
Home রাজনীতিবিদ / Politicians > রওশন আলী / Roushan Ali (1921-1994)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 17413 বার পড়া হয়েছে
রওশন আলী / Roushan Ali (1921-1994)
রওশন আলী
Roushan Ali
Home District: Jessore

যশোরের রাজনীতিতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম এ্যাডভোকেট রওশন আলী ১৯২১ সালের ১২ এপ্রিল যশোর কোতয়ালী থানার তেঘোরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাদার বক্স বিশ্বাস।
শিক্ষাজীবন:
জনাব রওশন আলী যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন হতে ১৯৩৯ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫১ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হন।
রাজনৈতিক জীবন:
জনাব আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। ১৯৫০ সালে তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। এর বেশ কয়েক বছর পরে তিনি দলের জেলা কমিটির সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ১৯৫২ সালে যশোর বারে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি একটানা ১৯ বছর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জনাব আলী ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এম. এন. এ) নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ ও ১৯৯১ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের গণপরিষদের অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালে যোগদান করেন এবং যশোরের গভর্ণর হন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগমুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিলেন। যদিও গোলযোগপূর্ণ কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে সুষ্ঠ পরিবেশ না থাকায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জনাব আলী ১৯৯০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে এম. পি নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা:
জনাব রওশন আলী স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের মার্চের রাজনৈতিক সংকটের সময় তিনি অল্প সংখ্যক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মিছিল, সভা সমাবেশ এ সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে অবস্থান করে স্মরনার্থীদের দেখাশোনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ৮ নং সেক্টরের পলিটিক্যাল এ্যাডভাইজার ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট অফিসার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি সেনা কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
সামাজিক কর্মকান্ড:
জনাব রওশন আলী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক কৃতিত্ব রেখে গেছেন। প্রায় অর্ধশত বছরেরও বেশী সময়ের কর্মময়জীবনে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি যশোর ইনস্টিটিউটের সদস্য ছিলেন। তিনি যশোর ইনস্টিটিউটে প্রায় দুই যুগ ধরে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। শতাব্দী প্রাচীন এই ইনস্টিটিউটটি শিক্ষা বিস্তার ও খেলাধূলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি যশোর জেলা পরিষদের সভাপতি, চিত্তরঞ্জন কটন মিল্স, নারায়ণগঞ্জ কো অপারেটিভ জুট মিল্স, পূর্ব পাকিস্তান কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সমবায় ইউনিয়নের, যশোর সমবায় ইউনিয়নের এবং বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তার সক্রিয় সহযোগিতায় ১৮৪২ সালে মোমিননগর কো-অপারেটিভ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইউনিয়ন স্থাপিত হয়। তাঁতী সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। তাঁর নিরলস সেবার জন্য এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি শ্রেষ্ঠ সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পান।
তিনি বাংলাদেশ কো অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লিঃ এর পরিচালক ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি জাগরণী নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যশোরের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে বিবেচিত হন। ঐ সময় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নসহ একাধিক সমাজতান্ত্রিক দেশ সফর করেন। খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক স্কাউট কমিটি গঠিত হলে তিনিই সর্বপ্রথম খুলনা আঞ্চলিক কমিশনার নির্বাচিত হন।
সংবিধান রচনায় ভূমিকা:
জনাব রওশন আলী বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান প্রণয়নের বিধি কমিটির সদস্য ছিলেন।
যশোরের শ্রেষ্ঠ সন্তান:
সদালাপী, মিষ্টভাষী, সহজ-সরল, নিরহঙ্কার জীবনযাপনে অভ্যস্ত জনাব আলী সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্র্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৪ সালে জাগরণী চক্র আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যশোরের শ্রেষ্ঠ সন্তানের পুরষ্কার পান।
পরোলোক গমণ:
১৯৯৪ সালের ১৯ আগস্ট রাত ১টা ২০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। যশোর শহরের ঈদগাহ ময়দানে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শরৎ এর থেমে থেমে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দূর দূরন্ত থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মরহুম রওশন আলীর নামাজে জানাজায় শরীক হয়ে তাঁর রুহের মাগফেরাতের কামনা করেন। স্থানীয় বার ও বেঞ্চ, সব রাজনৈতিক দল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে। মরহুম রওশন আলী স্ত্রী, ৩ ছেলে, ৪ মেয়ে, ২ বোন এবং অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর ২ ছেলে আইনজীবী।
তথ্য সূত্র:
ই-মেইলে পাঠানো তথ্য
(নাম জানা নেই)
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
অনুবাদ:
কামাল নাসের
নিউজ এডিটর, রেডিও টুডে
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১