
Home মাগুরা জেলা / Magura District > মাগুরা শহর পত্তনের ইতিকথা / The founding history of Magura City
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100127 বার পড়া হয়েছে
মাগুরা শহর পত্তনের ইতিকথা / The founding history of Magura City
মাগুরা শহর পত্তনের ইতিকথা
The founding history of Magura City
১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর এদেশ ইংরেজ শাসন কায়েম হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বণিকেরা মানদন্ড ছেড়ে রাজদন্ডে হাত দেয়। এ দেশে শাসন ব্যবস্থার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে সুলতানী ও নবাবী আমলের পদ্ধতিরই অনুসরণ করা হতো। অল্পদিনের মধ্যে তারা শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করলো। ভারতবর্ষে বাংলা প্রদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ১৭৮১ সালে প্রথম জেলা হিসেবে যশোরকে ঘোষণা করা হয় এবং প্রথম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ইংরেজরা নিয়োগ দিলেন টিলম্যান হেষ্কেলকে। ১৭৮১ সালের ৭ জুন টিলম্যান হেঙ্কেল এলেন যশোর এবং এসে মুরলীতে একটা অফিস নির্ধারণ করে শুরু করলেন তার প্রথম কর্মদিবস। এই সাথে শুরু হলো এ অঞ্চলে ইংরেজ প্রভাব বিস্তারের পাকাপোক্ত কর্মব্যবস্থা।
এর আগেই ১৭৭৭ সাল থেকে বাংলা প্রদেশে নীলের চাষ শুরু হয়। নীল চাষীরা সারাদেশে শুরু করে নীলের আবাদ এবং নীল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় নীলকুঠি। ১৮০৫ সালে টমাস টুইউডি নামক এক ইংরেজ মাগুরার পশ্চিম দিকে ইছাখাদা সংলগ্ন হাজরাপুরে নির্মাণ করেন নীলকুঠি এবং শুরু করেন নীলের চাষ। মোঘল আমলেই পেরিপ্লাস ও টলেমির বর্ণনায় ইছাখাদা অঞ্চলের জনবসতি ও ব্যবসা কেন্দ্রের বিবরণ পাওয়া যায়। চতুর্দশ শতাব্দিতে গরীবশাহ দেওয়ানের মাগুরা অঞ্চলে উপস্থিতির বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৭৮৯ সালে জে, ওয়েস্টল্যান্ড ছিলেন যশোর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তার লেখা “যশোর রিপোর্ট”-এ মাগুরা মহাকুমার কিছু কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। এটাকেই একটা ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল বলা যায়। এই বর্ণনায় মাগুরা জেলার সীতারামের মহম্মদপুরের পর মাগুরার ইছাখাদা অঞ্চলের খ্যাতি দেখা যায়।
তার বর্ণনায় বলা হয় “ঝিনাইদহ থেকে ১৭ মাইলপূর্ব অবস্থিত মুচিখারি, গড়াই ও নবগঙ্গার সঙ্গমস্থলে মাগুরা অবস্থিত। মহাকুমা স্থাপনের পূর্বে মাগুরা খ্যাত ছিল না। রেনেলম্যাপে মাগুরা বড় অক্ষরে চিহ্নিত ছিল। অতীতের নথিপত্রে মাগুরার উজ্জ্বলতার চিহ্ন কোথাও দেখা যায়নি। খ্যাতির জন্য নয় ডাকাতির মত অপরাধ দমনের ব্যবস্থা নিতে মহাকুমা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। নদীর সঙ্গমস্থল মাগুরা ছিল অপরাধের জন্য উপযুক্ত স্থান। ঐ সময় মাগুরাতে থানাও ছিল না। মহাকুমা স্থাপনকালে প্রথমে পুলিশ ফাঁড়ি ও পরে থানা করা হয়”।
এই বর্ণনার প্রমান মেলে নবগঙ্গা নদীর পাড়ে বর্তমান পূর্বাশা সিনেমা হল সেই পুলিশ ব্যারাকের উপর প্রতিষ্ঠিত। পাকিস্তান আমলের প্রাথমিককাল পর্যন্ত ওখানেই পুলিশ ব্যারাক ছিল। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যারাক স্থানান্তরিত হলে স্বাধীনতার পর সেই পরিত্যক্ত পুলিশ ব্যারাক ভাড়া নিয়ে শুরু হয় সিনেমা হল। সেই ভিতের উপরই বর্তমান পূর্বাশা হল। এই বর্ণনা থেকে জানা যায় যে মাগুরা জনপদের শুরু ইছাখাদা থেকেই এবং ১৮০৫ সালের পর ইছাখাদার কাছে হাজরাপুরের নীলকুঠিই মাগুরার আদি স্থাপত্য।
এই হাজরাপুর অঞ্চলই প্রাথমিক যুগে বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। তার বর্ণনাও আমরা পাই যশোর রিপোর্ট “মাগুরা থেকে ৪ মাইল পশ্চিমে সড়ক সংলগ্ন ইছাখাদা নমক স্থানে একটি নিয়মিত হাট বসে। নবাবী আমলে এখানে ক্ষুদ্র সেনা ছাউনি ছিল ভূষণা ফৌজদারের অধীন। ১৭৮১ সালে যশোর জেলা হাওয়ার সময়ও ইছাখাদায় পুলিশ চৌকি ছিল ভুষণা ফৌজদারের অধীনে (ভূষণ মহম্মদপুর থাকার নদীর অপর পাড়ে বর্তমানে বোয়ালমারী থানাধীন)। যশোর জেলা কালেক্টরেটকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুলিশ অবস্থানের বিবরণ চাওয়া হলে ১৮০৪ সালে পত্র নং সি-০৮/১১/৮৪ ইং পত্রে জানান হয়- ধর্মপুর থানাধীন কোর্ট ইছাখাদা নামক স্থানে পুলিশ আছে যা ভূষণা অঞ্চলের অধীন। ইছাখাদায় ১৬ জন এবং ধর্মপুরে ১৮ জন পুলিশ হিসেবে থাকে, ভূষণা ফৌজদারের সরকারি নৌকা পাহারা দেওয়াই যাদের প্রধান কাজ। ১৭৮১ সালে যখন প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট যশোর আসেন ইছাখাদায় তখনো পুলিশ চৌকি ছিল ভূষণা থানাধীন। ইছাখাদায় প্রতি মঙ্গলবার হাট বসতো। প্রচুর লোক গুড় বিক্রির জন্য এখানে আসতেন। চিনি তৈরির জন্য ক্রেতারা গুড় কিনতেন। ইছাখাদা অঞ্চলে অনেক আলু ও আনারস জন্মাতো। যার বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত কলিকাতা চলে যেত। নদীর অপর পাড়ের মীর্জাপুর গ্রাম চিকন চালের জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিল।
১৮৪৫ সালে মাগুরা মহাকুমা হয়। মহাকুমা স্থাপনকালে এখানে থানাও ছিল না। প্রথমে ফাঁড়ি ও পরে থানা স্থাপিত হয়। দস্যু মোকাবেলায় এখানে মহাকুমা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অন্য কোন প্রসিদ্ধির কারণে নয়। এ বর্ণনায় স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ইছাখাদা অঞ্চলেই মাগুরা মহাকুমার আদি বসতি শুরু হয়। মহাকুমা হবার পর মাগুরার জনবসতির উন্নতি হয়।
১৮৪৫ সালে মাগুরা মহাকুমা হবার পর প্রথম মহাকুমা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এলেন ককবার্ণ। তিনি এসে যে ঘরে অবস্থান নেন সেটা ছিল বর্তমান এক নং প্রাইমারি স্কুলের কাছে কোন এক স্থানে। যেটা নদীর ভাঙ্গণে বিলিন হয়ে যায়। বর্তমান জেলা প্রশাসকের বাংলোর মাঝে বাড়ি তৈরি করেন ১৮৫০ সালের দিকে। এ প্রসঙ্গে জে. ওয়েস্ট ল্যান্ড বর্ণনা দেন, “ককবার্ণ যখন মাগুরা আসেন তখন মাগুরার অধিকাংশ স্থান ছিল জলমগ্ন। সামান্য উঁচু এলাকার অংশে হাট বসতো, বাকি অংশে ছিল গ্রাম। ককবার্ণ গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করে অন্যত্র হাট বসাতে আদেশ দিলেন। তিনি বেশ কটি পুকুর খনন করে মাগুরা উঁচু করলেন”। জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুরাতন জেলখানা, হাসপাতাল ও হাটের পার্শ্বে ঘন ঘন পুকুরগুলো সে কথার সত্যতা প্রমাণ করে।
এসডিও সাহেব হাত দিলেন নিজ বাসভবন তৈরির কাজে। বর্তমান ভবন স্থানে অবিশ্বাস্যরূপে ছয় সাত হাজার টাকা ব্যয়ে তৎকালীন অন্যতম সুন্দর বাসভবন তৈরি করলেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি মাগুরা জনপদের প্রাথমিককালের স্থাপত্যের অন্যতম প্রথম হচ্ছে এই এসডিও সাহেবের বাংলো। ১৮৪৫ সালে এরই পার্শ্বে আজকের মহিলা কলেজ বিল্ডিং গড়ে তোলেন নীলকর সাহেবেরা হসপিটাল হিসেবে। পার্শ্বেই ছিল প্রবাহিত নবগঙ্গা নদী। ১৮৪৯-১৮৫৬ সালের মধ্যে তৈরি হয় পুরাতন জেলখানা ভবন। মহাকুমা প্রশাসকের বাংলোর সাথেই ১৮৫০ সালের দিকে নির্মিত হয় বর্তমান পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে ফৌজদারি কোর্ট বা এসডিও সাহেবের কার্যালয়। এই ফৌজদারি কোর্টের পশ্চিম পার্শ্বে ছিল ট্রেজারি ও একটি পুলিশ ফাঁড়ি। ১৯৬৮ সালের কোন এক সময়ে এসডিও কোর্ট চলে যায় কলেজ রোড সংলগ্ন বর্তমান স্থানে। পুরাতন কোর্টটা ছিল দক্ষিণ মুখি একতলা ভবন। সামনে ছিল এক বিরাট বটগাছ। পুরাতন কোর্ট ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর ১৯৯০ সালে পুলিশ সুপার কার্যালয় হিসেবে তৈরি হয়ে নতুন ভবন চালু হয়। হোটেল আমীর গড়ে উঠেছে পুরাতন মুক্তার বারের টিনের ঘরের উপর। তার পাশে প্রেসক্লাব সংলগ্ন ছোট টিনের ঘরটা কোর্ট পুলিশ ব্যারাক ছিল।
মহাকুমা প্রশাসকের ভবন নির্মাণের পর পুরাতন জেলখানা নির্মিত হয় ১৮৪৯ থেকে ১৮৫৬ সালের মধ্যে। এটা ছিল উপকারাগার, ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪২ জন। ২০০১ সালে মাগুরা ঢাকা রোডে ৬ একর জমির উপর নতুন জেলা কারাগার উদ্বোধন করা হয়।
চৌরঙ্গীমোড়ের ফৌজদারি কোর্ট নির্মিত হয়েছিল ১৯৫০ সালের দিকে। বর্তমান পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ভিত্তিমূল হল ঐ কোর্টের দক্ষিণ মুখি ১ তলা ভবন। ১২৩ হাত লম্বা ও বারান্দাসহ ১৮ হাত চওড়া। সম্মুখে ছিল ঐতিহাসিক বটপাকুড় গাছ। বর্তমান মোখলেসুর রহমান সড়কে স্থানান্তর হয়। ১৯৬৮ সালে জেলা হবার পর ১৯৮৪ সালে থেকে ওটাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়। ঐ ভবন থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় নতুন কালেক্টরেট ভবনে স্থানান্তরিত হয় ১০ আগস্ট ২০০২ সাল।
ফৌজদারি কোর্টের পুরাতন স্থানে পুলিশ সুপার কার্যালয় শুরু হয় ১২ মে ১৯৯৪ সালে। প্রথম মহাকুমা প্রশাসক ককবার্ণ ১৮৪৫ সালের পরপরই মাগুরা ঝিনাইদহ সড়ক নির্মাণে হাত দেন এবং নবগঙ্গা নদীর পানি থেকে শহর রক্ষার জন্য নবগঙ্গার দক্ষিণ পার্শ্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। নবগঙ্গা নদীর পানির চাপে হাওড়খালি খালের সৃষ্টি হয় এবং ঐ খালের উপর আবালপুরের কাছে মাগুরা ঝিনাইদহ সড়কে একটা শক্তিশালী সেতু নির্মাণ করে জাপানি ইঞ্জিনিয়াররা ১৯৫২ সালের দিকে। বিশ্ব রোড করার সময় সেটা ভেঙ্গে সড়ক সোজা করা হয় ও তার দক্ষিণে একটা ছোট বক্স সেতু নির্মাণ করা হয়।
প্রথম মহাযুদ্ধ চলাকালে যশোর-মাগুরা সড়কে কাটাখালিতে নির্মিত হয় একটা সড়ক সেতু। যেটার ফলকে লেখা ছিল নির্মাণকাল ও নির্মাতাদের নাম।
R.C. HAMILTION: ESOR!VIC: CM: BK MITTER
DIST: ENG: K.N. GHOSH
ASST ENG: K.C. GHOSHI CONTER: D: CHATTERRJEE
ESECTED : 1916
বর্তমান সেতু নির্মাণকালে ১৯৯৫ সালের দিকে সেতুটা ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেতুটার উপর প্রায় ১০ ফুট চওড়া ইটের ভিত্তির উপর লোহার এঙ্গেল রেলিং দেয়া ছিল।
যশোর জেলা প্রশাসক জে. ওয়েস্টল্যান্ড যিনি ১৭৮৯ সালে কর্মরত ছিলেন। তার লেখা ‘যশোর রিপোর্ট’ জানা যায় ১৯৪৫ সালের পূর্বেই মাগুরা দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। মহাকুমা প্রশাসকের অফিসের পূর্ব দিকে পুরাতন বাজার এবং পশ্চিম দিকে দরি মাগুরা। এখনো মাগুরায় দুটি বাজার, নতুন বাজার বলে দরি মাগুরাকে এবং পুরাতন বাজার বলে মাগুরার পূর্বাংশকে। মোঘল আমলে মাগুরা ছিল এক সময় নলডাঙ্গার জমিদারদের অধীন। পুরাতন বাজার এলাকায় বাজার ও হাট বসতো। ১৯৩৫ সালের দিকে নলডাঙ্গার জমিদাররা দরি মাগুরার বর্তমান স্থানে বাজারটা স্থানান্তর করেন এবং নাম দেন নতুন বাজার। এলাকাটা নিচু ছিল তাই পুকুর কেটে মাটি ভরাট করান হয়। সে খরচ তারা বহন করে। ঐ রিপোর্টেই দেখা যায় মাগুরা অঞ্চলে তখন গুড় থেকে চিনি তৈরির কারখানা ছিল। পার্শ্বের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে পাটি তৈরি ও তেল ভাঙ্গান কুলু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করতো। পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষ সরিষা বা তিষি এনে এখান থেকে ভাঙ্গিয়ে নিয়ে যেত বিক্রি করার জন্য।
বর্তমান মহিলা কলেজ নির্মাণ করেন এ অঞ্চলের নীলকর সাহেবরা, দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে। পরিত্যক্ত ভবনে ১৮৭৬ সালের দিকে সরকারি বালক বিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমান সিভিল সার্জন বাসভবন প্রাঙ্গণে ছিল ইংরেজ আমলে সরকারি হাসপাতাল যা ১৯৬৮ সালে ঢাকা রোডে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমান আতর আলী সড়কের ডক্টরস কোয়ার্টার হসপিটালের বড় ডাক্তারের বাসভবনের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত পুরাতন হসপিটালের পশ্চিম পার্শ্বে ছিল খৃষ্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান ও ময়নাতদন্ত করার ঘর। যেটা ২০০০ সালের দিকে সদর হসপিটালের প্রাঙ্গণের উত্তরে স্থানান্তর করা হয়। আজকের জেলা পরিষদ মার্কেটের স্থানে ছিল ইংরেজ আমলে স্যানেটারি অফিস।
আজকের জজকোর্ট ভবনের উত্তর দিকে মুন্সেফ কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয় ইংরেজ আমলে। বর্তমান ভবনের স্থানে পুরাতন ভবন নির্মাণ হয় ১৯১৫ সালে। সে ভবন ভেঙ্গে সেই স্থানে নতুন জর্জকোর্ট ভবন কার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৯ সালে। এই ভবনের পূর্ব দক্ষিণ কোনায় ছিল এককালের শিশু পার্ক। সেটার অস্তিত্ব আর মাগুরাতে বর্তমান নেই। জর্জকোর্টের সামনে আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মিত হয় ১৯০৬ সালে বর্তমান হোটেল আমীরের ভিত্তিমূলে ছিল একটা টিনের ঘরে মোক্তারার। পুরাতন হসপিটাল ভবন ব্যবহার হয় সিভিল সার্জন কার্যালয় হিসেবে, ঢাকা রোডে সদর হাসপাতালের পূর্ব পার্শ্বে ১৯৮৮ সালের ১৫ জুন স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত। পুরাতন সিভিল সার্জন অফিস প্রাঙ্গণে নির্মিত হয় আজকের সিভিল সার্জন সাহেবের সরকারি বাসভবন।
জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পিছনে মুন্সেফ কোয়ার্টার হয় ইংরেজ আমলেই। এই কোয়ার্টারের উত্তর পার্শ্বে ছিল প্রধান ডাকঘর। যেটা স্থানারিত হয় আতর আলী সড়কে ১৯৭৮ সালে। ১৮১৮ সালের ভায়না মোড়ের কবরস্থানের শুরু। যেটা বর্তমান পৌর গোরস্থান।
মোখলেসুর রহমান সড়কের সমবায় ভবন নির্মিত হয় ১৯২৯ সালে, মাগুরার প্রথম ব্যাংক ধরা হয় এটাকেই। এটা ছিল দর্শনীয় একটা ভবন। ১৯৪৭ সালের দিকে রেজিস্ট্রি অফিস বর্তমান স্থানে কার্যক্রম শুরু করে। ইংরেজ আমলে কাজ চলতো পুরাতন জেলখানার গেটের সামনে ডাঃ হাবিবুল্লার বাড়ির ভবনে। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাগুরা থিয়েটার ক্লাব স্বস্থানেই “মাগুরা টাউন হল” নামে পরিচিত হয়।
১৯৪১ সালে নবগঙ্গা নদীর চরে গড়ে তোলেন একটা পার্ক তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক বাবু গিরিনচন্দ্র মন্ডল। নাম দেন “গিরিন পার্ক” এটা পাক আমলের কোন এক সময় যশোরের এক জেলা প্রশাসকের নামে নামকরণ করা হয় নোমানি ময়দান এবং প্রবেশ পথে একটা গেট নির্মাণ করা হয়। পাক আমলের প্রথম দিকে নোমানি ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নদীর পাড়ে তৈরি করা হয় আনসার ক্যাম্প এবং ঐ ময়দান আনসারদের প্রশিক্ষণ ময়দান রূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। তাছাড়া ঐতিহাসিক সকল জনসভা, সার্কাস, যাত্রা, ফুটবল ঐ মাঠেই খেলা হতো। ১৯৬০ সালের দিকে নোমানি ময়দানের পূর্ব অংশে একটি ঘর করা হয় ওয়াপদার জন্য। এর ভিতরে বর্তমান মধুমতি ডাকবাংলোই পূর্বের মাগুরার একমাত্র ভি.আই. পি বাংলো। ১৯০৬ সালে নির্মিত হয় পরিদর্শন বাংলো ময়দানের দক্ষিণ পার্শ্বে। নদীর পানি এসে বাংলোর সিঁড়িতে আঘাত হানতো। এমন দেখেছেন অনেকেই জীবিত আছেন। বর্ণনামতে রেজিস্ট্রি অফিসের পিছনের রাস্তাটাই নদীর পাড়।
ইংরেজ আমলে গোবরধন মাড়য়ারি পাটের গুদাম ও গদীঘর অধিগ্রহণ করে পাক আমলে করা হয় জে. টি. সি। বর্তমান জুতাপট্টি জামে মসজিদ রোড-এর পূর্ব নাম “মাড়ওয়ারী পট্টি” এখানেই মাগুরার পৃথক শহর ও ব্যবসা কেন্দ্র যা শুরু করে মাড়ওয়ারীরা। চৌরঙ্গীমোড় থেকে জে. টি. সি ঘাট মূলত এই মাগুরা শহর, বাংলাদেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত থিয়েটার ক্লাবটি পরবর্তীতে মাগুরা “টাউন হল ক্লাব” নামে পরিচিত হয়। উক্ত হলটি মধুমতি সিনেমা হলকে ভাড়া দেয়া হয়। উল্লেখ্য, এটাই মাগুরার প্রথম সিনেমা হল। যা বর্তমানে সুপার মার্কেটের উপরে পুনরায় হল হবে বলে পরিকল্পনা আছে। জে. টি. সি ঘাট ছিল স্টিমার ঘাট। পূর্বাশা সিনেমা হল পাক/ ইংরেজ আমলের পুলিশ ব্যারাকের উপর। ১৯৬৮ সালে মহাকুমা প্রশাসকের অফিসের উত্তর পার্শ্বে পুলিশ ব্যারাক চলে গেলে তা পরিত্যক্ত হয়।
১৯৬৫ সালে মাগুরায় টেলিফোন চালু হয়। বর্তমান এল.জি.ই.ডি ইঞ্জিনিয়ারের বাসভবন ছিল একচেঞ্জ ভবন যা ১৯৮৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ভায়না মোড়ের মাইক্রোওয়েভ এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬৪ সালে মাইক্রোওয়েভ চালু হয় বর্তমান স্থানে। ১৯৬২ সালে শুরু হয় মাগুরা ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া। ব্রিজের দুই পার্শ্বে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মাঝে পানি নিষ্কাশন করে ব্রিজ তৈরি হয়। ১৯৭০ সালেই দক্ষিণ পার্শ্বের প্রথম ৪টা গেট শেষ হয়।
১৯৬৩ সালে টাউন কমিটি ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে চৌরঙ্গী মোড় থেকে নদী পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন ড্রেন। জুতাপট্টি দিয়ে পুরাতন বাজারে নিচতলা ঘাটের উপর ছিল একটা ভবন। বর্তমানে সেটা হোটেল যা ছিল পূর্বের স্টিমার কাউন্টার। পাক আমলে এটা ছিল শিক্ষা অফিস। পুরাতন বাজার এলাকায় একটা মসজিদ আছে যার নির্মাণ কাল ১৯১৭ সালে জানা যায়। এতে প্রমাণিত হয় এটা আদি মুসলিম জনবসতি এলাকা এবং মাগুরার পুরাতন মসজিদ। ১৯২৪ সালে মাগুরা কলেজ রোডে খরিদকৃত ০.৪৬ শতক জমির উপর একটি পাবলিক লাইব্রেরি লিন্ডসে লাইব্রেরি নাম প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহাই ১৯৪৮ সালে “কয়েদে আজ মোমারিয়াল লাইব্রেরি” তে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর এই লাইব্রেরিটি মাগুরা কৃতি সন্তান শহীদ সৈয়দ আতর আলী সাহেবের নামে নামকরণ করা হয়।
দুধ মল্লিক বালিকা বিদ্যালয়ের স্থানের সাবেক গুরু ট্রেনিং পি. টি আই নামে ঢাকা রোডে যায় ১৯৬৩ সালে। ১৯১০ সালে এখানে গুরু ট্রেনিং স্কুল শুরু হয়েছিল। মাগুরা থানার কাজ শুরু হয় ইংরেজ আমল থেকে বর্তমান স্থানে। ১৯২২ সালে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা একটা একতলা ভবন হয়। সেটা ভেঙ্গে ১৯৯৮ সালে নতুন ভবনের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬২ সালে উইয়ার কাম কাজে ব্রিজের ব্যয় ধরা ছিল তৎকালে ৯ কোটি টাকা। ১৯৭০ সালে সড়ক হিসেবে তুলে দেয়া হয় ৪টি গেইটসহ নবগঙ্গা বাঁধ। পুলিশ সুপারের অফিসের গেট ছিল প্রথমকালের বাসস্ট্যান্ড। যশোর, চুয়াডাঙ্গা গাড়ি চলতো। ৫০ এর দশকে ঢাকা রোডে দুটি খাদ্য গুদাম নির্মিত হয়। ১৯৬৭ সালে মাগুরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সড়কের দুই পার্শ্বে কিছু হিন্দুদের বাড়ি নিয়েই মাগুরার আদি বসতি ও শহর। সংক্ষেপে এই হলো মাগুরা শহরের ইতিকথা।
তথ্য সংগ্রহে:
আবু বাসার আখন্দ
সহ-সভাপতি, যশোর.ইনফো
/
জেলা প্রতিনিধি
মাছরাঙ্গা টেলিভিশন
ভোরের কাগজ
দি এডিটর (অনলাইন নিউজ পেপার)
সকালের খবর