
Home যোদ্ধা-বিদ্রোহী / Fighters-Rebel > হামিদা রহমান / Hamida Rahman (1927-2005)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100164 বার পড়া হয়েছে
হামিদা রহমান / Hamida Rahman (1927-2005)
হামিদা রহমান
Hamida Rahman
Home District: Jessore
Hamida Rahman
Home District: Jessore

সমাজ সচেতন সাহিত্যিক হামিদা রহমান ১৯২৭ সালের ২৯শে জুলাই, যশোর শহরের পুরাতন কসবায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ বজলুর রহমান এবং মাতার নাম বেগম লুৎফুন্নেছা। ১৯৪২ সালে নেয়াখালী নিবাসী সিদ্দিকুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
শিক্ষাজীবন:
১৯৪২ সালে হামিদা রহমান ‘তারা প্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয়’ থেকে ম্যট্রিকুলেশন পাশ এবং ১৯৪৭ সালে মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে আই. এ. পাশ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনিয়মিত পরীক্ষা দিয়ে বি. এ. এবং ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি. পাশ করেন।
ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ:
মাইকেল মধুসূদন কলেজে পড়াকালীন তিনি ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ভাষা আন্দোলনে এই অসাধারণ অবদানের জন্য যশোরে তিনি অগ্নিকন্যা এবং ভাষা সৈনিক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
পেশাগত জীবন:
১৯৬৮ সালে লালমাটিয়া গার্লস্ স্কুলে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরু। পরবর্তীতে তিনি জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। কলেজটি জাতীয়করণ হলে তিনি চাকরি থেকে ইস্তেফা দিয়ে পুরাতন পল্টন গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে কলেজ চাকরি ত্যাগ করে তিনি সাহিত্যসাধনা ও সাংবাদিকতা শুরু করেন।
সাহিত্যচর্চা:
স্কুল ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়েই হামিদা রহমানের সাহিত্য চর্চার সূচনা। কলেজ ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা ‘সর্বহারা’ ও ‘রিকসাওয়ালা’ শীর্ষক ছোট গল্প দুটি প্রকাশিত হলে সুধীসমাজে লেখিকা হিসাবে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
যশোর থেকে প্রকাশিত ‘আল মোমিন’ তদ পত্রিকার তিনি মহিলা বিভাগের সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করতেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘নববাণী’ মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সাথেও তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ষাট এবং সত্তরের দশকে ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকার মহিলা বিভাগে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতো। বিলকিস বেগম ছদ্মনামে লেখা তাঁর বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সাহিত্যিক হামিদা রহমান দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বেগম, দৈনিক আজাদ, সংবাদ, পূর্বাণী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সাথে লেখক হিসাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁর দুই ভাই শহীদ হন। ১৯৭১ সালে দৈনিক ‘আজাদ’ পত্রিকায় স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভিত্তিক তাঁর একটি লেখা প্রকাশিত হয়।
সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড:
১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে অবস্থান করেন। লন্ডনে অবস্থানকালে হামিদা রহমান সেখানে দুটি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি লন্ডনে উইমেন্স এডভাইসরী কাউন্সিলের মেম্বার ছিলেন। হাউস অব লর্ডস এবং হাউস অব কমন্স এ হামিদা রহমান বক্তৃতা দেওয়ার দুর্লভ সম্মান লাভ করেন।
সমাজসেবা এবং নারী মুক্তি আন্দোলনে হামিদা রহমানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা স্মরণযোগ্য। যশোরে পুরাতন কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাসহ তিনি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ নারী আন্দোলন সংসদের তিনি সভানেত্রী এবং কার্য্যকরী সদস্য। বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ এবং বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য তিনি। তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি।
প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ:
‘শাহীমহল”, স্বাতী, বিলেতের চিঠি’, ‘নীলচুড়ি, বাংলাদেশ নারী অধিকার ও মর্যাদা’, ‘মহাপ্রলয়ের স্বক্ষর, ‘বেনারসী’, ‘নীড় হারা পাখী’, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও তার বিকাশ’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, ‘অধিকার আন্দোলনে নারীসমাজ ও নারীর নৈর্ব্যক্তিক কান্না।’
পরলোক গমন:
২০০৫ সালের ১৪ আগস্ট বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে ৭৮ বছর বয়সে তিনি ঢাকাস্থ নিজ বাসভবনে দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য সূত্র :
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট :
ফেব্রুয়ারী ২০১২