
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > যশোর রোড ফেরত চাই!
এই পৃষ্ঠাটি মোট 7646 বার পড়া হয়েছে
যশোর রোড ফেরত চাই!
১ম অধ্যায় :
যশোর রোড। খুলনার কাস্টম ঘাট এলাকা (লোয়ার যশোর রোড) থেকে শুরু হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহর (আপার যশোর রোড) পর্যন্ত বিস্তৃত যে রোড। হ্যাঁ, এটা সেই যশোর রোড যে রাস্তা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় পার হয়েছে লাখ লাখ শরণার্থী। সম্বল বলতে যাদের ছিল শুধু নিজের জীবন। কাঁদা-পানি-মাটি পেড়িয়ে ছুটে চলা, গন্তব্য অনিশ্চিত, তবু ছুটে চলা। যে করেই হোক, বর্ডার পেরোতেই হবে ...
আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের সেই যশোর রোড নিয়েই লিখেছেন তাঁর ১৫২ লাইনের অমর কবিতা 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'। যশোর রোড (আপার) এর দু' পাশের শরণার্থী শিবির থেকে নিজ চোখে দেখে মানুষের দুঃর্দশা উপলব্ধি করে রচনা করেন -
"... শত শত চোখ আকাশটা দেখে
শত শত শত মানুষের দল
যশোর রোডের দু-ধারে বসত
বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল।
... শত শত মুখ হায় একাত্তর
যশোর রোড যে কত কথা বলে
এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে।"
২য় অধ্যায়:
১৯৭১ সালে মুক্তিযদ্ধের বিরোধিতাকারী ঘাতক-দালালদের মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা, নারী-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ইত্যাদি গুরুতর ফৌজদারী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৮-এর অধিনে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন জারি করে ৬শ অভিযুক্ত অপরাধীর নামের তালিকা প্রকাশ করেন। এ আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির হবার গণনোটিশও প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় খুলনার মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) নেতা খান এ সবুর আছে এ তালিকার ৪ নম্বর অবস্থানে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার কিছু উক্তি :
২ মে, ১৯৭১ -> শান্তি কমিটির উদ্যোগে খুলনায় এক সভায় খান এ সবুর বলেন, "কতিপয় ব্যক্তি ব্যতীত 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ' পাকিস্তানিরা প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা কোনো মতবাদই নয়। বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে। পাকিস্তানকে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না। আমরা সবাই পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের পক্ষে। জীবন দিয়ে হলেও আমরা পাকিস্তানকে রক্ষা করবো।"
২১ মে, ১৯৭১ -> খুলনায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খান এ.সবুর, প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী এস.এম. আমজাদ হোসেন ও প্রাক্তন জাতীয় পরিষদ সদস্য এ.কে.এম. ইউসুফ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, "আমাদের সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের জাতীয় সংহতি বিরোধী কার্যকলাপ ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমরা রাষ্ট্রদ্রোহীদের নির্মূলের কাজে নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য প্রদেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাই।"
৩০ মে, ১৯৭১ -> খান এ সবুরের সভাপতিত্বে খুলনার দৌলতপুরের দিয়ানায় শান্তিকমিটির সভা হয়। সবুর খান খুলনাবাসীকে দেশদ্রোহীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানায়। এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে রাখে সাবেক এমপি এ আবুল হোসেন এবং শান্তিকমিটির নেতা মোহাম্মদ আলী।
৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ -> ঢাকায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুসলিম লীগ নেতা খান এ. সবুর বলেন, “পাক-ভারত যুদ্ধ বাধলে তা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে। ভারত পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করতে পারবে না বলেই পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিবাহিনীর নামে পঞ্চম বাহিনী গড়ে তুলেছে। মুক্তিবাহিনী কাদের বিরুদ্ধে লড়ছে? দেশতো মুক্ত।“
৬ অক্টোবর, ১৯৭১ -> খান এ সবুর খানের বাসায় কাইয়ুম মুসলিম লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) প্রধান কাইয়ুম খান বলেন, 'রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয় প্ররোচনায় ইসলামের বদলে ভাষাকেই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি বলে প্রচার শুরু করা হয়। ভাষাভিত্তিক শ্লোগানের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো পাকিস্তানের ধ্বংস করা।'
৩য় অধ্যায় :
'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' এর যশোর রোড আজ এরকম বিশাল মাপের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ব্যক্তির নামে। খুলনা'র নির্দলীয় গণমঞ্চ থেকে দাবি উঠেছে এ রাস্তার নাম পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক, আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত 'যশোর রোড' নাম বহাল রাখতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
১) 'খান এ সবুর রোড' এর নাম পরিবর্তন করে যশোর রোড করার দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, খুলনা শাখা গত ৩ মে/২০১২ ইং, বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে।
২) ১৪ মে/২০১২ ইং, সোমবার, স্বাধীনতাবিরোধী খান এ সবুরের নামে এ রাস্তার নাম স্থগিতের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই নাম অপসারণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় কেন আনা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে এলজিআরডি সচিব, শিক্ষা সচিব, খুলনার মেয়রকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
৩) ১১ সেপ্টেম্বর/২০১২ ইং, মঙ্গলবার, খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খুলনার নাগরিক নেতৃবৃন্দ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর ম্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
_________
অর্থ্যাৎ, নির্দলীয় গণমঞ্চের আগেও কমপক্ষে ৩ বার মেয়রকে জানানোর পরও এ রাস্তার নাম পরিবর্তন হয়নি। এ অবস্থায়, খুলনা শহরের প্রধান সড়ক খান এ সবুর রোডের নাম পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক যশোর রোড নাম পুনর্বহাল করার জন্য কর্তৃপক্ষকে জোর দাবি জানানো উচিত।