
Home যশোর জেলা / Jessore District > যশোর জেলা পরিচিতি / Introduction of Jessore District
এই পৃষ্ঠাটি মোট 101067 বার পড়া হয়েছে
যশোর জেলা পরিচিতি / Introduction of Jessore District
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
যশোর, সমতটের একটা প্রাচীন জনপদ। নামটি অতি পুরানো। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যশোর (জেসিনরে) আরবি শব্দ যার অর্থ সাকো। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীর দেয়া (১৩৯৮ খৃ:)। এককালে যশোরের সর্বত্র নদী নালায় পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বে নদী বা খালের উপর সাকো নির্মিত হতো। খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুড়লীতে আগমন করেন বলে জানা যায়। এ

মহারাজ প্রতাপাদিত্যের পিতা বিক্রমাদিত্য ও তাঁর এক সহযোগি বসন্ত রায় গৌড়ের এক চরম অরাজকতার সময় সুলতানের অপরিমিত ধনরত্ন নৌকা বোঝাই করে গোপনে যশোরে প্রেরণ করেন। গৌড়ের ধনরত্ন বোঝাই অসংখ্য নৌকা যশোর পৌঁছিল। ধীরে ধীরে বন জঙ্গলে আবৃত্ত যশোরের খ্যাতি চারদিকে ছড়ায় পড়লো। প্রতিষ্ঠিত হলো যশোর রাজ্য। নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নামকরণ হল যশোহর। প্রবাদ গৌড়ের যশ হরণ করে এই শহরের শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় স্থানীয় পুরাতন নাম যশোর পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নামকরণ হয় যশোহর। যশোর শব্দ যশোহর শব্দের অপভ্রংশ। যশোহর শব্দের অর্থ পরের যশ হরণকারী অধিক যশস্বী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান। ইংরেজ শাসকগণও এই নাম Jessore ব্যবহার করেছেন। আবার সুন্দরবনের আরেক স্থানের নামও যশোর। প্রাচীন যশোর আধুনা যশোর হতে ৮০ মাইল দুরে খুলনা জেলা শ্যামনগর থানার মধ্যে।
যশোর বাংলাদেশের একটি সুপ্রাচীনতম স্থান। প্রাচীনকালে এ জেলায় আর্য, দ্রাবিড়, মঙ্গল ও আদিম অধিবাসীরা বসবাস করত। নিষাদ, কিরাত ও বাগদি জাতির বসবাসও ছিল। এ জেলা অসংখ্য অধিবাসী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। হিন্দু রাজত্বের সময় বৌদ্ধদের জোর পূর্বক হিন্দু ধর্মে দিক্ষীত করা হয়। যোগী, ভড়ং, তাঁতী, মাহিষ্য, কপালি, নমশূদ্র প্রভৃতি জাতির লোকেরা অধিকাংশই বৌদ্ধ ছিল। কায়েস্ত ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য জাতির লোকেরাও এদেশে বসবাস করত।
আধুনিক যশোর জেলা ও প্রতাপাদিত্যের যশোর এক নয়। প্রাচীন ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত রূপই আজকের এই যশোর জেলা। ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত মুড়লী কসবা তথা যশোর টলেমী বর্ণিত গঙ্গারেজিয়া। যশোরের সাথে জড়িয়ে আছে হযরত খানজাহান আলী, গাজী-কালু, গরীব শাহ ও বোরহান শাহ-এর মত মহাপুরুষদের নাম। খানজাহান আলীর বহু পূর্ব থেকেই যশোর ও বারোবাজার হিন্দু বৈদ্য জাতির প্রাণ কেন্দ্র ছিল বলে অনুমান করা হয়। ময়নামতি, মহাস্থানগড় ও পাহাড়পুরের ন্যায় বারবাজারে আছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। যশোরে সর্বত্র ইতিহাসের খনি বিদ্যমান। যশোরের ভরত ভায়না, শৈলকুপা, মির্জানগর, বেড়বাড়ি প্রভৃতি অতি প্রাচীন স্থান। ভরত ভয়নায় সুউচ্চ মৃত্রিকার ঢিবি বিদ্যমান যা বৌদ্ধ আমলের ভরত রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। গৌঢ় বঙ্গের একটি ঐতিহাসিক টাকশাল ছিল মুহম্মদাবাদে (উত্তর যশোর)। হোসেন শাহ, নসরত শাহ এই টাকশাল থেকে মুদ্রাংকন করেছিলেন। বাংলার অন্যতম স্বাধীন সুলতান শেরশাহ যশোর থেকে ভূষনা (ফতেহবাদ) পর্যন্ত একটি দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। এই রাস্তা দিয়ে সে যুগে ডাক চলাচল করত। সম্ভাবত শেরশাহ এই ডাক চলাচলের প্রবর্তন করেন। বেরইল গ্রামের নবগঙ্গার তীরে একটি ডাক চৌকির অফিস ছিল যা বর্তমানে চৌকির ভূঁই নামে পরিচিত। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপায় শাহী মসজিদ যশোর জেলার অন্যতম প্রাচীন কীর্তি। যশোর শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মুড়লী প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান। এখানে হাজী মুহাম্মদ মহসীনের প্রতিষ্ঠিত ইমামবাড়া অবস্থিত। এই স্থানের পশ্চিমে চাঁচড়া রাজবাড়ি। দানশীল জমিদার কালিবাবু যশোর কলিকাতা রাস্তা নির্মাণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। রামনগরে অবস্থিত খানজাহান খনিত দীঘি যাহা পিকনিক কর্ণার নামে পরিচিত। মীর্জানগর ও ত্রিমোহনীতে ইতিহাসের অনেক উপাদান রয়েছে। নওয়াপাড়া শিল্প বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত। ছাতিয়ানতলা মুন্সী মেহেরুল্লাহ জন্মভূমি। বাসুড়ী গ্রামে খানজাহান খনিত একটি বিশাল একটা দিঘী দেখা যায়। সাগরদাড়ি কপোতাক্ষ নদীর তীরে মাইকেল মধুসুদন দত্তের জন্মভূমি। শোলখাদা গ্রামে বৈজ্ঞানিক ডাক্তার নীল রতন ধরের জন্মভূমি। ঝিনাইদহে বাঘা যতিন এর জন্মভূমি। বিজয়পুরে রাজা মুকুট রায়ের খনিত দীঘি যা ঢোল সমুদ্র নামে পরিচিত। হরিশংকর পুরে প্রখ্যাত গনিতজ্ঞ কে. পি বসুর জন্মস্থান। যশোরের কোটচাঁদপুর চিনি শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। মহেশপুরে সূর্য বংশীয় রাজাদের শাসন কেন্দ্র ছিল। লোহাগড়ার বড়দিয়া পাট ব্যবসায়ী কেন্দ্র। কালিয়া বাংলাদেশের মধ্যে একটি বৈদ্য প্রধান স্থান। লোহাগড়া ও সালনগরে আছে বিখ্যাত জোড়বাংলা মন্দির। বিদ্যানন্দকাটি গ্রামে খানজাহান আলী খনিত বিরাট দীঘি অবস্থিত।
মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের পতনের পর ১৭৭২ সালে কোম্পানী সরকার যশোর বা মুড়লী কসবায় রাজস্ব সংগ্রহের জন্য একজন কালেক্টর নিয়োগ করেন। ১৭৮২ সালে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট যশোরের জন্য নিযুক্ত করা হয়। সে সময় যে কোর্ট কাছারী স্থাপিত হয় তাকে লোকে মুড়লীর কাছারী বলত। ১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে এই অফিস মুড়লীর পাশ্ববর্তী কসবা বা সাহেব গঞ্জে স্থাপিত হয়। তখন থেকে এই স্থানের নাম স্থায়ীভাবে যশোর হয়। এভাবে মুড়লী কসবার নাম ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতা থেকে পর্দার অন্তরালে চলে যায়।
জেলার বৃটিশ প্রশাসন চালুর সময় ১৭৮১ সাল। পরিচিত ত্রিমোহনীর নিকট মীর্জানগর সমৃদ্ধ জনপদ ছিল এবং সেখানে থানা ছিল। পরে ১৮৬৩ খৃ: পর্যন্ত ত্রিমোহনীতে থানা থাকে। বনগাঁ পিচের রাস্তা ১৮৬৬-১৮৬৮ কালপর্বে তৈরী হয়। ১৭৮৬ সালে চাঁদখালীতে কোর্ট ছিল, মি: ফোস্টার যার বিচারক ছিলেন। ৫ আগস্ট ১৭৮৮ তারিখে মহকুমা কোর্ট যশোরের মুরলিতে স্থানাস্তরিত হয়। এটি বাংলার প্রথম মহকুমা। ১৮৬৪ সালে যশোর মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয়। অনেক ভাঙ্গা-গড়ার স্বাক্ষী হয়ে যশোর আপন ঐতিহ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুড়লিতে থানার পত্তন হয় ১৭৮২ সালে। সেকালে প্রশাসনিক একক ছিল থানা।
ভূ-গোলকে ২১’ ৪৫” - ২৩’ ৪৫” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯’ ১৫” - ৮৯’ ৫৫” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ভূ-ভাগই যশোর। আদি যশোরের আয়তন ছিল ১৪৫৬০ বর্গ কিলোমিটার (৫৬০০ বর্গ মাইল) যার মধ্যে ৪৪৬১’৬ বর্গ কিলোমিটার (১৭৬০ বর্গ মাইল) সুন্দরবন।
বর্তমান জেলা যশোর-ঝিনাইদহ-মাগুরা-নড়াইল-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা এবং কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের অংশ বিশেষ এবং পশ্চিম বাংলার বনগাঁ মহকুমা যশোর রাজ্যভুক্ত ছিল। খুলনা মহকুমা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ ১৮৮২ খৃ: যশোর জেলা হতে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র জেলায় উন্নীত হয়। এই কালপর্ব থেকে প্রাক-পাকিস্তান পর্বে যশোর জেলার আয়তন ছিল ৭৬৫০ বর্গ কিলোমিটার (২৯২৫ বর্গ মাইল)। কথিত কালপর্বে যশোর সদর (১৭৮৮), বনগাঁ ও মাগুরা (১৮৪৫), নড়াইল (১৮৬১) এবং ঝিনাইদহ (১৮৬২) এই পাঁচটি মহাকুমা যশোর জেলাধীন ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হল। বনগাঁ বাদ দিয়ে অন্য চারটি মহকুমা নিয়ে গঠিত হলো বৃহত্তর যশোর জেলা। যশোর জেলায় যুক্ত হলো বনগাঁর শার্শা ও মহেশপুর থানা। একালে যশোরের আয়তন হলো ৬৫৭৯২ বর্গ কিলোমিটার (২৫৪৭ বর্গ মাইল)। ১৯৮২ সালে সামরিক সরকার প্রধান জনাব এইচ এম এরশাদ প্রশাসন গণমুখী করার লক্ষ্যে থানাকে উপজেলায় এবং মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন। ঝিনাইদহ জেলা হয় ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে এবং মাগুরা ও নড়াইল জেলা হয় ১ মার্চ ১৯৮৪ সালে মহকুমা হতে জেলায় উন্নীত করা হয়। জেলা ঘোষণার পূর্বে থানাসমুহ উপজেলায় উন্নীত হয়। বর্তমান যশোর জেলার আয়াতন ২৫৬৭.৭৭ বর্গ কিলোমিটার (৯৮৭.২২ বর্গ মাইল)।
ভৌগোলিক অবস্থান :
২৫৭৮.২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট যশোর জেলা উত্তরে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা, পূর্বে নড়াইল ও খুলনা জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত।
আবহওয়া ও জলবায়ু :
বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ১১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৫৩৭ মিলিমিটার।
নদ-নদী ও বিল :
উল্লেখযোগ্য নদীসমূহের মধ্যে রয়েছে ভৈরব, কপোতাক্ষ, মুক্তেশ্বরী, বেতনা, চিত্রা, হরিহর, শ্রীনদী, টেকানদী, কোদলী নদী, ভদ্রা নদী এবং ইছামতি নদী।
উল্লেখযোগ্য বিল আছে ৩টি।
শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা :
১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর পৌরসভা। ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত যশোর শহর ৯টি ওয়ার্ড ও ৭৩টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। শহরের আয়তন ২৫.৭২ বর্গ কিলোমিটার।
শহরের মোট জনসংখ্যা ১২ লক্ষ (প্রায়)। এর মধ্যে পুরুষ ৫২.৯৭% এবং মহিলা ৪৭.০৩%। শহরের লোকদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৫৬.৫৭%। শহরের একটি ডাকবাংলা রয়েছে।
প্রশাসন :
১৭৮১ সনে যশোহর জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭টি পৌরসভা, ৩৬টি ওয়ার্ড, ৮টি উপজেলা, ৯২টি ইউনিয়ন, ১৩২৯টি মৌজা, ১৪৩৪টি গ্রাম এবং ১২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত যশোর জেলা। উপজেলাগুলো হচ্ছে- অভয়নগর, বাঘারপাড়া, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, কেশবপুর, যশোর সদর, মনিরামপুর এবং শার্শা।
সংসদীয় এলাকা :
যশোরের সংসদীয় এলাকার সংখ্যা ০৬ টি। শার্শা (যশোর-১), ঝিকরগাছা ও চৌগাছা (যশোর-২), যশোর সদর (যশোর-৩), অভয়নগর ও বাঘারপাড়া (যশোর-৪), মনিরামপুর (যশোর-৫), কেশবপুর (যশোর-৬)।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ :
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (সাহিত্যিক), রাধাগোবিন্দ চন্দ্র (জ্যোতিষ্ক বিজ্ঞানী), শিশির কুমার ঘোষ (বিল্পবী), প্রফেসর মো: শরীফ হোসেন (শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক), সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান), ড. এম শমশের আলী (পরমানু বিজ্ঞানী), ড. মো: মনিরুজ্জামান (সাহিত্যিক), মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ (সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত), আব্দুর রউফ (সাহিত্যিক), গোলাম মাজেদ (সাংবাদিক), মো: রফিকউজ্জামান (গীতিকার), রিয়াজ (অভিনেতা), ববিতা (আভিনেত্রী), সুচন্দা (আভিনেত্রী), চম্পা (আভিনেত্রী), সন্ধ্যা রায় (আভিনেত্রী), শাবনুর (আভিনেত্রী), প্রণব ঘোষ (সঙ্গীত পরিচালক) প্রমুখ।
প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন :
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে চাঁচড়া রাজবাড়ী, কালী মন্দির, গাজী কালুর দরগা, সিদ্দিরপাশার দীঘি ও মন্দির, রাজা মুকুট রায়ের রাজবাড়ীর অবশিষ্ট অংশ (দ্বাদশ শতক), নওয়াব আলী জুমলার বাসভবন (সপ্তদশ দশক), মুড়লীতে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কর্তৃক নির্মিত ইমাম বাড়ী।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলী :
যশোর জেলা প্রাচীন সমতট জনপদের অধিকারভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর যশোর জেলাও আংশিকভাবে বিভক্ত হয়। বনগাঁ ও গাজীঘাটা ছাড়া পুরো জেলাটিই পূর্ব পাকিস্তানের অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ যশোহর সেনানিবাসে কর্মরত বাঙ্গালী সৈন্যরা পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন ও লেফটেন্যান্ট আনোয়ারের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহে প্রায় তিন’শ সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মেশিন গান দিয়ে চাঁচড়ায় পঞ্চাশজন পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন ৫টি। গণহত্যার স্থান ১টি, স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র ১টি।
দর্শনীয় স্থান :
সাগরদাড়ী (মাইকেল মধুসূদনের জন্মস্থান), ক্ষনিকা পিকনিক কর্ণার (খানজাহান আলী কর্তৃক খননকৃত) ও মির্জানগর।
জনসংখ্যা :
জেলার মোট জনসংখ্যা ২৫ লক্ষ (প্রায়)। এর মধ্যে পুরুষ ৫১.২২%, মহিলা ৪৮.৭৮%, মুসলমান ৮৬.৫%, হিন্দু ১৩.২১% এবং অন্যান্য ০.২৯।
সাক্ষরতা :
গড় সাক্ষরতা ৩৩.৪%। এর মধ্যে পুরুষ ৪০% এবং মহিলা ২৫.১%।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :
মসজিদ ২৯৩৬টি, মন্দির ৩৩৭টি, গীর্জা ১৯টি, সমাধি ৮টি এবং পবিত্র স্থান ৪টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কাস মসজিদ (নিউমার্কেট), ক্যাথলিক চার্চ, মাড়ুয়া মন্দির, হযরত গরীব শাহের সমাধি, হযরত বোরহান শাহের সমাধী (কারবালা) এবং হযরত শাহ আব্দুল করিমের সমাধী (খড়কী)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
মহাবিদ্যালয় ৭৫টি; উচ্চ বিদ্যালয় ৩৪৭টি, জুনিয়র স্কুল ১৬টি, কমিউনিটি স্কুল ১৩টি, মাদ্রাসা ৫১৯টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০১৮টি এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ১টি। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮), মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪২), ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, সরকারী সিটি কলেজ, সরকারী মহিলা কলেজ ও দাউদ পাবলিক স্কুল।
সাংস্কৃতিক সংগঠন :
ক্লাব ১৯৮টি, থিয়েটার গ্রুপ ২৪টি, থিয়েটার মঞ্চ ৫টি, সিনেমা হল ১৯টি, গণগ্রন্থাগার ১১টি, মহিলা সংগঠন ১৬টি, যাত্রা দল ৬টি।
স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সংবাদপত্র ও সাময়িকী :
দৈনিক রানার (প্রায় বিলুপ্ত), দৈনিক লোকসমাজ, দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক স্পন্দন, দৈনিক দেশ হিতৈষী, দৈনিক পূরবী, দৈনিক কল্যাণ (বিলুপ্ত), দৈনিক যশোর (বিলুপ্ত) ও সাপ্তাহিক কপোতাক্ষ (বিলুপ্ত) ।
প্রধান পেশা :
কৃষি নির্ভর ৩৯.৪৮%, কৃষি শ্রমিক ২৪.৩৬%, মজুরী শ্রমিক ২.৬৮%, ব্যবসা বাণিজ্য ১১.৯৯%, চাকুরী ৮.৬৬%, শিল্প ১.৪১%্, পরিবহন ৩.১১% এবং অন্যান্য ৮.৮১%।
আবাদি জমি :
মোট আবাদী জমির পরিমান ১,৯৭,০৫৪ হেক্টর।
প্রধান অর্থকারী ফসল :
ধান, পাট, আখ, গম, শবজী, কাঁঠাল, খেজুরের গুড়, ফুল ইত্যাদি। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত শস্যের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জাতের ধান, তামাক ও মসীনা।
প্রধান ফল :
খেজুর, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, লিচু এবং নারিকেল।
যোগাযোগ ব্যবস্থা :
পাকা সড়ক ৪৫৫.৪৮ কি: মি:, আধা পাকা ১৬৩.৮২ কি: মি: এবং কাঁচা রাস্তা ৩৬২৮.৬৯ কি: মি:। জলপথ ৭০ নটিক্যাল মাইল, রেলওয়ে ৪৮ কি: কি: এবং বিমান বন্দর ১টি।
ঐতিহ্যবাহী পরিবহন :
পাল্কী ও গরুর গাড়ী। এ ধরনের পরিবহন হয় বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত।
শিল্প প্রতিষ্ঠান :
মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২৯৭টি। এর মধ্যে বড় ৮টি, মধ্যম ৯৮০৮টি এবং কুঠির ২৪৮১টি। উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বস্ত্র কল, বলপেন কারখানা, চিরুনী ও বোতাম কারখানা, প্লাষ্টিক কারখানা, বিস্কুট কারখানা, তেল কল, চাউল কল ইত্যাদি। কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত, বাঁশের কাজ, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুতকারী, কাঠের কাজ ও দরজী।
হাট, বাজার ও মেলা :
মোট হাট ও বাজারের সংখ্যা ১৫৯টি এবং মেলা ১৫টি।
প্রধান রপ্তানি দ্রব্য :
তুলা, পাট, চামড়া, কাঁঠাল, কলা, চিরুনী, খেজুরের গুড়, তরিতরকারী এবং মৎস পোনা।
এনজিও তৎপরতা :
তৎপরতা চালাচ্ছে এমন এনজিওগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, প্রশিকা, জাগরণী চক্র, আলো, সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বাঁচতে শেখা এবং নিজে করি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র :
হাসপাতাল ২টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৮টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭৪টি, বেসরকারী ক্লিনিক ১১টি, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ১৪টি।
যশোরের নদীগুলো যেসব উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে :
ভৈরব যশোর সদর, অভয়নগর চৌগাছা।
কপোতাক্ষ চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর।
মুক্তেশ্বরী যশোর সদর, মনিরামপুর, চৌগাছা
বেতনা শার্শা, ঝিকরগাছা
চিত্রা বাঘারপাড়া
হরিহর মনিরামপুর, কেশবপুর
শ্রীনদী মনিরামপুর, অভয়নগর
টেকানদী মনিরামপুর, অভয়নগর
কোদলী নদী শার্শা
ভদ্রা নদী কেশবপুর
ইছামতি নদী শার্শা
তথ্য সূত্র :
বাংলা পিডিয়া ওয়েবসাইট
ও
যশোর-খুলনার ইতিহাস
অনুবাদ :
কামাল নাসের, আরটিভি।
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট :
নভেম্বর ২০১১