
Home মাগুরা জেলা / Magura District > স্বাধীনতা সংগ্রামে মাগুরা / The independence history of Magura
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100091 বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতা সংগ্রামে মাগুরা / The independence history of Magura
স্বাধীনতা সংগ্রামে মাগুরা
The independence history of Magura
নবগঙ্গা, চিত্রা, মধুমতি বিধৌত শ্যামল সবুজ একটি জনপদ মাগুরা। এক সময় ছিল যশোর জেলার একটি মহকুমা, বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের একটি জেলা। বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মাগুরাবাসীর ভূমিকা নানা কারণে অসামান্য গুরুত্ববহ। দেশ বিভাগের পর পশ্চিমাদের শাসন শোষন পাকাপোক্ত রাখার ষড়যন্ত্রে মুসলিম লীগের তথাকথিত নেতৃবৃন্দ মাগুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরক্ষর মুসলমানের মধ্যে ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ শ্লোগানের যোশ জিইয়ে রেখে ধর্মের নামে অপপ্রচার এবং লোভ লালসার উস্কানী দিয়ে স্বাধীকার বোধকে ধামাচাপা দেয়ার অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য, শোষন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতার দীর্ঘ সংগ্রামে লাগাতার প্রাণপাত পরিশ্রম করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব আবদুল খালেক, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব সোহরাব হোসেন এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব সৈয়দ আতর আলী ও জনাব আসাদুজ্জামান সমস্ত ভয়ভীতি ও প্রলোভনের উর্দ্ধে থেকে সংসদের ভিতরে সংগ্রাম করেছেন এবং পাশাপাশি জন্মভূমির ঋণ শোধ করতে মাগুরার আপামর গণমানুসের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিতে মহান অবদান রেখেছেন। তাই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনের পথ বেয়ে সচেতন মাগুরা দারুন আক্রোশে ফেটে পড়ে একাত্তরে পাক বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার বিরুদ্ধে।
পাক সেনারা মাগুরা শহরে ঘাঁটি গাঁড়ার আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব সোহরাব হোসেন বঙ্গবন্ধুর বিশেষ বার্তা ও কিছু মূল্যবান দলিল নিয়ে যোগাযোগ করেন ভারতে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার জনাব হোসেন আলীর সাথে। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ গঠন, পরিচালনা নীতি নির্ধারণ ও উচ্চতর পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আরেকটি বিশেষ ঘটনা হল মাগুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক তৎপরতায় সংগ্রাম পরিষদ গঠন। মাগুরা থানায় নেতৃত্ব দেন খোন্দকার আব্দুল মাজেদ, কাজী ইউসুফ আলী, সৈয়দ তৈয়বুর রহমান প্রমুখ। শ্রীপুর থানার নেতৃত্ব দেন জনাব আকবর হোসেন মিঞা, মোলস্না নবুওয়াৎ আলী, কাজী ফয়েজুর রহমান, মিঞা গোলাম মোস্তফা, আবু বকর, আলাউদ্দিন, শাহাদৎ হোসেন ও মোশারফ হোসেন প্রমুখ এবং মোহাম্মদপুর থানায় আব্দুর রশীদ বিশ্বাস, গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক), নজরুল ইসলাম, বাঁশী মিয়া, লুৎফর রহমান শিকদার, আইয়ুব হোসেন, সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুমসহ আরো অনেকে দায়িত্ব পালন করেন।
মুজিবনগরে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে পাক সেনাদের আগ্রাসী ভূমিকা, জ্বালাও-পোড়াও অভিযান, নির্বিচারে গণহত্যা ও লুটতরাজ ব্যাপকতর হওয়ার সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার জন্য যুবক শ্রেণীসহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ভারত গমণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। মাগুরা, যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন শিবির ও ক্যাম্পে সে সময় রাত দিন অক্লান্ত সেবা ও সাহায্যের তদারকি করতেন সৈয়দ আতর আলী, এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, আবু নাসের বাবলু, রোস্তম আলী, আবুল ফাত্তাহ, আব্দুল খায়ের প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এদের তত্ত্ববধানে মাগুরার বিভিন্ন এলাকায় গণবাহিনী এবং মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন দল-অস্ত্র-শস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে স্থানীয় বাহিনীর সাথে যোগ দেয়।
মাগুরা’র মুক্তিযুদ্ধটাকে প্রকৃত প্রস্তাবে টিকিয়ে রেখেছিল চার থানার তিনটি স্থানীয় বাহিনী। মাগুরা থানায় খোন্দকার আব্দুল মাজেদ, কাজী ইউসুফ আলী ও ভিকু মিয়া শ্রীপুরে মিঞা আকবর হোসেন ও মোল্লা নবুওয়াৎ আলী এবং মোহাম্মদপুরে গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক) এর নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় বাহিনীর। তথাকথিত নকশাল অধ্যূশিত শালিখা থানায় বরং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং নিয়ে আসা মুক্তিসেনাদের অস্ত্র-শস্ত্র ছিনিয়ে নেয়াসহ আলাদা কোন মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়নি। এ থানার আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ নেতারা মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন। জনাব আকবর হোসেন মিয়া, অধিনায়ক শ্রীপুর বাহিনী, তাঁর বিশাল বাহিনী নিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ ফরিদপুরের রাজবাড়ী, রামদিয়া, ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানাসহ আলফাপুরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে সফল সশস্ত্র যু্দ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস তাঁর বাহিনী শ্রীপুর থানাকে সম্পুর্ণ শত্রুমুক্ত রাখেন। “মুক্তিযুদ্ধে আমি ও আমার বাহিনী” নামক গ্রন্থে জনাব আকবর হোসেন উল্লেখ করেন।
এ ইতিহাস গাড়াগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত বিশাল এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আর এ অঞ্চলটি আমাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক নিরাপদ আবাসভূমি। আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও ভারত থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত এফ. এফ এবং মুজিব বাহিনীর অবস্থান ও নিরাপত্তার ক্ষেত্র। এপার বাংলা ওপার বাংলায় “শ্রীপুর বাহিনী” বা “আকবার বাহিনী” পঞ্চমুখো প্রশংসার স্বীকৃতি পেয়েছে। দম্ভভরে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এ বাহিনীর বহু যুদ্ধ বিজয়ের খবর প্রচার করেছে এবং শ্রীপুর মুক্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এপার বাংলার পত্রপত্রিকা এবং তৎকালীন বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার কর্তৃক তা প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। এ ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ সামগ্রীক ইতিহাসেরই অংশ। এ ইতিহাস বাদ দিয়ে কোন পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হতে পারেনা।”
এখানে উল্লেখ্য যে, “শ্রীপুর বাহিনী” কর্তৃক শ্রীপুর থানা বারবার আক্রমণ করে থানার সমস্ত পুলিশ ও ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে আত্মসমর্পন করিয়ে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জনাব আকবর সাহেবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শ্রীপুর থানায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষের বেসামরিক প্রশাসন চালু করা।
স্থানীয় বাহিনীসমূহের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাধারণ মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখা এবং চোরা গুপ্তা হামলা চালিয়ে পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকারদের সব সময় শঙ্কিত করে তোলা। পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে গণবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন টীম বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাহিনীর সাথে যোগ দিলে এলাকার মুক্তিবাহিনী সুসংহত হয় এবং পাক সেনাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বাধীনতার অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে থাকে।
মাগুরা সদর থানায় প্রথম ব্যাচ আসে মুজিব বাহিনীর ডেপুটি লীডার লিয়াকত আলীর (বর্তমানের রেডিও বাংলাদেশে কর্মরত) নেতৃত্বে। তারা মাজেদ বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এরপর আসে আবুল খায়ের (সাবেক উপ-সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়) ও খুরশীদ আনোয়ার খসরু (প্রয়াত মন্ত্রী জনাব সোহরাব হোসেনের জ্যৈষ্ঠপুত্র) নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর একটি দুর্ধর্ষ টীম। এ সময় হাজীপুর পাক সেনাদের একটি বিশাল দলের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে আবুল খায়ের সামান্য আহত হলেও রণকৌশল ও অসীম বীরত্বে লড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরবর্তী সময়ে আব্দুল হাই, পল্টু ও ইসার নেতৃত্বে গণবাহিনীর একটি চৌকস দল মাজেদ বাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে পাক সেনা ও রাজাকারদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সমর্থ হয়। এক পর্যায়ে আকবর বাহিনীর সাথে খায়েরের দল শ্রীপুরে যোগ দেয়।
সামসুল ইসলাম ও মিঞা গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীসহ শ্রীপুর বাহিনী আলফাপুর, আবাইপুর, নাকোল, নোহাটা, কামারখালী, খামারপাড়া বাজার, রাজবাড়ী, কামান্না, গাংনালিয়াসহ সম্মুখ যুদ্ধে বীর বিক্রমে যু্দ্ধ করে সফলতা আনেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজী ইউসুফের কিছু অস্ত্র সাহায্যে সংগঠিত হয় আকবর বাহিনী। এ বাহিনীর সাথে যোগ দেয় খায়ের-খসরু, শরফু-বাঁশী এবং আতাউর-আকুর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর তিনটি অত্যন্ত বেপরোয়া দুর্ধর্ষ টীম। মুক্তিবাহিনীর এ সম্মিলিত দলটি অসংখ্য অতর্কিত হামলা ছাড়াও গাংগালিয়া, নাকোল ও কামান্নায় অসীম সাহসিকতায় সম্মুখ যুদ্ধে পাক সেনাদের মোকাবিলা করে। গাংনালিয়ার যুদ্ধে শৈলকূপার সার্জেন্ট কামরুজ্জামান এ বাহিনীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসে এবং বীর বিক্রমে যু্দ্ধ করে। এ যুদ্ধে বেশ কিছু পাক সেনা এবং ২৮ জন রাজাকার নিহত হয়। নাকোলের যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণে পাক সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং অনেক রাজাকার মারা যায়। সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটে কামান্নার যুদ্ধে। পাক বাহিনীর একটি বড় দল গোপন খবরের ভিত্তিতে অতর্কিতে মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করলে মুক্তিবাহিনীর ২৭ জন বীর যোদ্ধা শহীদ হয় যার মধ্যে ছিল মাজেদ বাহিনী প্রধান আব্দুল মাজেদ খোন্দকারের একমাত্র পুত্র আলী হোসেন।
শ্রীপুরের আর এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন আব্দুল ওয়াহাব (সাবেক মেজর জেনারেল) যিনি আরেক সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং মিত্র বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে অমিত বিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং যুদ্ধ শেষে মাগুরা মিলিশিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে অস্ত্র জমা নেন ও মুক্তিযুদ্ধের সনদ বিতরণ করেন।
মোহাম্মদপুর-শালিখা থানার মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রস্থল নোহাটা থেকে যুদ্ধের সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক) এর অপরিমেয় সাহসিক নেতৃত্বে। পাক সেনারা বার বার আঘাত হানে নোহাটার উপর। এলাকার বিখ্যাত ব্যবসায় কেন্দ্র নোহাটা বাজার পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেয় এবং নির্বিচারে গণহত্যায় মেতে ওঠে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিরীহ সাধারণ নারী-পুরুষ-শিশুকে একজনের হাতের শিরা কেটে অন্যজনের শিরায় গিঠ দিয়ে বাজারে নদীর পাড়ে এনে গুলি করে মারতে থাকে।
গণবাহিনীর প্রথম দল আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে নোহাটায় আসে এবং এর অব্যবহিত পরেই পুরো যুদ্ধের দায়িত্ব নেয় গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক) এর শক্তিশালী বাহিনী। তার কিছুদিন পর দলের শক্তি বৃদ্ধি হয় প্রয়াত এ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর একটি দলের যোগদানে।
এ সময় থেকে গান বোটে এবং মাগুরা থেকে স্থল পথে পাক সেনাদের এক বিশাল কনভয়ের ছত্রছায়ায় নোহাটায় রাজাকারদের ঘাঁটি স্থাপিত হয়। একদিন অতর্কিত আক্রমণের গুজব ছড়িয়ে পড়লে রাজাকাররা দুটো গরুর সদ্য রান্না করা মাংস আর খাবার-দাবার, গোলা-বারুদ ফেলে রেখে বন বাঁদাড় ভেঙে পালিয়ে যায় যা সম্মিলিত বাহিনীর বড় ভোজে রূপান্তরিত হয়। মুক্তিবাহিনীর এ অংশের নেতৃত্বে অসংখ্য লোমহর্ষক হামলাসহ নোহাটা, জয়রামপুর, বিনোদনপুর, মোহাম্মদপুরে সম্মুখ যুদ্ধ পরিচালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আহাম্মদ মোহাম্মদ ভ্রাতৃদ্বয় এবং আবির নামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নোহাটা মডেল স্কুলের যুদ্ধক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩৩ জন পাক সেনা এবং অসংখ্য রাজাকার নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে কয়েকদিন পরে ভারী কামান ও অস্ত্র-শস্ত্রের বিরাট বহন নিয়ে নোহাটা বাজার পুড়িয়ে ছারখার করে এবং মেতে ওঠে নির্বিচারে গণ হত্যায়।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কমল সিদ্দিকী (বীর বিক্রম) তার সুশিক্ষিত বাহিনী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। ওয়ারলেসে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নড়াইলে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং পাক সেনাদের গুলিতে চির কালের মত একটি চোখ হারান।
মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে যশোর সেনানিবাসের পতন হলে পাকসেনারা পিছু হটতে হটতে মাগুরা আসে এবং একটি বড় অংশ নৌহাটর অপর পাড়ে পৌঁছালে মুক্তিবাহিনী তাদের গতিরোধ এবং ভয়াবহ প্রতিরোধের সম্মুখীন করে তোলে। ফলে আবার তারা মাগুরার দিকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
বক্ষ্যমান নিবন্ধে শুধু বাহিনী প্রধানদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের সাথে ছিল অকুতোভয়, দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বুদ্ধিদীপ্ত সংগঠকবৃন্দ এবং সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতায় আপামর জনসাধারণ সবার নাম এই স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব হল না। সকলের সম্মিলিত ত্যাগ ও সাহসিকতায় দেশ মাতৃকার মুক্তি ত্বরান্বিত হতে পেরেছিল বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাসে মাগুরার নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে।
সম্পাদনা:
খোন্দকার রওদাক আলী
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
আগস্ট ২০১২