
Home সাহিত্যিক / Litterateur > কাজী মাহমুদুর রহমান / Kazi Mahamudur Rahman (1942)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 4865 বার পড়া হয়েছে
কাজী মাহমুদুর রহমান / Kazi Mahamudur Rahman (1942)
কাজী মাহমুদুর রহমান
Kazi Mahamudur Rahman
Home District: Magura, Sreepur

বিশিষ্ট নাট্যকার, লেখক, অভিনেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাজী মাহমুদুর রহমান ১৯৪২ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শ্রীপুর থানার বরিশাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার মৌলভী কাজী মতিয়ুর রহমান পেশায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট ইমাম, ম্যরেজ রেজিস্টার ও প্রাইমারী শিক্ষা বোর্ডের হেডক্লার্ক। মাতা আফতাবোন নেসা ছিলেন একজন গৃহিণী। তারা তিন ভাই ও তিন বোন। মেজো ভাই মাহফুজুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বাকী সকলেই দেশে-বিদেশে সম্মানজনকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত।
শিক্ষাজীবন:
জনাব রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের এক মক্তবে (বহুকাল পূর্বেই তা বিলুপ্ত)। ১৯৪৮ সালে পিতার চাকরি সূত্রে যশোর শহরে চলে আসেন। বসবাস করতেন তৎকালীন বুনোপাড়ার ধারে নারকেল, সুপারী ও আম বনের ছায়াঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে (বর্তমান যশোর স্টেডিয়ামের পাশে) মাটি ও শনের ছাউনির বাড়িতে। নতুন করে আবার লেখাপড়া শুরু করেন পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মক্তবে। এখানে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর চলে যান গুরু ট্রেনিং স্কুলে। সেখানে তিনি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। চতুর্থ শ্রেণীতে বৃত্তিলাভ করে তিনি

১৯৫৭ সালে তিনি যশোর এম. এম. কলেজে আই. এস. সি. তে ভর্তি হন। আই. এস. সি দ্বিতীয়বর্ষে পড়াকালীন তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং তৎকালীন কায়েদে আজম কলেজের নাইটশিফ্টে পুনরায় আই. এ. প্রথমবর্ষে ভর্তি হন। ঢাকায় ভবঘুরে জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে আই. এ পাশ করেন। এরপর ঢাকা ছেড়ে পুনরায় যশোরের এম. এম কলেজে বি. এ. শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখানে গিয়ে আবার সাহিত্য, নাটক ও বামপন্থী রাজনীতি নিয়ে মেতে উঠেন। এক পর্যায়ে ১৯৬২ সালে এম. এম. কলেজ থেকে বি. এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশাগত জীবন:
১৯৬৪ সালে এম. এ. ডিগ্রি লাভের পর সৃজনশীল সাহিত্য, শিল্প, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আগ্রহের কারণেই তিনি নিয়োগ লাভ করেন। প্রথম পোস্টিং হয় তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামে। গুনী শিল্পীদের সাহচর্যে এসে তার চোখের সামনে খুলে যায় এক নতুন শিল্পভূবন। ১৯৬৬ সালে করাচীতে রেডিও স্টাফ ট্রেনিং স্কুলে অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পান্ডুলিপি লেখা বিষয়ে ৩ মাস মেয়াদী একটি কোর্সে অংশগ্রহণ করেন তিনি এবং সাফল্যের সাথে ঐ প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি প্রোগ্রাম অর্গানাইজার (অনুষ্ঠান সংগঠক) হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে খুলনা রেডিও সেন্টারে যোগদেন এবং খুলনা বেতারকেন্দ্রকে তৃণমূল অবস্থা থেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন এবং ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে খুলনা বেতারের কর্মচারীদের জীবনধারা ও বেতারকেন্দ্র সংগঠনের সমসত্ম পরিকল্পনা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেকের মতো তিনিও সেই নির্মম নি

তার ছোটভাই কাজী মাহফুজুর রহমান যশোরে খয়েরতলা মোড়ে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। তার পিতা, মাতা, ভাই ও বোন সবাই যশোর শহরের পুরাতন কসবার বাসভবন ত্যাগ করে প্রানভয়ে মাগুরার গ্রামে গ্রামে পালিয়ে বেড়ান। তিনিও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও স্ত্রী, সন্তানদের কাছ থেকে।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে নবগঠিত বাংলাদেশ বেতারে সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি রংপুর বেতারকেন্দ্রে যোগদান করেন। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকাতে বদলি হয়ে আসেন এবং ঢাকা বেতারের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে একই বেতারের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি।
১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ টেকনিক্যাল এ্যসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামের অধীনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্কলারশিপ নিয়ে বেতার অনুষ্ঠান প্রযোজনা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি লন্ডন যান এবং তিন মাস মেয়াদী সেই প্রশিক্ষণে তার রচিত ও প্রযোজিত অনুষ্ঠান সর্বোৎকৃষ্ট অনুষ্ঠান হিসেবে প্রশংসিত হয়।

১৯৮৪ সালেই ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার অব কানাডা ও এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ব্রডকাস্টিং ডেভলপমেন্ট সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান রচনা ও প্রযোজনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এশিয়া হতে অংশগ্রহণকারী ১৬টি দেশের মধ্যে তার রচিত ও প্রযোজিত “ব্যালাড অব এ ফ্রগ” প্রথম পুরস্কার লাভের সৌভাগ্যে অর্জন করেন।
১৯৮৯ সালে তিনি বেতার বাংলার সম্পাদক এবং ১৯৯০-১৯৯৩ পর্যন্ত ঢাকা বেতার কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। ১৯৯৩ সালে তিনি রংপুর বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক এবং পরে ঢাকার জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের উর্ধতন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহি:প্রচার অনুষ্ঠান বিভাগের ডাইরেক্টর, মিডিয়া হিসেবে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে পরিচালক, লিয়াঁজো হিসেবে পুনরায় বেতারে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি সিঙ্গাপুরে ব্রডকাস্টিং ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৭ সালে জার্মানির কোলনে ও বনে ভয়েচ ভেলে রেডিও ট্রেনিং সেন্টারে মাসব্যাপী ট্রেনার্স ট্রেনিং কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষক হিসেবে সম্মানিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে হজ্জ সম্পর্কে বেতার ও টেলিভিশনে সরাসরি ধারা বিবরনী প্রচারের জন্য বাংলাদেশ বেতারের পক্ষ থেকে তাকে পাঠানো হয় এবং বিশ্বব্যাপী ধারা বর্ননার পাশাপাশি আকবরী হজ্জ পালনের দূর্লভ সৌভাগ্য তার জীবনে ঘটে। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে তিনি পরিচালক অনুষ্ঠান হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম:
ছাত্রজীবন থেকে তার লেখালেখির অভ্যাস গড়ে উঠে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার কঁচিকাঁচার মেলায় মাঝে মধ্যে তার লেখা প্রকাশিত হত। যশোর কলেজ ম্যাগাজিনে গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে একাধিকবার। সাহিত্য রচনা প্রতিযোগিতায় ছোটগল্প ও কবিতা রচনায় তিনি দুই দুইবার ১ম পুরস্কার পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এস. এম

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে তার বহু লেখা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি জনাব মহিউদ্দিন সম্পাদিত ও সিডিএল পত্রিকায় “আমাদের একাত্তরে” এ সংকলিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধের সাতটি নাটক। এ ছাড়াও তার লেখা বেশ কিছু সংখ্যক কবিতা, ভ্রমণকথা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। বেতার সম্পর্কে তার লেখা উল্লেখযোগ্য দুটি গ্রন্থ হচ্ছে “বেতার কথা ও বেতার স্মৃতি”। উপন্যাস “বসন্ত বালিকা”। এছাড়াও মঞ্চ, বেতার ও টেলিভিশনের ছয়টি নাটক নিয়ে তার নাট্য গ্রন্থ “তিন ভূবনের নাটক”। তার আমেরিকা ও ভারত ভ্রমণ নিয়ে “সাত টুকরো ভ্রমণ গল্প” নামে একটি বই ২০০৭ সালের ঈদ সংখ্যায় ও আমার দেশ পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে “বেতার নাটকের ইতিবৃত্তঃ কিছু স্মৃতি, কিছু কথা”। আমার দেশ পত্রিকার সাহিত্য সংখ্যা সাতকাহনে প্রকাশিত “কুসুম্ভী কন্যাকে” কবিতাটি ইংরেজীতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায়। ২০১১ সালে তার তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে কাব্যগ্রন্থ "সম্পাদকের বাতিল কবিতা" এবং অন্য দুটি "বেতার কথা" এবং "আমাদের কথা"।
বিবাহিত জীবন:
১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রামে ডা. শামসুল আজমের কন্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দিলরুবা রহমান এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দিলরুবা রহমান ১৯৬২ সাল থেকে চট্টগ্রাম বেতারের সংগীত ও নাট্যশিল্পী ছিলেন। বিবাহিত জীবনে তারা চার কন্যা সন্তানের বাবা-মা।
বড় কন্যা তাসনিমা রহমান একজন এম. এ. বি. এড। তিনি শাহীন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে স্বামী ফুয়াদ হাসান ও কন্যা আদৃতাসহ আমেরিকা প্রবাসী। ফুয়াদ হাসান বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
দ্বিতীয় কন্যা তানজিমা রহমানও একজন এম. এ. বি. এড। বর্তমানে তিনি শাহীন স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। স্বামী মেজর (অব:) মিজানুর রহমান বর্তমানে একটি রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ম্যানেজার।
তৃতীয় কন্যা সামিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি. এ. (অনার্স) এম. এ. এবং উভয় শ্রেণীতেই ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট ও গোল্ড মেডালিস্ট। তার প্রকাশিত গ্রন্থ “একুশ শতকের টেলিভিশন সাংবাদিকতা”। তার স্বামী হুসাইন বিন খালেক একজন বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও তুরাগ ইন্ডাস্ট্রিস এর মালিক। তার দুটি সন্তান তীর্থ ও আয়ূষ্মান। সামিয়া এ দেশের একজন জনপ্রিয় টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপিকা। একুশে টিভি, এন টিভি, দেশ টিভি এবং দেশ টিভিতে সংবাদ উপস্থাপিকা ও বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। বর্তমানে তিনি নতুন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল "৭১" এর একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।
ছোট মেয়ের নাম জেমা রহমান উর্মী। তিনি এস. এস. সি. হতে শুরু করে এম. বি. এ. পর্যন্ত সর্বত্রই প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত। তার স্বামী ইমন শরীফ বর্তমানে এয়ারটেল মোবাইল ফোন কোম্পানির একজন পদস্থ কর্মকর্তা।
তার শ্বশুর মরহুম ডা. শামসুল আজম উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত চর্ম ও যৌন ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। পাকিস্তান আমলে তিনি চট্টগ্রামের সেট্রাল স্কিন অ্যান্ড সোশ্যাল হাইজিন সেন্টারের ডাইরেক্টর হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং পিজি হাসপাতালের প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি মঞ্চ ও বেতার নাটকে অভিনয় করতেন ও পরিচালনা করতেন।
জনাব মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী’রা দুই বোন। ছোট বোন খুরশিদা হক বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রাক্তন বার্তা সম্পাদক ছিলেন। ছোট গল্পকার, নিবন্ধকার ও অনুবাদক হিসেবেও তার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে।
নিজের জন্য শোকগাথা কাজী মাহমুদুর রহমান “Come not when I am dead To drop thy foolish tears upon my grave” -Tenyson তুমি আসবে বলে আমি বাবুই পাখির মতো আমার সমস্ত বাড়ি ঘর দুয়োর স্বপ্নের খড়কুটো, লতায় পাতায় নিপুন ঠোঁটে সাজালাম কোকিলকে ডাকলাম, বললাম, ‘যেই মুহূর্তে সে আসবে তুমি বকুল বৃক্ষের শাখায় কুহু স্বরে ডেকে, উঠবে, কিংবা গেয়ে উঠবে সেই পুরাতন বউ কথা গান।’ দুষ্টু কাঠবেড়ালিদের বললাম, ‘এই বাড়ির পেয়ারা গাছটা আজ তোদের লেজ উঁচিয়ে সব ডালে ডালে আজ তোদের খেলা যখনি সে আসবে তোরা খেলতে খেলতে কুটুস কুটুস দাঁতে বোঁটা কেটে একটা বড়সড় ডাঁসা পেয়ারা টুপ করে ফেলে দিবি তার বিমুগ্ধ আঁচলে। খয়েরি ধান শালিক,ছটফটে চড়ুই আর শাদা ঝুঁটি তোলা পায়রাদের বললাম, ‘আজ তোদের খুব বেশি ঝুটোপুটি হুটোপুঁটি নয় আজ শুধু ঠোঁটে ঠোঁটে খুনসুটির কূজন দৃশ্য তার লাজনম্র চোখের আলোয়। ঘরের চালে বসা কাক অকারনে কা কা করে উঠতেই চমকে উঠলাম, ‘চুপ কর হতভাগা, আজ কোন অলক্ষুণে কা কা শব্দ নয়, আবর্জনা খুঁটে খেতে হলে চলে যা অন্য কোথাও।’ পাড়ার মাস্তান, চাঁদাবাজ সবাই শুনল আমার শানিত চিৎকার, ‘আজ এ পাড়ায় কারফিউ, কোন চাঁদাবাজি, মাস্তানি নয় তার আসবার পথে যদি শুনি হট্টগোল, যানজট আমি হব ক্ষমাহীন রক্তচক্ষু ঈগল তীক্ষ্ণনখরে ছিঁড়ে নেব সবার রক্তনালি, হৃৎপিণ্ড ধ্বংস করে দেব এই বেহুদা শহর। কতজনকে কত কী বলা, কত প্রস্তুতি অপেক্ষায় শিহরিত আমি এক অস্থির তরুণ তুমি আসবে বলে এখনও কত কথা বলা বাকি আমার। মেঘকে বললাম, ‘মেঘ তুমি শাদা কাশবনের মত দুলতে থাকো হাওয়ায় হাওয়ায়, দোহাই, এক বিন্দু বৃষ্টি দিয়ো না তার আসার সময়। শুধু তার যাবার সময় হলেই ছুঁড়ে দিয়ো প্রপাত বৃষ্টি ঝড় যাতে তার ফিরে যাবার না থাকে উপায়। সূর্যকে বললাম, ‘সূর্য, তুমি আজ শুধু সকাল কিংবা বিকেলের সূর্য হয়ে থাকো তার আসবার পথে ছড়িয়ে দিয়ো নরম রোদ্দুর। এসে যখন বলবে, যাই-যাই মুহূর্তেই তুমি চলে যেও অস্তাচলে, পাঠিয়ে দিয়ো ঘন কৃষ্ণরাত্রি, অন্ধকারে সে যেন পথ চিনে ফিরে না যেতে পারে অন্য কোথাও।’ |
প্রস্তুতি, এত স্বপ্নের বুনোন অপেক্ষায় দিন গেল, অন্ধকারে চলে গেল শীত-বসন্তের দুপুর বিকেল। অথচ এলে না তুমি এলে না! কেন এলে না ও আমার হরিণী-মোহন? অন্তত একবার এসে সত্যটা বলে যাও কিংবা বলে যাও নিপুণ মিথ্যে, হাসতে হাসতে আমার ওষ্ঠে তুলে ধরো সেই প্রাচীন পেয়ালা দ্যাখো-কী আনন্দে, কী প্রবল বিশ্বাসে কী সহজেই পান করি হেমলক বিষ। কিন্তু এলে না তুমি, মিথ্যে হল সব আয়োজন সর্বস্ব ছাই করে দিয়ে নিভে গেল আকাঙ্খ্যার সকল উনুন চলে গেল দুঃখী দুঃখী কাঠবেড়ালিরা তাদের নির্জন ঘুমের কোটরে উড়ে গেল বিষণ্ণ কোকিল, ক্রুদ্ধ চড়ুই আর শালিকের দল। শুধু কাকগুলো ফিরে এল ভীষণ কর্কশ স্বরে এবার সঙ্গী তাদের কিছু বাদুড় অন্ধকারে লাল চক্ষু জ্বেলে ওড়াউড়ি করে ঝুলে থাকে জানালায়, ফলবান বৃক্ষের শাখায় শাখায়। রাস্তাঘাটে তেমনি যানজট, হুল্লোড়, ছিনতাই শহরটা আগের মতই বন বাদাড়, শুয়োরের খোঁয়াড়। প্রতারক স্বপ্ন নিয়ে আমি শুধু বন্দি মাকড়সার জালে একা কাকগুলো অবিরাম ডেকে যায় – কা কা কা । কাক বাদুরের ঘর, শহরের বন বাদাড় পেরিয়ে অবশেষে একদিন চলে যাই নদীর কাছে, সেই নদী যে নদীর কিনারে বটের ছায়ায় আমাদের প্রথম দেখা প্রথম পরিচয়, যে নদীর তিরতিরে স্রোতে ভেসে গেছে আমাদের অনেক কথা,অনেক রূপোলী সময়। আমি রোদ বৃষ্টি ঝড়ে ক্লান্ত পাখির মতো বসে থাকি স্মৃতির কিনারে। নদীটাও শুকিয়ে যায়। কোথাও নেই তোমার ছায়া, আসবার পথ রেখা। তুমি নেই স্রোত নেই, জলের গন্ধ নেই নেই কোনো সুকুমারীর বুকের নিঃশ্বাস। দৃষ্টি জুড়ে শুধু জেগে ওঠে ধু ধু শাদা বালুচর দেহে তার ঢেউ ঢেউ ভাঙা চোরা পাঁজরের হাড় অনাহারী শীর্ণ নগ্ন ভিক্ষুক যেন বালুতে শয়ান। দিনভর রাত্রিভর আমি অপেক্ষায় স্বপ্নচর পাঁজরের হাড়ের মতো মিশে যাই বালুচরে। শেষ মুহূর্তে শেষ কথা কিছু কি বলতে চেয়েছিলাম..? নদীর বাতাসে...? কী আশ্চর্য! চরম নৈঃশব্দ ভেঙে তক্ষুনি জোয়ার এল সংগীত ধ্বনির মতো ভেসে গেল চর, ডুবে গেল শুন্য রিক্ত নদীর কিনার। হয়তো বা সেই মেয়ে আমারই কথা ভেবে এই নদীর কোথাও ফেলেছে তার গোপন চোখের জল। |
|
সাক্ষাৎকার গ্রহণে :
রাজিব কুমার রক্ষিত
তথ্য সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১