
Home সাংবাদিক / Journalist > শামসুর রহমান কেবল / Shamsur Rahman Cable (1957-2000)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100015 বার পড়া হয়েছে
শামসুর রহমান কেবল / Shamsur Rahman Cable (1957-2000)
শামসুর রহমান কেবল
Shamsur Rahman Cable
Home District: Jessore, Sharsha
Shamsur Rahman Cable
Home District: Jessore, Sharsha

সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ৫মে শার্শা থানার শালকোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম সোহরাব উদ্দিন, মাতার নাম-মোছাঃ খাইরুন্নেছা বেগম।
শিক্ষাজীবন:
শামসুর রহমান কেবল ১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দে এস. এস. সি ও ১৯৭৪ খ্রীষ্টাব্দে এইচ. এস. সি পাশ করেন। ১৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনার্স এবং ১৯৭৮ খ্রীঃ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন।
পেশাগত জীবন:
কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন উপ-সম্পাদকীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ক লেখা দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮০-১৯৮১ সালে দৈনিক ঠিকানার (যশোর) স্ট্যাফ রিপোর্টার, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে দৈনিক বাংলার নওয়াপাড়া নিজস্ব সাংবাদিকতা, ১৯৮৪-১৯৮৬ সালে তিনি দৈনিক বাংলার যশোর এর নিজস্ব সংবাদদাতা, ১৯৮৬ (নভেম্বর) ১৯৯৩ সালে দৈনিক বাংলার স্ট্যাফ রিপোর্টার ও সিনিয়ার রিপোর্টার, ১৯৯৩ (নভেম্বর) দৈনিক বাংলার জেলা ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং সাল থেকে তিনি জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলায় নিয়মিত রাজনীতি, সমাজ অর্থনীতি, ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত রিপোর্ট ও বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আন্তর্জাতিক বিভাগে ভারতীয় রাজনীতির উপর তাঁর প্রায় পাঁচ শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় বিভিন্ন বিভাগে তিনি নিয়মিত লিখতেন।
জীবন ডায়েরীর শেষ অধ্যায়:
প্রতিদিনের মতই অফিসে আসেন শামছুর রহমান। টেলিফোনে কথা বলেন বড় মেয়ে সেজুতি রহমানের সাথে। খবর নেন টিভির রিমোটটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা। তারপর কথা বলার চেষ্টা করেন দু’বছর বয়সী ছো্ট মেয়ের সাথে। স্ত্রীকে বলেন ‘শরীর ভাল লাগছে না, খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো ’বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এটিই ছিল তাঁর ঘোপস্থ বাসায় করা সর্বশেষ টেলিফোন। এরপর তিনি রিপোর্ট লিখেছেন। টেলিফোনে কথাও বলেন সহকর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে। প্রত্যেককেই বলেন, আপনার সাথে কথা আছে পরে আবার ফোন করবো। রাত সোয়া ৮টার পর তিনি অফিসের কর্মচারী জাকিরকে বাসায় পাঠান পারিবারিক কাজে। আর ছোট ভাই সাজেদুর রহমান বকুলকে পাঠান অফিসের সামনে অবস্থিত পত্রিকা এজেন্সির মেসার্স এজাাহার আলী থেকে গত জুন মাসের পত্রিকার রশিদ আনতে। বকুর চলে যাওয়ারপর শামছুর রহমান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বরাবর একটি চিটি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি ঐ চিঠিটি আর শেষ করতে পারেননি। চিঠির ওপরে বিষয় জুন ২০০০ মাসের অসমাপ্ত এ বাক্যটি লেখা। সম্ভবত এ সময়েই ঘাতকরা শামছুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে গুলি করে। রশিদ আনতে যাওয়ার মিনিট তিনেক পর বকুল দেখতে পান মর্মান্তিক দৃশ্য। তার বড় ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহটি পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে ঘরের মেঝে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ বকুলের আর্ত চিৎকারে এগিয়ে আসেন অন্যান্যরা। তারা ধরাধরি তরে নিয়ে যান অফিসের সম্মুখস্থ যশোর জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা বিফল হয়ে যায়। পেশাদার খুনি চক্রের ছোঁড়া বুলেট অনেক আগেই তাঁর প্রাণ প্রদীপ নিভিয়ে দেয়।
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অভিসপ্ত জনপদ একজন কলম সৈনিকের রক্তে রক্তাক্ত হল। হতভাগ্য এই সাংবাদিক শামসুর রহমান যিনি দক্ষিণ পশ্চিামাঞ্চলের সাংবাদিকতার জগতে চলমান কম্পিউটার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাঁর মেধার পরিচয় দিয়ে একটি মফস্বলের জেলা শহরে থেকেও সাংবাদিকতায় সাফল্য অর্জন করেছিলেন। অন্যায়, অনাচার, দূর্নীতি ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল সর্বদা সোচ্চার। সেই কলম আর চলবে না, চিরদিনের জন্য তার কলম থেমে গেছে। ঘাতকের তপ্ত বুলেট অকুতভয় সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলের কলম স্তব্ধ করে দিল।
ফ্ল্যাশ ব্যাক ঃ প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমানকে কারা হত্যা করেছে, তাও বলা কষ্ঠসাধ্য। কারণ শুধুমাত্র লেখালিখির কারণে তাঁর শত্রু সংখ্যা এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, এখন এই হত্যাকান্ডের জন্যে কোনো মহলকে সন্দেহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশ, বিডিআর থেকে শুরু করে সব ধরণের সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তৎপর চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী চক্রগুলোর বর্তমান ও অতীত কর্মকান্ড লিখে এবং তাদের সমর্থনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লেখা তার বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্ট পুলিশের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিত। ঠিক তেমনি চোরাচালান দমনের নামে সীমান্ত এলাকায় বি. ডি. আর যে লুটপাট চালাতো তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর কারণে বি. ডি. আর তা সহ্য করতে পারতো না। এ সমস্ত কারণে ক্ষমতাসীন দলের এ অঞ্চলের অনেক নেতারাও তাঁর ওপর রুষ্ট ছিলো। অর্থাৎ তিরি বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও চাপের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু শামছুর রহমান তাতে দমেননি। হাজারো ভয়ভীতি ও জীবননাশের পরও তিনি কলম চালিয়ে গেছেন সমানতালে। এই অবস্থায় গত ২৫ জুন ঘটে এক রহস্যময় ঘটনা। বি. ডি. আরের সোর্স পরিচয় দানকারী সেলিম রেজা নামে এক যুবক জনকন্ঠ অফিসে এসে যশোরস্থ ৩২ রাইফেল ব্যাটালিয়নের পক্ষে একটি রিপোর্ট লিখতে দেন। এরপরেই তার দাবি বর্তমান সি. ও চোরাচালান দমনে কঠোরতা অবলম্বন করায় এ সীমান্তে চোরাচালান দমন অনেকাংশে কমে গেছে। যে কারণে বিশেষ মহল তাকে যশোর থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। সেলিম রেজা বলেন, এ ব্যাপারে যদি তিনি জনকন্ঠে একটি রিপোর্ট করেন তাহলে ভাল হয়। শামছুর রহমান কথিত সোর্সকে বলেন, তাঁকে তথ্য দিলে তিনি রিপোর্ট করে দেবেন। এরপর ঐ যুবক চলে যায় এবং বিকালে পুনরায় আসে। এসে শামছুর রহমানের হাতে একটি খাম ধরিয়ে দেয়। খাম খুলে শামছুর রহমান তার মধ্যে বি. ডি. আর কর্তৃক মালামাল আটকের কিছু পরিসংখ্যান, কঙ্কাল পাচারের ছবি ও ৫ হাজার টাকা দেখতে পান। খামের ভিতর টাকা কেন জানতে চাইলে সেলিম রেজা জানায়, অধিনায়ক স্যারের দিকে একটু খেয়াল দেবেন। ক্যাপ্টেন আমিনুল স্যার এ টাকা দিয়েছেন। এরপর তিনি টাকাসহ সেলিম রেজাকে পুলিশে সোপর্দ করতে চাইলে সেলিম রেজা মুচলেকা দিয়ে রেহাই পায়। বিষয়টি যশোরস্থ ৩২ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আব্দুস সালামকে জানালে তিনি টাকাসহ সেলিম রেজাকে পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন। বিষয়টি অনেক দুর গড়ায় এবং বি. ডি. আরের সাঙ্গে শাসছুর রহমানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
কোট চাঁদপুরের কাজলের হুন্ডি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়েও শামছুর রহমান অসংখ্য রিপোর্ট লেখেন। কাজল গংরা তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কাজলের লোকজন কয়েকবার টাকাসহ তাঁর বাড়ি ও অফিসে যায়। কিন্তু শামছুর রহমান বিক্রি হননি। কাজল গংয়ের প্রস্তাব তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষান করেন এবং লেখনী অব্যাহত রাখেন।
সেই সময়ে খুলনার সন্ত্রাসীদের ওপর জনকন্ঠে সিরিজ রিপোর্ট ছাপা হয়। কয়েকটি রিপোর্ট ছাপা হওয়ায় খুলনার একজন সাংবাদিক সঙ্গে নিয়ে সেখানকার টপ টেররদের অন্যতম একজন (হীরক) শামছুর রহমানের কাছে আসেন। জানা যায় ঐ সন্ত্রাসীদের আচরণের কারণে শামছুর রহমান তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এরপর সে চলে যায়। সামপ্রতিক এ সমস্ত ঘটনাবলী ছাড়াও শামছুর রহমানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল এ অঞ্চলে তৎপর গোপন চরমপন্থি দলগুলো। তথাকথিত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর যে অবর্ণনীয় জুলুম অত্যাচার চালিয়ে আসছে শামছুর রহমানের কলম তার বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্ছার ছিল। সিন্ডিকেটগুলোর গড ফাদাররা। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। পুলিশের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথেও সম্পর্ক ভালো ছিল না। চোরাচালান ও চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতে যেয়েই তিনি তাদের রোষানলে পড়েন। অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা তাঁকে বারবার জীবননাশের হুমকিও দিয়েছে। যা জানেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
তথ্য সূত্র:
সম্পাদনা: হাবিব ইবনে মোস্তফা
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
মার্চ ২০১২