
Home যশোর জেলা / Jessore District > ঝিকরগাছা উপজেলা / Jhikargachha Upazila
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100269 বার পড়া হয়েছে
ঝিকরগাছা উপজেলা / Jhikargachha Upazila
Jhekorgacha Upazila, Jessore
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
ঝিকরগাছা অনেক কারণে খ্যাত। মাগুরা গ্রামের জমিদার ঘোষ পরিবারের পরিচয়ই যথেষ্ট। ১৮৬৮ সালে বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র এই মাগুরা গ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়। ঘোষ বংশের বিপ্লবী শ্রী শিশির কুমার ঘোষ উপমহাদেশে সুপরিচিত। নীলচাষ উচ্ছেদ যার ভূমিকা ছিল অনন্য। সমাজসেবী শ্রী

১৮০০ সালে জেনকিন সাহেব গদখালীতে একটি নীলের কারখানা খুলে এলাকাটিকে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণে ভূমিকা রাখেন। পরে ম্যাকানজি সাহেব ঐ কারখানার বা তৎস্থলে নতুন কোন কারখানা গড়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেন। ম্যাকানজিকে ঝিকরগাছার রূপকার বলা হয়। এককালে ঝিকরগাছা নাম ছিল ম্যাকেঞ্জিগঞ্জ। অনেকের জানা ঝিকরগাছা সড়ক ত্রিমোহনী-চৌগাছা চিরে কোটচাঁদপুরকে যুক্ত করেছে।
ঝিকরগাছার ঐতিহাসিক ঝুলন্ত ব্রীজটি নেই। তার উত্তরসুরী সংস্কারকৃত ব্রীজটি টিকে আছে। কালিবাবু সড়ক যশোরবাসীর কাছে অপরিচিত নয়। তাঁর জনহিতকর কার্যাবলী তাঁকে অমর করে রেখেছে। ঝিকরগাছা ঝুলন্ত ব্রীজ এবং বনগাঁ ইছামতি ব্রীজ কালীকান্ত রায়ের অর্থে নির্মিত হয়। ১৮৪৬ সালে কালী বাবুর ৯০০০ টাকায় সরকার কপোতাক্ষ নদীতে ঝুলন্ত ব্রীজটি নির্মাণ করেছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৮৪৬ সালে দুর্গাপূজার নিরঞ্জন দিনে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় জনভারে ব্রীজ ভেঙ্গে লোক নিহত হয়। পরে ব্রীজটি মেরামত করে চালু করা হয়। যশোর-বনগাঁ পিচের রাসত্মা ১৮৬৬-৬৮ কালপর্বে নির্মিত হয়। রেল চালু হয় পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে। নদী পথেও যোগাযোগ ছিল কলকাতার সাথে। ভৈরব নাব্যতা হারাবার পর জলপথ বন্ধ হয়ে যায়।
ঝিকরগাছাধীন গদখালী অতীতে একটা নীল কারখানার কারণে প্রসিদ্ধ ছিল। ১৮৬৩ সালে কপোতাক্ষের পশ্চিম পার যখন যশোর জেলা ভুক্ত হয়, তখন গদখালীতে থানা পত্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। পানীয় জলের অভাবে থানা যশোরের দিকে ২ মাইল এগিয়ে আসে। স্থাপিত হয় বেনেয়ালীতে। পরিচিতি থাকে গদখালী থানা। চাঁচড়ার রাণী কালেশ্বরী ঐ অঞ্চলে বেশকটি পুকুর খনন করেন পানীয় জলের অভাব দূরীকরণে। বর্তমান থানাস্থল সুদুর অতীতে প্রকাশ্য ছিনতাইস্থল ছিল। ১৮০০ শতকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমস উইন্টলির ২১ আগস্ট পত্রে জানা যায়, যশোর-কলকাতা সড়কে ‘বেনেয়ালী’ ছিল ডাকাতদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তৎকালীন ঝিকরগাছা ও শার্শা থানা ছিল দুটি জেলার সীমান্ত এলাকা। ঐ অঞ্চলে তখন ব্যাধ বা শিকারী সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করত। অন্ধকার রাতে তারা চুরি করত এবং জোৎস্না রাতে বাড়ীতে থাকত। যশোর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভয়ে যশোর ছেড়ে নদীয়া, ২৪-পরগণা এমনকি হুগলিতে তারা তাদের ব্যবসা চালাতো। বহনযোগ্য দ্রব্যাদি যেমন সোনা, রূপা, টাকা তাঁরা চুরি করতো। চুরি করা দ্রব্য হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত সেগুলি তারা বাড়ীতে পুতে রাখত। ১৮৫২-৫৪ কালপর্বে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিনফোর্ট এর সাহসিকতাপূর্ণ পদক্ষেপে তারা নদীয়া জেলায় যেতে বাধ্য হয়।
জিনকার সাহেবের নাম ধরে ঝিকরগাছার নাম এসেছে বলে মনে হয়। গত শতকের চতুর্থ দশকেও ঝিকরগাছা শব্দটি ছাপাকারে পুস্তকে দেখা যায়। জেলা শহর হতে ঝিকরগাছার দুরত্ব ১১ মাইল।
ভৌগোলিক অবস্থান :
৩০৭.২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ঝিকরগাছা উপজেলা উত্তরে চৌগাছা, দক্ষিণে কলারোয়া, পূর্বে যশোর সদর ও মনিরামপুর এবং দক্ষিণে শার্শা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা :
ঝিকরগাছা শহর কপোতাক্ষ নদীর তীরে অবস্থিত। ৯টি ওয়ার্ড ও ১৪টি মহল্লা নিয়ে শহরটি গঠিত। ১৯৮৮ সালে ঝিকরগাছা পৈরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। শহরের আয়তন ১৬.৩৪ বর্গকিলোমিটার।
শহরের জনসংখ্যা ২৭৮২৩ জন। পুরুষ ৫০.৮৮%, মহিলা ৪৯.১২%। শহরের লোকের সাক্ষরতার হার ৪৮.৩%। শহরের একটি ডাকবাংলা রয়েছে।
নদ-নদী :
ঝিকরগাছার প্রধান নদী কপোতাক্ষ ও বেতনা।
প্রশাসন :
১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঝিকরগাছা থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১১টি ইউনিয়ন, ১৬৪টি মৌজা এবং ১৭৯টি গ্রাম নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান জনাব মো: আবদুর রশিদ। জেলা সদরের বাইরে ঝিকরগাছা ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ :
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিল্পবী শিশির কুমার ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালের শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল হোসেন, চিকিৎসক চৌধুরী হাবিবুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, লেখক হোসেন উদ্দিন হোসেন, কুয়েটের শিক্ষক এম. এ. হাসেম, কমরেড দাউদ হোসেন, ব্যন্ড শিল্পী হাসানুর রহমান হাসান, রেল কর্মকর্তা মো: শামসুজ্জামান, ক্রিকেটার সৈয়দ রাসেল প্রমুখ।
স্থাপত্য, ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন :
লাউজনিতে মুকুট রায়ের রাজবাড়ীর ধবংসাবশেষ (১২ শতাব্দী), গাজী কালুর দরগাহ।
ঐতিহাসিক ঘটনা :
নীলচাষি ঝিংকারের নামানুসারে এই উপজেলার নামকরণ করা হয় ঝিকরগাছা। পাক বাহিনীর সাখে সম্মুখ সমরে গোয়ালহাট গ্রামে ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ নিহত হন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে পাক বাহিনী কৃষ্ণপুর আক্রমণ করলে অনেক লোক নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন :
স্মৃতিসৌধ ১টি, গণহত্যার স্থান ১টি।
জনসংখ্যা :
উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২ লক্ষ ৯০ হাজার (প্রায়)। এর মধ্যে পুরুষ ৫১.২৪%, মহিলা ৪৮.৭৬%, মুসলমান ৯৩%, হিন্দু ৫.৭২% এবং অন্যান্য ১.২৮%।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান :
মসজিদ ৩৬১টি, মন্দির ২২ টি, গীর্জা ৭টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কায়েমকোলা মসজিদ, গদখালি কালি মন্দির।
সাক্ষরতা :
গড় সাক্ষরতা ২৭.৭%, এর মধ্যে পুরুষ ৩৫.৩% ও মহিলা ২০.১%।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
কলেজ ৯টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৪৮টি, মাদ্রাসা ৩৩টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭২টি, বেসকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৯টি।
সাংস্কৃতিক সংগঠন :
ক্লাব ৫৮টি, থিয়েটার গ্রুপ ৫টি, সিনেমা হল ১টি, গণগ্রন্থাগার ৩টি, অপেরা দল ১টি ও খেলার মাঠ ২টি।
স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকা সাময়িকী :
সাপ্তাহিক কপোতাক্ষ (বিলুপ্ত)।
প্রধান পেশা :
কৃষি ৪৩.৮৫%, কৃষি শ্রমিক ২৯.৩৩%, মজুরী শ্রমিক ২.৭১%, বাণিজ্য ১০.৪৭%, চাকুরী ৩.৫৬%, শিল্প ১.৫৮%, পরিবহন ২.২১%, এবং অন্যান্য ৬.২৯%।
ব্যবহৃত জমি :
মোট আবাদযোগ্য জমি ২৩৪৬৪.১৮ হেক্টর এবং পতিত জমি ৯৩.০৮ হেক্টর। একক ফসল ১.২৭%, দ্বৈত ফসল ৭৫.৯২%, তিন ফসল ২২.৮১%, সেচের আওতায় চাষযোগ্য জমি ৮৭.২৭%।
ভূমি নিয়ন্ত্রণ :
চাষীদের মধ্যে ২৬% ভূমিহীন, ৫৩% ক্ষুদ্র, ২০% মাঝারী এবং ১% ধনী।
প্রধান অর্থকারী ফসল :
ধান, পাট, গম, ফুল, আলু, তুলা, সুপারী ও বিভিন্ন প্রকার ডাল (প্রায় বিলুপ্ত)।
বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত ফসল :
বিভিন্ন ধরনের ডাল।
প্রধান ফল :
আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে এবং নারকেল।
যোগাযোগ ব্যবস্থা :
পাকা সড়ক ৪৫ কি: মি:, আধাপাকা ৪০ কি: মি: এবং কাঁচা রাস্তা ৮০ কি: মি:, জলপথ ২৮ নটিকেল মাইল এবং রেলওয়ে ১৫.০৫ কি: মি:।
ঐতিহ্যগত পরিবহন :
পালকি ও গরুর গাড়ী। এই ধরণের পরিবহন হয় বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
শিল্প প্রতিষ্ঠান :
মোট শিল্প প্রতিষ্ঠান ১২১০টি। এর মধ্যে ১টি বড় ১২০৯ টি কুঠির শিল্প। উল্লেখযোগ্য শিল্পের মধ্যে রয়েছে ১টি বিড়ি ফ্যাক্টরী ও কোল্ড স্টোর ২টি। উল্লেখযোগ্য কুঠির শিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত, স্বর্ণকার, কর্মকার, কুম্ভকার, কাঠের কাজ, দর্জি এবং ওয়েলডিং।
হাট, বাজার ও মেলা :
হাট বাজারের মোট সংখ্যা ৩৬টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছুটিপুর, কায়েমকোলা, বাঁকড়া ও গদখালির হাট এবং ঝিকরগাছা গরু ছাগলের হাট। মোলা ১ টি।
এনজিও তৎপরতা :
কর্মকান্ড চালাচ্ছে এমন এনজিও হচ্ছে ব্রাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, আরআরসি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র :
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১টি, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ২ টি।
তথ্য সূত্র :
বাংলা পিডিয়া
ও
যশোর ইতিবৃত্ত
(মনোরঞ্জন বিশ্বাস)
অনুবাদ :
কামাল নাসের
আরটিভি
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
মেরিনা ইয়াসমিন (হীরা)
সর্বশেষ আপডেট:
নভেম্বর ২০১১