
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > সংবাদ সম্মেলন- যশোরকে বিভাগ ঘোষণা ও মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে যুক্ত না করার দাবি।
এই পৃষ্ঠাটি মোট 90673 বার পড়া হয়েছে
সংবাদ সম্মেলন- যশোরকে বিভাগ ঘোষণা ও মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে যুক্ত না করার দাবি।
বৃহত্তর যশোরের নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণা এবং মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সাথে সংযুক্তির প্রচেষ্টার প্রতিবাদে আজ ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাস্থ বৃহত্তর যশোর সমিতি এবং বিভাগ আন্দোলন পরিষদ যৌথভাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৃহত্তর যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর যশোর সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ, নড়াইল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার হুমায়ুন কবির, যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদের আহবায়ক ইঞ্জি. আব্দুস সাত্তার, সদস্য সচিব হাসানূজ্জামান বিপুল, যশোর.ইনফো ওয়েবসাইট সংগঠনের সভাপতি ভবোতোষ মুখার্জী সুবীর, যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী মিশু, বৃহত্তর যশোর সমিতির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী এম. এ. ওহাব, মাগুরা জেলা সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাড. কাজি রেজাউল হোসেন, বৃহত্তর যশোর সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. নুরুল কাদিরসহ আরও অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বৃহত্তর যশোর বাংলাদেশের এক সমৃদ্ধ জনপদ। প্রশাসনিকভাবে যশোরের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিকভাবে শত শত বছর পূর্ব থেকেই যশোরের পৃথক পরিচিতি বিদ্যমান। কিন্তু এহেন যশোর বর্তমানে ক্ষয়িষ্ণু এবং পশ্চাতপদ জেলায় পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে যশোর বিভাগ ঘোষণার যৌক্তিকতা রয়েছে। বৃহত্তর যশোরের ভাষা, কৃষ্টি, কালচার ভিন্ন। বৃটিশ আমলে কোলকাতার পশ্চাতভূমি হিসেবে যশোর ভিন্ন মর্যাদায় আসীন থাকলেও সে মর্যাদা এখন বিলীন হতে চলেছে।
তারা বলেন নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে বৃহত্তর যশোর। বিভাগীয় অনেক অফিস বর্তমানে যশোরে রয়েছে। খুলনা বিভাগের মধ্যবর্তী স্থান হিসেবে যশোর থেকে দেশের যে কোন দূরত্বে দ্রুত যাতায়াত করা যায়। যশোর জেলা খাদ্যশস্য, মাছের পোনা, সবজি, খেজুরের গুড়, ফুল ও গাড়ীর যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বিখ্যাত। বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। নওয়াপাড়া শিল্পনগরী ও নৌবন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোন রয়েছে এই জেলায়। বাংলাদেশের প্রধান ৫টি রাজস্ব প্রদানকারী জেলার একটি যশোর যা খুলনা বিভাগে প্রথম। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলা এবং ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ’র মধ্যে ২ জনই বৃহত্তর যশোরের কৃতি সন্তান। এ সব বিষয় বিবেচনায় এনে যশোরকে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও যশোরের পৃথক পরিচিতির কথা তার অসমাপ্ত আতœজীবনীতে উল্লেখ করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সুষম উন্নয়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা এবং ফরিদপুরকে পৃথক বিভাগ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তারা বলেন, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বৃহত্তর যশোরের অঙ্গ হিসেবে পরিচিত মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সাথে যুক্ত করার জন্য একটি মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাগুরায় সর্বস্তরের জনসাধারণ এই তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। তারা কিছুতেই যশোরকে ছেড়ে ফরিদপুরের সাথে যেতে চাননা।
সাংবাদিক সম্মেলনে বৃহত্তর যশোরের কোটি মানুষের প্রাণের দাবি অনুয়ায়ী নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদ এবং যশোরকে নিয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। একই সাথে মাগুরাকে ফরিদপুরের সাথে সংযুক্তির প্রচেষ্টা ত্যাগ করে বৃহত্তর যশোরের পৃথক পরিচিত বজায় রাখার আহবান জানানো হয়।
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সদস্য সচিব
যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭৯৫৭০৭৬৬৭, ০১৯১২০৭৪১২৬
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
শুরুতেই বৃহত্তর যশোর সমিতি-ঢাকা এর আওতাভুক্ত জেলা সমূহ যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল এবং যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ আপনাদের সামনে বৃহত্তর যশোরের প্রাণের দাবি নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। যশোর আমাদের কাছে শুধু একটি জেলা নয়; এটি যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল এর মানুষের আত্মার বন্ধন, হৃদস্পন্দন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আমরা আজ একই সাথে আশাবাদী এবং উদ্বিগ্ন। আশাবাদী এই কারণে যে, বর্তমান সরকারের নানামুখি উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নির্দেশনা আমাদেরকে আশাবাদী করে তুলেছে। আমরা আশাবাদী হয়ে উঠছি, ১৭৮১ সালে ভারতের প্রথম জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভগের পর থেকে যশোরের কপালে যে অবহেলার চিহ্ন স্থায়ী হতে চলেছে হয়তো এখন সময় এসেছে তার অবসানের। নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ন্যায্যতাভিত্তিক উন্নয়নে বৃহত্তর যশোরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। অন্যদিকে আমরা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, বৃহত্তর যশোরকে নিয়ে পুরোনো চক্রান্তের পাশাপাশি নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে, বৃহত্তর যশোর থেকে এর আওতাধীন জেলা মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের আওতাভুক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, বর্তমান সরকার উন্নয়ন কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রিকরণ করতে দেশের অনেক পুরোনো জেলাকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ সরকারের এই কার্যক্রমের নতুন সংযোজন।
প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ,
যশোর শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন জেলাই নয়, সমগ্র ভারতের মধ্যে প্রথম জেলা। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের বৃহত্তর ১৯ টি জেলার মধ্যে যশোর একটি জেলা হিসেবে স্থান লাভ করে। যশোর শুধু একটি জেলা নয়, যশোর একটি ইতিহাস, যশোর স্বাধীন বাংলাদেশের উৎপত্তিস্থল, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুঁতিকাগার । আপনারা জানেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোর প্রথম জেলা যা পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত হয়েছিলো। ঐতিহাসিক যশোর রোড আজো বিশ্বের ইতিহাসে এক জ্বলজ্বলে নাম। শুধু জর্জ হ্যারিসনের কণ্ঠে নয়, যশোর রোড সমগ্র বিশ্বে মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার নাম। আপনারা নিশ্চয় জানেন, আজকের বিভাগ খুলনা একসময়ে যশোরের একটি মহকুমা বলে পরিচিত যা যশোর জেলা হবার ৬১ বছর পর ১৮৪২ সালে মহকুমা এবং ১০০ বছর পর ১৮৮২ সালে জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু জেলা হিসেবে নয়, পৌরসভা হিসেবেও যশোর অনেক পুরোনো। ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট গঠিত হয় যশোর পৌরসভা। কলকাতা ও হাওড়ার পরেই যশোর পৌরসভার স্থান ছিলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই জেলাটি ভারত বিভক্তের পর থেকে শুধু অবহেলায় সহ্য করেছে। চোখের সামনে নিজের আওতাভুক্ত মহকুমাকে একসময়ে বিভাগ এবং পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা লাভ করতে দেখেছে, আর নিজে হয়েছে রিক্ত। সবচেয়ে হতাশার, আজ যশোরকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণার জন্য দাবি জানাতে হচ্ছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
বৃটিশ আমল থেকে ঐতিহ্যবাহী জেলা হিসেবে প্রশাসনিক অবকাঠামোগত বিচারে যশোর খুব যে পিছিয়ে সেটি বলবো না; বরং বৃটিশ আমল থেকে প্রাচীন অবকাঠামোগুলো আজো যশোরের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। ১৮৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর জিলা স্কুল; যা বাংলাদেশের প্রাচীনতম স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৮৫৪ সালে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এদেশের প্রাচীনতম পাবলিক লাইব্রেরী। ১৮৬৮ সালে যশোরের ঝিকরগাছা হতে শিশির কুমার ঘোষ বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজি পত্রিকা অমৃতবাজার প্রকাশ করেন, যা ছিল কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় ইংরেজি পত্রিকা। ১৮৭৫ সালে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কার্যক্রম শুরু করে। ১৮৮৪ সালে কলকাতা-যশোর রেলপথ নির্মিত হয়। ১৯০১ সালে যশোর সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৮ সালে যশোরে ডাক যোগাযোগ ও মানি অর্ডার চালু হয়। ১৯০৯ সালে যশোর টাউন হল নির্মিত হয়। সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে একই সময়ে টাউনক্লাব ও আর্য থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালে আর্য থিয়েটারের জন্য বি. সরকার মেমোরিয়াল হল তৈরী করা হয়। ১৯২২ সালে যশোরে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল ও হাসপাতাল যা উপমহাদেশে হাতেগোনা কয়েকটির মধ্যে অন্যতম। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যশোর বিমানবন্দর স্থাপিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এই বিমানবন্দর। ১৯৫০ সালে যশোরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৬৩ সালে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড স্থাপিত হয়। ভারত বিভাগের পর যশোরে প্রথম শ্রেণীর সেনানিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেনা সদস্যের বাস। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যশোরের যা কিছু অবকাঠামো তার প্রায় সবই স্বাধীনতাপূর্ববর্তী সময়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বলতে গেলে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো নির্মাণ হয় নি বললেই চলে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যেখানে প্রথম হানাদারমুক্ত জেলা যশোর সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশে এই জেলার প্রতি অবহেলা মহান শহীদদের প্রতি অসম্মানজনক বলেই আমরা মনে করি। শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যশোরের পৃথক পরিচিতির কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা মনে করি, জাতির জনক যেভাবে যশোরকে মূল্যায়ন করেছেন, তাঁর অবর্তমানে বৃহত্তর যশোর সেভাবে মূল্যায়িত হয় নি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলা যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং নড়াইল একটি মালার চারটি ফুল। সকল সুখে-দুঃখে এই চারটি জেলা যশোরের মহকুমা থাকা কালীন সময় থেকে আজ অবধি আত্মিক সম্পর্কে আবদ্ধ। বৃহত্তর যশোর সমিতি, ঢাকা আজো এই চারটি জেলাকে আত্মার বাঁধনে বেঁধে রেখেছে। আমরা জেনেছি, ফরিদপুরকে বিভাগ ঘোষণার জন্য সরকারের মধ্যে পরিকল্পনা চলছে। আমরা সরকারের এই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানাই। তবে, একটি সংবাদ আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে, আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে। আমরা জেনেছি, মাগুরা জেলাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের চিন্তার প্রতিফলন নয়। আপনারা জানেন, ১৮৪৫ সাল থেকে ১৯৮৪ সালের ১মার্চ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত মাগুরা ছিলো বৃহত্তর যশোরের একটি মহকুমা। মাগুরার সাথে যশোরের সম্পর্ক শুধু ভৌগলিক নৈকট্যতার নয় ; বরং মাগুরা ও যশোর কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রভৃতি বিচারে একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাগুরাকে বৃহত্তর যশোর থেকে পৃথক করা হবে বৃহত্তর যশোরের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে হত্যা করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না যা এতদঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে গভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষার কারিগর। এই পরিকল্পনা নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হতে পারেনা, এটি অতিউৎসাহী কিছু ব্যক্তিবর্গের অপচিন্তা ছাড়া কিছুই নয়। সম্প্রতি ইঞ্জিনীয়ার্স ইনস্টিটিউশন-এর সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি উৎসাহী ব্যক্তিবর্গকে সতর্ক করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চেতনায় সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন। তিনি নিশ্চয় সমগ্র বাংলাদেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। আশা করি, প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী জেলা হিসেবে বৃহত্তর যশোর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক পদক্ষেপের সুফল লাভ করবে, মাগুরাকে বৃহত্তর যশোর থেকে আলাদা করে ফরিদপুর কিংবা অন্য কোন বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত করা হবেনা।
প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ,
আপনারা জানেন, চারটি জেলা নিয়েও সুপ্রতিষ্ঠিত বিভাগ বাংলাদেশে রয়েছে। নীল বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলন, তেঁভাগা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, বিধবা বিবাহ আন্দোলন, সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের সুঁতিকাগার এই যশোর জেলা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে খুলনা বিভাগে এগিয়ে আছে বৃহত্তর যশোর জেলা। সুতরাং যেসব যুক্তিতে অন্যান্য জেলাকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা হিসেবে বিভাগ করার পরিকল্পনা চলছে সেসব যুক্তি ও যোগ্যতার সকল কিছুই বিদ্যমান বৃহত্তর যশোরে। সরকারের চলমান এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যশোরকে বিভাগ ঘোষণা বৃহত্তরের যশোরের প্রাণের দাবি। এরই প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর যশোর ওয়েবসাইট (www.jessore.info)-এর অংগ সংগঠন “যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ” দীর্ঘদিন ধরে যশোরকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলা যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং মেহেরপুরকে অন্তর্ভুক্ত করে যশোরকে বিভাগ ঘোষণার জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
বাংলাদেশের প্রধান ৫টি রাজস্ব প্রদানকারী জেলার একটি যশোর যা খুলনা বিভাগে প্রথম। এই জেলায় বর্তমানে রেলওয়ে জংশন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, দু’টি কাস্টমস কমিশনার কার্যালয়, কেন্দ্রীয় কারাগার, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, সেনা গ্যারিসন, বিমান ঘাঁটি, বিজিবি’র দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিওনাল সদর দপ্তর, তিনটি মেডিকেল কলেজ, বিসিক শিল্পনগরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত অবিভক্ত বাংলার প্রথম বারভবনসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকটি বিভাগীয় কার্যালয় রয়েছে। যশোরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে আকাশপথ, নৌপথ, সড়ক ও রেলপথে রয়েছে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। নওয়াপাড়া শিল্পনগরী ও নৌবন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোন রয়েছে এই জেলায়, যার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান। এছাড়া এই জেলার রয়েছে পৃথক পরিচিতি। এখানকার অধিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার ব্যবহারে ভিন্নতা রয়েছে। যশোর জেলা খাদ্যশস্য, মাছের পোনা, সবজি, খেজুরের গুড়, ফুল, গাড়ীর যন্ত্রাংশ, সবজী উৎপাদনে বিখ্যাত । যশোরের ৩ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার ১১ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন ধান ও গম উৎপাদিত হয়। ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৫ লাখ মেট্রিক টন সবজি ফলে। এক হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ৩শ’ কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। এই ফুল দেশের সব জেলায় যায়। মাছ উৎপাদনে যশোর আরও এগিয়ে। ৪১ হাজার চাষযোগ্য জলাশয় ও ১৯ হাজার উন্মুক্ত জলাশয়ে বছরে মাছ উৎপাদিত হয় ২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। যশোরের ভাত-মাছ খেয়ে অনেক জেলার মানুষ বেঁচে আছে। মরমি কবি ফকির লালন শাহ, কবি ফররুখ আহমেদ, কবিয়াল পাগলা কানাই, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, লেখক ডা. মোঃ লুৎফর রহমান, কবি গোলাম মোস্তফা, চিত্র শিল্পী এস. এম. সুলতান, নিহার রঞ্জন গুপ্ত, ওস্তাস রবি শঙ্কর, কবি কাজী কাদের নওয়াজসহ অসংখ্য গুণি মানুষের জন্ম এই বৃহত্তর যশোরে যারা বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে উজ্জ্বল করেছে। সর্বোপরি, বৃহত্তর যশোরের ঐতিহ্য, অবদান, প্রশাসনিক অবকাঠামো, ভৌগলিক অবস্থান ও প্রয়োজনীয়তা এবং মানুষের প্রাণের দাবিকে বিবেচনা করে যশোর বিভাগ হিসেবে মর্যাদা পাবার জন্য সর্বোচ্চ বিবেচনার দাবি রাখে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনারা জাতির অমূল্য সম্পদ। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় জীবনের যেকোন প্রয়োজনে আপনারা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। আশা করছি, বৃহত্তরের যশোরের মানুষের প্রাণের দাবির প্রতি আপনারাও সংবেদনশীল। এই দাবি শুধু আবেগের নয়, এটি সময়োপযোগী এবং অপরিহার্য। বৃহত্তর যশোরের গণমানুষের এই দাবিকে আপনারা আপনাদের গণমাধ্যমের দ্বারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ নীতি নির্ধারণী প্রর্যায়ে পৌঁছে দিবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা ইতিমধ্যেই বৃহত্তর যশোর সমিতি, ঢাকা এবং যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে বৃহত্তর যশোরের প্রতিটি জেলায় গণপ্রচারণা, মানববন্ধন, সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানামুখি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। আশা করি, আমাদের সকল কর্মকান্ডে আপনাদের ঐকান্তিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পরিশেষে আপনাদের ঐকান্তিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে আপনাদের মাধ্যমে বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলা যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলকে নিয়ে যশোর বিভাগ ঘোষণা এবং মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের আওতাভুক্ত না করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদান্তে,
বৃহত্তর যশোর সমিতি, ঢাকা ও
যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ।