
Home শিল্পী / Artist > সন্ধ্যা রায় / Sandhya Roy (1946)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 20590 বার পড়া হয়েছে
সন্ধ্যা রায়
Sandhya Roy
Home District: Jessore
পারিবারিক পরিচিতি:
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় ১৯৪৬ সালে নবদ্বীপে মামা বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। সন্ধ্যা রায়ের পৈত্রিক নিবাস যশোরের বেজপাড়াতে। শৈশবকালেই তাঁর মাতৃ ও পিতৃ বিয়োগ ঘটে। এই জন্যে তাঁর লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়। সেই সময়ের শাস্ত্র সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র মফস্বল শহর যশোরেও দেশ বিভাগের অস্থিরতা আছড়ে পড়েছে। তার পর দেশ ত্যাগের হিড়িক। সন্ধ্যা রায়ও এক সময় চলে যান পশ্চিমবঙ্গে। প্রথমে নবদ্বীপে এবং পরবর্তীতে কোলকাতায় আত্মীয় স্বজনের সাথে বসবাস শুরু করেন।
১৯৬৭ সালে সন্ধ্যারায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন গুণী পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গে। দীর্ঘ শান্তিপূর্ণ বিবাহ জীবন অতিবাহিত হয়েছে টালিগঞ্জের ‘সন্ধ্যানীড়ে’।
চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ:
একটি ছোট খাট কিন্তু অসম্ভব মায়াবী মিষ্টি মুখের কিশোরী পায়রা উড়িয়ে গেয়ে উঠলেন পায়রার মত শুভ্র উচ্ছ্বলতায় - ‘ও বাক বাকুম বাকুম পায়রা’ ...। আর প্রেক্ষাগৃহ ভরা দর্শক আবিষ্কার করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের আগামী দিনের এক উজ্জ্বল নায়িকাকে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানে ঠোঁট মিলিয়ে বাকবাকুম করে উঠা সেই কিশোরীর নাম সন্ধ্যা রায়। আর ছবির নাম ‘মায়ামৃগ’।
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তীর নায়ক উত্তম কুমারের পাশাপাশি বিশ্বজিতের বিপরীতে ‘মায়ামৃগ’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রের নায়িকাজীবন শুরু হল এক অসামান্য অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের। যদিও তাঁর চলচ্চিত্রজীবনের সূচনা ১৯৫৮ সালে রাজেন তরফদারের পরিচালিত ‘অন্তরীক্ষ’ ছায়া ছবির মাধ্যমে। ‘মায়ামৃগ’ ছবিতে অভিনয়ের পর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। একের পর এক বিজয় মাল্য নিয়ে অগ্রযাত্রা।
সন্ধ্যা রায়কে সহজাত অভিনয় প্রতিভার অধিকারী শিল্পী হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। কত বিচিত্র চরিত্রে সহজ রূপায়ন করেছেন। ছবি করেছেন কোলকাতা , বোম্বে এবং ঢাকায়।
ঢাকায় তিনি দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ভারত বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় ‘পালংক’ তাঁর জীবনের স্মরণীয় ছবি। এছাড়া কাজী জহিরের পরিচালনায় ‘ফুলের মালা’ নামে একটি বাণিজ্যসফল ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত হিন্দী ছবি একটি ‘আসলী নকলী’। সত্তর হতে নব্বই এর দশক পর্যন্ত অর্থাৎ ত্রিশাধিক বছর ধরে দাপটের সংগে কলকাতার অসংখ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করে নিজের জন্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তিনি গড়ে নিয়েছেন। সুচিত্রা, সাবিত্রি, সুপ্রিয়া, অরুন্ধতি, অর্পনা প্রমুখ নায়িকাদের মধ্যে নিজের অবস্থান করে নেওয়া অসম্ভব কঠিন কাজ হলেও সন্ধ্যা রায় তা করেছেন সহজে। সহজাত প্রতিভার কল্যাণে ধরে রেখেছিলেন তাঁর মিষ্টি মুখের লাবণ্যে যা একেবারেই বাঙ্গালীর চিরন্তন প্রতিমা।
শিল্পীজীবনের পরমারধ্য শিল্পচর্চাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা যে সাধনা তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে অসংখ্য পুরষ্কারে। পুরষ্কার আজও রয়েছে তাঁর প্রতীক্ষায়।
সন্ধ্যা রায় অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি:
তাঁর অভিনীত অসংখ্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবির সংখ্যাও কম নয়। বিশেষ করে উত্তমকুমারের বিপরীতে ‘তিন অধ্যায়’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘সূর্যতাপ’ প্রভৃতি ছবির নাম উল্লেখ করতেই হয়। তবে বেশী ছবি তার বিশ্বজিৎ, সৌমিত্র এবং অনুপকুমারের সঙ্গে। বিশ্বজিৎ ও সৌমিত্রের বিপরীতে ‘মনিহার’ তাঁর অসাধারণ ব্যবসা সফল ছবি।
তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্ফুরন সমৃদ্ধ ছবিও অনেক। ‘পালংক’, ‘গঙ্গা’, ‘বাঘিনী’, ‘সংসার সীমানে্ত, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘দীপের নাম টিয়া রং’ এবং বিশেষ করে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অমর ছবি ‘অসনী সংকেত’ তাঁকে অমর করে রাখবে আগামী প্রজন্মের কাছেও।
যশোরের স্মৃতি:
যশোরের স্মৃতি অজ অত উজ্বলভাবে সন্ধ্যারায়ের মনে না থাকলেও শিল্প সাহিত্যের এই চিরকালীন নন্দন ভূমির মায়া তাঁর সারাটা মনজুড়ে রয়েছে আজও। ‘যশোর’ বা যশোরের লোক শুনলেই আজও চিত্ত চঞ্চল হয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও যশোরের অপরিচিত কোন মানুষ আজও তাঁর আপনজন হয়ে ওঠে। সেই নির্বাক যুগ থেকে এপর্যন্ত কলকাতার চলচ্চিত্র জগতে যশোরের কে কোথায় আছেন তা বলে যান মুখস্থ প্রায়।
তথ্য সূত্র :
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ২০১২