
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > যশোরে অটোমোবাইল শিল্পাঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ থমকে আছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 7704 বার পড়া হয়েছে
যশোরে অটোমোবাইল শিল্পাঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ থমকে আছে
যশোরে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তুলতে ২০১১ সালে সরকারের কাছে প্রস্তাব করে স্থানীয় বিসিক কর্তৃপক্ষ। যশোর-নড়াইল সড়কের দাইতলা সেতুর পাশে ফতেপুর গ্রামে ৪০ একর সরকারি জমির ওপর ‘অটোমোবাইল শিল্পাঞ্চল’ স্থাপনের এ প্রস্তাব করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষ দিকে বিসিক প্রধান কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শনের কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা না হওয়ায় জেলায় দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপন কার্যক্রমের সম্ভাবনা থমকে যায়।
যশোর বিসিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) যশোর শাখায় ১২৩টি ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে ১২১টি ইউনিটেই শিল্প-কলকারখানা চালু। বাকি দুটি ইউনিটও বরাদ্দ দেয়া রয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে যশোর বিসিকে। ফেরত দেয়া হয়েছে অর্ধশত আবেদন। তাই শিল্পোদ্যাক্তাদের চাহিদা মেটাতে যশোরে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় যশোর বিসিক কর্তৃপক্ষ।
যশোর বিসিক সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহর ও শহরতলীতে আবাসিক ও অনাবাসিক এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে শতাধিক অটোমোবাইল শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, বাস-ট্রাকের বডি উৎপাদন, অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার সংযোজন এবং মোটরগাড়ি মেরামত করা হয়। তাই কারখানাগুলোর জন্য একই জায়গায় সমন্বিত অবকাঠামো সুবিধা দিয়ে দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের দাবি এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।
যশোর বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা লুত্ফর রহমান জানান, যশোর শহরের পাশেই ঝুমঝুমপুরে ৫০ একর জমির ওপর ১৯৬২ সালে গড়ে ওঠে এ শিল্পনগরী। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এখানে ৪৪০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১৯৫ কোটি টাকার রফতানি ও ২৪৫ কোটি টাকার পণ্য স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটালেও শিল্পনগরীটি রয়েছে অবহেলিত। এখানে কোনো প্লট ফাঁকা না থাকায় নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। এজন্য যশোরে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো জানান, এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ ২০১১ সালের ৮ মে নানা যৌক্তিকতা তুলে ধরে ৯ দফা সুপারিশ-সংবলিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে বিসিক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে যশোর-নড়াইল সড়কের দাইতলা সেতুর পাশে ফতেপুর গ্রামে ৪০ একর জমির ওপর ‘অটোমোবাইল শিল্পাঞ্চল’ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। ওই স্থানে শিল্পাঞ্চল স্থাপন করা হলে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও শিল্পের কাঁচামাল পরিবহনের জন্য ঢাকা ও বেনাপোলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। এছাড়া অটোমোবাইল কারখানার উৎপাদিত পণ্য আমদানি বিকল্প হিসেবে পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। বেকার জনগোষ্ঠী পাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
লুত্ফর রহমান আরো বলেন, ‘২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিসিকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি টিম আসার কথা ছিল সরেজমিন তদন্ত করার জন্য। তারা রিপোর্ট দিলে এটা কার্যকর করা সম্ভব হতো। কিন্তু তারা না আসায় এর অগ্রগতি পিছিয়ে গেছে।’ শিগগিরই প্রধান কার্যালয় থেকে টিম আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে যশোরে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান ব্যবসায়ীরা। এ কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘অনেক আগে থেকে যশোরে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে না উঠলে এ অঞ্চলের শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে, যা যশোরের উদীয়মান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা থামিয়ে দেবে। কোনোভাবে আমরা এটা আশা করি না। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব এখানে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তুলতে হবে।’
যশোর চেম্বারের পরিচালক ও শিল্পোদ্যোক্তা হুমায়ন কবীর কবু জানান, বিসিকের প্রধান কার্যালয়ের খামখেয়ালিপনা ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি করছে। যত দ্রুত দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে উঠবে, অর্থনীতির জন্য এটি তত সুফল বয়ে আনবে।
এ ব্যাপারে যশোর বিসিকের ডিজিএম রেজাউল করিম বলেন, ‘যশোরে দ্বিতীয় শিল্পনগরী গড়ে তুলতে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিসহ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি থেকে গত ডিসেম্বরে পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। কিন্তু কি কারণে তারা আসেনি, তা আমার জানা নেই।’