
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরঃ জামাইবরণের জন্য প্রস্তুত নড়াইল
এই পৃষ্ঠাটি মোট 7511 বার পড়া হয়েছে
ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরঃ জামাইবরণের জন্য প্রস্তুত নড়াইল
প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথম বাঙালি, যিনি ভারত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে আসীন। ভারতের রাষ্ট্রপতি তিনি; বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবেও খ্যাত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি বাংলাদেশের জন্য অবদান রেখেছেন। আজ তিনি বাংলাদেশে আসছেন; সঙ্গে আসছেন ভারতের ফার্স্ট লেডি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের বরণের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রস্তুতি চলছে। নড়াইলের নিভৃত গ্রাম চিত্রাপারের ভদ্রবিলার আত্মীয়স্বজনও তাঁদের বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় এখানকার জামাইবাবু। শুভ্রা মুখোপাধ্যায় এই গ্রামের মেয়ে। তাই তাঁদের সফরে এখানকার মানুষের আগ্রহটা একটু বেশি। অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের ভাই কানাইলাল ঘোষ। তিনি বাংলাদেশেই থাকেন।
জামাইবাবু হলেও প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি আর শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ফার্স্ট লেডি। তাঁরা ভিভিআইপি। আর ভিভিআইপিদের সফর নিছক পারিবারিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাই সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্বাগত জানানোর জন্য চলছে সংস্কারকাজ। শহর থেকে শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা পাকা করার কাজও। বাড়িঘরের রং করার কাজও শেষ পর্যায়ে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুভ্রা ঘোষ সাত বছর বয়স পর্যন্ত কাটান নিজ গ্রাম ভদ্রবিলায়। এরপর তিনি নানাবাড়িতে থেকে তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (এখন সরকারি) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করেন। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই শুভ্রা ঘোষের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। ওই সময় তাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় নামের দুই ছেলে এবং শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় নামের এক মেয়ে রয়েছে তাঁদের। নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামের স্বর্গীয় অমরেন্দ্র ঘোষের মেয়ে শুভ্রা ঘোষরা চার ভাই চার বোন। ভাইবোনেরা কালক্রমে ভারতে চলে গেলেও ছোট ভাই কানাইলাল ঘোষ একা পৈতৃক ভিটায় পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বসবাস করছেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির নড়াইল আগমন উপলক্ষে এলাকাকে সাজানো হচ্ছে; (ডানে) নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামের এই বাড়িতে প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির শৈশব কেটেছে :
হঠাৎ করে বদলে গেছে নড়াইল শহর। আধুনিক সাজে সাজানো হচ্ছে শহরটিকে। আগে কখনো এমন পরিবর্তন দেখেননি শহরবাসী। সেই সাথে বদলে ফেলা হয়েছে নড়াইল সদরের ভদ্রবিলা ও তুলারামপুর গ্রামের দৃশ্যপটও।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ও কিলোমিটার পোস্ট, সেতু-ব্রিজ-কালভার্ট, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, গাছপালা, পথপ্রান্তর থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস, বিভিন্ন স্থাপনা, আবাসন সব কিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া। কারোর যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। এসব কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকেরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক কাজ গুছিয়ে নেয়া হয়েছে। সদরের ভদ্রবিলা ও তুলারামপুর এবং শহরের আধুনিক পরিবেশ দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নড়াইলের পরিবেশ ও সব রাস্তাঘাট সব সময় যদি এমন থাকত!
জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের জমাইবাবু ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আগমন উপলে ভদ্রবিলা, তুলারামপুরসহ শহরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। মার্চের ৩ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে তিনি (প্রণব মুখার্জি) নড়াইলে আসছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সাথে থাকছেন প্রণব মুখার্জির স্ত্রী নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জিও। এ সফর উপলে নড়াইল-যশোর সড়কের চাঁচড়া অংশ থেকে শুরু করে রূপগঞ্জ, আউড়িয়া, সার্কিট হাউজসহ পৌরসভার প্রায় ১৬ কিলোমিটার ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কারকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই সড়কের দুই পাশে মাটি ফেলে উঁচু-নিচু গর্ত সমান করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার গাছপালার গোড়ার অংশে সাদা ও লাল রঙ করা হয়েছে। রঙের কাজে নিয়োজিত শহরের মহিষখোলার নূর হোসেন ও চাঁন মিয়া জানান, তারা আটজন গত ২১ ফেব্র“য়ারি থেকে রাস্তার দুই পাশের সব গাছে রঙ লাগানোর কাজ করে যাচ্ছেন। দুই দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান। গাছপালা ছাড়াও রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও বাসাবাড়ির সীমানা প্রাচীর, কালভার্ট, ব্রিজ, সেতুসহ দৃষ্টিগোচর সব কিছুতেই দেয়া হচ্ছে রঙের প্রলেপ।
শুভ্রা মুখার্জির মামাতো ভাই নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মামা শ্বশুরবাড়িই হচ্ছে আমাদের এই (তুলারামপুর) বাড়ি। বিশেষ করে প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতেই। শুভ্রা দিদি এখানে (তুলারামপুর) থেকেই চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত। তার পর চলে যান ভারতে। কার্তিক ঘোষ আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে মুন্নি মুখার্জিকে নিয়ে শুভ্রা দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে সেই সময় সাথে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি। এবার আমরা অধীর আগ্রহে আছি, জামাইবাবুকে (প্রণব মুখার্জি) আমাদের বাড়িতে স্বাগত জানাতে। এবারই তার প্রথম আগমন হবে নড়াইলে। এ দিকে চিত্রা নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত নড়াইল শহরসংলগ্ন ভদ্রবিলা গ্রামেও আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি। শুভ্রা মুখার্জির ছোট ভাই কানাই লাল ঘোষ জানান, ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভদ্রবিলা গ্রামে বাবা অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষের ঘরে জন্ম নেন শুভ্রা ঘোষ। প্রণব মুখার্জির সাথে বিয়ের পর ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি (শুভ্রা)। কানাই ঘোষ আরো জানান, শুভ্রা দিদি ও জামাইবাবুর আগমন উপলে ভদ্রবিলার বাড়িতে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাথরুম নির্মাণসহ ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করা হচ্ছে। বাড়িতে প্রবেশের ৫১২ ফুট দৈর্ঘ্যরে রাস্তাও পাকা করা হয়েছে। বাড়ির পাশের ভদ্রবিলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ও আশপাশের বাড়িঘরও নতুন করে সাজানো হয়েছে। বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী নির্মল কুমার জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতির আগমন উপলে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। তিন-চার দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। জেলা প্রশাসক জহুরুল হক বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতির নড়াইল আগমন উপলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ উপলে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণসহ একটি প্রতিনিধিদল ৮ ফেব্র“য়ারি নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন।
উল্লেখ্য, শুভ্রা মুখার্জির শৈশবের কিছুটা কেটেছে নড়াইলের ভদ্রবিলায় আর কিছুটা কেটেছে মামাবাড়ি সদরের চাঁচড়ায়। শুভ্রা মুখার্জিকে তার পরিবারের লোকজন ‘গীতা’ নামে ডাকেন। প্রণব মুখার্জির সাথে ১৪ বছর বয়সে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন শুভ্রা মুখার্জি। তখন প্রণবের বয়স ২২ বছর। নড়াইলের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জি পেশায় অধ্যাপক। গাইতে পারেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধসহ বিভিন্ন ফিচার।