
Home বৃহত্তর যশোর সমিতি (Greater Jessore Association) > “জাগজাপিডা” শিক্ষার্থী সংগঠন
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89478 বার পড়া হয়েছে
“জাগজাপিডা” শিক্ষার্থী সংগঠন
সংগঠন পরিচিতিঃ
যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের জামালতা, গরীবপুর, জাহাঙ্গীরপুর, পিতাম্বরপুর এবং ডাইনা এই পাঁচ গ্রামের অদম্য মেধাবি, প্রতিভাবান, শিক্ষানুরাগী, সম্ভাবনাময়ী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের সংগঠন- “জাগজাপিডা” শিক্ষার্থী সংগঠন।
শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথা সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষিত এবং সমৃদ্ধ জাতি গোষ্ঠি তথা এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০১ সালে চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের (জামালতা, গরীবপুর, জাহাঙ্গীরপুর, পিতাম্বরপুর, ডাইনা) শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অরাজনৈতিক, শিক্ষাবান্ধব ও শিক্ষার্থী কল্যাণ সংগঠন হিসাবে যাত্রা শুরু করে “জাগজাপিডা”।
সংগঠনটি তার নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সুধীজন তথা সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে নিয়মিত শিক্ষামূলক এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে “জাগজাপিডা” সুদীর্ঘ এক যুগ পার করে আজ অনেকটা পূর্ণ এবং এর কার্যক্রমের সুফল সমাজে পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশিক্ষায় শিক্ষিত শত শত শিক্ষার্থী এই সংগঠনের মাধ্যমে আলোকিত সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।
“জাগজাপিডা”-এর পঠভূমিঃ
১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর এই এলাকার এক গ্রামের মানুষের সংগে আরেক গ্রামের মানুষের রাজনৈতিক দ্বন্ধ ও মারামারি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। সামাজিক অবক্ষয়, কু-সংস্কার, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বাল্য বিবাহ আর মাদকের হাতছানিতে নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল শিক্ষা নামক প্রদীপটি। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে যাচ্ছিল কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীরা। উচ্চ শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব আর সঠিক পৃষ্ঠোপোষকতার অভাবে অনেকেই কলমের বদলে হাতে তুলে নিত অস্ত্র। যা ধীরে ধীরে আঘাত করছিল সমাজের প্রতিটি স্তরে। দিশেহারা শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর সুশীল সমাজ খুঁজে ফিরছিল মুক্তির পথ।
অবশেষে অত্র এলাকার কিছু তরুণ, মেধাবী, উদ্দমী আর সচেতন শিক্ষার্থী অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনায় বিশাল সেই অন্ধকারের মাঝে জ্বালিয়ে দিলেন “জাগজাপিডা” নামক এক ছোট্ট প্রদীপ। যার আলোয় আজ আলোকিত পুরো সমাজ। ২০০১ সালে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গরীব পুর গ্রামের মুরসালিন নোমানী, একই গ্রামের রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান রাশেদসহ বন্ধুরা ১৯৮৯ সালের তাদের ৫ম শ্রেণী ব্যাচের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ বছর রোজার ঈদের পরদিন তারা বেড়গোবিন্দ পুর বাওড়ের ধারে পিকনিকের আয়োজন করে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পরবর্তী কোরবানীর ঈদের পরদিন গরীবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠিত হবে। এই অনুষ্ঠানটি বর্তমান গরীবপুর আদর্শ বিদ্যাপিঠ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি ব্যাপক সফল হওয়ায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, জামালতা, গরীবপুর, জাহাঙ্গীরপুর, পিতাম্বরপুর এবং ডাইনা এই পাঁচ গ্রামের ছাত্ররা পরের ঈদে সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠান করবে। এই কাজ করতে সবচেয়ে কষ্ট করেন গরীবপুরের হুমায়ুন কবীর, জামলতার মাসুদ রানা, মাসুদ শামীম লাল্টু, জাকির হোসেন,জাহাংগীর আলম,পান্নু হোসেন ও জাহাংগীর আলম কাজল,জাহাঙ্গীর পুরের ওসমান গণি, আব্দুস সামাদ ও আব্দুলস্নাহ আল মামুন প্রমুখ।
ধীরে ধীরে সংগঠনটির আয়তন, কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিকূলতা থাকলেও সংগঠনটির শিক্ষার্থী বান্ধব কার্যক্রম, প্রচারনা, সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম-এর মাধ্যমে বৃদ্ধি পেতে থাকে অভিভাবক, শুভানুধ্যায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সরকারি-বেসরকারি পদে কর্মরত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ। “জাগজাপিডা” পায় নতুন মাত্রা। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। দীর্ঘ ১২ বছরের এই পথচলাতে “জাগজাপিডা” পেয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শুভানুধ্যায়ী যাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অত্র পাঁচ গ্রামে আজ বইছে শিক্ষা, স্থিতিশীলতা আর সৌহার্দের দক্ষিণা বাতাস। আজ আর কোন শিক্ষার্থীকে অর্থের অভাবে ঝরে পড়তে হয় না। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পোহাতে হয় না কোনো ঝামেলা। সমাজ থেকে অনেকাংশে দূর হয়েছে বাল্যবিবাহ, কমেছে মাদকের অবাধ ব্যবহার। “জাগজাপিডার” পতাকা তলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আজ এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে যেখানে সোনালী ভবিষ্যৎ তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কার্যক্রম সমূহঃ
সংগঠনটি ২০০১ সাল থেকেই প্রতি বছর বার্ষিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে। যেখানে সচেতনতামূলক রালী, বৃত্তি প্রদান, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। বৃত্তি প্রদান, শিক্ষার্থী সংবর্ধনা সহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যহত আছে এবং তা আরো প্রসার ঘটানো হবে।
২০১০ সালে সংগঠনটি বিনামূল্যে অত্র এলাকার ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সহ প্রায় ১০০০ মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজ করে যা সমাজের সর্বস্তরে ব্যাপক প্রসংসা অর্জন করে। বিভিন্ন সময়ে মাদক এবং বাল্যবিবাহের মত সামাজিক ব্যধির বিরুদ্ধে সংগঠনটি রালী এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংগঠনটি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজ থেকে অপসংস্কৃতি দূর করে সমাজের মানুষের সুস্থ বিনোদনের চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে।
সংগঠনটি ২০১১ সালে “গরীবপুর আদর্শ বিদ্যাপীঠ” এর সাথে যৌথভাবে একটি পাঠাগার স্থাপন করে যা জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীদের জ্ঞান তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও ইফতার মাহ্ফিল, শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা, সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠান, বিতর্ক ইত্যাদি সামাজিক কার্যক্রম “জাগজাপিডা” অব্যহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
অর্থের উৎসঃ
“জাগজাপিডা” সকল সদস্য শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে নিজস্ব ফান্ড গঠন করেছে। এছাড়া এলাকার সূধীজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় জনপ্রতিনীধি এবং সংগঠনের উপদেষ্ঠামন্ডলীরা বিভিন্ন সময়ে এই সংগঠনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। শিক্ষার নতুন দিগন্ত উম্মোচনের মাধ্যমে আধুনিক সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে “জাগজাপিডা” এর সকল কার্যক্রম অব্যহত রাখা এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলের সৃষ্টিশীল চিন্তা, আর্থিক সহযোগীতা এবং অংশগ্রহণ-ই পারে আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিতে।
“জাগজাপিডা” দীর্ঘস্থায়ী হোক।
মোঃ তরিকুল ইসলাম (বাবু)
প্রচার সম্পাদক ,
“জাগজাপিডা”,
মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।