
Home নড়াইল জেলা / Narail District > কয়েকটি স্মরণীয় রাজনৈতিক ঘটনা / Some memorable political events
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99974 বার পড়া হয়েছে
কয়েকটি স্মরণীয় রাজনৈতিক ঘটনা / Some memorable political events
কয়েকটি স্মরণীয় রাজনৈতিক ঘটনা
Some memorable political events
দক্ষিণ বঙ্গের একটি প্রসিদ্ধ জনপদ নড়াইল। বহু কৃতি সন্তানের জন্ম দিয়েছে এ মাটি। বহু কৃতি সনত্মানের পৈত্রিক বাড়ী এ জেলায়। সেই বৃটিশ আমল হতে উপ-মহাদেশের বহু বিখ্যাত রাজনীতিবিদগণ এই নড়াইলের মাটি স্পর্শ করেছেন। ১৯২৯ সালে জেলার কালিয়ায় যশোর ও খুলনা অঞ্চলের যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ফরোয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস কর্মীদের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু উদ্বোধন করেন। নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু কালিয়ার প্রসিদ্ধ সেন বাড়ীর সুধীর সেনের বাড়ীতে রাত্রি যাপন করেছিলেন। এর আগে একবার ১৯২২ সালে সুবাস চন্দ্র বসু নড়াইলে কংগ্রেসের এক কর্মী সভায় যোগদান করতে এসেছিলেন। সে যুগে নড়াইল কংগ্রেসের মহিলা নেত্রী ছিলেন রঙ্গীনী বালা দেবী। সুবাস বসু রংগিনী বালা দেবীকে বড়মা হিসাবে সম্বোধন করতেন। সুবাস বসু ঐ মহিলার বাড়ীতে প্রথমে উঠেছিলেন। (বাড়িটি বর্তমানে নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে)। রংগিনী বালা দেবী হচ্ছেন বর্তমান নড়াইল বারের আইনজীবি বারীন ভট্টাচার্যের দাদী। অর্থাৎ প্রয়াত অ্যাডভোকেট মনিন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের (মনি বাবু) মাতা।
১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোরে স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেন। তারপর থেকে নড়াইল জেলায় মুসলিম লীগ দলের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যায় এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৯৪৬ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী পরিবারের কর্ণেল সোহরাওয়ার্দী, পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম স্পীকার মৌলবী তমিজউদ্দিন, প্রখ্যাত গায়ক সুর সম্রাট আব্বাস উদ্দিন জেলার কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া হাইস্কুল মাঠ ও বারইপাড়া গ্রামে জনসভায় বক্তব্য রাখেন। এক সময়ে যশোর অঞ্চলের মুকুটহীন রাজা হিসাবে পরিচিত প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দী ছিল বর্তমান মাগুরা জেলার বেরইল গ্রামের মৌলভী আব্দুল আউয়াল। মুসলীম লীগ প্রার্থী আব্দুল আউয়ালের নিকট সৈয়দ নওশের আলী পরাজিত হন। সৈয়দ নওশের আলীকে নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নলদী, লাহুড়িয়া, বড়দিয়া, কালিয়া, শিয়ারবরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সফর করেন এবং জনসভায় ভাষণ দেন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের দলের ভিতর ক্ষমতা বহির্ভূত ও কংগ্রেসের সমর্থক নেতৃবৃন্দ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর নেতৃত্বে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। সে সময় এ দলের নড়াইল এর কর্মকর্তা ছিলেন মরহুম আফছার উদ্দিন আহম্মদ ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের মরহুম মতিয়ার রহমান। সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যায় ও অবিচার তুলে ধরে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিমলীগ নেতৃবৃন্দ এ জেলায় ব্যাপক সাংগঠনিক সফর শুরু করলেন। ঢাকা থেকে সে সময় তরুণ নেতা শেখ মুজিবর রহমান নড়াইলের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর করেন। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিব বিভিন্ন সময়ে নড়াইল জেলায় সাংগঠনিক কাজে আসতেন।
১৯৫১ সালে মহিশাপাড়া গ্রামের ডাঃ আবু মিঞার সভাপতিত্বে এড়েন্দায় এক সভায় শেখ মুজিবর রহমান প্রধান বক্তা ছিলেন। সভায় স্বল্প সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিল। আমডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ রুস্তম আলী, যোগিয়া গ্রামের ডাঃ মোবারক হোসেন প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে মুসলীম লীগ দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন হয়ে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নামকরণ হয়। ঐ সময় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী দল ত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এ জেলায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) তেমন সাংগঠনিক শক্তি ছিল না, কিন্তু ছাত্র সাংগঠন বেশ শক্তিশালী ছিল। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের পূর্ববাংলা প্রদেশের আইন সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরীক দল ছিল। নড়াইলের বড়দিয়ার টোনা গ্রামের অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সেই আইন পরিষদে স্পীকার ও নির্বাচিত হন। সে সময় থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন শুরু হয়। দীর্ঘ ১০ বছর আইয়ুব খাঁনের শাসন চলে। ঐ সময় আওয়ামী লীগ, ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উপর অত্যাচার, জেল, জুলুম চলে। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। ঐ মামলার অন্যতম আসামী ছিলেন জেলার লোহাগড়া উপজেলার মাকড়াইল গ্রামের অধিবাসী নৌ-বাহিনীর লেফট্যানান্ট মতিয়ার রহমান। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর গর্জে উঠা বক্তব্য ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের ফসল হিসাবে সেদিন পাকিস্তান সামরিক প্রশাসক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হলেও পাকিস্তানের সামরিক সরকার শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। নির্বাচনের পূর্বে ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে শেখ মুজিব নড়াইল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এ জেলায় তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একটি আসন ছিল। পূর্বপাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের আসন ছিল দুইটি। অ্যাডভোকেট খন্দকার হাফিজুর রহমান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন কালিয়া থেকে সাঈদ আলী খান ও লোহাগড়া থেকে লেঃ মতিয়ার রহমান। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান নির্বাচিতদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে এ দেশের জনগন স্বত:স্ফুর্তাবে ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে। শুরু হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের পর স্বাধীনতা লাভ হয়। স্বাধীনতার পর সর্ব প্রথম ১৯৭৩ সালে এ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইল জেলায় (সে সময় মহাকুমা) দুটি জাতীয় সংসদীয় আসন সৃষ্টি হয়। এই দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বাকশাল গঠন করে। বাকশাল গঠন করার ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
১৯৭৭ সালে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি. এন. পি)। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের নিয়ে এই দল গঠন করা হয়। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে এ জেলার দুটি আসনেই বিএনপি প্রার্থীরা জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগের দুটি আসনেই প্রার্থী ছিল এবং তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা হয়। নড়াইল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবুল বাশার শিকদারের সাথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এখলাছ উদ্দিনের তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা হয়েছিল। নড়াইল-২ আসনে অ্যাডভোকেট এম. মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক মুন্সী হাফিজুর রহমানকে পরাজিত করেছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই নির্বাচনে তাঁর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জেলার লক্ষীপাশা হাইস্কুল মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার উৎপাদনমুখী কর্মসূচী ও খালকাটা কর্মসূচীর জন্য জেলার নলদীতে একটি খাল খনন উদ্বোধন করেন এবং জনসভায় বক্তব্য রাখেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর, তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার স্বল্প সময় ক্ষমতায় থাকার পর সেনা প্রধান এইচ. এম. এরশাদ সাত্তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ক্ষমতা দখল করে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকার মধ্যে জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই রাজনৈতিক দলে ইউ.পি.পি বিএনপির কিছু নেতা ও কর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতারা যোগদান করে। ১৯৮৬ সালে জেনারেল এইচ. এম. এরশাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে নাই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করে। জেলার দুটি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকমাস পূর্বে উপজেলা নির্বাচন হয়। থানাকে উপজেলা হিসাবে উত্তীর্ণ করার পর প্রথম নির্বাচনে জেলার তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদর থানা ছাড়া লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করে। লোহাগড়া উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ইউপিপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারী বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুস সবুর। শেখ আব্দুস সবুর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নক্সালপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সে সময় তার নেতৃত্বে শ্রেণী শত্রুর নামে অনেক নীরিহ লোককে হত্যা করা হয়। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তবর্র্তীকালীন সরকারে তত্ত্বাবধানে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এ জেলায় অবশ্য দুটি আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন প্রধান প্রধান বিরোধী দল বর্জন করে। এই নির্বাচনে নড়াইল-১ আসনে ডাঃ মনিরুল ইসলাম টিপু ও নড়াইল-২ আসনে আব্দুল কাদের শিকদার নির্বাচিত হন। নড়াইল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে। এই সংসদ কয়েক দিন স্থায়ী থাকে। এই সংসদেই তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিল পাশ করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন মাসে আবার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইলে এই নির্বাচনে ১ আসনে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্রনাথ সাহা ও ২ আসনে শরীফ খসরুজ্জামান নির্বাচিত হন।
জামায়াতের প্রার্থীরা ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে দুটি আসনেই বেশ ভোট পায়। নড়াইল-২ আসনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা নুরুন্নবী জিহাদী বেশ ভোট পান। বর্তমান জেলায় বিএনপি আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাসদ আছে। তবে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যকলাপ চোখে পড়ে। ১৯৯০ ও ৯১ সালে নড়াইল শহরে দু’দল ছাত্র সংঘর্ষে দুজন ছাত্র নিহত হয়। এছাড়া ১৯৯৪ সালে জেলার লোহাগড়া কলেজে ছাত্রদল নেতা মুন্সী জিয়াউল হক মিলু ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নিহত হয়। এই হত্যাকান্ডের মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং আরও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদী জেল হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে সকল আসামী রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছে বলে সংবাদ পত্রের খবরে জানা যায়। জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ নয় বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন এ জেলায় অনেক আন্দোলন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জেলার অনেক ছাত্র জনতা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। লোহাগড়া উপজেলা ঘেরাও করতে এসে বিক্ষোভকারী জনতার উপর পুলিশ গুলি চালায় এবং আমদা গ্রামের হাফিজুর রহমান মোল্যা নামে একজন নিহত হয়।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় অনেক জাতীয় নেতা এ জেলায় বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফরে এসে জনসভা করেছেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। নড়াইলে এ দলের অবস্থান ছিল খুব দৃঢ়। জাসদ নেতা আ.স.ম আব্দুর রব নড়াইলে জনসভা করতে এসে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সে সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ১৯৭২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের দৃষ্ট জাতীয় রক্ষী বাহিনী, জাসদ কর্মী ও বামপন্থী কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় ও নানা রকম নির্যাতন করতে থাকে।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী ১৯৭৩ সালে নড়াইলের লোহাগড়ায় সফরে আসেন। সে সময় তিনি লক্ষ্মীপাশার আইনজীবি ও তৎকালীন ন্যাপের বিশিষ্ট নেতা (বর্তমানে বিএনপি নেতা) ওমর ফারুকের বাড়ীতে দুপুরে বিশ্রাম নেওয়ার পর বিকালে লক্ষ্মীপাশা মোল্যার মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন। রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারসহ সে সময়ের আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরেন।
তথ্য সূত্র:
নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থাননাম
লেখক: মহসিন হোসাইন
প্রকাশকাল: ২০০১
/
নড়াইল জেলার অতীত ও বর্তমান
লেখক : আকরামুজ্জামান মিলু
সম্পাদনা:
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
শামিউল আমিন শান্ত
আপডেট:
এপ্রিল ২০১২
১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোরে স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেন। তারপর থেকে নড়াইল জেলায় মুসলিম লীগ দলের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যায় এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৯৪৬ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী পরিবারের কর্ণেল সোহরাওয়ার্দী, পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম স্পীকার মৌলবী তমিজউদ্দিন, প্রখ্যাত গায়ক সুর সম্রাট আব্বাস উদ্দিন জেলার কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া হাইস্কুল মাঠ ও বারইপাড়া গ্রামে জনসভায় বক্তব্য রাখেন। এক সময়ে যশোর অঞ্চলের মুকুটহীন রাজা হিসাবে পরিচিত প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দী ছিল বর্তমান মাগুরা জেলার বেরইল গ্রামের মৌলভী আব্দুল আউয়াল। মুসলীম লীগ প্রার্থী আব্দুল আউয়ালের নিকট সৈয়দ নওশের আলী পরাজিত হন। সৈয়দ নওশের আলীকে নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নলদী, লাহুড়িয়া, বড়দিয়া, কালিয়া, শিয়ারবরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সফর করেন এবং জনসভায় ভাষণ দেন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের দলের ভিতর ক্ষমতা বহির্ভূত ও কংগ্রেসের সমর্থক নেতৃবৃন্দ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর নেতৃত্বে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। সে সময় এ দলের নড়াইল এর কর্মকর্তা ছিলেন মরহুম আফছার উদ্দিন আহম্মদ ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের মরহুম মতিয়ার রহমান। সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যায় ও অবিচার তুলে ধরে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিমলীগ নেতৃবৃন্দ এ জেলায় ব্যাপক সাংগঠনিক সফর শুরু করলেন। ঢাকা থেকে সে সময় তরুণ নেতা শেখ মুজিবর রহমান নড়াইলের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর করেন। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিব বিভিন্ন সময়ে নড়াইল জেলায় সাংগঠনিক কাজে আসতেন।
১৯৫১ সালে মহিশাপাড়া গ্রামের ডাঃ আবু মিঞার সভাপতিত্বে এড়েন্দায় এক সভায় শেখ মুজিবর রহমান প্রধান বক্তা ছিলেন। সভায় স্বল্প সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিল। আমডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ রুস্তম আলী, যোগিয়া গ্রামের ডাঃ মোবারক হোসেন প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে মুসলীম লীগ দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন হয়ে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নামকরণ হয়। ঐ সময় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী দল ত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এ জেলায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) তেমন সাংগঠনিক শক্তি ছিল না, কিন্তু ছাত্র সাংগঠন বেশ শক্তিশালী ছিল। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের পূর্ববাংলা প্রদেশের আইন সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরীক দল ছিল। নড়াইলের বড়দিয়ার টোনা গ্রামের অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সেই আইন পরিষদে স্পীকার ও নির্বাচিত হন। সে সময় থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন শুরু হয়। দীর্ঘ ১০ বছর আইয়ুব খাঁনের শাসন চলে। ঐ সময় আওয়ামী লীগ, ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উপর অত্যাচার, জেল, জুলুম চলে। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। ঐ মামলার অন্যতম আসামী ছিলেন জেলার লোহাগড়া উপজেলার মাকড়াইল গ্রামের অধিবাসী নৌ-বাহিনীর লেফট্যানান্ট মতিয়ার রহমান। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর গর্জে উঠা বক্তব্য ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের ফসল হিসাবে সেদিন পাকিস্তান সামরিক প্রশাসক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হলেও পাকিস্তানের সামরিক সরকার শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। নির্বাচনের পূর্বে ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে শেখ মুজিব নড়াইল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এ জেলায় তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একটি আসন ছিল। পূর্বপাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের আসন ছিল দুইটি। অ্যাডভোকেট খন্দকার হাফিজুর রহমান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন কালিয়া থেকে সাঈদ আলী খান ও লোহাগড়া থেকে লেঃ মতিয়ার রহমান। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান নির্বাচিতদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে এ দেশের জনগন স্বত:স্ফুর্তাবে ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে। শুরু হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের পর স্বাধীনতা লাভ হয়। স্বাধীনতার পর সর্ব প্রথম ১৯৭৩ সালে এ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইল জেলায় (সে সময় মহাকুমা) দুটি জাতীয় সংসদীয় আসন সৃষ্টি হয়। এই দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বাকশাল গঠন করে। বাকশাল গঠন করার ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
১৯৭৭ সালে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি. এন. পি)। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের নিয়ে এই দল গঠন করা হয়। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে এ জেলার দুটি আসনেই বিএনপি প্রার্থীরা জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগের দুটি আসনেই প্রার্থী ছিল এবং তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা হয়। নড়াইল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবুল বাশার শিকদারের সাথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এখলাছ উদ্দিনের তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা হয়েছিল। নড়াইল-২ আসনে অ্যাডভোকেট এম. মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক মুন্সী হাফিজুর রহমানকে পরাজিত করেছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই নির্বাচনে তাঁর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জেলার লক্ষীপাশা হাইস্কুল মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার উৎপাদনমুখী কর্মসূচী ও খালকাটা কর্মসূচীর জন্য জেলার নলদীতে একটি খাল খনন উদ্বোধন করেন এবং জনসভায় বক্তব্য রাখেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর, তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার স্বল্প সময় ক্ষমতায় থাকার পর সেনা প্রধান এইচ. এম. এরশাদ সাত্তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ক্ষমতা দখল করে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকার মধ্যে জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই রাজনৈতিক দলে ইউ.পি.পি বিএনপির কিছু নেতা ও কর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতারা যোগদান করে। ১৯৮৬ সালে জেনারেল এইচ. এম. এরশাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে নাই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করে। জেলার দুটি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকমাস পূর্বে উপজেলা নির্বাচন হয়। থানাকে উপজেলা হিসাবে উত্তীর্ণ করার পর প্রথম নির্বাচনে জেলার তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদর থানা ছাড়া লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করে। লোহাগড়া উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ইউপিপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারী বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুস সবুর। শেখ আব্দুস সবুর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নক্সালপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সে সময় তার নেতৃত্বে শ্রেণী শত্রুর নামে অনেক নীরিহ লোককে হত্যা করা হয়। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তবর্র্তীকালীন সরকারে তত্ত্বাবধানে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এ জেলায় অবশ্য দুটি আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন প্রধান প্রধান বিরোধী দল বর্জন করে। এই নির্বাচনে নড়াইল-১ আসনে ডাঃ মনিরুল ইসলাম টিপু ও নড়াইল-২ আসনে আব্দুল কাদের শিকদার নির্বাচিত হন। নড়াইল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে। এই সংসদ কয়েক দিন স্থায়ী থাকে। এই সংসদেই তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিল পাশ করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন মাসে আবার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইলে এই নির্বাচনে ১ আসনে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্রনাথ সাহা ও ২ আসনে শরীফ খসরুজ্জামান নির্বাচিত হন।
জামায়াতের প্রার্থীরা ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে দুটি আসনেই বেশ ভোট পায়। নড়াইল-২ আসনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা নুরুন্নবী জিহাদী বেশ ভোট পান। বর্তমান জেলায় বিএনপি আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাসদ আছে। তবে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যকলাপ চোখে পড়ে। ১৯৯০ ও ৯১ সালে নড়াইল শহরে দু’দল ছাত্র সংঘর্ষে দুজন ছাত্র নিহত হয়। এছাড়া ১৯৯৪ সালে জেলার লোহাগড়া কলেজে ছাত্রদল নেতা মুন্সী জিয়াউল হক মিলু ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নিহত হয়। এই হত্যাকান্ডের মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং আরও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদী জেল হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে সকল আসামী রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছে বলে সংবাদ পত্রের খবরে জানা যায়। জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ নয় বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন এ জেলায় অনেক আন্দোলন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জেলার অনেক ছাত্র জনতা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। লোহাগড়া উপজেলা ঘেরাও করতে এসে বিক্ষোভকারী জনতার উপর পুলিশ গুলি চালায় এবং আমদা গ্রামের হাফিজুর রহমান মোল্যা নামে একজন নিহত হয়।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় অনেক জাতীয় নেতা এ জেলায় বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফরে এসে জনসভা করেছেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। নড়াইলে এ দলের অবস্থান ছিল খুব দৃঢ়। জাসদ নেতা আ.স.ম আব্দুর রব নড়াইলে জনসভা করতে এসে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সে সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ১৯৭২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের দৃষ্ট জাতীয় রক্ষী বাহিনী, জাসদ কর্মী ও বামপন্থী কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় ও নানা রকম নির্যাতন করতে থাকে।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী ১৯৭৩ সালে নড়াইলের লোহাগড়ায় সফরে আসেন। সে সময় তিনি লক্ষ্মীপাশার আইনজীবি ও তৎকালীন ন্যাপের বিশিষ্ট নেতা (বর্তমানে বিএনপি নেতা) ওমর ফারুকের বাড়ীতে দুপুরে বিশ্রাম নেওয়ার পর বিকালে লক্ষ্মীপাশা মোল্যার মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন। রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারসহ সে সময়ের আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরেন।
তথ্য সূত্র:
নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থাননাম
লেখক: মহসিন হোসাইন
প্রকাশকাল: ২০০১
/
নড়াইল জেলার অতীত ও বর্তমান
লেখক : আকরামুজ্জামান মিলু
সম্পাদনা:
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
শামিউল আমিন শান্ত
আপডেট:
এপ্রিল ২০১২