
Home বিচারপতি / Justice > প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান / Chief Justice Latifur Rahman (1936)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 19614 বার পড়া হয়েছে
প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান / Chief Justice Latifur Rahman (1936)
লতিফুর রহমান
Latifur Rahman
Former Chief Justice and
Chief Advisor of Caretaker Government
Home District: Jessore
Latifur Rahman
Former Chief Justice and
Chief Advisor of Caretaker Government
Home District: Jessore
পা

মাননীয় প্রধান বিচারপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ

বিচারপতি লতিফুর রহমানের পিতা ছিলেন যশোহরের যশস্বী ও জ্ঞানী কুলের শিরোমনি খান বাহাদুর লুৎফর রহমান। জনাব লুৎফর রহমান যশোর জিলা স্কুলে পড়াকালীন সময়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র ছাত্র হিসেবে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন। তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে এন্টান্স পাস করে কোলকাতার রিপন কলেজ হতে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রী অর্জন করেন। ৩০.৫.১৯২৩ সালে তিনি যশোর জেলা আদালতে আইন
![]() |
প্রধান বিচারপতি জনাব লতিফুর রহমানের পিতা খান বাহাদুর লুৎফর রহমান। |
তাঁর প্রপিতামহ মরহুম দিরাজ তুল্লাহ মুন্সী যশোহর জেলার কেশবপুর উপজেলাধীন বেগমপুর গ্রামের আদি অধিবাসি ছিলেন। প্রথম অবস্থায় তিনি যশোর সিভিল কোটের রাইটার ছিলেন। চাকরি সূত্রে তিনি যশোর শহর হতে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে খোলাডাঙ্গা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তিনি অত্যন্ত দানশীল ও সুফী ধরনের মানুষ ছিলেন। সমসাময়িককালের গ্রাম্য লোকদের কাছে জানা গেছে যে, মরহুম দেরাজতুল্লা বিশ্বাসের বাড়ী থেকে কোন লোক অভুক্ত অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। তাঁর পিতামহ মরহুম মোঃ ফজলুর রহমান মুন্সী সিভিল কোর্টের নায়েব নাজির ছিলেন।
তার মাতৃকুলের পূর্বপুরুষ মুফ্তি শাহ মোঃ আসানউল্লাহ বর্তমান ইয়ামেন থেকে ভারতে মুর্শিদাবাদের সালারে আসেন বলে জানা যায়। তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার দরবারে মুফ্তি ছিলেন। ১৯৫৭ সালে সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্র দেব রায় তাকে যশোর জেলার বর্তমান বেনাপোল থানার অন্তর্গত বাহাদুরপুর গ্রামে চব্বিশ বিঘা জমি দান করেন। তাঁর মাতামহ মৌলবী মোঃ মতিউর রহমান বিশ্বাস এন্ট্রাস পাস ছিলেন। তিনি সংস্কৃত ও ফারসিতে পন্ডিত ছিলেন। তিনি ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। লতিফুর রহমানের নানা বনগাঁ কোর্টের অনারারি ম্যাজিষ্ট্রেট ও বনগাঁ হাইস্কুলের সেক্রেটারী ছিলেন।
মা রহিমা বেগম একজন গৃহিণী ছিলেন। তাঁরা চার ভাই এবং দুই বোন। জনাব রহমান পিতা-মাতার দ্বিতীয় সন্তান। বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন।
বিচারপতি লতিফুর রহমান ১৯৫৯ সালের ২৬ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের অধিবাসি ও ঐ এলাকার প্রথম গ্রাজুয়েট পরবর্তীতে পুলিশের ডাইরেক্টর অব এ্যান্টিকরাপশন মরহুম গোলাম সরোয়ার এর তৃতীয় কন্যা মিসেস আয়েশা রহামনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর তার স্ত্রী সংসার ধর্ম পরিচালনার সাথে সাথে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৬৫ সালে বি.এ পাস করেন। তিনি গেন্ডারিয়ার একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তাদের তিন কন্যা সন্তান। শম্পা, রুম্পা ও নিপা। তারা এখন সবাই দেশের বাইরে।
শিক্ষাজীবন:
বিচারপতি লতিফুর রহমানের শৈশব কেটেছে যশোর শহরেই। যশোরে বাড়ি সংলগ্ন ছিল ঐতিহ্যবাহী যশোর জিলা স্কুল। তাঁর ছাত্রজীবন শুরু হয় টিচার্স ট্রেনিং স্কুলে। ঐ স্কুল থেকে পড়াশুনা শেষ করে তিনি যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ক্লাসের ফাস্ট বয় হিসেবে তিনি মনিটর হতেন। যশোর জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন ১৯৪৭ সালে তার মা কোলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোরে আনা হলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মায়ের স্মৃতি সম্পর্কে তিনি নিজে বলেছেন, “ছোট বেলায় মাতৃবিয়োগ হওয়ার ফলে মায়ের স্মৃতি খুব একটা মনে নেই। তবে ছোট বেলায় একটু দুরন্ত ছিলাম। তাই মা মাঝে মাঝে যে শাসন করতেন সেকথা একটু মনে আছে।” ১৯৫০ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় গণিত শাস্ত্রে মেধা তালিকায় প্রথম বিভাগে বৃত্তিসহ পাশ করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করার পর তিনি পরবর্তী সময়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে টিসি নিয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট আর্টস পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। কলেজ জীবন শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে তিনি সাবসিডিয়ারি এবং ১৯৫৫ সালে বি.এ (অনার্স) দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়ার পর ঢাকা কায়েদে আজম কলেজে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজ) ইংরেজীর খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ১০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরম্ন করেন। ১৯৫৬ সালের দিকে এম, এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় মাত্র তিন নম্বরের জন্য তিনি দ্বিতীয় ক্লাস মিস করেন। এসময় তিনি দিনের বেলায় কায়েদে আজম কলেজে শিক্ষকতা করতেন এবং রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন। কলেজ শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অল্প দিনের মধ্যেই তিনি সার্বক্ষনিক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং একই সাথে জগন্নাথ কলেজে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। সে সময়ের আর্থিক অবস্থানের কারণে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি দু’কলেজে শিক্ষকতা ও কয়েকটি প্রাইভেট টিউশনি করতেন। ১৯৫৮ সালে তিনি আইন শাস্ত্রে ২য় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।
পেশাগত জীবন:
বিচারপতি লতিফুর রহমান বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এ্যাটনী জেনারেল এম. এইচ খন্দকারের অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে ঢাকা হাইকোর্টে কর্মজীবন শুরু করেন। ১২ই মার্চ ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সনদ প্রাপ্ত হন। ওকালতির শুরুতে হাইকোর্টে যাতায়াত করতে লাগলেন এবং তাঁর সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম. এইচ খন্দকার সাহেবের সাথে নথিপত্র ও বইপত্র বহন করতে লাগলেন। আসলে ওকালতি একটি অনিশ্চিত পেশা। তাই মাঝে মাঝে আশা নিরাশায় ভুগতেন তিনি। তবে ভরসা ছিল যে, সংসারিক খরচ চালাবার জন্য দুটো কলেজের বেতন ও প্রাইভেট টিউশনি করে যে টাকা পেতেন তাতে গরীবের সংসার মোটামুটি চলে যেত। পরবর্তীতে আইন ব্যবসায়ে একটু ভালো করার পর পরই তিনি কলেজের চাকরি ছেড়ে দেন এবং আইন ব্যবসায় পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৪ সালের দিকে তিনি পূর্নাঙ্গ আইনজীবি হিসেবে ঢাকা হাইকোর্টে কার্য পরিচালনা শুরু করেন। প্রথম দুই বছর তিনি এ্যাটের্নী জেনারেলের অধীনে কাজ করার পর ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবি হিসেবে যোগ দেন। আইনজীবি থাকাকালে ফৌজদারী, দেওয়ানী, রিট ও নানাবিধ মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করতেন। এ সময় তিনি মাঝে মাঝে নিম্ন আদালতে উপস্থিত হতেন।
আইনজীবি থাকা অবস্থায় তিনি বেশ কিছু বছর বাংলাদেশ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ডের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কিছু মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করেন। অল্পদিনের মধ্যে তিনি ওকালতি ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেন এবং মোটামুটি আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি গেন্ডারিয়ার ভাড়া বাড়ি থেকে লালমাটিয়ার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। আইন ব্যবসায়ে মোটামুটি খ্যাতি অর্জন করার জন্য বিচারকরা তাঁকে বেশ স্নেহ করতেন এবং তাঁর প্রতি উচ্চ ধারণা পোষন করতেন। এভাবে তিনি পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টে অ্যাডভোকেট হিসেবে যোগ্যতার পরিচয় দেন। পরবর্তীকালে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সালে তিনি বারের সদস্য হিসেবে সরাসরি হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন লতিফুর রহমানকে শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি ১৯৮১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে স্থায়ী বিচারক হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালের ১৫ই জানুয়ারী পর্যন্ত তিনি সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দশ বছরের বেশী সময় তিনি হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হু

লতিফুর রহমান বিচারক থাকা অবস্থায় তিনি সৎ ও ন্যায় নিষ্ঠার সাথে বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন। কোথাও কোন পক্ষপাতিত্ব করেননি। প্রধান বিচারক থাকা অবস্থায় মানুষ যেন দ্রুত বিচার পায় সে জন্যে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। প্রধান বিচারপতি হতে অবসর গ্রহণ করেন ২০০১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী তারিখে। তিনি ১৯ বৎসর যাবৎ আইনজীবি এবং ২২ বৎসরের বেশী সময় যাবৎ বিচারক হিসেবে বিচার কাজ পরিচালনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ও হাইকোর্ট বিভাগে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ১ বছর ২ মাস।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন:
বিচারপতি লতিফুর রহমান ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে শেষ কার্যদিবস অতিবাহি

প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণের সাথে সাথে নতুন গুরুদায়িত্বের চিন্তা মাথায় নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপট ও আসন্ন নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ১৩ই জুলাই বিকেলে সরকারী বাসভবন ‘যমুনা’ তে উঠে গেলেন। ১৫ই জুলাই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ৭.৩০ মিনিটে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া

১৭ই জুলাই সকালে তিন বাহিনীর প্রধানগণ লেঃ জেঃ হারুনুর রশিদ, রিয়ার এ্যাডমিরাল আবু তাহের, এয়ার ভাইস মার্শাল রফিকুল ইসলাম তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। দুপুরে বিএনপির চে


২ আগস্ট দুপুর ১২টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার লতিফুর রহমানের সথে তাঁর সরকারী বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন। জিমি কাটারের সৌজন্যে মধ্যহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা, জিল্লুর রহমান, খালেদা জিয়া ও আব্দুল মান্নান ভূইয়াকে এ মধ্যহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দুপুর ১২টায় জিমি কাটারের সাথে বাসভবনে উপদেষ্টা রোকেয়া রহমানের উপস্থিতিতে নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। “জিমি কার্টার জনাব লতিফুর রহমানকে প্রশ্ন করলেন, “যে

৫ই আগস্ট ২০০১ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ গলব্লাডারে অস্ত্রোপাচারের জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি সেনাকুঞ্জে, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য সেনা বাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ও সকল পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর চেইন অব কমান্ড বজায় রাখতে হবে। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যু দিবস উপলক্ষ্যে সূর্য ওঠার সাথে সাথে রাষ্ট্রপতির সাথে তিনি ৩২নং সড়কে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব উপদেষ্টা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ২০শে আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত Ms Mary A Peters তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরাকরের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের একটি চিঠি জনাব লতিফুর রহমানের হাতে তুলে দেন। এ চিঠিতে প্রেসিডেন্ট বুশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যকলাপের প্রশংসা করেন এবং সুষ্ঠ ও শানিত্মপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। ২১শে আগস্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিন বাহিনীর প্রধানগণ, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, আইন শৃঙ্খলা কমিটির দুই উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত হন। নির্বাচনে কিভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে সে সম্পর্কে মত বিনিময় হয়। ২৫শে আগস্ট রাষ্ট্রপতির সাথে সরকার প্রধান হিসেবে তিনি প্যালেষ্টাইনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান। চীন থেকে যাত্রা বিরতী শেষে রাত এগারোটায় বিদেশী মেহমান বিদায় নেন। বিমান বন্দরে সংক্ষিপ্ত সফরকালে জনাব আরাফাত প্যালেষ্টাইনের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন এবং বাংলাদেশ প্যালেষ্টাইনের জনগণের ন্যায় সঙ্গত দাবি ও সংগ্রামের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন ব্যাক্ত করে। ২৯শে আগস্ট বিকেল ৪.৩০ মিনিটে শেরাটন হোটেলে বৈদেশিক সাংবাদিক সমিতির সদস্যবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিন হন। এসময় তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন। ৩০শে আগস্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পরিদর্শক টিমের প্রধান Mr Joageim Marinda, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত Mr. Maddolangeng Mansyur, কানাডার হাইকমিশনার মিঃ ডেভিও পেস্টান, জাপানের রাষ্ট্রদূত মি. সিরো প্রভাসিও জনাব রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করেন।
২০০১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর আইসিসিতে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং মহাপরিদর্শককে সমস্ত জেলায় বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য পুলিশ সুপার ও ডিআইজিদেরকে ফ্যাক্স/টেলিফোনে খবর পাঠাতে বলেন। ৫ সেপ্টেম্বর বিমান বাহিনীর বিমানযোগে জন্মস্থান যশোরে যান। সার্কিট হাউজে কিছু সময় অবস্থান করে খড়কি কবরস্থানে পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করেন। যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তাঁর মতবিনিময় হয়। সে সময়ে বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। একমাত্র যশোরেই তিনি রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনায় এক বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাসীদের বিরম্নদ্ধে এক আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গড়ে তোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চায়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের বিমান ও নৌযানের জন্য বাংলাদেশের আকাশসীমা, বিমান ও সমুদ্র বন্দর এবং জ্বালানী সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ আশা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বড় বড় রাজনৈতিক দলের সাথে এ বিষয়ে মতবিনিময়ের পর এক বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার, জ্বালানী সরবরাহ এবং বাংলাদেশের সমুদ্র ও বিমান বন্দর ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রস্তাব রয়েছে তাতে বাংলাদেশ সরকারের সম্মতি রয়েছে।
২৯ সেপ্টেম্বর অষ্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার Mr. Robert Flynh এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর জার্মানীর রাষ্ট্রদূত Mr Uwewschramm সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। পরে জাপানের প্রাক্তন মন্ত্রী Mr Shin Shakur নেতৃত্বে জাপানি নির্বাচন মনিটরিং প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করতে আসেন। এ দিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সকলকে আনন্দের সাথে ও নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য আহবান জানান জনাব লতিফুর রহমান। ভোটের আগে ও পরে যাতে কেউ দেশের কোথাও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অত্যন্ত সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি। দায়িত্ব পালনরত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিডিআর সদস্যদের এ ব্যাপারে সর্ব প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন তিনি। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেদিকে তাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসী যাতে কোন ভাবেই নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য তিনি দেশের জনগণ ও সকল ভোটারকে সজাগ থাকার আহবান জানান। তিনি দৃড়তার সাথে ব্যাক্ত করেন যে, সমগ্র দেশবাসী সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করলে আসন্ন অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”
২০০১ সালের ১লা অক্টোবর যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সরকারী বাসভন ‘যমুনা’য় বিকেলে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আগত বিদেশী নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের জন্য এক চা চক্রের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতগণ, উপদেষ্টাগণ, সচিবগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মি. মেরেন্ডা, জাপানের যাকুরা, কানাডার রাষ্ট্রদূত ও আরো কয়েকজন পর্যবেক্ষক দলের নেতা এক বাক্যে স্বীকার করলেন যে, নির্বাচন অত্যান্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হয়েছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ কোন বিরূপ মন্তব্য করলেন না। Harry. K. Thomas, National Secerity Council এর Chairman, The white House, Washingtion D.C থেকে বাংলাদেশ Parliment Election সম্বন্ধে মন্তব্য করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেল যে, বিএনপিসহ চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। এ সময়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, কোথাও বিএনপি ও শরীক দলের কর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপর অত্যাচার, আবার কোন কোন জায়গায় আওয়ামী লীগ কর্মীরাও সুযোগ বুঝে বিএনপি কর্মীদের উপর অত্যাচার করতে লাগল। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন পর্যন্ত পুলিশ তিন মাসের সরকারের নির্দেশ ঠিকমত পালন করেছিল। কিন্তু নির্বাচন ফলাফল প্রকাশের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয় আচরণ ছিল অত্যান্ত দুঃখজনক।
১০ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের শেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১০ই অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যালয়ের শেষ দিন। সেদিন তিনি দু’একটি ফাইল সই করলেন। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেন। দুপুরে বিটিভি তাঁর শেষ ভাষণ রেকর্ড করল। তিনি রাত ৭.৩০ মিনিটে বিটিভিতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শেষ ভাষণ দেন। ভাষনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশবাসী ও প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা।
বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ:
আপিল বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় জনাব লতিফুর রহমান বেশকিছু আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর শ্রীলংকার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত Asia and pacific প্রধান বিচারপতিদের পঞ্চম সম্মেলনে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সস্ত্রীক কলম্বোতে যান।
১৯৯৫ সালে ১৬-২০ আগস্ট চীনের বেইজিং শহরে ষষ্ঠ Asia and pacific প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন এবং চর্তুদশ Law Asia বাইনিয়ান সম্মেলনে সস্ত্রীক যোগদান করেন। সম্মেলন শেষে তিনি এক মাসের অধিককাল বেইজিং এ অবস্থান করেন।
১৯৯৯ সালে ১৩-১৪ নভেম্বর United Nations High Commissioner for Refugee সংস্থার আমন্ত্রণে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত উদ্বাস্তু বিষয়ক আইন সম্মেলনে যোগদান করেন।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধান বিচারপতি এম. এ আনন্দ এর আমন্ত্রণে জনাব লতিফুর রহমান সস্ত্রীক নয়াদিল্লীতে যান। ২৬শে জানুয়ারী ২০০০ থেকে ১লা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
২০০০ সালের ২৩শে মার্চ সার্ক সম্মেলন উপলক্ষ্যে নেপালের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে তিনি সস্ত্রীক কাঠমুন্ডুতে যান সার্ক সম্মেলনে যোগদান করতে। সার্ক সম্মেলন শেষে তিনি পুকারা ও অন্যান্য স্থান ভ্রমণ করেন।
অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে আইন সম্মেলনে যোগদান করেন ১০-১৭ এপ্রিল ২০০০ পর্যন্ত। এ সম্মেলন আহবান করা হয় United Nations & Transpoarency International এর যৌথ উদ্যোগে। সম্মেলনে অনেক দেশের বিচারপতিগণ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বিচার বিভাগের দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট আরও কিছু।
World Bank আয়োজিত ৫-৭ --- ২০০০ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত Comprehensive Legal and Judicial Development সভায় যোগদান করেন। এ সময় তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে Country Court, Federal Court পরিদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি D. Renquist এর সাথে মিলিত হন। এছাড়া তিনি ক্যালিফোনিয়া স্টেস্টস এর সেনহুজে ফেডারেল কোর্ট পরিদর্শন করেন।
শ্রীলংকার আইনমন্ত্রী ও উপ-অর্থমন্ত্রী প্রফেসর G.L Peiris এর আমন্ত্রণে ৮ জুলাই ২০০০ সালে কলম্বো সফর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ঐ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণ উপস্থিত ছিলেন।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রসিকিউটার জেনারেল এর আমন্ত্রণে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ সফরে তিনি চীনের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি প্রসিকিউটার জেনারেলের সাথে আলাপ করে তাদের বিচার ব্যবস্থার একটি সঠিক চিত্র পান।
তিনি United Natons High Commissioner for Refugee সংস্থার আমন্ত্রণে ২৫-২৭ অক্টোবর ২০০০ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ও বার্নে অবস্থান করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসোসিয়েশন এর সদস্য হিসেবে এ সম্মেলনে যোগদান করেন।
জনাব রহমান ৭ থেকে ১৩ই জুন ২০০০ সালে ওয়াশিংটন ডিসি এর সর্বোচ্চ আদালতে এবং সানজোস আদালতে পরিদর্শন করেন।
লেখক লতিফুর রহমান:
বিচারপতি লতিফুর রহমান জনগণের সামনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্ম পরিধি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা” নামক একটি বই লেখেন। “THE CARETAKER DAYS AND MY STORY” এবং “ILLUMINED HOPE”|
বইটিতে তিনি স্বল্প কথায় জীবন বৃত্তান্ত, বিচারকের জীবন, প্রধান বিচারপতির অভিজ্ঞতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৮৭ দিনের কার্যাবলী সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। ওই ৮৭ দিনে তিনি অনেক বিতর্কের ঝড় মাথায় নিয়ে, অহেতুক চাপের তোয়াক্কা না করে দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।” রাজনীতিবিদরা সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে অপারগ, যেখানে তাদের মুখে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত করা সঙ্গত? রাজনীতিবিদরা যে দুরূহ কাজ করতে পারবেন না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সে কাজটি মাত্র তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার গুরু দায়িত্ব যিনি নিয়েছেন তাঁকে বিতর্কিত করার সাংবিধানিক অধিকার কোন রাজনৈতিক দলের আছে বলে লেখক মনে করে না।” তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান থাকাকালীন তিনি যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন তা তিনি গ্রন্থ দুটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। যারা বইটি পড়বে তারা নিরপেক্ষতার বিষয়টি ভালভাবে বুঝতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
১লা অক্টোবর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপর লেখা একটি বই “THE CARETAKER DAYS AND MY STORY” প্রকাশিত হয়। বইটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা যায় তার একটি নতুন পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা যায়। বইটি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন গণতান্ত্রিক দেশে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু নেই। তাঁর জানামতে, যুক্তরাষ্ট্রের দু-একজন তাঁর এই বইটির উপর গবেষণা করেছে। তাঁর অপর একটি বই “CONSTITUTION OF BANGLADESH” বইটি আমাদের সংবিধানের উপর লেখা একটি গ্রন্থ।
৮ জন সচিবের বদলী প্রসঙ্গ:
জনাব লতিফুর রহমান ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশের প্রধান বিচারকের কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এই দিন সন্ধ্যায় তিনি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের সাথে সৌজন্যমুলক সাক্ষাৎ করেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন সাহেব বিচারপতি জনাব লতিফুর রহমানকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতা গ্রহণ করবে। সেই দিন থেকেই তিনি তাঁর মহান দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে যান এবং পরিকল্পনা করতে শুরু করেন, কিভাবে একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। এই কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তিনি সাড়ে চার মাস সময় পান। যেহেতু তিনি অবসর জীবন যাপন করছিলেন, তাই এই সময়ে সারা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি সব ধরণের সংবাদই পেতেন। তিনি স্বতন্ত্রভাবে পরিস্থিতির মুল্যায়ন করেন। তাঁর সরকারের স্থায়িত্বকাল অত্যন্ত স্বল্প। আর এই কথা স্মরণে রেখে তিনি সতর্কতার সাথে তাঁর প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করেছিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে তিনি পুলিশ এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সাথে আলোচনা শুরু করেন। ২০০১ সালের ১৫ই জুলাই তারিখে শপথ গ্র্রহণ করার পর তাৎক্ষনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ৮ জন সচিবকে অন্যত্র স্থানান্তর করেন যা ছিল সংশ্লিষ্ট অধস্থন কর্মকর্তাদের প্রতি এক স্পষ্ট ইঙ্গিত এবং সতর্ক সংকেত যেন তারা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
সচিবদের স্থানানন্তর ছিল সমপূর্ণরূপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এখতিয়ারে এবং যেহেতু তিনি প্রস্তুতি যথাযথভাবে নিয়েছিলেন, তাই কালবিলম্ব না করে উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৯০ দিনের স্থায়িত্বকাল একটি সরকারের নিজস্ব কর্মপন্থা থাকতে হবে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতীর এই সময়ে ত্বরিত এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এ বিষয়ে কোন রাজনৈতিক দলের কোন বিরূপ মত প্রকাশ করার কোন অবকাশ নেই। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিরূপ মত প্রকাশ করা ছিল উদ্দেশ্য প্রনীত বলে তিনি মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন অসৎ পরিকল্পনা ছিল না।
যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি সাংবিধানিক প্রকৃয়ায় এসেছিল, তাই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মূহুর্তের জন্যেও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়ার বিষয়কে কোন গুরুত্বই দেননি। তিনি এখনও অনুভব করেন যে সেই রাতে শপথ গ্রহণ করার পরপরই বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার উক্ত স্থানান্তরের ত্বরিত সিদ্ধান্তের কারণে কোন অধস্থন কর্মকর্তা পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে অন্যান্য কর্মচারীদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি। এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের মোট থানার সংখ্যা ৫০০ এবং এই ৫০০ থানার অফিসার্স ইনচার্জ সবাইকে বদলী করা হয়। কিন্তু কোথাও কোন প্রতিবাদ বা সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।
নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এবং সময়ের সীমাবদ্ধতার কথা চিনত্মা করে তিনি ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সমস্ত কর্মকর্তাই রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ। তারা কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি দায়বদ্ধ না এবং সেকারণে সেই দিনে সচিবদের স্থানানন্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দলের আইনগত কোন অভিযোগ করার অধিকার নেই।
দীর্ঘ ৫ বৎসর পর ২০০৬ সালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর বিরোধী দলসহ দেশের জনগণ উপলদ্ধি করতে পেরেছে যে জনাব লতিফুর রহমানের সেই ত্বরিত বলদির সিদ্ধান্ত ছিলো সঠিক ও নিরপেক্ষ।
তথ্য সূত্র:
সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
অনুবাদ:
আনোয়ারুল আলম (শুভ)
শেষ আপডেট:
সেপ্টেম্বর ২০১১