
Home সাহিত্যিক / Litterateur > গুরুনাথ সেন / Gurunatha Sen (1847-1914)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 17502 বার পড়া হয়েছে
গুরুনাথ সেন / Gurunatha Sen (1847-1914)
গুরুনাথ সেন
Gurunatha Sen
Home District: Narail, Kalia
গুরুনাথ সেন বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সাধক। মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের সমসাময়িক এই কবি বাংলা ও সংস্কৃতি মহাকাব্য রচনা করে এক সময়ে বিশেষ যশ ও পরিচিতির অধিকারী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে গুরুনাথ সেন কাব্যচর্চার চেয়ে ধমদর্শক প্রতিষ্ঠায় অধিক সময় ব্যয় করায় আধুনিক সাহিত্যনুরাগীদের কাছে কম পরিচিত।
জন্ম ও শৈশব:
মহাকবি গুরুনাথ সেন জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বেন্দা গ্রামে। তাঁর পারিবারিক অবস্থান ও পরিচয় তিনি নিজেই গোপন রেখেছেন। তাই বর্তমান রচনায় তার পিতা মাতার নামও পরিচয় যোগ করা সম্ভব হলো না। তিনি একটি উপধর্মীয় মতের স্রষ্টা এই ধর্মমতে জীবনের এক মাত্র উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা। এটাই হওয়া উচিৎ জীবের আচরণ। বৈদ্য সম্প্রদায়ের কবি গুরুনাথ সেন বেন্দার স্থানীয় টোলে সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি তীক্ষ্ণ মেধাশালীন বুদ্ধি ও সৃষ্টশীলতার পরিচয় দেন। আপন চেষ্টা ও সংস্কৃত পন্ডিতদের যত্নে সে যুগের বিচারে গুরুনাথ বিশেষ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হন।
কর্মজীবন:
কর্মজীবনে গুরুনাথ সেন ছিলেন একজন সংস্কৃতি জানা পন্ডিত। তাঁর পন্ডিতের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তিনি কলকাতার আহিরী বঙ্গবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা গ্রহণ করেন। কলকাতার বিদ্যান সমাজের উৎসাহ ও তাঁর রচনার চাতুর্যে গুরুনাথ খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেন। কিছু দিন যেতে না যেতেই গুরুনাথ সেন ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। তাঁর পান্ডিত্য ও রচনায় মুগ্ধ হয়ে নর্মাল স্কুল কর্তৃপক্ষ গুরুনাথ সেনকে কবিরত্ন উপাধি দিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে যদুনাথ সেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামেন্দ্রসুন্দও ত্রিবেদী, বিহারীনাল চক্রবর্তী প্রমুখের সঙ্গে বদ্ধতায় আবদ্ধ হন। জানা যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গুরুনাথ সেনের সাহিত্যকর্মের জন্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বিদ্যাসাগর মশাই গুরুনাথ সেনকে একাধিবার চিঠি লিখেছিলেন।
বাংলা ও সংস্কৃত কাব্য ও মহাকাব্য রচনার পাশাপাশি গুরুনাথ সেন বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেন ধর্মীয় দার্শনিক হিসেবে। সনাতন ধর্মাশ্রয়ী গুরুনাথ সেন একেশ্বর সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার ধর্মমতে চোলিত ধারার বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-নীতি রয়েছে। সনাতন ধর্মের এই ধর্মীয় ধারাকে গুরুনাথ আখ্যায়িত করেন সত্যধর্ম বলে। আজও ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গুরুনাথ প্রচলিত সত্যধর্মের অনুরাগী ও অনুসারী রয়েছেন।
মহাকবি গুরুনাথ সেনের বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায়। তিনি বাংলা ভাষার মাহকাব্যসহ ২৯ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া সংস্কৃতি ভাষায় ও মহা কাব্যসহ ৪০ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। শুধু কাব্য, মহাকব্য নয়, স্কুল পাঠ্য পুস্তক রচনায় ও বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়ে ছিলেন গুরুনাথ। তিনি প্রায় ১ শত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।
মহাকবি গুরুনাথ সেনের রচনাবলী:
ধর্ম ও দর্শনঃ
১. তত্ত্বজ্ঞান, ২. তত্ত্বজ্ঞান সঙ্গীত, ৩. দম্পতির ধর্ম লাভ, ৪. অদ্ভূত উপাখ্যান, ৫. মহাপুরুষদের সিদ্ধি বিবরণ, ৬. সাধু জীবনী , ৭. ন্যায়দর্শন।
মহাকাব্যঃ
১. কর্মলিনী মহাকব্য, ২. সুভদ্রাহরণ মহাকাব্য।
কাব্যঃ
১. বীরোত্তর কাব্য।
শিশুপাঠ্য কবিতার বইঃ
১.সংক্ষিপ্ত রামায়ণ, ২.সংক্ষিপ্ত মহাভারত, ৩. হিতদীপ।
উপন্যাসঃ
নলিনী।
উপন্যাসঃ
১. লঘু সুখবোধ ব্যাকরণ, ২. ব্যাকরণ সোপান, ৩. সংক্ষিপ্ত ব্যবহারিক ভূগোল (১৮৭৭) ৪. ইতিহাস শিক্ষা, ৫. পাটিগণিত, ৬. জ্যামিতি সহায়, ৭. বর্ণ পরিচয় ১ম পাঠ আরো কয়েক খানি গ্রন্থ।
বিবিধঃ
১. স্ত্রী শিক্ষা, ২. রচনামালা, ৩. যুধিঘির চরিত, জ্ঞানদায়িনী।
প্রকাশিত কবিতাঃ
১. বঙ্গভাষা, ২. ভারত ভূমি, ৩. স্বজাতীয়দের প্রতি, ৪. অভেদ জ্ঞান ও ৫. কৌশল্যার বিলাপ ইত্যাদি।
মহাকবি গুরুনাথ সেনের রচিত সংস্কৃত ভাষার গ্রন্থাবলীঃ
ধর্মবিষয়কঃ
১. সত্য ধর্ম, ২. গুনরত্ন, ৩. পাশারকম, ৪. মুক্তি, ৫. জিঙ্গাসা।
মহাকব্যঃ
১. শ্রীরাম চরিতম, ২. শ্রী গৌরবৃত্তম।
কাব্য খন্ড কাব্যঃ
১. বারিদূতম, ২. বতে দূতম, ৩. মনোদূতম, ৪. মহোদূতম, পত্নী শত কম, ৫. প্রেম ভ্রমনম ইত্যাদি।
ইতিহাসঃ
১. ভারতের ইতিহাস।
টাকাগ্রন্থঃ
১. সর্বমব্দ তরঙ্গিনী, ২. ঋগবেদ টাকা, ৩. কদম্বরী টাকা, ৪. মুশবোধ টাকা, ৫. সামবেদ ভাষ্যম, ৬. সুনীতি সার ইত্যাদি।
ব্যকরণঃ
১. সুখবোধ ব্যাকরণ, ২. কৌমার ব্যাকরণ, ৩. গণরত্ন, ৪. ছন্ডোরত্ন, ৫. পানিনিসার, ৬. চতুষ্টয় বৃত্তি, ৭. অখ্যাতি বৃত্তি, ৮. কৌমার সঞ্জিবনী, ৯. বৈদিক ব্যাকরম ইত্যাদি।
মহাকবি গুরুনাথ সেন জীবদ্বশায় কাব্য সাহিত্য বিশেষ খ্যাতিমান ছিলেন। তবে তার কর্ম দর্শন প্রচার ও পরিচিতিতে সত্য ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই খ্যাতিমান করে আছেন।
মহাকবি গুরুনাথ সেন ১৯১৪ সালে পরলোক গমন করেন।
সম্পাদনা :
কবি মোহসিন হোসাইন
০১৬৭০৭৪৯৫২৪
০১৫৫৬৪২৫৪০৭