
Home চিকিৎসক / Medical officer > প্রফেসর ডাঃ এম এ রশিদ / Prof. Dr. M. A. Rashid (1952)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100517 বার পড়া হয়েছে
প্রফেসর ডাঃ এম এ রশিদ / Prof. Dr. M. A. Rashid (1952)
প্রফেসর ডাঃ এম এ রশিদ
Prof. Dr. M. A. Rashid
Home District: Jessore
Prof. Dr. M. A. Rashid
Home District: Jessore
পারিবারিক পরিচিতি

অধ্যাপক ডা. রশীদ ১৯৫২ সালের ১ জুলাই যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের লাউখালি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল গফুর বিশ্বাস ছিলেন একজন কৃষিজীবি ও ব্যবসায়ী এবং তাঁর মাতা মরহুমা মরিয়ম বিবি ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। তিন ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে অধ্যাপক রশীদ ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। তাঁর পরিবারে বর্তমানে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ১৫ জনেরও অধিক স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী ব্যক্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন।
অধ্যাপক রশীদ ১৯৭৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, স্ত্রী ডা. সিদ্দিকা সুলতানা একজন চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা এর প্যাথলজি বিভাগের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে সম্মানসহ মাস্টার্স পাশ করে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এর ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক এবং তাঁর স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (IBA) এর একজন সহকারী অধ্যাপক। তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তিনি একজন লেখিকা ও ইংরেজী দৈনিক ডেইলী স্টার এর নিয়মিত কলামিস্ট। এরই মধ্যে তাঁর দুইটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক রশীদ এর একমাত্র ছেলে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ২য় বর্ষের ছাত্র।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের মীরালাউখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি যশোর মুসলিম একাডেমীতে লেখাপড়া করেছে। এস. এস. সি. পাশ করেন ১৯৬৭ সালে সম্মিলনী ইনস্টিটিটিউশ স্কুল থেকে এবং ১৯৬৯ সালে যশোর এম. এম. কলেজ থেকে এইচ. এস. সি পাশ করেন। ঐ বছর তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এম. এম. বি. এস প্রথমবর্ষে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম. বি. বি. এস পাশ করে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
মেডিকেল অফিসার হিসেবে প্রথম নিয়োগ হয় যশোর জেলার শারসা উপজেলার বুরুজ বাগান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরবর্তীতে তিনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে Thana Health Administrator হিসাবে কাজ করেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে Small Pox Eradication Program এর National coordinator হিসাবে সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ছয় মাস কাজ করেন। অতঃপর Assistant Register হিসাবে ঢাকা পিজি হাসপাতালে যোগদান করেন। ঐ পদে থাকাবস্থায় ১৯৭৯ সালে তিনি সরকারী পর্যায়ে নির্বাচিত হয়ে সৌদি সরকারের অধীনে রিয়াদে চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সৌদি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং অষ্ট্রিয়া থেকে কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিষয়ে Post Graduation Degree নেন এবং দেশে ফিরে ঐ বছরই তিনি শেরেবাংলা নগরস্থ্য জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে অধ্যাপক এম. আমান উল্লাহর অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালের প্রথমদিকে বারডেম হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগ খোলার পরপরই রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হয়ে বর্তমান পদে যোগদানের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ২০০৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০০১ সালে প্রেষণে সরকারী পর্যায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীরও ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি হতে এফ. এ. সি. সি এবং যুক্তরাজ্যের গস্নাসগো রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন থেকে এফ. আর. সি. পি ডিগ্রী লাভ করেন। অধ্যাপক রশীদ ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিপসম থেকে হাসপাতাল প্রশাসনের উপর স্নাতকোত্তর এম.পি.এইচ. ডিগ্রী অর্জন করেন। অধ্যাপক ডা. এম এ রশীদ বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস হতে কর্মরত।
দেশ ভ্রমণ:
ডাঃ রশিদ বিশ্বের প্রায় ৩২টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। শিক্ষাগত উৎকর্ষতা ও উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইডেন, বার্মা, রাশিয়া, গ্রীস, শ্রীলঙ্কা, অষ্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারত ভ্রমণ করেন। তিনি বিশ্বের অনেক দেশে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে Scientific Conference এ যোগদান করেছেন। যেমন: গ্রীস, জার্মানী, ইংল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, ফিনল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। তিনি সৈদি আরবের রিয়াদ প্রদেশে ছয় বৎসর মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সৈদি আরবে থাকাকালিন দুবার পবিত্র হজ্জ ও বেশ কয়েকবার ওমরা পালন করেছেন।
সেবামূলক কর্মকান্ড:
ডাঃ রশিদ যশোরের সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করেন। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি যশোরের মানুষকে তাঁর সাধ্যমত উপকার করার চেষ্টা করেন। তিনি যশোরের অনেক শিক্ষিত বেকার ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন এবং বেশ কিছু সংখ্যক ছেলেকে তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়েছেন।
প্রফেসর রশিদ তাঁর মাতৃভূমির জন্য বেশ কিছু সেবামূলক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। যেহেতু গ্রামের ছেলে তাই ছোট বেলা থেকেই তাঁর গ্রাম উন্নয়নের প্রবল ইচ্ছা ছিল। যশোর বারীনগর বাজার থেকে লাউখালি পর্যন্ত ৭ কিঃ মিঃ পাকা রাস্তাটি নির্মাণের সম্পূর্ণ উদ্যোগ ডাঃ রশিদই গ্রহণ করেছিলেন। তারই প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এলাকার প্রায় সমস্ত রাস্তাগুলি ইতোমধ্যে পাকা হয়েছে। এই কাজগুলো করতে যারা তাঁকে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আলী রেজা রাজু, আলেয়া আফরোজ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো। এল, জি, ই, ডি’র মাননীয় প্রধান প্রকৌশলী জনাব শহিদুল হাসান ও পলস্নী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা জনাব আহসান হাবিব এর নিকট তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। বর্তমানে তাঁর এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই পল্লী বিদ্যুৎতের আলো পৌঁছে গেছে। এলাকার অনেকগুলি মসজিদের উন্নয়নের জন্য ডাঃ রশিদের অবদান বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য কুয়েত জয়েন্ট রিলিপ ফান্ডের বাংলাদেশ প্রধান জনাব ডা. জহিরুল ইসলাম ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ।
সাংগঠনিক কর্মকান্ড:
অধ্যাপক রশীদ বর্তমানে যশোর ও ঢাকাতে ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে জড়িত আছেন। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে তাঁর মরহুম পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত আব্দুল গফুর মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই বিদ্যালয়টি যশোর বোর্ডের একটি উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি যশোর সদরের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ, ডা. রওশন আলী কলেজ অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ঢাকাস্থ্য ঢাকা কমার্স কলেজ ও তেজগাঁও মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি প্রথম থেকেই যশোর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (JUST) এর মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক “রিজেন্ট বোর্ডের” সদস্য মনোনীত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকাস্থ্য যশোর জেলা সমিতির নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অসংখ্য পেশাজীবি ও সামাজিক সংগঠনের আজীবন সদস্য। এরমধ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি, এ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ান অব বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন উল্লেখযোগ্য।
অধ্যাপক রশীদ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালটিকে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ পূর্ব এসিয়ার মধ্যে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং তিনি এই প্রচেষ্টায় বহুলাংশে সফল হয়েছেন এবং বাংলাদেশের জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। এখন মানুষ বিদেশে না গিয়ে দেশের মাটিতেই উন্নতমানের হৃদরোগ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে ও দেশ উপকৃত হচ্ছে।
অধ্যাপক রশীদ একজন নিষ্ঠাবান চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী, সমাজকর্মী ও আলোকিত মানুষ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও সম্পাদনাঃ
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১