
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান ক্ষুধার যন্ত্রনায় পাটের পাতা খাচ্ছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 7729 বার পড়া হয়েছে
কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান ক্ষুধার যন্ত্রনায় পাটের পাতা খাচ্ছে

কবে কখন কি ভাবে হনুমানদের কেশবপুরে আগমন ঘটে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। তবে অধিকাংশ প্রবীন ব্যক্তিদের মতে এক সময় কেশবপুরের নদ নদী স্রোতস্বিনী ছিলো। নদ-নদীর পাঁড়ে পর্যাপ্ত গাছ গাছালি ছিলো। বর্তমানে বনাঞ্চল না থাকায় এরা মানুষের মাঝে চলে এসেছে। পরিবেশ বিদদের মতে পর্যাপ্ত খাদ্য ও বনাঞ্চলের অভাবে হনুমানদের গর্ভকালিন নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। খাদ্যের অভাবে এরা লোকালয়ে ঘুরে ফিরে মানুষের হাত থেকে খাদ্য চেয়ে নেওয়া, সুযোগ পেলে দোকান থেকে হাত বাড়িয়ে বিস্কুট কলা রুটি নিয়ে চলে যায় তারা। তার পরও ব্যবসায়ীরা এদের উপর আক্রমান্তক হন না। খাদ্য অন্বেষণ করতে গিয়ে গত ১০ বছরে বিদ্যুতের কভার বিহীন তারে ষ্পৃষ্ট হয়ে অন্তত ৫০ টি এবং সড়ক দূর্ঘটনায় প্রায় ১০হনুমানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও কিটনাশক ছিটানো আমের মুকুল খেয়ে আরও ২০ টি হনুমানের মৃত্যু হয়েছে। কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানের সাথে মানুষের রয়েছে বিশেষ সখ্যতা। কেশবপুরে অন্তত সাড়ে ৫০০ হনুমান রয়েছে। এরা ৯ থেকে ১০ টি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিচরন করে থাকে। এক একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় একটি করে পুরুষ হনুমান। কেশবপুরের মানুষের মন্তব্য দলের প্রধাণ পুরুষ হনুমান অত্যন্ত বদমেজাজি। দলের ভিতর যদি কোন মা হনুমান পুরুষ বাচ্চা প্রসব করে তাহলে আর রেহাই নেই। যে ভাবেই হোক সে বাচ্চাকে মেরে ফেলবে ঐ পুরুষ হনুমানটি। আর এ ধরনের আচরনের কারন আনুসন্ধানে জানা যায়, দলনেতা ঐ পুরুষ হনুমানটির বধ্যমুল ধারনা পুরুষ শাবক টি বড় হয়ে তার কর্তত্ব নিয়ে নিতে পারে, আর সে আশঙ্কায় এ ধরনের আচরনে করে থাকে দলনেতা। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, এ প্রজাতি সাধারণত ৫ বছর বয়স থেকে ৬ মাস অন্তর বাচ্চা প্রসব করে। এদের গড় আয়ু ২০ থেকে ২৫ বছর। এক একটি হনুমানের ওজন ৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাত ও পায়ের পাতা মুখের মতোই কালো। শরীরে ধূসর বর্ণের (লোম) দিয়ে আচ্ছাদিত। তবে পেটের দিকটা কিছুটা সাদা ও লালচে ধরনের। চলাফেরা করার সময় এরা লেজ উচুঁ করে চলে থাকে। এদের বিচরন এলাকা কেশবপুর উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারি ওয়াল, পশুসম্পদ কার্যালয়ের পিছনে, খাদ্যগুদাম এলাকা, রামচন্দ্রপুর, ব্রম্মকাঠি, বালিয়াডাঙ্গা, মধ্যকুল, কেশবপুরের সাহাপাড়া, মুজগুন্নি, ভোগতি গ্রাম এলাকা দিয়ে এরা স্বাভাবিক চলাফেরা করে থাকে।
কেশবপুরে সাংবাদিকদের উদ্দ্যোগে হনুমান রক্ষায় পলীবিদ্যুতের কভার যুক্ত তার ব্যাবহারের দাবিতে মানব বন্ধণ কর্মসুচি পালন করলেও পলীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কভারযুক্ত তার ব্যাবহার করেনি। যা নিয়ে কেশবপুরের মানুষের মাঝে রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।
বিগত সরকারের আমল থেকে জীববৈচিত্র রক্ষা প্রকল্পে কেশবপুরের হনুমান স্থান পায়। সরকারি ভাবে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করা হলেও বরাদ্ধকৃত খাদ্য হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য অন্বেষনে হনুমান কলা বোঝাই ট্রাক, পিক আপ যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, মাগুরা সহ বিভিন্ন স্থানে হনুমান খাদ্য অন্বেষনে গিয়ে কেশবপুরে ফিরে আসেনি। ফলে দেখা গেছে গত ১০ বছরে খাদ্যাভাব, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, সড়ক দূর্ঘটনা ও বখাটে হামলায় প্রায় ৮০ টি হনুমানের মৃত্যু হয়েছে। যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে।
উলেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখ হনুমান রক্ষার দাবীতে পৌরশহর এলাকায় সরকারীভাবে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ, বিদ্যুতের তারে পাস্টিক কভার লাগানোসহ শহরের ভেতর দ্রুতগামী যানবাহন ধীরে চালানোর দাবি উঠলেও আজও তা উপেক্ষিত। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটবে বলে পশু বিশেষজ্ঞদের ধারনা। কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান রক্ষায় প্রয়োজণীয় বনাঞ্চল সৃষ্টি, দ্রুত খাদ্য সরবরাহ, কভার যুক্ত বিদ্যুতের তার ব্যাবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সূত্র:
যশোরনিউজ২৪.কম
/
বিজয় নিউজ ২৪ ডটকম