
Home নড়াইল জেলা / Narail District > পার্ব্বতী বিদ্যাপীঠ (১৯২৩)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99676 বার পড়া হয়েছে
পার্ব্বতী বিদ্যাপীঠ (১৯২৩)
নড়াইল উপজেলার গোবরা বাজারের নিকটবর্তী চিত্রার তীরে ১৯২৩ খৃষ্টাব্দে স্থাপিত হয় পার্ব্বতী বিদ্যাপীঠটি। ৬ একর ৫২ শতক জমির উপর ১১ কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা ও দুই কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন নিয়ে স্কুলটি অবস্থিত। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা বাবু বিনয় ভুষন চক্রবর্তী। গোবরার স্বনামধন্য পুরুষ বাবু বিনয় ভুষন চক্রবর্তী এই অঞ্চলের প্রথম গ্রাজুয়েট। একজন সুশিক্ষক, সমাজ সেবক ও বিদ্যোৎসাহী হিসাবে তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক বাবু বিনয় ভুষন চক্রবর্তী (বি, এ,)।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নড়াইলের রায় জমিদারগনের পৃষ্ঠপোষকতায় এখান থেকে তিন মাইল দূরে গড়ে উঠেছিল নড়াইল ভি, সি, উচ্চ বিদ্যালয়। প্রধানতঃ নমশুদ্র ও মুসলমান অধ্যুষিত এখানকার এক বিরাট এলাকা শিক্ষার এই সুযোগ থেকে ছিল বঞ্চিত। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কলোড়ার মিত্র বংশীয় জমিদারগনের মধ্যমনি বাবু নলিনী কান্ত মিত্র মহাশয়ই সর্বপ্রথম এতদাঞ্চলে একটি স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। সেই সময়ে জমিদারদের কাছারী বাড়ীতে এই অঞ্চলের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সান্ধ্য মজলিস বসত। ১৯২৩ সালে বিনয় বাবু ও নালিনী কান্ত বাবুর পরিকল্পনায় জমিদার বাড়ীর দক্ষিণ দিকস্থ জংলা জমিতে মধ্য ইংরেজী (এম,ই,) স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অর্থের। বিনয় বাবু নিজ পকেট থেকে ১/৬ পাই (১.৪৭ টাকা) বের করে সবার সামনে রেখে বললেন, “এই পুঁজিকে সম্বল করেই ভগবানের আর্শীবাদ ও দশের সহানুভূতিতে আমি স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে ব্রতী হলাম”। বিনয় বাবুর উল্লেখিত উক্তিটি স্কুলের অফিস কক্ষে ঢুকবার দরজার উপর একটি সাইন বোর্ডে আজও লিখিত রয়েছে। স্কুলের প্রথম নামকরণ করা হয় নলিনী কান্ত মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন। হাটবাড়িয়ার জমিদার তার মৃত পুত্র নলিনীর স্মৃতি রক্ষার্থে উক্ত নামকরণের প্রস্তাব দেন এবং মোটা টাকা দানের প্রতিশ্রুতিও দেন। পরবর্তীতে তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে দানশিল পার্ব্বতী বাবু সম্ভাবত ১০,০০০ টাকা দান করায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টি পার্ব্বতী বাবুর নামানুসারে পার্ব্বতী বিদ্যাপীঠ নামকরণ করেন। বিদ্যালয়টি ১৯২৬ সালে উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে উন্নতি হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থায়ী অনুমোদন লাভ করে এবং ১৯২৮ সালে প্রথম পরীক্ষার্থী দল প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। বিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্নে বিনয় বাবুকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন সুবোধ চন্দ্র, ঘোষ, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর প্রতিষ্ঠিত হিন্দু সম্প্রদায় এদেশ ত্যাগ করায় বিদ্যালয়টির জীবনে নেমে আসে প্রচণ্ড হতাশা। এ সময় বিদ্যালয়টির হাল ধরেন বিনয়কুমার মিত্র ও এলাকার বিদ্যেৎসাহী ব্যক্তিবর্গ। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পাব্বর্তী বিদ্যাপীঠ নড়াইল জেলার অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়।
তথ্য সূত্রঃ
শিক্ষালয়ের ইতিকথায় যশোর
লেখকঃ কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনাঃ
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
শামিউল আমিন শান্ত