
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > মুক্তিযুদ্ধে জিতলেও জীবনযুদ্ধ নিত্যসঙ্গী রাজগঞ্জের মেহের আলীর
এই পৃষ্ঠাটি মোট 7561 বার পড়া হয়েছে
মুক্তিযুদ্ধে জিতলেও জীবনযুদ্ধ নিত্যসঙ্গী রাজগঞ্জের মেহের আলীর
মুক্তিযুদ্ধে জিতলেও জীবনযুদ্ধে পরাজয়ই যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের মোবারকপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলীর। ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হলেও, সন্তান হারানোর কষ্ট কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। যে বছর জামায়াত-শিবিরের হামলায় দগ্ধ হন তিনি, সে বছরই উপার্জনক্ষম একমাত্র সন্তান পীরবকস ভাগ্য ফেরানোর আশায় মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এরপর থেকে আজো পর্যন্ত কোন সন্ধান মেলেনি তার। অসহায় মেহের আলী আক্ষেপ করে বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সন্তান হারানোর কষ্টের থেকে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়াও ভাল ছিল। কিন্তু তার এ আক্ষেপ যেন কেবলই দীর্ঘশ্বাস !
উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের মৃত কানাই মোড়লের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী মোড়ল বহু সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭১ সালে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ, চন্ডিপুর উজ্জলপুর, হাজরাকাটিসহ বহু যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ওটাই ছিল তার জীবনের স্বর্ণাধ্যায়। এরপর শুধুই ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে প্রতি পদে পদে। দেশ স্বাধীনের পর মেহের আলী মোড়লের বাড়িতে কয়েকদফা ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা বাড়ি ভাংচুরের পাশাপাশি সংসারে মূল্যবান আসবাবপত্রের সাথে নিয়ে যায় তার মুক্তিযোদ্ধা সনদটিও। এরপর অর্থাভাবে আর যোগাযোগ না থাকায় উত্তোলন করতে পারেনি তার মুক্তিযোদ্ধা সনদটি। কিন্তু জীবন-জীবিকার তাগিদে স্বাধীন বাংলাদেশেও সংগ্রাম করেছেন প্রতিনিয়ত। এরই মাঝে বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণে গত ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হন তিনি। এতে তার সমস্ত মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেখতে যান এবং চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন। এরপর দীর্ঘ ৫মাস চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন এ মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু বাড়িতে এসে অর্থ অভাবে ঔষধ খেতে না পেরে এখন তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
মেহের আলী মোড়লের স্ত্রী সোনাভান জানান, সর্বশেষ গত দেড় বছর আগে তার ছেলে পীরবকসকে (৩৫) স্থানীয় মানবপাচারকারীরা আকাশ পথের কথা বলে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। যার খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও। ছেলের শোকে পিতা মেহের আলী পাগলের মত হয়ে গেছেন। এলাকায় যাকে দেখছেন তাকেই তিনি পীরবকস বলে ডাকছেন।
তিনি বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও সংসারে রয়েছেন দু’সন্তান খোদা বকস (৪৪) ও জাহা বকস (২৮)। রয়েছে নিখোঁজ পীরবকসের দু’টি কন্যা সন্তান শান্তা (৮) ও রহিমা (৬) এবং পুত্রবধু শাহনারা (২৫)। আর জমিজমা বলতে বাস্তভিটার ৪শতক জমি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। তাই ৫জনের সংসারে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে এ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের।
তথ্যসূত্র: গ্রামের কাগজ