
Home চিকিৎসক / Medical officer > প্রফেসর ডা. কাজী মেসবাহউদ্দিন ইকবাল / Prof. Dr. Kazi Mesbahuddin Iqbal (1946)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100129 বার পড়া হয়েছে
প্রফেসর ডা. কাজী মেসবাহউদ্দিন ইকবাল / Prof. Dr. Kazi Mesbahuddin Iqbal (1946)
প্রফেসর ডা. কাজী মেসবাহউদ্দিন ইকবাল
Prof. Dr. Kazi Mesbahuddin Iqbal
Home District: Jessore

ডাঃ কাজী মেসবাহউদ্দিন ইকবাল (Dr. Kazi Mesbahuddin Iqbal) ১৯৪৬ সালের ১ নভেম্বর যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। যশোর জিলা স্কুলের পশ্চিম পার্শের শহীদ আসাদ সড়কের ইকবাল মঞ্জিল তাঁর পৈত্রিক বাড়ী। পিতা মরহুম কাজী আতিয়ার রহমান যশোর গভর্ণমেন্ট গালর্স স্কুলের ইংরাজীর শিক্ষক ছিলেন। মা মরহুমা রাহিলা ছিলেন খাতুন গৃহিণী।
জনাব ইকবাল আট ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় ভাই ছাত্র অবস্থায় মারা যান, বড় বোন অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি চাকরিজীবি। মেজো বোন সৈয়দা আতিয়া বানু যশোরের একজন খ্যাতনামা শিক্ষিকা ছিলেন। পঞ্চম ভাই স্থানীয় বার কাউন্সিলের সদস্য, ছোট বোন মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন, তৃতীয় ভাই টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ, ছোট ভাই স্থপতি এবং চতুর্থ ভাই চার্টাড একাউটেন্ড। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ভাই-বোনদের মধ্যে এক ভাই ও দুই বোন যশোরে বসবাস করেন, অন্য সবাই যশোরের বাইরে বসবাস করেন।
১৯৭১ সালের ফ্রেরুয়ারী মাসে তিনি জামালপুর নিবাসী মরহুম জিন্নাতউল্লাহ সাহেবের কনিষ্ঠ কন্যা ডাঃ নিনা হোমায়রা নাজনীনের সথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ডাঃ নাজনীন ঢাকাস্থ মোহম্মদপুর ফ্যার্টিনিটি সার্ভিস ও ট্রেনিং সেন্টারে রিপ্রোডাক্টটিভ মেডিসিন এ বিশেষ ভুমিকা নিয়েছেন এবং সেখানে কর্মরত ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বৈদেশিক ট্রেনিং গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন।
তাদের একটি সন্তান, শামসী তামারা ইকবাল, শিক্ষাগত কৃতিত্বের অধিকারী। ভিখারুন্নেসা স্কুল থেকে ১৯৯২ সালে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১০ম স্থান অধিকার করেন সায়েন্স থেকে। ১৯৯৪ সালে ভিখারুন্নেসা কলেজ থেকে সম্মিলিত মেধা জাতীয় তালিকায় ২য় স্থান অধিকার করেন এবং বুয়েট এ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক অর্জন শেষে ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সেখানে University of Illinois at Urbana Champaign এ কম্পিঊটার বিষয়ে পি. এইচ. ডি শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রেডমন্ড শহরে মাইক্রেসফট এর একজন গবেষক।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
জনাব ইকবালের শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোর জিলা স্কুলে এবং এখান থেকেই ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৬৩ সালে মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঐ বছরেই তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম. বি. বি. এস ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করেন। প্রথমে অর্থপেডিক সার্জারী এবং পরে এনাটমী বিভাগের শিক্ষক হিসেবে সর্বমোট তিন বছর কাটিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে যান। উচ্চ শিক্ষার্থে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইংল্যান্ডে বসবাস করেন। চাকরির সাথে সাথে তিনি পড়াশোনাও চালিয়ে যান। এই সময় তিনি এ্যানেসথেশিয়া ও ইনটেনসিড কেয়ার মেডিসিনের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং এই বিষয়ে লন্ডন থেকে প্রথমে ডি এ (ডিপ্লোমা ইন এ্যানেসথেশিয়া) অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন থেকে এফ. এফ. এ. আর. সি. এস ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৯ সালে লন্ডন থেকে এফ. আর. সি. এ ডিগ্রী অর্জন করেন এবং সেখানে ম্যাকেলসফিল্ড জেনারেল হাসপাতালে কিছুকাল অস্থায়ী কনসালটেন্ট হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন এবং পি. এস. সি এর অনুমোদনের মাধ্যমে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপকের পদে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। এখানে মাত্র তিন সপ্তাহ চাকরি করার পর তদানীন্তন IPGMR এ বদলী হন। ১৯৮৯ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। নয় মাস পরে পুনরায় IPGMR এ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৯০ সালে পি. এস. সি কর্তৃক পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে অনুমোদন লাভ করেন।
১৯৯৯ সালে IPGMR বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এই সময় তিনি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর ব্যাক্তিগত কারণে ট্রেজারারের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তবে পরে আবার প্রোভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত তিনি এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যানেসথেশিয়া, এনালজেসিয়া ও ইনটেনসিড কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ চালিয়ে যান। ২০০৫ সালের ৩১ আগস্ট, এখান থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিজীবনের ইতি টানেন। সরকারী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি বারডেম হাসপাতালে যোগদান করেন। এখানে নয় মাস চাকরি করার পর অবশেষে ২০০৬ সালের জুন মাসে তিনি ঢাকার এপোলো হাসপাতালে এনেসথেশিয়লজি এবং ইনসেন্টিভ কেয়ার বিভাগের সিনিয়র কনসাল্টটেন্ট এন্ড কোয়ার্ডিনেটর অব ডিপার্টমেন্ট হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষক হিসেবে তিনি নিজেকে মোটামুটি সফল বলে মুল্যায়ন করেন, কারণ অন্যান্য সহকর্মীদের অকুণ্ঠ সাহায্যে চিকিৎসা শাস্ত্রের এই বিভাগকে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন। এ শাস্ত্রের উচ্চ ডিগ্রীধারী প্রায় সবাই তাঁর ছাত্র অথবা ছাত্রী। পেশাগতজীবনে তিনি এফ. সি. পি. এস এবং ডি. এ এর শিক্ষক ও পরীক্ষক। এছাড়াও বিদেশে (পাকিস্তানের) এফ. সি. পি. এস এর পরীক্ষক, নেপালের ডি. এ পরীক্ষার পরীক্ষক এবং ত্রিভূবন বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেসথেশিয়ার Reader এর External Interviewer হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে কলেজ অব সার্জনস ও ফিজিসিয়ান থেকে সম্মানসূচক এফ. সি. পি. এস ডিগ্রীও লাভ করেন।
সাংগঠনিক কর্মকান্ড:
ডা. মেসবাহউদ্দিন ইকবাল পেশার বাইরে বেশ কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর স্টাডি অব পেইন (বি. এস. এস. পি) এর প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব এ্যানেসথেশিওলজিষ্ট এর সায়েন্টিক কমিটির ভূতপূর্ব চেয়্যারম্যান ও মুখপত্র জার্নালের সম্পাদক মন্ডলীর ভূতপূর্ব চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান ও সার্জনসের মুখপাত্র জার্নালের সম্পাদক মন্ডলীর ভূতপূর্ব চেয়ারম্যান, ভারতের পেইন সোসাইটির মুখপত্র জার্নালের সম্পাদক মন্ডলির বৈদেশিক সদস্য এবং ইন্দেনেশিয়ার ক্রিটিক্যাল কেয়ার সোসাইটি এর মুখপত্র জার্নালের সম্পাদক মন্ডলীর বৈদেশিক সদস্য।
গবেষণামূলক কর্মকান্ড:
প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা কর্মের সাথে জড়িত ছিলেন ডা. ইকবাল, যেগুলো দেশী বিদেশী বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে। বর্তমানে এপোলো হাসপাতালেও তাঁর ডিপার্টমেন্টে কয়েকটি সমসাময়িক পর্যায়ের গবেষণা চলছে।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড:
জনাব ইকবাল স্কুলছাত্র অবস্থায় দিশারী নামক একটি দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর ছবি ও কার্টুন আঁকার শখ আছে। মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন মিক্সচার নামে একটি নিয়মিত কার্টুন ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছিলেন। ছাত্রাবস্থায় মেডিকেল কলেজের মঞ্চ নাটকে অংশগ্রহণ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রচারিত নাটকে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও তাঁর রচিত পাঁচটি নাটক বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। নাটকগুলির মধ্যে ১৯৬৯ সালে প্রচারিত হয়েছে কাঁচের পৃথিবী, টেনিস উইলিয়ামস্ এর গ্লাস ম্যানেজারির অনুবাদ। ১৯৭০ সালে প্রচারিত হয়েছে একমুঠো আকাশ, ১৯৯৩ সালে প্রচারিত হয়েছে ঘটনার পর নাটকটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাটকটি প্রচারিত হয়েছে ৭ই জুলাই ১৯৯৪ সালে, এই আমি সেই আমি ১৯৯৫ সালের ১০ই আগস্ট প্রচারিত হয়েছে। এখনও লেখালেখি ছাড়েননি তবে পেশাগত কর্মব্যাস্ততা একটি প্রতিবন্ধক। ৭০ দশকের প্রথম দিকে আব্দুস সেলিম ও আব্দুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত শিল্পকলা নামক একটি সাহিত্য পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন।
সাংগঠনিক কর্মকান্ড:
যশোর জিলা স্কুলের প্রক্তন ছাত্র সমিতির ভূতপূর্ব সভাপতি। আফজালুন্নেসা ফাউন্ডেশন নামক একটি সেবামূলক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই সংগঠন দুঃস্থ মানুষকে বয়স নির্বিশেষে চিকিৎসা, আশ্রয়, শিক্ষার ব্যাপারে সহায়তা করে।
ভ্রমণ:
পেশাগত প্রয়োজনে এবং গবেষণার কাজে তিনি ব্যাপক ভ্রমণ করেছেন। ইংল্যান্ড, আয়্যারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দেনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশে আমন্ত্রিত বক্তা হয়েছেন অথবা ডিপার্টমেন্টের গবেষণা কর্মের প্রবন্ধ পেশ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ফ্রান্স, জার্মানী, নেদারল্যান্ড, মিশর, তুরস্ক ও কানাডা ভ্রমণ করেছেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১