
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে মহিলা আইনজীবী সমিতি -আপডেট চলছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 15839 বার পড়া হয়েছে
নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে মহিলা আইনজীবী সমিতি -আপডেট চলছে
প্রায় একদশকে বিনামূল্যে ৫৬টি মামলা পরিচালনা ও ৭শ’ মহিলাকে শেল্টারহোমে পুনর্বাসন
যশোরে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে মহিলা আইনজীবী সমিতি
পুরুষ শাসিত আমাদের এ সমাজে নারীরা সব সময়ই অবহেলিত। পদে পদে তাদেরকে নির্যাতন, নিপীড়ন, হয়রানির শিকার হতে হয়। সঠিক নির্দেশনা ও জ্ঞানের অবাবে দরিদ্র অধিকাংশ নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন আইনী সহায়তা থেকে। অর্থ ও পুনর্বাসনের অভাবে তারা লড়তে পারছেন না। নির্যাতন কারী এবং কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে। ফলে নীরবে ধুকে ধুকে তাদেরকে সহ্য করতে হয় সব কিছুই। এ সকল নির্যাতিত নিপীড়িত মহিলাদেরকে আইনী সহায়তা দেয়াসহ তাদেরকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রায় তিন দশক ধরে নিষ্টাও সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি। মূল সমিতি গঠনের অনেকটা পরে হলেও সমিতির যশোর জেলা শাখা গত প্রায় এক দশকে এ অঞ্চলের অসহায় সুবিধা বঞ্চিত নারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ অল্প সময়ের মধ্যেও তারা সফলতা পেয়েছেন অনেক। সংগঠনটি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে ব্যাপক। সমিতিতে আসছে নিত্য নতুন অভিযোগ। গ্রহণ করা হচ্ছে প্রতিকারের পদক্ষেপ নির্যাতিত, নিপিড়ীত নারীদের নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন কাজ করছেন যারা।
সমিতি সৃষ্টির ইতিহাস ঃ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর দু’ বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৯৮১ সালে সমিতিটি মহিলা অধিদপ্তরের মহিলা সংগঠন হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সমিতির বিস্তৃত ঘটতে থাকে। যশোর সী সীমান্তবর্তী জেলায় হওয়ায় এখানে নারী পাচারের ঘটনা অনেক বেশি। বিষয়টি উপলব্ধি করেই সমিতির নীতি নির্ধারকরা যমোরে একটি শাখা স্থপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে যশোরের মহিলাআইনজীবী এ্যাড. সেতারা কাতুন, সাবিহা খাতুন ও মাহবুবা হাসনাতের উদ্যোগে যশোর সমিতির শাখা স্থাপিত হয়। এর পর তাদের সাথে যোগ দেন অ্যাড. নাসিমা খাতুন। ২০০০ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে যশোরে যাত্রা শুরু করা এ সমিতির প্রথম কার্যালয় ছিল মোমিন নগর ভবনে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তা শহরেরমুজিব সড়ক স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সমিতির অফিস যশোরে প্রধান ডাকঘরের সামনে।
সমিতির কার্যক্রম ঃ বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করে। এরমধ্যে নারী ও শিশু পাচার বিরোধী, যৌতুক, পারিবারিক সমস্যা, ধর্ষণ , এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত বিষয়ে বিনামূলে আইনী সহায়তা ও পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মীমাংসা বা মামলা, আইনী পরামর্শ, মামলা হলে যাবতীয় খরচ বহন করা হয়। পাশাপাশি ভিকটিমের শেল্টার হোমের ব্যবস্থা ও পুনর্বাসনের দায়িত্বও নেয়া হয়। এছাড়া সমিতি নারীদের প্রতি যে কোন সহিংসতার মামলায় সরকারকে তদন্তসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। এ ব্যাপারে সমিতির জেলা শাখার প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাড. নাসিমা খাতুনের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, সমাজের যে কোন শ্রেনী ও পেশার নির্যাতিত নারী শিশুকে প্রথমে সমিতি বরাবর অভিযোগ দাখিল করতে হয়। এর পর নিয়মানুযায়ী তা লিপিবদ্ধ করার পর প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এতে আসামী পক্ষ রাজি না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে মামলার যাবতীয় খরচ বহন করে সমিতি।
তিনি জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২১ টি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। যার মধ্যে ৮৮টি অভিযোগই স্থানীয়ভাবে মীমাংশা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯টি। বাকিগুাের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া সমিতির পক্ষ থেকে বর্তমানে সর্বমোট ৫৬টি মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে। যার মধ্যে নারী ও শিশু পাচার মামলা ৩৬টি, পারিবারিক মামলা ৯টি, ধর্ষণ মামলা ৭টি, যৌতুক মামলা ৩টি, ও এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত মামলা ১টি। যশোর সংগঠনের কার্যক্রম চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত সমিতির দায়ের করা মামলার মধ্যে মোট ২০টি মামলার রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। এর মধ্যে পর্যাপ্ত ¯^v¨ প্রমানের অভাবে দুটি মামলা খারিজ হয়ে গেলেও বাকিগুলোতে আসামি পক্ষের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যশোরাহ্চলে সমিতির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭শ ভিকটিমকে উদ্ধার পূর্বক সমিতির শেল্টার হোমে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ২০০০ সালৈ ২২ জন, ২০০২ সালে ১১৩ জন, ২০০২ সালে ১৮৯ জন, এবং ২০০৩ সালে ৭২ জন, ২০০৪ সালৈ ৮৪ জন, ২০০৫ সালে ৭৫ জন, ২০০৬ সালৈ ৮৮ জনকে শেল্টার হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকার আগারগাঁওয়ে ৬ তলা বিশিষ্ট শেল্টার হোম প্রশান্তিতে বর্তমানে এদের অনেকেই অবস্থান করছেন। বাকিদের কে সমিতির উদ্যোগে নিজ পরিবার অথবা হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে mvej¤^x করে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তিনি জানান, গতবছর যশোরের ১৭টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে ১৭টি ভ্যান ও রিকসা বিতরণ করা হয়েছে।
সমিতির সদস্যাবৃন্দ ঃ যশোর জেলা মহিলা আইনজীবী সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। এরা হলেন সমিতির জেলা সভানেত্র অ্যাড সেতারা কাতুন, প্রোগ্রাম অফিসার নাসিমা খাতুন, ক্লিনিকল ল ইয়ার সাদেকা খাতুন। এছাড়া রয়েছেন যশোর শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অ্যাড সাবিহা খাতুন ও মাহবুবা হাসনাত, শাহানাজ আক্তার, জেসমিন বানু, শরিফা বেগম, জোসনা সাহা, আনোয়ারা খান,কামরুন্নাহার, রাহিমা খাতুন ও সাবিনা আহমেদ মলি। এসব মহিলা আইনজীবীরা সমিতির করা মামলা গুলো পরিচালনা করেন।
কেস স্টাডি ঃ যশোর জেলা মহিলা আইনজীবী সমিতি পরিচালিত মামলার ভেতর ইতিমধ্যে ২০টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে বিজ্ঞ আদালত। এগুলোর মধ্যে পাচারের একটি চাঞ্চল্যকর মামলায় ¯^v¨ প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। মামাটি হলো ২০০৩ সালের ২ এপ্রিল। আসামী চট্টগ্রামের পাটিয়া থানার জংগলকান পাটিয়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম প্রলোভন দেখিয়ে খুলনার বয়রার খালেকের ছেলে ইস্রাফিল, খালিশপুরের আশরাফের ছেলে রুবেল ও সাতক্ষীরার রায়পুরের সহিদুলের ছেলে রুবেল ও সাতক্ষীরার রায়পুরের রফিকুলের ছেলে জনিকে ভারতে পাচারের চেষ্টা করে। পথিমধ্যে বিডিআর সদস্যরা টুটখালী সীমান্ত থেকে তাদের উদ্ধার এবং আসামীকে আটক করে। এ ঘটনায়নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচার আইনে মামলা হয়। জেলা মহিলা আইনজীবী সমিতি উদ্ধারকৃতদের তাদের শেল্টার হোমে পাঠায় এবং মামলা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বছরের অধিককাল মামলা চলার পর গত বছরের ১৭ জুলাই বিজ্ঞ আদালত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আসামীকে ফাাঁসির আদেশ দেন।
যশোরে সমিতির শাখা স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও বর্তমান জেলা কমিটির সভানেত্রী অ্যাড. সেতারা খাতুন জানান, যশোর সমিতির কার্যালয় স্থাপনের পর থেকে এ পর্যন্ত সকল বিষয়েই তার স্থানীয় প্রশাসন ও জনগনের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন। এ থেকেই তারা সংগঠনটিকে একটি বৃহৎ পরিসরে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।