
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > ডিজিটাল হচ্ছেন বৃদ্ধা রুবিয়া, সাজেদা, নূরজাহানরা
এই পৃষ্ঠাটি মোট 15971 বার পড়া হয়েছে
ডিজিটাল হচ্ছেন বৃদ্ধা রুবিয়া, সাজেদা, নূরজাহানরা
ফিরোজ গাজী, যশোর ৩ জুন, ২০১৯ ১৬:৫৭

ছবি : কালের কণ্ঠ
রুবিয়া বেগম। বয়স ৬০ ছুই ছুই। তবে সঠিক বয়স বলতে পারেন না। কারণ হিসাব রাখতে পারেন না। মোবাইল ফোনও আছে তার একটা। তবে নিজের ফোনটির নম্বর কত তাও বলতে পারেন না তিনি। তার ফোন নম্বর জানতে চাইলে বললেন, 'বাবা, তোমার ফোনে আমারডা দিয়ে ফোন করো তালি নম্বর বের হবেনে।' তাহলে কিভাবে ফোন ব্যবহার করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, 'এরে ওরে তারে আশেপাশে যে থাকে তাগের কই ইট্টু ফোন কইরে দিতি। আমার যাগের দরকার হয়, লোকজনরে দিয়ে তাগের নম্বর ফোনের মধ্যি লিখে রাখিছি। আশে পাশের কাউরে নাম কইয়ে ফোন করে দিতি কই। তবে, ফোন বাজলি ধরতি পারি।’
চার ছেলে এক মেয়ের জননী রুবিয়া বেগম থাকেন যশোর শহরতলীর শংকরপুরে। অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে ছেলে মেয়ে বা কারো সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে নিজের ফোন থাকার পরও তার নিতে হয় অন্যের সহযোগিতা।
তার মতো এমন ধরনের সমস্যা সখিনা বেগম (৬৩), নূরজাহান বেগম (৫৫), সাজেদা বেগমসহ অসংখ্য দরিদ্র বয়স্ক মানুষদের। সামান্য লেখাপড়াও না জানার কারনে তাদের এমন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি প্রায়দিনই হতে হয়। এমন মানুষদের এমন সমস্যা থেকে রেহাই দিতে এগিয়ে এসেছে ‘যশোর ইনফো ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত বিনামূলের বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে তারাও এখন যশোর শহরতলীর শংকরপুরের এই বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের নিয়মিত ছাত্রী।
এখানে বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, ধর্ম, স্বাস্থ্য ও পরিস্কার পরিচ্ছনতা শেখা ছাড়াও এখন তারা ডিজিটাল হচ্ছেন।
শিখছেন কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। জানছেন ৯৯৯সহ জরুরি সেবার ফোন নম্বর গুলো। আশে পাশে আগুন লাগলে কিভাবে দ্রুত স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের নাম্বারে ফোন করতে হবে। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নাম্বারে ফোন করে কিভাবে কথা বলতে হবে। এসব বিষয়ে তারা সপ্তাহে ৬ দিন বিকেলে এখানে ক্লাস করেন। শুক্রবার ছুটি।
সাজেদা বেগমের বয়স (৬০)। শংকরপুর এলাকায় তার বাড়ি। তিনি বললেন, ‘আমাগের ছোট বেলায় অভাব ছিল। পড়াশুনোরও তেমন দরকার ছিল না। কিন্তু এখন বুঝতি পারতিছি লিখাপড়ার দরকার। এই স্কুলি পইড়ে এখন আমি নিজির নাম সই কইরে টাকা তুলতি পারি। ফোনও আছে। দরকারের সময় দোকানে থাকা ছেলেডারে ফোন করতি গিলি মানুষ ডাকতি হয়। এখন আমি পড়ার পাশাপাশি ফোন করাও শিখতিছি। আমি তাড়াতাড়িই শিখে জাবানে কি কইরে ফোন করতি হয়।’
এই সব বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য এই কেন্দ্রে শিক্ষক আছেন তিন জন। সালমা খাতুন উর্মী, হাবিবা জান্নাত ও সেলিনা খাতুন। তবে তারা নিজেরাই এখনো শিক্ষার্থী। এবং এসব বয়স্কদের পড়ানোর জন্য তারা কোন বেতন নেন না।
এই কেন্দ্রের শিক্ষক যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী হাবিবা জান্নাত বললেন, ‘আমরা এসব বয়স্ক মানুষদের পড়িয়ে টাকা আয়ের চিন্তা করি না। বিকেলের অবসরে তাদের কিছু শেখাতে পারছি। আমাদের কাছ থেকে শিখে তারা নিজেরা নিজেদের ছোট খাট সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে তবে সেটাই আমাদের জন্য বড় আনন্দের।’
একই কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী সালমা খাতুন উর্মী বললেন, ‘মা-খালা, নানি-দাদির বয়সি এই শিক্ষার্থীদের পড়ানো একটু কঠিন। এনারা ছোটদের মতো সহজে সবকিছু বুঝতে পারেন না। বারবার বোঝাতে হয়। এই বয়স্ক মানুষগুলোর শেখারও আগ্রহ আছে। ইনাদের শেখাতে পারাটা একটা ভালো কাজ। ভালো কাজের মধ্যে একটি আলাদা আনন্দ আছে। সেই আনন্দের জন্যই পড়াই।’
বিনামূল্যের এই বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রেটির প্রতিষ্ঠাতা অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘যশোর ইনফো ফাউন্ডেশন’। যশোর শহরের শংকরপুরে গোলাম প্যাটেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রতিদিন বিকেলে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের কার্যক্রম চলে।
এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ অন্যের বাড়িতে কাজ করেন ও অনেকে কাজকর্মে দিনের বেলায় ব্যাস্ত থাকেন এবং বিকেলে স্কুলেরও ক্লাস থাকেনা। ক্লাস রুমও ফাকা থাকার ফলে বিকেলের অবসরে তারা এখানে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের বিষয়ে যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী মিশু বললেন, দরিদ্র এই বয়স্ক মানুষগুলো জীবনে চলার পথে প্রতি মুহূর্তে নানা সমস্যায় নানা বিপদে পড়েন। ন্যূনতম পড়াশোনা না জানার কারনে তাদের এই অবস্থা। অসুস্থ হলে পড়তে না পারার কারনে কোন সময় কোন ওষুধ খেতে হবে তা ঠিক করতে পারেন না। ফলে ভুল সময় ভুল ওষুধ খেয়ে আরও বিপদে পড়েন। তাছাড়া হিসাব না জানার কারণে তাদের অনেকে ঠকায়। যেমন একজন সবজি বিক্রেতা আছে। ব্যবসার খাতিরে অনেক সময় বাকিতে বিক্রি করতে হয়। তিনি লিখে রাখতে পারেন না। সব হিসাব মনে রাখাও সমস্যা। এতে অনেক টাকা তিনি মার খান। হিসাব রাখতে পারলে তার সে কার কাছে কত টাকা পাবেন সে হিসেব তিনি রাখতে পারেন। এমন নানা সমস্যা থেকে দরিদ্র বয়স্ক এসব মানুষদের কিছুটা হলেও রক্ষা করতে আমরা এই শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি।
ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি হাবিব খান বললেন, আমাদের এই কেন্দ্রে আগে শুধু বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, ধর্মীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখন সময় ডিজিটালের। তাই এসব শিক্ষার পাশাপাশি এখন এইসব বয়স্ক মানুষদেরও ডিজিটাল দুনিয়ার কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়ার কাজও আমরা শুরু করেছি। যেমন জরুরি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন। বয়স্ক এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই মোবাইল ফোন আছে। তবে তারা তার ব্যবহার জানেননা। আমরা তাদের সে শিক্ষা দেওয়াটা সম্প্রতি চালু করেছি।
ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মীর মুরাদ হোসেন বললেন, ২০০৮ সালে আমরা এই শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজারের বেশি বয়স্ক মানুষ এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩০ জন। আমরা এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেইনা। আমরা বয়স্ক শিক্ষার সব খরচ চালাই যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নিজেদের টাকায়। শিক্ষা উপকরন যা লাগে তাও আমরা নিজেরা সরবরাহ করি। এমনকি অনেক সময় এসব শিক্ষার্থীদের অসুস্থতায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ নানা বিপদে আপদে আমরা পাশে দাঁড়াই। এছাড়াও পড়াশোনার প্রতি তাদের উৎসাহ দিতে এসব দরিদ্র মানুষদের উৎসবের সময় নানা উপহারও দিয়ে থাকি।
গত শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থীদের ঈদ উপলক্ষে উপহার দেয়া হয় শাড়ি, বিরিয়ানির চাল, সেমাই, চিনি মসলাসহ নানা উপকরন। সাথে তিন শিক্ষককেও ঈদ উপহার হিসেবে দেয়া হয় তিনটি থ্রি-পিস।
উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহর সমাজ কল্যান অফিসার আবিদ হাসান, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি ফখরে আলম, দৈনিক গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
থ্রি-পিস পাওয়ার পর শিক্ষক সোনিয়া খাতুন বললেন, এসব মুরব্বিদের পড়াতে এমনিতেই ভালো লাগে। তারপর ঈদ উপলক্ষে নতুন এই থ্রি-পিস যোগ করলো আরও আনন্দ।
শিক্ষার্থী নূরজাহান বললেন, আমাগের পড়াশুনো শিখোইয়ে ডিজিটাল বানাচ্ছে। তারপর আবার ঈদির জন্যি শাড়ি সেমাই দিল। কিযে আনন্দ তা বইলে বুঝোতি পারবো না।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, মঙ্গলবার । ৪ জুন ২০১৯। ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬। ২৯ রমজান ১৪৪০

ছবি : কালের কণ্ঠ
রুবিয়া বেগম। বয়স ৬০ ছুই ছুই। তবে সঠিক বয়স বলতে পারেন না। কারণ হিসাব রাখতে পারেন না। মোবাইল ফোনও আছে তার একটা। তবে নিজের ফোনটির নম্বর কত তাও বলতে পারেন না তিনি। তার ফোন নম্বর জানতে চাইলে বললেন, 'বাবা, তোমার ফোনে আমারডা দিয়ে ফোন করো তালি নম্বর বের হবেনে।' তাহলে কিভাবে ফোন ব্যবহার করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, 'এরে ওরে তারে আশেপাশে যে থাকে তাগের কই ইট্টু ফোন কইরে দিতি। আমার যাগের দরকার হয়, লোকজনরে দিয়ে তাগের নম্বর ফোনের মধ্যি লিখে রাখিছি। আশে পাশের কাউরে নাম কইয়ে ফোন করে দিতি কই। তবে, ফোন বাজলি ধরতি পারি।’
চার ছেলে এক মেয়ের জননী রুবিয়া বেগম থাকেন যশোর শহরতলীর শংকরপুরে। অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে ছেলে মেয়ে বা কারো সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে নিজের ফোন থাকার পরও তার নিতে হয় অন্যের সহযোগিতা।
তার মতো এমন ধরনের সমস্যা সখিনা বেগম (৬৩), নূরজাহান বেগম (৫৫), সাজেদা বেগমসহ অসংখ্য দরিদ্র বয়স্ক মানুষদের। সামান্য লেখাপড়াও না জানার কারনে তাদের এমন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি প্রায়দিনই হতে হয়। এমন মানুষদের এমন সমস্যা থেকে রেহাই দিতে এগিয়ে এসেছে ‘যশোর ইনফো ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত বিনামূলের বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে তারাও এখন যশোর শহরতলীর শংকরপুরের এই বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের নিয়মিত ছাত্রী।
এখানে বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, ধর্ম, স্বাস্থ্য ও পরিস্কার পরিচ্ছনতা শেখা ছাড়াও এখন তারা ডিজিটাল হচ্ছেন।
শিখছেন কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। জানছেন ৯৯৯সহ জরুরি সেবার ফোন নম্বর গুলো। আশে পাশে আগুন লাগলে কিভাবে দ্রুত স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের নাম্বারে ফোন করতে হবে। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নাম্বারে ফোন করে কিভাবে কথা বলতে হবে। এসব বিষয়ে তারা সপ্তাহে ৬ দিন বিকেলে এখানে ক্লাস করেন। শুক্রবার ছুটি।
সাজেদা বেগমের বয়স (৬০)। শংকরপুর এলাকায় তার বাড়ি। তিনি বললেন, ‘আমাগের ছোট বেলায় অভাব ছিল। পড়াশুনোরও তেমন দরকার ছিল না। কিন্তু এখন বুঝতি পারতিছি লিখাপড়ার দরকার। এই স্কুলি পইড়ে এখন আমি নিজির নাম সই কইরে টাকা তুলতি পারি। ফোনও আছে। দরকারের সময় দোকানে থাকা ছেলেডারে ফোন করতি গিলি মানুষ ডাকতি হয়। এখন আমি পড়ার পাশাপাশি ফোন করাও শিখতিছি। আমি তাড়াতাড়িই শিখে জাবানে কি কইরে ফোন করতি হয়।’
এই সব বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য এই কেন্দ্রে শিক্ষক আছেন তিন জন। সালমা খাতুন উর্মী, হাবিবা জান্নাত ও সেলিনা খাতুন। তবে তারা নিজেরাই এখনো শিক্ষার্থী। এবং এসব বয়স্কদের পড়ানোর জন্য তারা কোন বেতন নেন না।
এই কেন্দ্রের শিক্ষক যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী হাবিবা জান্নাত বললেন, ‘আমরা এসব বয়স্ক মানুষদের পড়িয়ে টাকা আয়ের চিন্তা করি না। বিকেলের অবসরে তাদের কিছু শেখাতে পারছি। আমাদের কাছ থেকে শিখে তারা নিজেরা নিজেদের ছোট খাট সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে তবে সেটাই আমাদের জন্য বড় আনন্দের।’
একই কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী সালমা খাতুন উর্মী বললেন, ‘মা-খালা, নানি-দাদির বয়সি এই শিক্ষার্থীদের পড়ানো একটু কঠিন। এনারা ছোটদের মতো সহজে সবকিছু বুঝতে পারেন না। বারবার বোঝাতে হয়। এই বয়স্ক মানুষগুলোর শেখারও আগ্রহ আছে। ইনাদের শেখাতে পারাটা একটা ভালো কাজ। ভালো কাজের মধ্যে একটি আলাদা আনন্দ আছে। সেই আনন্দের জন্যই পড়াই।’
বিনামূল্যের এই বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রেটির প্রতিষ্ঠাতা অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘যশোর ইনফো ফাউন্ডেশন’। যশোর শহরের শংকরপুরে গোলাম প্যাটেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রতিদিন বিকেলে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের কার্যক্রম চলে।
এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ অন্যের বাড়িতে কাজ করেন ও অনেকে কাজকর্মে দিনের বেলায় ব্যাস্ত থাকেন এবং বিকেলে স্কুলেরও ক্লাস থাকেনা। ক্লাস রুমও ফাকা থাকার ফলে বিকেলের অবসরে তারা এখানে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের বিষয়ে যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী মিশু বললেন, দরিদ্র এই বয়স্ক মানুষগুলো জীবনে চলার পথে প্রতি মুহূর্তে নানা সমস্যায় নানা বিপদে পড়েন। ন্যূনতম পড়াশোনা না জানার কারনে তাদের এই অবস্থা। অসুস্থ হলে পড়তে না পারার কারনে কোন সময় কোন ওষুধ খেতে হবে তা ঠিক করতে পারেন না। ফলে ভুল সময় ভুল ওষুধ খেয়ে আরও বিপদে পড়েন। তাছাড়া হিসাব না জানার কারণে তাদের অনেকে ঠকায়। যেমন একজন সবজি বিক্রেতা আছে। ব্যবসার খাতিরে অনেক সময় বাকিতে বিক্রি করতে হয়। তিনি লিখে রাখতে পারেন না। সব হিসাব মনে রাখাও সমস্যা। এতে অনেক টাকা তিনি মার খান। হিসাব রাখতে পারলে তার সে কার কাছে কত টাকা পাবেন সে হিসেব তিনি রাখতে পারেন। এমন নানা সমস্যা থেকে দরিদ্র বয়স্ক এসব মানুষদের কিছুটা হলেও রক্ষা করতে আমরা এই শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি।
ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি হাবিব খান বললেন, আমাদের এই কেন্দ্রে আগে শুধু বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, ধর্মীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখন সময় ডিজিটালের। তাই এসব শিক্ষার পাশাপাশি এখন এইসব বয়স্ক মানুষদেরও ডিজিটাল দুনিয়ার কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়ার কাজও আমরা শুরু করেছি। যেমন জরুরি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন। বয়স্ক এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই মোবাইল ফোন আছে। তবে তারা তার ব্যবহার জানেননা। আমরা তাদের সে শিক্ষা দেওয়াটা সম্প্রতি চালু করেছি।
ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মীর মুরাদ হোসেন বললেন, ২০০৮ সালে আমরা এই শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজারের বেশি বয়স্ক মানুষ এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩০ জন। আমরা এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেইনা। আমরা বয়স্ক শিক্ষার সব খরচ চালাই যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নিজেদের টাকায়। শিক্ষা উপকরন যা লাগে তাও আমরা নিজেরা সরবরাহ করি। এমনকি অনেক সময় এসব শিক্ষার্থীদের অসুস্থতায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ নানা বিপদে আপদে আমরা পাশে দাঁড়াই। এছাড়াও পড়াশোনার প্রতি তাদের উৎসাহ দিতে এসব দরিদ্র মানুষদের উৎসবের সময় নানা উপহারও দিয়ে থাকি।
গত শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থীদের ঈদ উপলক্ষে উপহার দেয়া হয় শাড়ি, বিরিয়ানির চাল, সেমাই, চিনি মসলাসহ নানা উপকরন। সাথে তিন শিক্ষককেও ঈদ উপহার হিসেবে দেয়া হয় তিনটি থ্রি-পিস।
উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহর সমাজ কল্যান অফিসার আবিদ হাসান, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি ফখরে আলম, দৈনিক গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
থ্রি-পিস পাওয়ার পর শিক্ষক সোনিয়া খাতুন বললেন, এসব মুরব্বিদের পড়াতে এমনিতেই ভালো লাগে। তারপর ঈদ উপলক্ষে নতুন এই থ্রি-পিস যোগ করলো আরও আনন্দ।
শিক্ষার্থী নূরজাহান বললেন, আমাগের পড়াশুনো শিখোইয়ে ডিজিটাল বানাচ্ছে। তারপর আবার ঈদির জন্যি শাড়ি সেমাই দিল। কিযে আনন্দ তা বইলে বুঝোতি পারবো না।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, মঙ্গলবার । ৪ জুন ২০১৯। ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬। ২৯ রমজান ১৪৪০