
Home যোদ্ধা-বিদ্রোহী / Fighters-Rebel > ডা. কাজী শামসুর রহমান / Dr. Kazi Shamsur Rahman (1928- )
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100022 বার পড়া হয়েছে
ডা. কাজী শামসুর রহমান / Dr. Kazi Shamsur Rahman (1928- )
ডা. কাজী শামসুর রহমান
Dr. Kazi Shamsur Rahman
Home District: Narail, Lohagara
Dr. Kazi Shamsur Rahman
Home District: Narail, Lohagara
ডাক্তার কাজী মোঃ শামসুর রহমান বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যয়নকালে তিনি ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন এবং আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ত্যাগ প্রদর্শন করেছেন।
পারিবারিক পরিচিতি:
ডাক্তার কাজী মোঃ শামসুর রহমানের পৈত্রিক বাড়ি বর্তমান নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্জ্ব হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান ছিলেন কলকাতার এক পিরের খাদেম। শামসুর রহমান ১৯২৮ সালে মাগুরা জেলার মন্ডল গাঁড়ি গ্রামের মাতুলালয়ে ভূমিষ্ঠ হন।
শৈশব ও শিক্ষা:
ডাক্তার কাজী মোঃ শামসুর রহমানের শৈশব কেটেছে সমাজের অন্য দশটি বাভালি শিশুর মতোই। পিতার গভীর ইচ্ছেয় তাকে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে হয়। গৃহ শিক্ষক আমির সরদারের কাছে তাঁর লেখাপড়া জীবনের শুরু। এরপর তিনি কলকাতার অমৃত একাডেমীতে ভর্তি হন। ৮ম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে শিশু শামসুর রহমানের পরিবার লোহাগড়া উপজেলার পৈত্রিক নিবাস কুমাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি ভর্তি হন লক্ষীপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৪৪ সালে শামসুর রহমান লক্ষীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। ঐ বছরই তিনি কলকাতা ক্যাম্বেল মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি বিদ্যাশিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এই কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৫০ সানে (তখন তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র) বারমাইকেল হোসেন অবস্থান কালে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হন ডাক্তার শামসুর রহমান। কলকাতার পাকিস্তানী দূতাবাসের সহযোগিতায় শামসুর রহমান কোনো ভাবে দেশে ফিরে আসেন। নানা চেষ্টা চরিত্র করে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ পান। ১৯৫৬ সালে কাজী শামসুর রহমান এমবিবিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ইন্টার্নি শেষ করে ইপিআইডিসিতে চাকরি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি খুলনার পস্নাটিনাম জুবালি জুটমিলে পদায়িত হন।
ভাষা আন্দোলনে যোগদান:
১৯৫২ সালে ডাক্তার কাজী শামসুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মাতৃভাষার জন্য সারা দেশ তখন আন্দোলন মুখী। কাজী শামসুর রহমান তার অজান্তে মায়ের ভাষার দাবিতে স্বোচ্চার হলেন। তিনি তখন অবস্থান করতেন মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ৬/৫নং কক্ষে। ঐ কলেজেই অবস্থান করতেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা পো ভিপি ডাঃ মোঃ জাহেদ। তিনি ছিলেন শামসুর রহমানের রুমমেন্ট। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিষদ হরতাল পালনে অনীহা প্রকাশ করে। তারা আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যাতে ১৪৪ ধারা ভাঙা না হয়। তার ছাত্ররা বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে রাস্তায় নেমে যান। তারা কোনো ভাবেই আর নিজেদের ধরে রাখতে পারেন নি। সেদিন ঢাকার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিলো রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে। (এক পর্যায়ে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে যান। এই মারমুখী রাষ্ট্রভাষার দাবিদার ছাত্র সমাজের মধ্যে কাজী শামসুর রহমানও ছিলেন। ছাত্রদের সম্মিলিত (সকালের) সভার সভাপতিত্ব করেন ভাষা সৈনিক সামিউল হক। আর এই সভার প্রসত্মাবক ছিলেন এম আর আখতার মুকুল। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় চারজন কিংবা দশ জনের একটি একটি দল নিয়ে তারা মিছিল করবেন। যেমন সিদ্ধান্ত তেমনি কার্যকর ভূমিকা। দুপুরের পরে প্রায় সোয়া ৩টা নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ মোরেশির নেতৃত্বে একদল দাঙ্গা পুলিশ মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে মারমুখী পজিশন নেয়। ইতোমধ্যে মিছিলটি শুধু ছাত্রদের থাকেনি। ছাত্র জনতা এককাতারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মিছিল বিক্ষোভ থামিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ জনতার ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ছুড়তে থাকে। তাতেও ভাষার দাবির বিক্ষোভ ঠেকানো যায়নি। পুলিশ ছাত্র জনতার ওপর গুলি নিক্ষেপ করে তাতেই নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল জব্বার আবুল বরকত, সালাউদ্দিন, রফিউদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া আহত হয় অসংখ্য ছাত্র জনতা। ডাঃ কাজী শামসুর রহমান মিছিল থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেন। তবে তিনি আহত মানুষের সেবায় নিয়োজিত হন। সেদিন ডাক্তার কাজী শামসুর রহমানের কক্ষটি ছিলো আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহনের কেন্দ্র। সেদিন ডাক্তার নার্স কর্মচারীদের সঙ্গে আহত ভাষা সৈনিকদের সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে দিলেন। ধীরে ধীরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে তিনি কর্মজীবনে চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
পেশাগত জীবন:
ডাক্তার কাজী শামসুর রহমান বিখ্যাত চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি খুলনা বিত্রমএ শাখার সভাপতি ছিলেন। আজ ও চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন।
লেখকঃ মহসিন হোসাইন
নড়াইল
মোবাইল :
০১৫৫৬৪২৫৪০৭,
০১৬৭০৭৪৯৫২৪