
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > ২ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির একটিও বাস্তবায়ন হয়নি .....
এই পৃষ্ঠাটি মোট 15241 বার পড়া হয়েছে
২ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির একটিও বাস্তবায়ন হয়নি .....

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর অবস্থিত যশোরে। যেখান থেকে প্রতি বছর দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। যশোরের শিল্প শহর নওয়াপাড়ার নৌবন্দর দিয়ে মাঝারি মানের কার্গো জাহাজ ও ট্রলারে পণ্য পরিবহন হয়। যশোরের বিমানবন্দরটিতে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে এ অঞ্চলে উৎপাদিত কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত স্থানান্তর করা যেতে পারে। এ ছাড়া রেল যোগাযোগ ও যশোর থেকে ১৮টি রুটে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। যশোরেই উৎপাদন হয় পাঁচ লাধিক টন সবজি। শোয়া দুই লাখ টন সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখানকার উৎপাদিত ফুল চলে যাচ্ছে বিদেশে। শুধু তাই নয়, সারা দেশের মাছচাষিদের রেণুপোনার সর্ববৃহৎ বাজার এই যশোর। যশোরের রাজারহাট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম। আর শীত মওসুমে যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির কদর তো সব মানুষের কাছে রয়েছেই। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের কারখানাসহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখানে গড়ে উঠেছে নানা শিল্প কলকারখানা। ধান-আখসহ অর্থকরী অন্যান্য ফসল হয় এখানে। এসব সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই যশোরকে ইকোনমিক জোন হিসেবে গড়ে তুলতে ভৈরব ও কপোতা নদ খনন, আইটি পার্ক স্থাপন এবং সবজি সংরণ ও রফতানি সুবিধার্থে যশোরে বিশেষায়িত কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন, মেহেরুল্লাহনগর রেলস্টেশন পুনঃ চালু, মনিরামপুর ও নওয়াপাড়ায় বাইপাস সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে কেবল কপোতাক্ষ খননে ২৬২ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রথম কিস্তিতে ২০ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আশা ভঙ্গের বেদনায় ফুঁসে উঠেছেন যশোরবাসী। এ ছাড়া আর কোনো প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন তো দূরের কথা সে বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্যও নেই।
কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস জানান, বরাদ্দকৃত টাকায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অপ্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন জায়গায় খাল কাটার নামে মাটি চেঁছে বিল তুলে নেয়া হয়েছে। কপোতাক্ষকে প্রবাহমান করার দাবিতে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রাক্কালে ৩০ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ নভেম্বর কপোতাক্ষ খননের দাবিতে জাতীয় প্রেস কাবে সাংবাদিক সম্মেলন, ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রেরণ, ১০ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙা নদী থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত কপোতাক্ষ অববাহিকায় মানববন্ধন, ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মানববন্ধন ও ১৭ ডিসেম্বর পাটকেলঘাটায় সাতক্ষীরা-ঢাকা সড়কে কপোতাক্ষ ব্রিজের ওপর অবস্থান কর্মসূচি পালন ও সড়ক অবরোধ।
যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলাদের স্লথগতির কারণে সব কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান ভিসি প্রফসর ড. আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, যশোরের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নে সরকারের আগ্রহের কমতি নেই। তবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার অভাব রয়েছে। এ জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে সব মত ও শ্রেণীর নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে হবে।
ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এটা কোনপর্যায়ে আছে বা কবে হবে, হচ্ছে না কেন তা নিয়ে কথা বলার কেউ নেই।