
Home উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা / High Ranking officers > তসলীমুর রহমান / Toslimura Rahman (1943) {Secretary (retd.)}
এই পৃষ্ঠাটি মোট 4623 বার পড়া হয়েছে
তসলীমুর রহমান / Toslimura Rahman (1943) {Secretary (retd.)}
তসলীমুর রহমান
Toslimura Rahman
Home District: Jessore
Toslimura Rahman
Home District: Jessore
পা

সাবেক সচিব তসলীমুর রহমান ১৯৪৩ সালের ১১ অক্টোবর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শহীদুর রহমান কলকাতায় চাকরি করতেন। তাই ছোট বেলাটা সেখানেই কেটেছে। পৈত্রিক বাড়ি বৃহত্তর যশোরের নড়াইল জেলার মির্জাপুর গ্রামে। মা শাহিদা খাতুন মাগুরার শালিখা উপজেলার পুলুম গ্রামের মেয়ে। চাচা ওলিউর রহমান নড়াইলের প্রথম মুসলিম নেতা ছিলেন। তিনি নড়াইলের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী’র একজন ঘনিষ্ট সহকর্মী ছিলেন। বৃটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ডিস্ট্রক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য ছিলেন। নানা ছিলেন একজন স্কুল পরিদর্শক। পিতা মাতার ১২ সন্তানের মধ্যে জনাব তসলীমুর রহমান চতুর্থ। বড় ভাই তৌহিদুর রহমান একজন আইনজীবী। পাশাপাশি তিনি ফ্যামিলি প্লানিং এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারী জেনারেল, লায়ন্সের ডিস্ট্রিক্ট গর্ভনর, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর অন্যান্য ভাই-বোনেরা সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত।
জনাব তসলীমুর রহমান ১৯৭৯ সালে ফারজানা মাহফুজা খানকে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ করেন। স্ত্রী একজন গৃহিণী। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স করে বর্তমানে কানাডার হেলথ মিনিস্ট্রিতে চাকরি করছেন। মেয়ে কানাডার ইর্য়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ছিলেন।
শিক্ষাজীবন:
পিতার চাকরি সূত্রে জনাব তসলীমুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কোলকাতার মমিনপুর আদর্শ বিদ্যালয়ে (গুরু মশায়ের স্কুল নামে পরিচিত)। ১৯৫০ সালে পিতা সপরিবারে যশোরে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে শহরের চিত্ত রঞ্জন দাস রোডে (বর্তমানে রেল রোড) বসবাস শুরু করেন। ষষ্ঠিতলা পাড়ার পিটিআই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ক্লাসে বরাবর তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন এবং প্রাইমারী স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। এখানে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর যশোর জিলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে এখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ম্যাট্রিকে তিনি যশোর জেলা ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে যশোর এম. এম. কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬৪ সালে ইংরেজীতে অনার্সসহ এম. এ. পাশ করেন। চাকরিরত অবস্থায় ১৯৭৬ সালে তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
জনাব তসলীমুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালিন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনও করেছেন। ছাত্র রাজনীতিকালিন তিনি দুই বছর ফজলুল হক ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। এসবের পাশাপাশি তাঁর লেখালেখিরও অভ্যাস ছিল। কবিতা লিখতে তিনি বেশী পছন্দ করতেন। ছাত্রজীবন হতে তাঁর ইচ্ছা ছিল আইন পড়ে তিনি একজন বড় আইনজীবী হবেন।
পেশাগত জীবন:
১৯৬৫ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে তাঁর কর্ম জীবন শুরু হয়। কর্ম জীবনের শুরুতেই তিনি হোঁচট খান। পুলিশের খাতায় একটি লাল দাগ থাকায় তাঁর চাকরি চলে যায়। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতে গিয়ে এই লাল দাগ পড়ে। এরপর তিনি ঢাকায় কয়েকটি কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে চাকরি নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিরপুর বাংলা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট ও কৃষি মহাবিদ্যালয়। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সুপিরয়র সার্ভিসে উর্ত্তীর্ণ হয়ে রাওয়াল পিন্ডিতে ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ছিলেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শেষ পাকিস্তানী অফিসার এবং বাংলাদেশের প্রথম অফিসার।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালক হিসেবে ১৯৭৯ পর্যন্ত কাজ করেছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক জাতীয় কার্যক্রমের সূচনালগ্নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯৭৯-১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব (উন্নয়ন) এবং একই সঙ্গে কৃষি মন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ হতে ১৯৮৪ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি দুইবার বিদেশে পড়তে যান। একবার ব্রাসেল্সে ‘মাস্টার অব ল’ এবং আরেকবার হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জন এফ কেনেডি স্কুলে মেসন স্কলার হিসেবে মাস্টার্স অব পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনে। ফিরে আসার পর তাঁর পোস্টিং হয় ফাইনান্সের বহিঃ সম্পদ বিভাগে। ১৯৮৬ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব পদে অধিষ্ঠিত হন। সাড়ে তিন বছর যাবৎ তিনি এই মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত ছিলেন। দেশে পরিবার পরিকল্পনার মত বিশাল কার্যক্রম তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। তাঁর দায়িত্বে মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, জাতীয় ঔষধ নীতি ও তার বাস্তবায়ন ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত ছিল। এরপর ১৯৮৯ সালের তিনি বদলি হয়ে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে ‘বিশেষ কার্যাদি’ নামে নতুন আর একটি মন্ত্রণালয়ে যান। বিশেষ কার্যাদির মধ্যে ছিল বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী এবং অনুন্নত জনগোষ্ঠির উন্নয়ন। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম তখন অত্যন্ত সমস্যাপূর্ণ একটি এলাকা ছিল। সেখানকার জন্য নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই কাজের জন্য তিনি ঐ বিভাগের প্রথম মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এই পর্যায়ে সর্বপ্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি প্রশাসনিক এলাকার সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে তিনি আন্ত:মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্ব দেন। প্রেসিডেন্ট পদে পরবর্তী সময়ে নিযুক্ত হন প্রধান বিচারপতি সাহবুদ্দীন। তসলীমুর রহমান তাঁর তত্ত্বাবধানে কর্মরত ছিলেন।
১৯৯১ সালে সরকারের অনুমতি নিয়ে লিয়েনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনে কাজ শুরু করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৫ সালে পর্যন্ত তিনি এই ইউ.এন.এইচ.সি.আর. এ কাজ করে গেছেন। প্রাক্তন রাশিয়ার তাসখন্দের ইউ.এন.এইচ.সিআর’এর রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন দেশের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। জর্জিয়া, তাজিকিস্তান, ইউক্রেন, সুদানসহ আরও কয়েকটি দেশে শরণার্থী সাহায্যের কাজে নিয়োজিত থেকেছেন। শরণার্থীদের জন্য এ কাজ করতে তাঁকে অত্যন্ত দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল অবস্থার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। এছাড়া কাজের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শরনার্থী প্রর্ত্যাবসনের জন্য বিবাদমান দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে হয়েছে তাঁকে। তিনি আবখাজিয়ার যুদ্ধ এবং সুদানের শান্তি আলোচনা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে সরকারী কাজে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৩ সালে তিনি অতিরিক্ত সচিব হন। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে চাকরি শেষ হওয়ার মাত্র ১ দিন আগে তিনি সেক্রেটারী হয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালে তিনি স্বেচ্ছায় সচিব পদ থেকে অবসরে যান এবং ইউ.এন.এইচ.সি.আর এ পূর্ণভাবে কাজ করতে থাকেন। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তিনি ইউ.এইচ.সি.আর এ কাজ করার পর ২০০৫ সালের অক্টোবরে তিনি অবসর নেন। অবসর নেয়ার পর দেশের বরেণ্য আইনবিদ ড. কামাল হোসেন তাঁকে মানবাধিকার ও আইন সহায়তা প্রদানকারী একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠান ব্লাস্ট (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট) এ যোগদানের আহবান জানান। প্রতিষ্ঠানটির কাজ হচ্ছে দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদান করা।
তথ্য সূত্র : সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান বিপুল,
বদরুদ্দোজা মাহমুদ তুহীন।
সর্বশেষ সম্পাদনা
মার্চ ২০১২