রেণী বাগী নামে পরিচিত। যেখানে যেখানে নীলকুঠি ছিল সেখানেই এই বুনো ও বাগদীদের বসতি লক্ষ্য করা যায়। নগরবাথান, চাকলা, ছালাভরা, বিজলিয়াসহ অন্য জায়গায় এই সম্প্রদায় তখন হতে এদেশে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে একশ্রেণী মাছ ধরে এবং অপরশ্রেণী গাছকাটা, মাটিকাটা ও শ্রমিকের কাজ করে। এরা সর্দার নামে পরিচিত। জীবিকার তাড়নায় তারা সারারাত খাল-বিলে শৌল, টাকি, পুটি মাছ ধরে ঝাকায় করে হাটে হাটে বিক্রি করতো। এদের মেয়েরাও পুরুষদের মত মাছ ধরে এবং বাজারে ও হাটে বিক্রি করতে আসে।
বুনোদের প্রিয় খাদ্য ছিলো বাদুড়। গভীর রাত পর্যন্ত জাল পেতে বসে থেকে বাদুড় ধরা এবং পরিবারের সবাই মিলিত হয়ে অতি আনন্দের সাথে আহার করা এদের পারিবারিক জীবনের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এছাড়া সজারু, কাছিমও এদের পছন্দের খাবার ছিলো। মেয়ে-পুরুষ দিনভর কাজ করে সন্ধ্যায় বাজার-সদাই করে বাড়ী ফিরতো। বাঙালী হিন্দুদের মত আচার-আচরণ করলেও সামাজিক ও কর্মপদ্ধতির দিক থেকে হিন্দুর সাথে এদের বেশ পার্থক্য আছে। এদের মেয়েদের বিবাহ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাড়তি আচার-অনুষ্ঠান আছে। বিবাহে যৌতুক দেয়া-নেয়াও বিদ্যমান।
শক্তি অর্থাৎ ‘মা কালী’ ও ‘মা মনসা'কে সন্তুষ্ট করতে পারলে অন্যান্য দেব-দেবতা তাদের উপর সদয় হবেন বলে এরা ধারণা পোষণ করে। বুনোদের অনেকেই ‘ঝাপাং’ খেলে। বিভিন্ন মন্ত্র পাঠ করে সাপ চালনা করা এবং সাপ নিয়ে বিভিন্ন কলাকৌশল প্রদর্শন করাই ঝাপাং খেলার মুখ্য উদ্দেশ্য। তাছাড়া ঝাপাং-এর মাধ্যমে মনসার বন্দনা করা হয়ে থাকে। খাট-খোট্টা চেহারার বুনোরা সহজে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না এবং হলেও সহজে ডাক্তারের কাছে যায় না। ঝাড়, ফুক, গাছের ছাল, বাকল ও শিকড় দ্বারা দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরী ঔষুধই এদের বেশী পছন্দ। মাটিকাটা, খড়ি ফাড়াই, কাঠ চেলাই ইত্যাদির মত কঠিন কাজ এদের নিজস্ব পেশা। এসব কঠিন ও পরিশ্রমী কাজ করতে এরা শারীরিকভাবে কোন অসুবিধা বোধ করে না। অত্যন্ত সৎ, বিনয়ী, মিষ্টভাষী ও প্রভু ভক্ত বুনোরা কাজে খুব কম ফাঁকি দেয়। যুগ যুগ ধরে এদেশে বুনোরা মাটির তৈরী যেনতেন প্রকারে ছন, খড় বা নারিকেল পাতা দ্বারা ছাউনী দেয়া ঘরে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে যারা কাঠ চেলাই করে তাদের করাতী বলা হয়। এরা পেশার তাগিদে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াই।
বুনোরা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করলেও এদের আচার-আচরণ, হাল-চাল, সামাজিক কর্মপদ্ধতি, উচ্চারণভঙ্গী ও জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে যে এরা স্থানীয় নয়, এরা আমদানীকৃত। অর্থনৈতিক কারণে এদের অনেকে নিজস্ব পেশা ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার, বাড়ীর চাকর, দেহরক্ষী ইত্যাদি কাজ নিয়েছে।
প্রতিদিন এদের এক অংশ ভোরে বেরিয়ে পড়ে নদী, খাল-বিলের দিকে এবং অপর অংশ কোদাল ও কুড়াল কাঁধে করে শহরের পানে ছুটে মাছ ও কাজের সন্ধানে। এভাবে জীবনযাপন করে আসছে তারা যুগ যুগ ধরে।
তথ্য সূত্র:
যশোর গেজেটিয়ার
সম্পাদনা:
হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
১৭.০৮.১১