
Home সাহিত্যিক / Litterateur > আবুল হোসেন / Abul Hossain (1897-1938)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 18445 বার পড়া হয়েছে
আবুল হোসেন / Abul Hossain (1897-1938)
আবুল হোসেন
Abul Hossain
Home District: Jessore, Jhikargacha
পরিবারি

বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, দার্শনিক আবুল হুসেন ১৮৯৭ সালের ৬ জানুয়ারি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার পানিসারা গ্রামে (মাতুলালয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নাম আছিরুননেছা খাতুন। বাবা হাজী মোহাম্মদ মুসা। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল একই থানার কাউরিয়া গ্রামে। আবুল হুসেনের নানার নাম ছিল মীর লুৎফে আলী। পরিবারে সে সময় পুরুষ মানুষ না থাকায় মা আছিরুননেছার অনুরোধে বাবা মোহাম্মদ মুসা শ্বশুরালয় পানিসারাতেই থাকতেন। তিনি ছিলেন ধর্মনিষ্ঠ আলেম। তাঁর লেখা ‘নামাজ শিক্ষা’ সে সময় পাঠক সমাজে ছিল খুবই সমাদ্রিত। আবুল হুসেনের দাদার নাম ছিল মোহাম্মদ হাশিম। তিনিও ছিলেন জ্ঞানানুরাগী, ধার্মিক ও সাধক। বাংলা ও আরবীর পাশাপাশি ফারসিতেও ছিলেন সুপন্ডিত। সেই সময়ে নলডাঙ্গার রাজ দরবারে চাকরির সাথে সাথে ধর্ম প্রচার করা তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ ছিল। কিন্তু সে ধর্ম প্রচার ছিল অর্থেলোলুপ, ভন্ড মতলববাজ পীর ও পীরপূজা মানসিকতার বিরুদ্ধে।
আবুল হুসেনের জীবনে দাদা হাশিমের সংস্কার আন্দোলনের প্রেরণাই গ্রথিত হয়েছিল আমৃত্যু। তাঁর শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি মামার বাড়ি পানিসারা গ্রামেরই স্কুলে। এরপর পিত্রালয় ঝিকরগাছার এম.ই. স্কুলে। সেখানে পাঠ শেষ করে ভর্তি হন যশোর জিলা স্কুলে।
১৯১৩ : স্কুল জীবনেই রচনা লেখা প্রতিযোগিতায় ‘যশোর সরকারী স্কুল পদক’ লাভ করেন।
১৯১৪ : যশোর জিলা স্কুল থেকে ১০ টাকা বৃত্তিসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। অতঃপর কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।
১৯১৬ : কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৫ টাকা বৃত্তি সহ আই.এ পাস করেন।
১৯১৮ : কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ২৫ টাকা বৃত্তিসহ বি.এ পাস করেন।
১৯১৯ : ২৯ নভেম্বর ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’র সাধারণ অধিবেশনে তিনি ‘সুদ বা রেবা ও ধনজ’ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেন। এই প্রবন্ধে আবুল হুসেন বিশ্ব অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাস্তবতা মাথায় রেখে সুদের বৈধতার পক্ষে বক্তব্য রাখলে তা বিতর্কের সৃষ্টি করে। সভার সভাপতি হিসেবে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে এ বক্তব্যের বিরোধীতা করেন।
১৯২০ : কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৭ খ্রীস্টাব্দে পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগে অধ্যপনা করেন।
১৯২০ : কোলকাতা হেয়ার স্কুলে সহকারি শিক্ষক নিযুক্ত হন।
১৯২১ : বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯২১ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে আবুল হুসেন সেখানে অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগের লেকচারার পদে যোগ দেন।
১৯২২ : পিতা হাজী মোহাম্মদ মুসার পরলোক গমন।
১৯২২ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালেই তিনি আইন শাস্ত্রে স্নাতক-বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯২৫ : শিক্ষকতার সাথে সাথে নানাবিধ সামাজিক সংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হন এবং মাসিক ‘তরুণ পত্র’ প্রকাশ করেন।
১৯২৫ : ছাত্র জীবনে লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে ‘বাংলার বলশী’ নামক প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধগুলো তিনি লিখেছিলেন ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের প্রেরণায়।
১৯২৫ : প্রকাশিত হয় বিখ্যাত গবেষণা গ্রন্থ ‘The problem of Rivers in Bengal’
১৯২৬ : The Calcutta Review তে প্রকাশিত হয় গবেষণা প্রবন্ধ ‘Saracenic Commerce and industry.’
১৯২৬ : ১৯ জানুয়ারি বঙ্গীয় মুসলমান সমাজকে মননশীল, যুক্তিবাদি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য জন্ম নেয়া সামাজিক সংগঠন ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত সমাজ’-এর তিনিই ছিলেন পুরোধা পুরুষ। সে সমাজের মূল মন্ত্র ছিল : ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই সমাজের আন্দোলন ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামেও পরিচিত ছিল। এই সময়ই আবুল হুসেন মাসিক ‘অভিযান’ প্রকাশে জড়িত হন। এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ কাসেমের নাম ছাপা হলেও প্রথম সংখ্যায় ‘সারথির পাঁজি’ শিরোনামে সম্পাদকীয়টি তাঁরই লেখা।
১৯২৬ : ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে কবি রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর ঢাকায় আসলে ১০ ফেব্রুয়ারী মুসলিম হল ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাঁকে যে-সংবর্ধনা দেওয়া হয় তার মানপত্র রচনা করেন আবুল হুসেন।
১৯২৬ : প্রকাশিত হয় ইংরেজি রচনা ‘The Blunder of 1793Õ এবং ‘The Helots of Bengal.’
১৯২৬ : মাসিক ‘অভিযান’ আগস্ট-সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তাঁর সাড়াজাগানো প্রবন্ধ "নিষেধের বিড়ম্বনা"।
১৯২৭ : অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ইংরেজি প্রবন্ধ ‘Saracenic Historigraphi’ Ges ‘Hindu-Moslem problem.’ এ সময় পত্র-পত্রিকায় ইবনে মুসা ছদ্দনামে তিনি আরও লেখেন ‘Salient Features of Bengal Tenancy Amendment Bill-1925.’ ‘The Musalman’ এবং ‘The Muslim Standard’
১৯২৭ : ২৪ জুলাই সাহিত্য সমাজের ২য় বর্ষের সাধারণ অধিবেশন ‘আদেশের নিগ্রহ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। পরে এটি ঢাকার ‘শানিত্ম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়।
১৯২৭ : আবুল হুসেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ এর মুখপাত্র ‘শিখা’। এই সময় তাঁরই উৎসাহ ও পরামর্শে প্রকাশিত হয় মাসিক ‘জাগরণ’।
১৯২৭ : এ বছরই তার লেখা প্রবন্ধ ‘শতকরা পঁয়তাল্লিশ’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত কবি গোলাম মোস্তফার (১৮৯৭-১৯৬৪) বক্তব্যের সবিনয় প্রতিবাদ জানিয়ে আত্নমর্যাশীল আবুল হুসেন ১৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ত্যাগ করেন এবং ঢাকা জজকোর্ট আইন ব্যবসায়ের অনিশ্চিত পেশায় যোগদান করেন।
১৯২৮ : প্রকাশিত হয় আবুল হুসেনের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘বাঙালী মুসলমানের শিক্ষা-সমস্যা’।
১৯২৮ : একই বছর প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুসলিম কালচার’। উল্লেখ্য মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রখ্যাত ইংরেজ-মুসলমান মুহম্মদ মার্মাডিউক পিকথল প্রদত্ত আটটি বক্তৃতার নির্বাচিত অংশের ভাবানুবাদ এই গ্রন্থ।
১৯২৮ : তার রচিত "নিষেধের বিড়ম্বনা" শীর্ষক প্রবন্ধ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের এক পর্যায়ে ঢাকার রক্ষণশীল মুসলিম সমপ্রদায় ও বলিয়াদীর জমিদার খান বাহাদুর কাজেমউদ্দিনের উদ্যোগে এক বিচার শালিসে ২০ আগস্ট ব্যাপক চাপের মুখে আবুল হুসেনের নিকট থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নেয়া হয়।
১৯২৯ : ঢাকা মুসলিম হলের বর্ধমান হাউসে আবুল হুসেনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল-মামুন ক্লাব’।
১৯২৯ : ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭ টায় নবাব বাড়ি আহসান মঞ্জিলের আঞ্জুমান অফিসে ‘আদেশের নিগ্রহ’ নিবন্ধ রচনার দায়ে আবুল হুসেনের বিরুদ্ধে বিচার সভা বসে। (সে সময় তিনি ঢাকার জজকোর্টের উকিল) এই সভায় আবুল হুসেন হুমকির মুখে এই বলে ক্ষমাপত্র লিখে দিতে বাধ্য হন যে, ‘ওই প্রবন্ধের ভাষা দ্বারা ভ্রাতৃবৃন্দের মনে যে বিশেষ আঘাত দিয়াছি, সে জন্য আমি অপরাধী।’
১৯২৯ : ৯ ডিসেম্বর আহসান মঞ্জিলের অপমানকর ও বেদনাদায়ক ঘটনার পরদিন তিনি মুসলিম সাহিত্য সমাজের সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। উলেস্নখ : মুসলিম সাহিত্য সমাজের তখন চতুর্থ বর্ষ চলছিল। আবুল হুসেন ছিলেন সে বছরের সম্পাদক। সম্পাদকের পদ ত্যাগ করলেও তিনি সংগঠনের সংগে ছিলেন একাট্রা।
১৯৩০ : সাহিত্য-সমাজের চতুর্থ বার্ষিক অধিবেশনে যোগদান করেন এবং ‘ব্রিটিশ-ভারত মুসলমান আইন’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন।
১৯৩১ : ১৯৩১ খ্রীস্টাব্দে তিনি বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম ‘মাস্টার অব ল’ ডিগ্রী লাভ করেন এবং কলকাতা বার-এ যোগ দেন।
১৯৩১ : ‘The Est Bengal Times,’ Dacca তে প্রকাশিত হয় ‘The Gandhi-Irwin Truce and the Muslims.’
১৯৩১ : আবুল হুসেন প্রকাশ্যভাবে রাজনীতি-চর্চা আরম্ভ করেন।
১৯৩২ : প্রকাশিত হয় পুস্তিকা ‘খোঁয়াড় ও খেয়ার আইন’।
১৯৩২ : কোলকাতা হাইকোর্ট বারে যোগদান করেন। এ সময় তিনি কঠোর পরিশ্রম করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘The History of Development of Muslim Law in British India’ বিষয়ে ‘Tagore Law Lecture’ প্রণয়ন করেন।
১৯৩২ : যশোর জেলা বোর্ডের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।
১৯৩৮ : ১৫ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় পাকস্থলীর ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪১ বছর বয়সে মুক্তবুদ্ধি ও উদর চিন্তার অধিকারী অসামপ্রদায়িক সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ আবুল হুসেন কোলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বই আকারে প্রকাশিত তাঁর রচিত প্রবন্ধসমূহ বাংলার বলশী (শ্রাবণ, ১৩২৮), কৃষকের আর্তনাদ (মাঘ, ১৩২৮), কৃষি বিপ্লবের সূচনা (কার্তিক, ১৩২৮), কৃষকের দুর্দশা (কার্তিক, ১৩২৯), সুদ ও রেবা (১৩৩৫ বঙ্গাব্দ), শতকরা পঁয়তাল্লিশ (বৈশাখ, ১৩৩৩), শতকরা পয়তাল্লিশের জের (আশ্বিন, ১৩৩৩), আদর্শের নিগ্রহ, বাঙালী মুসলানের ভবিষ্যৎ, আমাদের রাজনীতি (১৯৩১ইং), হিন্দু-মুসলিম প্রবলেম (১৯২৯ইং), নিষেধের বিড়ম্বনা।
তাঁর রচিত পঠিত প্রবন্ধ পর্দা প্রথার সাহিত্যিক অসুবিধা, বাঙালী মুসলমানদের শিক্ষা সমস্যা-১ম ও ২য় (১৯২৭ইং ও ১৯২৮ইং), মহাত্না আমীর আলী (১৯২৮ইং), স্যার সৈয়দ আহমদ (১৯২৮ইং), ইসলামের দাবী (১৯২৯ইং), তরুন আনসার, শিক্ষার মাপকাঠি।
স্কুল পাঠ্যপুস্তকসমূহঃ সুকোমল পাঠ (১ম-৪র্থ ভাগ), নব সাহিত্য শিক্ষা ৯ম-৪র্থ ভাগ), মুসলিম সাহিত্য শিক্ষা (১ম-৪র্থ ভাগ), সরল নিম্নগণিত (১ম ও ২য় ভাগ), বাংলা রচনা ও অনুবাদ শিক্ষা। গবেষণামূলক প্রবন্ধঃ ব্রিটিশ ভারতে মুসলমান আইন।
সমালোচনা : নারীর অধিকার (ভাদ্র, ১৩২৮), সুলতানার স্বপ্ন (অগ্রাহায়ন, ১৩২৮)।
ইংরেজীতে রচিত প্রবন্ধ : দি প্রবলেম অব রিভার্স ইন বেঙ্গল, ‘দি হিস্ট্রি অব ডেভেলপমেন্ট অব মুসলিম ‘ল’ ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া (১৯৩৪ খ্রীস্টাব্দে ঠাকুর ‘ল’ লেকচারস এর জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপরে কাছে বই আকারে দাখিলকৃত)।
তথ্য সূত্র :
যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী
ও
যশোর গেজেটিয়া
তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতায়:
শ্রী তারাপদ দাস
সম্পাদনা:
মো. হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
আগস্ট ২০১১