
Home যশোর জেলা / Jessore District > সশস্ত্র প্রতিরোধ
এই পৃষ্ঠাটি মোট 4387 বার পড়া হয়েছে
সশস্ত্র প্রতিরোধ
২০ নভেম্বর গরীবপুরে পাকিস্তানীদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানী ট্যাংকের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাহায্যে ভারতীয় ট্যাংকও রণাঙ্গনে উপস্থিত হয়। উভয়পক্ষের তুমুল সংঘর্ষে পাকসেনাদের ৭টি ট্যাংক ধ্বংস হয়। এই সময় পাক জঙ্গী বিমান সাহায্য করতে এলে দু’টি জঙ্গী বিমানকেই গুলী করে ভুপাতিত করা হয়, বন্দী করা হয় দু’জন পাইলটকে। এই সংঘর্ষ সম্পর্কে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘বাংলা নামে দেশ’ প্রন্থে বলা হয়েছেঃ
“বাংলাদেশের চৌগাছা থানার অখ্যাত গ্রাম গরীবপুর। ২২ নভেম্বর ভারতীয় ট্যাংকের ক্রু-দের ত্বরিত লড়াইয়ে পাকিস্তানীদের তিনটি শাফে ট্যাংক সেখানে বন্দী হলো। ৭৬ জন খানসেনা খতম। বাকিরা চম্পট। যাবার সময় ফেলে গেছে আরও ৮টি জখম ট্যাংক, বাক্সভরা মার্কিন আর চীনা অস্ত্র-খোলারও সময় পায়নি।”
এদিকে ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমান ২৬ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জীবননগর থানা দখল করে ক্রমশ খালিশপুর, কোটচাঁদপুর, কালিগঞ্জ এবং ঝিনাইদহের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। ক্যাপ্টেন এ আর আযম চৌধুরী তার বাহিনী নিয়ে মানিকনগর, মোনাখালী, রশিপুর ও রাজাপুর হয়ে মেহেরপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।
এই সময় এ এলাকায় পাকিস্তানী ৯ম ডিভিশন চরমভাবে মার খাচ্ছিলো। ৯ম ডিভিশন হেডকোয়ার্টার যশোর সেনানিবাস থেকে সরিয়ে মাগুরা নিয়ে যাওয়া হলো। পাকসেনারা চৌগাছায় চরমভাবে মার খাবার পর তারা তিন ভাগে ভাগ হয়ে একটি অংশ ঝিনাইদহ মেহেরপুর এলাকাতে একটি অংশ ঝিকরগাছার উত্তর পশ্চিমে এবং একটি অংশ সাতক্ষীরা-খুলনা এলাকাতে অবস্থান নেয়।
আট নম্বর সেক্টরে পুরোদমে যুদ্ধ চলছিলো। ৩ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় নবম ডিভিশনও অগ্রসর হতে থাকে। ভারতীয় ডিভিশন দু’টি কলাম দু’দিক থেকে যশোর ঢাকা হাইওয়ের ওপর এসে দাঁড়ালো। ৬ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানী নবম ডিভিশন পালাবার পথ খুঁজছিলো। লেঃ জেনারেল নিয়াজী ৫ ডিসেম্বর রাতেই সব ক’টি ডিফেন্সে খবর পাঠিয়েছিলেন ‘পুলব্যাক’। এই সংবাদে ৯ ডিভিশনের পুরো অংশটাই পালাবার ইচ্ছা করলেও পালাবার পথ তারা পেলেন না। কারণ ততক্ষণে ভারতীয় চতুর্থ ও নবম ডিভিশন যশোর-ঢাকা হাইওয়েতে ঘাঁটি ফেলেছে। পাকিস্তানী নবম ডিভিশনের একটি কলাম মাগুরা হয়ে মধুমতী পেরিয়ে ঢাকার দিকে, অপর কলাম খুলনার দিকে এবং কিছু অংশ কুষ্টিয়ার দিকে যায়। বস্তুত ৬ ডিসেম্বর যশোর শহর মুক্ত হয়। ৭ ডিসেম্বর বেলা এগারটার দিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী উভয়দিক দিয়ে যশোর পৌঁছে। মিত্রবাহিনীর ডিভিশন প্রধান মেজর জেনারেল দলবীর সিং বয়রা ঝিকরগাছার পথ ধরে ৯ম ডিভিশন অবিশিষ্ট সৈন্য নিয়ে যশোর পৌঁছেন।
এদিকে ১২ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাটিয়াপাড়া থানার মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানীদের সংঘর্ষ চলছিলো। লেঃ সিদ্দিকী তাঁর বাহিনী নিয়ে বেশ বিব্রত বোধ করছিলেন। এই সংবাদ ক্যাপ্টেন নজমুল হুদার কাছে পৌঁছলে তিনি তৎক্ষণাৎ তার বাহিনী নিয়ে ভাটিয়াপাড়া পৌঁছেন। ১৪ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী পাকিস্তানীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখানে অসংখ্য এফএফ বাহিনীও সংঘর্ষে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনীর এই প্রচন্ড আক্রমণের মুখে অফিসারসহ ১৫০ জন পাকসেনা ক্যাপ্টেন হুদার কাছে ১৮ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও খুলনা হানাদারমুক্ত হয়।
***মেজর রফিকুল ইসলামঃ এগারোটি সেক্টরের বিজয় কাহিনী
তথ্য সূত্র :
বিজয় স্মরণিকা
বিজয় উৎসব ১৯৯১
তথ্য সহযোগিতা :
মোঃ আবু জাহিদ
লাইব্রেরিয়ান, পাবলিক লাইব্রেরী, যশোর।
সম্পাদনা :
শমিউল আমিন (শান্ত)
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট :
২১.১২.০৬