
Home নড়াইল জেলা / Narail District > নড়াইল জেলার প্রাকৃতিক দূর্যোগ / Natural Disaster of Narail District
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99962 বার পড়া হয়েছে
নড়াইল জেলার প্রাকৃতিক দূর্যোগ / Natural Disaster of Narail District
নড়াইল জেলার প্রাকৃতিক দূর্যোগ
Natural Disaster of Narail District
আকাল:
নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যা করে ইংরেজ এদেশ প্রায় দু’শত বছর শাসন করে। ইংরেজ শাসনের এক যুগ পর ইংরেজী ১৭৬৯ ও ৭০ সালে লর্ড ক্লাইভ মুঘল সরকারের নিকট থেকে বাংলার দেওয়ানী লাভ করে দেশে দ্বৈত শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানী সরকার ও তাদের দোসর লুটেরা মুৎসুদ্দীদের অত্যাচারে বাংলায় এক অবর্ননীয় আকাল (দুর্ভিক্ষ) দেখা দেয়। এই আকালে সারা বাংলায় লক্ষাধিক লোক মারা যায়। নড়াইল জেলায়ও এই আকালে ৩৬৩ জন মারা যায়। মৎসজীবি সম্প্রদায়ের লোক বেশী মারা যায়। আজও মানুষ ৭৬ সালের আকালের গল্প বলে।
১৯৪৩ (১৩৫০) সালের মনান্তর:
১৯৪২ সালে বাংলার অধিক শস্য উৎপাদিত এলাকাসমূহে বন্যার দরুণ ফসলের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়। এছাড়া দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন দেশের উপর চেপে বসে। বার্মা জাপানের দখলে, চট্টগ্রাম সীমান্তের অদূরে জাপানী সৈন্য উপস্থিত। দেশের যানবাহনসমূহ যুদ্ধের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে সারা বাংলায় আকাল বা মনান্তর নেমে আসে। ১৯৪৩ সালের এই মনান্তরকে লোকে পঞ্চাশের মনান্তর বলে। দেশে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। এই মনান্তরকে অধিকতর ভয়াবহ করে তোলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ‘মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি”। এই সময় কালিয়া উপজেলাও দারুণভাবে মনান্তরের আঘাতে জর্জরিত হয়। কিছু লোক অনাহারে ও অপুষ্টিতে মারা যায়। জেলার লোহাগড়া উপজেলার জনৈক লোককবির ধুয়া গান হতে ১৩৫০ সালে মনান্তর সম্বন্ধে আঁচ করা যায়।
নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যা করে ইংরেজ এদেশ প্রায় দু’শত বছর শাসন করে। ইংরেজ শাসনের এক যুগ পর ইংরেজী ১৭৬৯ ও ৭০ সালে লর্ড ক্লাইভ মুঘল সরকারের নিকট থেকে বাংলার দেওয়ানী লাভ করে দেশে দ্বৈত শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানী সরকার ও তাদের দোসর লুটেরা মুৎসুদ্দীদের অত্যাচারে বাংলায় এক অবর্ননীয় আকাল (দুর্ভিক্ষ) দেখা দেয়। এই আকালে সারা বাংলায় লক্ষাধিক লোক মারা যায়। নড়াইল জেলায়ও এই আকালে ৩৬৩ জন মারা যায়। মৎসজীবি সম্প্রদায়ের লোক বেশী মারা যায়। আজও মানুষ ৭৬ সালের আকালের গল্প বলে।
১৯৪৩ (১৩৫০) সালের মনান্তর:
১৯৪২ সালে বাংলার অধিক শস্য উৎপাদিত এলাকাসমূহে বন্যার দরুণ ফসলের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়। এছাড়া দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন দেশের উপর চেপে বসে। বার্মা জাপানের দখলে, চট্টগ্রাম সীমান্তের অদূরে জাপানী সৈন্য উপস্থিত। দেশের যানবাহনসমূহ যুদ্ধের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে সারা বাংলায় আকাল বা মনান্তর নেমে আসে। ১৯৪৩ সালের এই মনান্তরকে লোকে পঞ্চাশের মনান্তর বলে। দেশে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। এই মনান্তরকে অধিকতর ভয়াবহ করে তোলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ‘মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি”। এই সময় কালিয়া উপজেলাও দারুণভাবে মনান্তরের আঘাতে জর্জরিত হয়। কিছু লোক অনাহারে ও অপুষ্টিতে মারা যায়। জেলার লোহাগড়া উপজেলার জনৈক লোককবির ধুয়া গান হতে ১৩৫০ সালে মনান্তর সম্বন্ধে আঁচ করা যায়।
“তেরশত পঞ্চাশ সাল
আসল ভীষণ আকাল,
দেড় পয়সার রেঙ্গুন চাল
বুনো কচু ফ্যানের ডাল,
কখন মেলে কখন মেলেনা।”
আসল ভীষণ আকাল,
দেড় পয়সার রেঙ্গুন চাল
বুনো কচু ফ্যানের ডাল,
কখন মেলে কখন মেলেনা।”
১৯৭৪ সাল:
আওয়ামীলীগের প্রধান ও বিশ্বখ্যাত নেতা ও তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের আমলে সারাদেশে খাদ্যাভাব দেখা যায়। নড়াইল জেলার তিনটি থানার গ্রামাঞ্চলে লংগরখানা খোলা হয়। অনাহারে এ জেলায় শতাধিক লোক মারা যায়। কিন্তু সে সময় সরকার বলেছে না খেয়ে থাকার কারণে কেহ মারা যায়নি। অপুষ্টি জনিত কারণে ডায়রিয়া, আমাশয় প্রভৃতি রোগের কারণে লোকজন মারা গেছে। সে সময়ের অধুনালুপ্ত দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায় যে, দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় নড়াইলে চরম খাদ্যাভাব ও বিভিন্ন রোগে গত তিন মাসে ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে এ জেলায় আর কোন আকাল হয়নি।
মহামারী:
এ জেলায় ম্যালেরিয়া, কলেরা, গুটিবসন্ত রোগে প্রতিবছর শতাধিক লোক প্রাণ হারাতো। ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বর নড়াইল, লোহাগড়া থানা এলাকায় ছিল প্রকট। ২০ থেকে ৪০ দশকের শেষের দিকে এ সব রোগে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিবছর বাংলা আশ্বিন কার্ত্তিক ও ফাল্গুন চৈত্র মাসে কলেরা ও গুটিবসন্ত রোগে সারা গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পড়তো। সে যুগে প্রতিরোধক টিকা ইনজেকশনের এত প্রচলন হয়নি। গ্রামের মানুষের মধ্যে কুসংস্কার ছিল এসব রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে। যে কারণে প্রাণহানির সংখ্যা বেশী হতো। বর্তমানে নড়াইল জেলার তিনটি থানা সদরে সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারী ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এসব স্থানে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলার মধ্যে লোহাগড়া থানার মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশ সচেতন।
খরা:
১৯৫৮ সালে এ জেলায় অগ্রহায়ন মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত একটানা খরা হয়েছিল। ফলে গ্রামাঞ্চলে কলেরা মহামারি দেখা দেয়। এর পর থেকে একটানা এতদিন খরা আর হয়নি।
বন্যা:
নড়াইল জেলার নদীগুলিতে এক সময় পলি প্রবাহ ছিল। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে এখন আর নদীতে গভীরতা নেই। নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। বন্যা যেমন মানুষকে দুঃখ দেয় তেমনি পলি বহন করে জমিতে পলিমাটি ছড়িয়ে দিত। এখন নদীগুলো শুধু মানুষের দুঃখ বয়ে আনতে পারে।
১৯৫৪ ঐ বছর এই জেলায় ব্যাপক বন্যা হয়েছিল। প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। বহু লোক এই বন্যায় মারা যায়। এ বন্যায় ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
১৯৭১ সাল- এই বছর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। একদিকে পাক-হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে গ্রামের মানুষ দিশেহারা এবং অপরদিকে বন্যার ফলে গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে।
১৯৮৮ সাল এ বছরের বন্যায় জেলায় লোহাগড়া ও কালিয়া থানার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য আশ্রয় শিবির খোলা হয় এবং নোঙ্গরখানা চালু করা হয়। লোহাগড়া পাইলট হাইস্কুলে একটি আশ্রয় কেন্দ্র ও নোঙ্গরখানা চালু করা হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ.এম. এরশাদ লোহাগড়া থানা সদরের মোল্লাহর মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করেন এবং পরে বন্যা কবলিত থানার বিল ইছামতি এলাকার গন্ডব, চালিঘাটসহ কয়েকটি গ্রাম স্পীডবোটে পরিদর্শন করেন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় মন্ত্রী ও সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আতিকুর রহমান এ জেলার বন্যা দুর্গত এলাকা সফর করেন।
তথ্য সূত্র:
নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থাননাম
লেখক: মহসিন হোসাইন
প্রকাশকাল: ২০০১
/
নড়াইল জেলার অতীত বর্তমান
লেখক: আকরামুজ্জামান মিলু
আপডেট:
এপ্রিল ২০১২