
Home যশোর জেলা / Jessore District > যশোর ইতিবৃত্ত- আপডেট চলছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 4481 বার পড়া হয়েছে
যশোর ইতিবৃত্ত- আপডেট চলছে
প্রাচীন আমল ঃ- বঙ্গদেশে প্রেসিডেন্সী বিভাগের পূর্ব অংশই যশোর খুলনা জেলা। যশোর অতি প্রাচীন রাজ্য। ১৮৮২ খ্রিঃ যশোর খুলনা হতে বিচ্যত হয়ে পৃথক জেলায় পরিণত হয়। এই জেলা বঙ্গদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত।১ বর্তমানের এই যশোর জেলা প্রাচীনকালে অসংখ্য নদ-নদী বিধৌত ছিল বলে এখানে জেলে সমপ্রদায়ের লোকেরা প্রথম বসতি গড়ে তুলেছিল।২ খ্রিষ্ট্রীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর টলেমির মানচিত্রে চিহ্নিত বদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলই বর্তমান যশোর জেলা এবং গঙ্গার দুটি প্রধান শাখা নদী ভাগীরথী ও পদ্মা নদীর দ্বারা এ ব-দ্বীপ গঠিত হয়েছে।৩ এই ব-দ্বীপ সমগ্র বঙ্গেও অংশ এবং এটি বহু প্রাচীন গ্রন্থে উপবঙ্গ বলে খ্যাত। মহাভারত, কালিদাসের রঘুবংশ কাব্য এবং অন্যান্য পুরাণ গ্রন্থাদিতে যশোর জেলা পূর্বে বংগ ও পশ্চিমে সূক্ষ্ণ নামে দুটি শক্তিশালী রাজ্যেও মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বলে উলে¬খ পাওয়া যায়। প্রাচীন আমলের এই রাজ্যের সীমা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না হলেও পঞ্চম শতাব্দীতে যশোর বঙ্গেও অন্তর্গত ছিল বলে অনমান করা হয়।৪
খ্রিস্ট্রিয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দী ঃ- টলেমির মানচিত্র থেকে জানা যায় যে, খ্রিষ্ট্রীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে যশোর জেলাসহ বাংলার সমগ্র ব-দ্বীপাঞ্চল গঙ্গারাষ্ট্র নামে এক শক্তিশালী রাজ্যেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই গঙ্গারাষ্ট্রেও রাজধানী কুরার নদীর মোহনায় অবস্থিত গঙ্গাবন্দেও বিদ্যমান ছিল। গ্রীক ও লাটিন লেখকরা যাকে গঙ্গে বা গঙ্গারেডিয়া বলে অভিহিত করেছেন। খ্রিঃ পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমার্ধে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্টিা করেন। তাঁর রাজ সভার গ্রীক ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিস ‘ইন্তিকা’ নামে তার ভ্রমণকাহিনীতে গঙ্গারিডি, গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গারেডিয়া রাজ্যের উলে¬খ করেছেন। তিনি বলে, ‘‘গঙ্গারাঢ়ীদিগের হস্তিসৈন্যের ভয়ে অন্য রাজগণ তাহাদিগকে আক্রমণ করিতেন না। এমন কি সর্ব্ব জয়ী আলেকজান্ডারও গঙ্গাতীরে উপনীত হইয়া গঙ্গারাঢ়ীদিগের প্রতাপ শুনিয়া সেইস্থান হইতে প্রস্থান করেন।৫ বিশেষত: খ্রিঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে দেখা যায় রাষ্ট্রকুট জাতি বঙ্গেও যে অংশে বসতি স্থাপন কেও তারই নাম হয় রাঢ় বা লাঢ় যাকে আমরা দক্ষিণ বঙ্গ, দক্ষিণ রাঢ় বা যশোরাঞ্চল বলে উলে¬খ করতে পারি। এর থেকে মনে হয় গঙ্গারিডি একটি বিস্তৃত রাজ্য ছিল এবং বঙ্গদেশ এর অন্তর্গত ছিল।১ সুতরাং উপবঙ্গ বা যশোর-খুলনা এই গঙ্গারিডিরই অংশ এবং বৌদ্ধযুগে এই উপবঙ্গই সমতট নামে পরিচিত হয়, যা সমুদ্র হতে পদ্মা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।২ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যেও রাজত্বকালে বঙ্গদেশের সর্বত্র ব্রক্ষ্ণনাচার বিলুপ্ত হয়ে জৈনধর্ম বিস্তৃতি লাভ করেছিল। বৌদ্ধ ধর্মেও বহু পূর্ব হতেই জৈন ধর্ম বঙ্গে প্রচারিত হতে থাকে। যদিও উভয় ধর্মের আবির্ভাব ঘটে খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দীতে। জৈনধর্মেও প্রভাব বশত: বৌদ্ধ ধর্ম বঙ্গে সহজে প্রসার লাভ করতে পারেনি। ফলে অনেকদিন পর্যন্ত উভয় ধর্মেও মধ্যে সংঘর্ষ চলেছিল। চন্দ্রগুপ্ত ¯^qs জৈন মতের পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু তার পৌত্র অশোক বুদ্ধ রাজর্ষিও ভিক্ষুমূর্তির আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তা প্রচারের ব্যবস্থা নেন। তার এই প্রচারের প্রবাহ বঙ্গে এসেছিল, সমতটে এসেছিল, যশোর-খুলনায়ও এসেছিল।৩ তাই ভারত বর্ষসহ বঙ্গের সর্বত্র বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য অশোক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এর থেকে প্রায় নিশ্চিতরূপে মনে হয় যশোরাঞ্চল তখন মৌর্য সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল।
গুপ্ত আমল ঃ- সম্রাট অশোকের মৃত্যুও পর পরবর্তী পাঁচশত বৎসর ভারত বর্ষসহ বঙ্গেও সর্বত্র বিভিন্ন ¯^vaxb রাজ্য প্রতিষ্টিত হয়েছিল। কিন্তু ৪র্থ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্য আবির্ভাবের ফলে সেগুলি বিলুপ্ত হয়। চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্টাতা। চন্দ্রগুপ্তের পর সমুদ্রগুপ্ত রাজা হন। তিনি বহু রাজ্য জয় করেন। এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি থেকে জানা যায় তিনি সমতট, ডবাক, নেপাল, কামরূপ ও কর্তুপুর জয় করেন। এখানেই প্রথম সমতটের উলে¬খ পাওয়া যায় যেখানে যশোর খুলনা ছিল এর অন্তর্গত। ভাগীরথী হতে পদ্মা পর্যন্ত বিস্তৃত সমস্ত সমুদ্রকূলবর্তী প্রদেশেই ছিল সমতট। ফলে দেখা যায় যশোরাঞ্চলসহ বঙ্গেও উপরোক্ত অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত গুপ্ত শাসন অব্যাহত থাকে।
বংগ ঃ- ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগে গুপ্ত সাম্রাজ্যেও পতন ঘটে। বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্য পতনের পর উত্তর ভারতে ক্ষুদ্র ক্ষদ্র রাজবংশের আবির্ভাব হয়। এ সময় বাংলায় দু’টি ¯^vaxb রাজ্যেও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রথম ¯^vaxb রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে। এটি প্রাচীন বংগ (সমতট) নামে পরিচিত ছিল। এরফলে যশোর জেলা প্রাচীন বংগ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। দ্বিতীয় ¯^vaxb রাজ্য ছিল পশ্চিম ও উত্তর বাংলা ব্যাপী। এ রাজ্য গৌড় নামে পরিচিত।৪
গোপচন্দ্র ধর্মাদিতা এবং সমাচারদেব (৫২৫-৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ) ঃ- ফরিদপুরের কোটালিপাড়ার পাঁচটি, বধমান অঞ্চলে প্রাপ্ত একটি এবং বালেশ্বর জেলার (ভারত) জয়রামপুেও প্রাপ্ত একটি তাম্রশাসনে গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য এবং সমাচারদেব নামে বংগের তিনজন রাজার নাম পাওয়া যায়। তাঁরা সকলেই মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করেন এবং এই উপাধি তাঁদের সার্বভৌম ক্ষমতারই পরিচায়ক। তাঁদের মধ্যে গোপচন্দ্রই প্রথম ক্ষমতাসীন ছিলেন এবং তর রাজ্য দখ্িসণ-পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাংশ ব্যাপী বিস্তৃত ছিল। যশোর তখন তার রাজ্যভুক্ত ছিল। তার মৃত্যুও পর ধর্মাদিত্য ও সমাচারদের রাজা হন। কিন্তু তাদেও পারস্পারিক m¤^Ü যেমন সঠিক কেও নিরূপন করা সম্ভব হয়নি তেমনি তাদেও শিলালিপি, তাম্রশাসন বা মুদ্রার বংশ পরিচয়ও পাওয়া যায়নি।১ তবে এসব তাম্রশাসন থেকে বংগ রাজ্যেও প্রভাব প্রতিপত্তি এবং সমৃদ্ধিও পরিচয় পাওয়া যায়।
তাঁদের শাসনামলে যশোর জেলা বংগ রাজ্যেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ রাজ্যেও পতন কি করে হয়েছিল জানা যায় না। সম্ভবতঃ ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে চালুকারাজ কীর্তিবর্মান (৫৬৭-৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) বংগ বিজয়ের ফলে এ জেলাসহ বংগ রাজ্য চালুক্যাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। যদিও কীর্তিবর্মান বংগ বিজয় সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না, তবে মনে হয় চালুক্য আক্রমণের ফলে ¯^vaxb বংগ রাজ্যের পতন ঘটে।২
শশাঙ্ক (৬০৬-৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) ঃ- সপ্তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে শশাঙ্ক (৬০৬-৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) গৌড় রাজ্যের সার্বভৌম ক্ষমতা দখল করেন এবং তখন যশোর জেলা তাঁর রাজ্যাধীন ছিল বলে অনুমান করা হয়। এ জেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে শশাঙ্কেও একটি ¯^vY©gy`ªv পাওয়া যায়।৩ তাঁর প্রতিষ্ঠিত গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল উত্তর ও উত্তর পশ্চিম বাংলা, এছাড়াও শশাঙ্ক মগধ (দক্ষিণ-বিহার) ও উড়িষ্যার উত্তরাঞ্চল জয় করেছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব বংগ অঞ্চল তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল কিনা তা সঠিক কেও বলা সম্ভব নয়। কেউ কেউ ধারণা করেন দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় সমসাময়িককালে ভদ্র রাজবংশ নামে একটি বংশ রাজত্ব করতেন।৪
শশাঙ্কের মৃত্যুর পর যশোর জেলা উত্তর ভারতের শেষ হিন্দু নৃপতি হর্ষবর্ধনের (৬০৬-৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনাধীনে আসে। চৈনিক বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাংগ ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় ভ্রমণ করেন।৫ তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে পূর্ব ভারত সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করেছেন। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী তৎকালে কজংগল, পুন্ডুবর্ধন এবং নিম্ন ব-দ্বীপীয় অঞ্চলে সমতট ও তাম্রলিপ্তি নামক পাঁচটি রাজ্যে অস্তিত্ব ছিল। শস্য, ফুল ও ফলে প্রাচুর্যময় রাজ্য সমতট ‘বংগ’ নামে পরিচিত ছিল এবং তাঁর বিবরণ অনুসারে ও রাজ্যের নিম্নাঞ্চল সমুদ্রের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইৎ-চিং ঘা আই চিং নামক অপর একজন চৈনিক পরিব্রাজক তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে সমতটের উললেখ করেছেন। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী হো-লো-সৌ-পো-টা (সংস্কৃতি) সমতটের অধীশ্বর ছিলেন। তিনি ভাতের ইতিহাসে হর্ষবর্ধন নামে পরিচিত।১ তবে নিধনপুর তাম্রশাসনের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, হর্ষবর্ধনের মিত্র কামরূপরাজ ভাস্করবর্মাও শশাংকের রাজ্যের একাংশ জয় করেছিলেন।২ অর্থৎ শশাংকের মৃত্যুর পর তাঁর বিরোধী মিত্র শক্তিদ্বয় তাঁর রাজ্য নিজ নিজ অধিকারভুক্ত করে নিয়েছিলেনে।
শশাংকের মৃত্যুর পর সপ্তম শতাব্দীর শেষাংশ থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলাদেশ বৈদেশিক আক্রমণের শিকার হয়। উত্তর ও উত্তর পশ্চিম বাংলা ¯^vfvweKfv‡e এই আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ঐ অঞ্চলে মাৎস্যন্যায়ের উদ্ভব হয়। কিন্তু নদী বিধৌত দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব বাংলা এইসব উত্তর ভারতীয় আক্রমণের কবলে খুব সম্ভবত: পড়েনি এবং এই অঞ্চলে প্রায় ¯^vfvweK অবস্থা বিরাজমান ছিল। অষ্টম শতাব্দীর প্রথমার্ধে কনৌজের যশোরর্মা মগধ ও গৌড় জয় করে বঙ্গ পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং বঙ্গের খড়গ বংশীয় রাজা রাজভট্টকে পরাজিত করেন। কিন্তু এখানে যশোবর্মার শাসন ক্ষণস্থায়ী ছিল এবং তার শাসনামল m¤^‡Ü সঠিক কিছু জানা না গেলেও যশোর তার রাজ্যভুক্ত ছিল বলে মনে হয়।
পালবংশ (৭৫৬-১১৬২ খ্রিষ্টাব্দ) ঃ- যশোবর্মার পর কাশ্মীর রাজ ললিতাদিতা এবং তার পৌত্র জয়াপীড় গৌড়ে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর কামরূপরাজ শ্রীহর্ষও গৌড় আক্রমণ করেছিলেন। তবে এদের বিজয়াভিযান বঙ্গ পর্যন্ত পৌছেছিল কিনা তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এভাবে উপর্যুপরি বিদেশী আক্রমণের ফলে মনে হয় ঐ সময় সমগ্র বঙ্গে কোন এক কেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থা ছিল না এবং সর্বত্র এক অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এই অরাজকতার মধ্য হতেই অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল উত্তর পশ্চিম বাংলায় রাজ্য স্থাপন করেন। গোপালের বংশ পরিচয় বা পালবংশের উৎপত্তি m¤^‡Ü সঠিক কিছু জানা যায় না। পাল রাজাদের উৎপত্তির যেমন কোন সঠিকতা নেই, তেমনি তাদের আদি রাজ্য m¤^‡Ü সঠিক করে কিছু বলা যায় না। সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিত’ গ্রন্থে বরেন্দ্র (উত্তর বাংলা) পাল রাজাদের পিতৃভূমি বলে উললেখ আছে। প্রথম মহীপালের বানগড় তাম্রলিপিতেও উত্তর বঙ্গ তাদের আদি বাসস্থান ছিল বলে উললেখ করা হয়েছে। এসব থেকে নিঃ সন্দেহে অনুমান করা যায় যে, উত্তর বঙ্গ পালবংশ তথা গোপালের আদি বাসস্থান ছিল এবং এখানেই তিনি প্রথম ক্ষমতা বিস্তার করেন। আর্য মঞ্জুশ্রী মূলকল্প গ্রন্থে উললেখ আছে যে, গৌড় রাজ্য অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম বাংলায় গোপালের উত্থান হয়েছিল। তাম্রশাসনে এই অঞ্চলে ভূমিদান এ কথাই প্রমাণ করে যে, উত্তর-পশ্চিম বাংলা ও বিহারের দক্ষিণাংশ প্রাথমিক পর্যায়ে পাল সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল, যদিও কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন প্রথম হতেই সমগ্র বঙ্গে পালদের আধিপত্য ছিল। পাল রাজাদের তাম্রলিপি ও তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, গোপালের পিতা ছিল বপ্যাট এবং তার পিতামহ ছিল দয়িত বিষ্ণু।১
পাল বংশের বিশেষ করে ধর্মপালের রজত্বকালের খালিমপুর তাম্রশাসনে গোপাল m¤^‡Ü কোন বিশদ বর্ণনা নেই। তবে অরাজকতার অবসান করে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পাল বংশের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রশংসা করা হয়েছে। গোপাল কত বৎসর রাজত্ব করেন তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও অনুমান করা হয় তার রাজত্বকাল ২৩ বা ২৫ বৎসরব্যাপী ছিল। তিনি অনুমানিক ৭৫৬ থেকে ৭৮১ খ্রিঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।২ তিনি বৌদ্ধ ag©vej¤^x ছিলেন।
ধর্মপাল (৭৮১-৮২১ খ্রিষ্টাব্দ) ঃ- গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৮১-৮২১ খ্রিষ্টাব্দ) পাল সাম্রাজ্যের উত্থান ও প্রতিপতি বিস্তারে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পুন্ড্রবর্ধনের বাইরে পাল সাম্রাজ্য অনেক দূর পর্যন্ত সমপ্রসারণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি তার পিতা গোপালের নিকট থেকে এক ক্ষুদ্র রাজ্যলাভ করেন। তিনি প্রতিভা বলে উত্তর ভারতে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ধর্মপালের খালিমপুর তাম্রশাসনের একটি শে¬াকে এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। শে¬াকে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি মনোহর ভ্রুভঙ্গী বিকাশে কন্যকুব্জের রাজ অভিষেক সম্পন্ন করিয়াছিলেন। ভোজ, মৎস, মদ্র, কুরু, যদু, যবন, অবন্তি, গান্ধার এবং কীর প্রভৃতির নরপালগণ প্রণতিপারায়ন চঞ্চাবনত মস্ককে সাধু সাধু রবে তার সমর্থন করিয়াছিল এবং হৃষ্টচিত্ত পাঞ্চালবৃদ্ধ কর্তৃক স্ব অভিষেকের ¯^YKjm উদ্বৃত করিয়াছিলেন।’’ শে¬াকে উলে¬খিত রাজ্যসমূহের অবস্থিতি প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত জয়ের কথাই ঘোষণা করে। তার পূর্বে বাংলার কোন রাজা এতবড় সাম্রজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।৩ পিতার ন্যায় ধর্মপালও বৌদ্ধ ag©vej¤^x ছিলেন। পাল রাজাদের মধ্যে তিনিই প্রথম সর্বোচ্চ পরমেশ্বর পরমভট্টারক ও মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।৪ ভাগলপুরে তিনি একটি বৌদ্ধ মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা বিক্রমশীলা বিহার নামে খ্যাত ছিল বরেন্দ্র তথা রাজশাহী জেলারর পাহাড়পুরে তিনি সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন, কথিত আছে এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ বিহার।১ নিজে বৌদ্ধ হলেও ধর্মপাল অন্যান্য ধর্মের প্রতিও সহিঞ্চু ছিলেন। ৮২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন এবং তার রাজত্বকালে যশোর রাজ্য সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
দেবপাল (৮২১-৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) ঃ- ধর্মপালের মৃত্যুর পর তার মহিষী রনানাদেবীর গর্ভজাত পুত্র দেবপাল (৮২১-৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) পাল সিংহাসনে আরোহন করেন। পরমেশ্বর পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ দেবপাল পিতার যোগ্যপুত্র ছিলেন এবং পিতৃ রাজ্য অক্ষুন্ন রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।
দেবপাল একজন শক্তিশালী নরপতি ছিলেন। তিনি অনেক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং নতুন নতুন রাজ্য জয় করেছিলেন। তাঁর তাম্রশাসনে দেখা যায় পাল সাম্রাজ্য দক্ষিণে বিন্ধ পর্বত ও পশ্চিমে K‡¤^vR অর্থাৎ কাশ্মীরের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃতিলাভ করেছিল। অর্থাৎ একথা বলা যায় যে, ধর্মপাল ও দেবপালের অধীনে পাল সাম্রাজ্য উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার মত শক্তিশালী হয়েছিল। অরাজকতার যুগের অবসান ঘটিয়ে গোপাল পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং ধর্মপাল ও দেবপাল সাম্রাজ্য বিস্তারের জনত্য খ্যাতিলাভ করেন যা প্রায় এক শতাব্দী কালব্যাপী পাল বংশ ও বাংলার ইতিহাসে গোরবময় যুগের সতূচনা করেছিল।২ দেবপাল বৌদ্ধ ag©vej¤^x ছিলেন এবং ¯^vxq সাম্রাজ্যের ভিতরে ও বাইরে এ ধর্ম প্রচারের জন্য বৌদ্ধ ধর্মযাজক দল প্রেরণ করেছিলেন। দেবপাল সুশাসক ছিলেন। সম্ভবত: তার শাসনের সফল যশোর রাজ্যে পৌছেছিল। কিন্তু এখানেই তার শেষ। এরপর রাজার শাসন কি যশোরাঞ্চল তা বহুদিন জানেনি।৩
‘‘পতন অভ্যূদয় বন্ধুর পন্থায়’’ পাল সাম্রাজ্যের গৌরব ম¬ান হতে শুরু করে। দেবপালের পাঁচ উত্তরাধিকারী সুরপাল, নারায়ন পাল, রাজ্যথপাল দ্বিতীয় গোপাল এবং দ্বিতীয় বিগ্রহপাল দুর্বল নৃপতি ছিলেন এবং তঁদের রাজত্বকালে কোন উললেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। বৈদেশিক আক্রমণের ফলে তাঁদের রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্যের পরিধি ক্রমশ সংকুচিত হতে শুরু করে। খুব সম্ভবত: এ সময়ে যশোর জেলা পাল রাজাদের শাসনাধীন ছিল। পাল রাজ্যে চরম নৈরাজ্যও বিশৃখলার যুগের চন্দ্রবংশ দক্ষিণপূর্ব বাংলায় ¯^vaxb রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। পাল রাজ্যের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে পাল রাজশক্তিকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। Kv‡¤^Riv উত্তর পশ্চিম বাংলায় পাল শাসনের অবসান ঘটিয়ে সার্বভৌম রাজ্যের সৃষ্টি করে। প্রথম মহীপালের আবির্ভাবের প্রাক্কালে মৃত্যুপ্রায় রাজ শক্তির প্রভাব উত্তর বিহার (অঙ্গ) এবং দক্ষিণ বিহারে (মগধ) লক্ষ্য করা যায়। দশম শতাব্দীর শেষাংশে পালরাজ্য দূর্দশা ও অবনতির চরম সীমায় পৌছেছিল। এ সময় পাল রাজ্যের অধীশ্বর প্রথম মহীপাল (৯৯৫-১০৪৩ খ্রিষ্টাব্দে) ¯^xq রাজ্যকে (উত্তর পশ্চিম বাংলা) শত্রুমুক্ত করে রাজ্যের শ্রীবৃদ্ধিসাধন ও বিলুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধার করেন। পাল সাম্রাজ্যকে পতন থেকে রক্ষা করাই তার কৃতিত্ব। সেজন্য মহীপাল ইতিহাসে পাল রাজবংশের দ্বিতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে অভিহিত হন। কিন্তু যশোর জেলা তার রাজ্যভুক্ত ছিল এমন কোন প্রমাণ অদ্যাবধি পাওয়া যায় না। তবে রাজত্বের শেষ দিকে মহীপাল মিথিলা (উত্তর বিহার) অঞ্চলেও আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।১
প্রথম মহীপালের এই কৃতিত্ব বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। মহীপালের পরবর্তী প্রায় একশতবর্ষ পাল সাম্রাজ্য বহিঃ শত্রুর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ফলে ক্রমেই দূর্বল হয়ে অবনতি ও বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হয়। পরবর্তী পাল রাজাদের মধ্যে একমাত্র রামপালই কিছুটা শৌর্য বীর্যের পরিচয় দিয়ে কিছুকালের জন্য বিলুপ্তিকে রোধ করেন। কিন্তু তার পর আর বিলুপ্তিকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি এবং দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলার ইতিহাসে সুদীর্ঘ চার শতাব্দীব্যাপী পাল শাসনের অবসান ঘটে। প্রথম মহীপালের উত্তরাধিকারী ছিলেন নয়াপাল (১০৪৩-১০৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) এবং পৌত্র তৃতীয় বিগ্রহপাল (১০৫৮-১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ)। তাদের রাজত্বকালের প্রধান ঘটনা ছিল কলচুরিরাজ কর্ণ বা লক্ষীকর্ণের উপর্যপুরি আক্রমণ। কলচুরি আক্রমণ ছাড়াও চালুক্য বংশ, উড়িষ্যার সোম বংশ এবং কামরূপরাজও বাংলা আক্রমণ করেছিলেন। সুতরাং দেখা যায় নয়াপাল ও তৃতীয় বিগ্রহপালের রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্য চতুর্দিক দিয়ে আক্রান্ত হয়ে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। পাল রাজশক্তি শুধুমাত্র দক্ষিণ বিহার বা মগধে প্রভাব বজায় রাখতে সমর্থ হয়।২
২য় মহীপাল (১০৭৫-১০৮০ খ্রিস্টাব্দ) ঃ- তৃতীয় বিগ্রহপালের পুত্র ও উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় মহীপাল ১০৭৫ খ্রিঃ থেকে ১০৮০ খ্রিঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার রাজত্বের প্রথমদিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল পালদের শাসনাধীনে ছিল। কলচুরিরাজ কর্ণের পালরাজ্য আক্রমণই দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় পাল শাসন বিস্তারের পথ সুগম করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় পাল শাসন বিস্তারের পথ সুগম করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় পাল শাসন বিস্তারের ইতিহাস আমরা বাঘাউড়া ও নারায়নপুর লিপি হতে জানতে পারি। এই লিপি দুটি দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালের। তবে এই অঞ্চলে তাদের অধিকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
দ্বিতীয় মহীপালের মৃত্যুর পর শুরপাল দুই এক বছর রাজত্ব করেন। এরপর রামপাল সিংহাসনে বসেন। তাঁর সময়ে পাল রাজ্য বিহার ও পশ্চিম রাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল। বিহারে তার শাসনামলের বহু লিপি প্রমাণ আছে। রামপাল রাজ্যভার গ্রহণ করেই বরেন্দ্র উদ্ধারে সাফল্যলাভ করেন এবং শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা তার অধীনে ছিল না তবে এই অঞ্চলের বর্মণ রাজারা উপঢৌকন প্রেরণ করে তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। রামপালের রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্য শেষবারের মত উজ্জীবিত হয়েছিল। তার মৃত্যুর পরই পাল সাম্রাজ্য দ্রুতগতিতে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হয় এবং মদনপালের সময় এই বংশের শাসনের অবসান ঘটে।১
বর্মবংশ ঃ- কলচুরি বংশের রাজা কর্ণের বঙ্গ বিজয়াভিযানের সময় বর্ম রাজাদের পূর্ব পুরুষ বাংলায় আগমন করেন এবং পরে তারা সুযোগ বুঝে ¯^vaxb রাজ্য স্থাপন করেন। একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে পাল রাজশক্তির দুর্বলতার সুযোগে বঙ্গে বর্ম উপাধিকারী এক রাজবংশের আবির্ভাব হয়। এ বংশের চারটি তাম্রফলক থেকে চারজন বর্মরাজের কথা জানা যায়। তারা ছিলেন জাতবর্ম, হরিবর্ম শ্যামলবর্ম এবং ভোজবর্ম। বর্ম শাসকরা ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। ১১শ শতাব্দীতে জাতবর্মার সৈন্যদল সোমপুর বিহার জালিয়ে দেয়। দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভোজবর্মের রাজত্বকালে সেনবংশীয় বিজয় সেন বর্ম শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেনবংশের শাসনের সূচনা করেন।২
একাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে উত্তর বাংলায় সামন্তচক্রের বিদ্রোহের সময় পাল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে সেন রাজবংশ নামে বাংলায় এক নতুন রাজবংশের উদ্ভব হয়। পাল সম্রাট মদন পালের রাজত্বকালে তারা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হন। পশ্চিম ও উত্তর বাংলা হতে পালশাসন এবং দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা হতে বর্মশাসনের অবসান ঘটিয়ে তারা প্রায় সমগ্র বাংলাদেশে ক্ষমাত প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং দেখা যায় বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে একক ¯^vaxb রাজত্বের প্রতিষ্ঠা হয় সেন রাজ বংশের শাসনাধীনেই।৩
সেন রাজাদের পূর্ব পুরুষরা দাক্ষিণাত্যের অন্তর্গত কর্ণাট দেশের অধিবাসী ছিলেন। সেন রাজাদের শিলালিপি অনুসারে তাঁরা কর্ণাট ক্ষত্রিয় বংশীয় ছিলেন। সেন রাজাদের বঙ্গদেশে আমগন m¤^‡Ü সঠিক কিছু জানা যায় না। সামন্ত সেন কর্ণাটদেশ থেকে রাঢ়ে বৃদ্ধ বয়সে আগমন করেন। তাঁর পুত্র হেমন্ত সেন ছিলেন পালরাজা ২য় রামপালের (১০৮২-১১২৮ খ্রিষ্টাব্দ) একজন অধীনস্ত সামন্ত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বিজয় সেন (১০৯৭-১১৬০ খ্রিঃ) পালবংশের শেষ রাজা মদন পালকে পরাজিত করে বাংলার সিংহাসনঅধিকার করেন। দ্বাদশ শতাব্দীর (১০৯৮-১১৬০ খ্রিষ্টাব্দ) মধ্যভাগে যশোর জেলাসহ দক্ষিণ পূর্ববংগ বিজয় সেন বর্মদের নিকট হতে অধিকার করেন।
বিজয় সেন ঃ- বিজয় সেনের আমলেই সমগ্র বাংলাদেশের উপরে সেনবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেজন্য সেনবংশের আবির্ভাবের ফলেই বাংলার ইতিহাস প্রথমবারের মত এক নৃপতির শাসনাধীনে আসে। তাঁর রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরনীয় ঘটনা। সামান্য একজন সামন্ত রাজা থেকে বিজয়সেন বাংলায় সার্বভৌম নৃপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি পরমেশ্বর, পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও তিনি ‘অরিরাজ বৃষভ শংকর’ উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বল¬লালসেন আনুমানিক ১১৬০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন। তাঁর শাসনামলে সেনরাজ্য পাঁচটি ভূক্তি বা প্রদেশে বিভক্ত ছিল। বঙ্গ বা পূর্ববঙ্গ, বরেন্দ্র মিথিলা, রাঢ় ও বাগড়ী। বাগড়ী এগুলির মধ্যে প্রধান প্রশাসনিক এলাকা ছিল।১ অনুমান করা হয় যে, বর্তমানকালের যশোর জেলা বাগড়ী ভূক্তির অন্তর্গত ছিল। বাগড়ীর প্রাদেশিক রাজধানী ছিল ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত শেকহাটি গ্রামে। তাঁর রাজত্বের শেষের দিকে যশোর জেলা সেন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। যা ছিল দক্ষিণ প্রদেশ বা সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তর্গত। তৎকালে দক্ষিণ প্রদেশ বা সুন্দরবন অঞ্চল বৌদ্ধ ag©vej¤^x অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। লক্ষণ সেনের রাজত্বকালেও যশোর তার রাজ্যভুক্ত ছিল। লক্ষণ সেনের রাজত্বের শেষাংশে সেন রাজ্যের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা যায় এবং পতনের লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এ সময় ( ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ) ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর নেতুত্বে মুসলমানরা ‘নওদীহ’ (নদীয়া) অতর্কিত আক্রমণ করেন। লক্ষণ সেন বৃদ্ধ বয়সে গংগার তীরে হিন্দু সমপ্রদায়ের তীর্থস্থান নদীয়ায় অবস্থান করছিলেন। লক্ষণসেন মুসলমানদের আক্রমণের খবর শুণে ‘নওদীহ’ থেকে পলায়ন করেন এবং পূর্ব বংগের বিক্রমপুর গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মুহম্মদ বিন বখতিয়ার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম বাংলা অধিকার করেন। এবং লক্ষণাবর্তীকে (গৌড়) কেন্দ্র করে বাংলায় মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব ও দক্ষিণ পুর্বে করতোয়া ও তিস্তা, পশ্চিমে কুশী নদী ও রাজমহল এবং উত্তরে দেবকোটব্যাপী এক বিস্তির্ণ অঞ্চলে খিলজী প্রধান্য স্থাপিত হয়।২
লক্ষণসেন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় আরো ৩/৪ বছর থেকে সেন রাজ্য শাসন করেন এবং ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীকালীন সেন রাজাদের মধ্যে বিশ্বরূপ সেন (১২০৬-১২২০ খ্রিষ্টাব্দে) এবং কেশব সেনের (১২২০-১২২৩ খ্রিষ্টাব্দে) নাম উললেখ করা যায়। লক্ষণ সেনের মৃত্যুর পরে ¯^vaxb সেনবংশ আরও অর্ধ-শতাব্দীকালেরও বেশি সময় দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় রাজত্ব করেছিল।১