
Home চিকিৎসক / Medical officer > প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম / Prof. Dr. Mohammad Saiful Islam (1955)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100550 বার পড়া হয়েছে
প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম / Prof. Dr. Mohammad Saiful Islam (1955)
প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
Prof. Dr. Mohammad Saiful Islam
Home District: Jhenaidah
Prof. Dr. Mohammad Saiful Islam
Home District: Jhenaidah

ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ১৯৫৫ সালের ৬ মার্চ ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন এবং মা হাসিনা বানু গৃহিণী। ভাই ডা. মোহাম্মদ রশিদুল হাসান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক। দ্বিতীয় ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ হাসান নাসির। বোন মাসুদা নূসরাত ফাতেমা একজন লোক প্রশাসন বিদ। তার স্বামী বিশ্বব্যাংক ঢাকার একজন সাবেক অর্থনীতিবিদ। ছোট বোন তাসমিয়া তাহমিদ একজন গৃহ ব্যবস্থাপনা বিদ। তার স্বামী জাফর সাদেক একজন রাসয়নিক প্রকৌশলী। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে।
ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে ঢাকার মেয়ে ফাতিমা সুরাইয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী অধ্যাপক ফাতিমা সুরাইয়া হোম ইকেনোমিক্স কলেজের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় মেয়ে তাসমিয়া তাহিয়াত ফাতিমা চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে তাসমিয়া ফাইজা ফাতিমা শেষ পর্বের স্কুল ছাত্রী।
শিক্ষাজীবন:
শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। ১৯৬৫ সালে তিনি ঝিনাইদহ গভমেন্ট হাইস্কুল থেকে প্রাইমারী বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে ১ম ও ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২য় স্থান অধিকার। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকারসহ এম. বি. বি. এস. ডিগ্রী লাভ করেন। প্রথমে ৩ বছর কার্ডিয়াক সার্জারীতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরবর্তীতে সার্জারী বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স এন্ড সার্জনস হতে কৃতিত্বের সাথে এফ. সি. পি. এস. ডিগ্রী লাভ করে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের স্বীকৃতি অর্জন করেন। পরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং সেন্টার থেকে ক্যান্সার সার্জারীতে (Surgery Oncology) ও সুইডেনের বিশ্ব সমাদৃত ক্যারলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে ব্রেস্ট সার্জারী (Surgery Senology) বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও ফেলোশীপ (Fellowship) অর্জন করেন। ২০০০ সালে সিঙ্গাপুরের কে. কে. উইমেন্স এন্ড চিলড্রেন্স হাসপাতাল থেকে শিশু ও নবজাতক সার্জারীর উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল শিক্ষা বিষয়ে এম, এম, এড (MMED) ডিগ্রী অর্জন করেন।
পেশাগত জীবন:
কর্মজীবনের শুরু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করে দুইটি জেলা হাসপাতালে (নাটর ও নরসিংদী) প্রথমবারের মত শল্য চিকিৎসার সূচনা করে প্রান্তিক পর্যায়ে উচ্চতর সেবা সুবিধা সৃষ্টির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চতর সেবা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে একটি মডেল শল্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. উ. কু. কু সেবা কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে জনাব সাইফুল ইসলামকে বিশেষ প্রশংসা করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্রথমবারের মত পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার সার্জারী সেবা কার্যক্রমের সূচনা করে পথিকৃৎ ভূমিকা পালন করেন। নানা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এই পদে বেশীদিন কাজ করার সুযোগ না হওয়ায় ১৯৯৫ সালে তদানীন্তন আইপিজি এম. আন. আর. এ শিশু সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। এখানে যোগদান করেই তিনি শিশু সার্জারী বিষয়ের উন্নতি সাধনে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেন। শিশুদের ব্যাথামুক্ত শল্য সেবা প্রদান, অপ্রয়োজনীয় জীবনু নাশকের প্রয়োগ পরিহার করে শল্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, ব্যায় সংকোচন ও দ্রুততম সময়ে সেবা সংগঠন করে তিনি স্বাস্থ্য সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেন। বর্তমানে তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকীকরণ ও তার মান উন্নয়নে তিনি পূর্বাপর তৎপর ভূমিকা পালন করেন। ২০০৫ সালে তিনি বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স এন্ড সার্জন্স এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এই প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম মূল্যায়ন ধারায় ব্যাপক আধুনিকতা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে নানান উপকরণের যোগান দেন। তিনিই প্রথম বারের মত এই দেশে আধুনিক মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম মূল্যায়ন বা Educational Assasment এ OSPE OSCE Objective Structerd Practical ও Clinical Examication এর মত বাস্তব ভিত্তিক, কাঠামো বিন্যাসিত ও বস্তুনিষ্ট ধারনা পদ্ধতির প্রয়োগ করেন। এছাড়াও সামগ্রিক মূল্যায়ন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করণে ও জবাবদিহী স্থাপনের নানা পদ্ধতির প্রচলন করেন। সর্বোপরি ২০০৫ সালে দেশে সর্বপ্রথম কোন প্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রোনিক ম্যানেজমেন্টের Electronic Examination Management System প্রচলন করে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রচলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। মেডিকেল উচ্চতর শিক্ষা উন্নতি কল্পে তিনি ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সার্জারী ফ্যাকাল্টির ডীন নির্বাচিত হন। এই পদে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনিই সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি এই সংক্রান্ত বিধি বিধান প্রণয়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকতার জীবনে তার নানা উজ্বল ও পথিকৃৎ আবদানের মধ্যে সর্বপ্রধান হল দেশের উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত মতাদর্শগত সংস্কারে প্রধান ভূমিকা পালন। তিনি ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রচলনকৃত রেসিডেন্সী প্রগ্রামের ফিলোসফার ও ডিজাইনারের দায়িত্ব পালন করে দেশের শিক্ষা জগতে এক নতুন দিনের উন্মেষ ঘটান।
সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড:
জনাব সাইফুল মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশনের অধিনে মেডিকেল শিক্ষা উপ-কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে উক্ত কমিশনের মেডিকেল শিক্ষা বিষয়ক রির্পোট প্রণয়নে মূখ্য প্রণীতা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও জাতীয় স্বাস্থ্য প্রণয়ন কমিটির হাসপাতাল ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন উপ-কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা ব্যবস্থার সংগঠন ও উন্নতি ছাড়াও তিনি নানা সামাজিক ও সেবমূলক কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত। তিনি হেলথ্ কনজিউমার রাইটস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিগত সদস্য ও কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর নির্বাহী সদস্য হিসেবে ভোক্তা আন্দোলনের সাথে একনিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট। এই আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত ভোক্তা আইন প্রণয়ন ও সিটিজেন চার্টারে সেবা গ্রহীতার অধিকার সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সংযোজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তামাক বিরোধী আন্দোলনের ও তিনি একজন একনিষ্ট প্রবক্তা। হেলথ্ ২১ নামক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিন্তাবিদদের সংগঠনের পরামর্শক হিসেবে তিনি স্বাস্থ্য সেবা সংগঠনের ধারণা সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকেন। SIOP এশিয়া সংগঠনের শিশুদের ক্যান্সার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তিনি একজন প্রধান সংগঠক। স্বাস্থ্য সেবা সংগঠনে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Patient Safety বিষয়ে জাতীয় কার্যক্রমের তিনি চেয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। নিজ জেলা শহরে তিনি “শেয়ার” নামক বেসরকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গঠন করে বিনামূল্যে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে:
মো: হাসানূজ্জামান বিপুল
সহযোগিতায়:
বিপ্লব মল্লিক
ওয়াহিদুল ইসলাম
সর্বশেষ আপডেট:
৫ মার্চ ২০১২