
Home সাংবাদিক / Journalist > শাহীন রেজা নূর / Shaheen Reza Noor (1954)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100122 বার পড়া হয়েছে
শাহীন রেজা নূর / Shaheen Reza Noor (1954)
শাহীন রেজা নূর
Shaheen Reza Noor
Home District: Magura, Salikha
Shaheen Reza Noor
Home District: Magura, Salikha

প্রখ্যাত সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাগুরা জেলার শালিখা থানার শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন এদেশের সাংবাদিক জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা ও কার্য নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শাম্সদের এর সহযোগিতায় যে বুদ্ধিজীবি নিধনযজ্ঞ শুরু হয় তার নির্মম শিকার হন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন। শাহীন রেজা নূরের মা বেগম নূর জাহান সিরাজী ছিলেন একজন গৃহিনী। তিনি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মেয়ে। মামা শামসুদ্দীন মোল্লা ছিলেন আওয়ামীলীগের একজন নেতা ও সংসদ সদস্য। দাদা মৌলভী ইসহাক ১৯৪৮ সালে যশোর জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি মুশিদাবাদ নবাব ইনস্টিটিউশনসহ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজে এম এ ছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় যশোর থেকে ইমাম নামে একটি পত্রিকা বের হতো। বড় চাচা শরফুদ্দীন হোসেন বৃটিশ নেভিতে কর্মরত অবস্থায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পিতা-মাতার ৮ সন্তানের মধ্যে শাহীন রেজা নূর দ্বিতীয়। বড় ভাই-এর নাম শামীম রেজা নূর। পরের ভায়েরা হচ্ছেন ফাহিম রেজা নূর, নাসিম রেজা নূর, সেলিম রেজা নূর, শাহীদ রেজা নূর, জাহীদ রেজা নূর ও তৌহিদ রেজা নূর।
১৯৮২ সালে সাবেক সংসদ সদস্য শামসুদ্দিন মেল্লার মেয়ে খুরশীদ জাহানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী একজন গৃহিনী। বড় ছেলে সৌরভ রেজা নূর ও ছোট ছেলে আবির রেজা নূর দুজনই লেখা-পড়া করছে।
শিক্ষাজীবন:
শিক্ষা জীবনের শুরু হয় ঢাকার লক্ষীবাজারে একরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখা-পড়া করার পর ঢাকার কিশোরী লাল জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত এখানে লেখা-পড়া করার পর ১৯৭০ সালে সিদ্বেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৭৩ সালে জগন্নাথ কলেজ হতে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৭৬ সালে গ্রাজুয়েশন করে বের হন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীতে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে তিনি অল্প কিছু দিনের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নে লেখা-পড়া করতে যান। কর্ম জীবনের মাঝে ২০০১ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রী লাভ করেন।
পেশাগত জীবন:
শাহীন রেজা নূর ১০৭২ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে বার্তা বিভাগে অনুলিপিকারের চাকরী গ্রহনের মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং অল্প দিনের মধ্যে অনুবাদকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে সাংবাদিকতার উপর কমনওয়েলথের উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিকতা বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষন নিতে মালেশিয়াতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে আবার ইত্তেফাকে কাজ শুরু করেন। সেই থেকে একটানা ১৬ বছর ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করার পর ১৯৮৮ সালে তিনি কানাডা যান। সেখানে মন্ট্রিয়াল থেকে বাংলা সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলা প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তাছাড়া ইমিগ্রেশন লয়ারদের সঙ্গেও অনুবাদকের কাজ করেন। কানাডা থেকে দেশে ফিরে আবার দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কর্ম জীবনে দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ বেতার ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগে অনুবাদক হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছেন তিনি।
সাংবাদিক জীবনে তিনি ইরাক যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ, ইন্দিরা গান্ধির ক্ষমতাচ্যুতি, জুলফিকার আলী ভূট্টর ফাঁসিসহ বহু আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রতিবেদন রচনা করে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। জাতীয় রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ের উপরও পত্রিকাতে প্রচুর লেখা-লেখি করেছেন। অনুবাদকের কাজও করেছেন অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পারভেজ মেশারর্ফ-এর লেখা বইটির অনুবাদ ও বিল ক্লিন্টনের আত্নজীবনী, যেগুলো ইত্তেফাকে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সুখস্মৃতি নামে নিজের স্মৃতিকথা মূলক একটি বই এবং বিভিন্ন সময়ে লেখা নিবন্ধের সমন্বয়ে সমকালীন ভাবনা নামে তাঁর একটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছেন।
সামাজিক কর্মকান্ড :
চাকরীর পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। এর মধ্যে অন্যতম “প্রজন্ম একাত্তর” যেটি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সন্তানদের সংগঠন। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি। সংগঠনের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জোরদার করা ও মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গিকার ছিল তা বাস্তবায়নের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণসহ আরও বেশকিছু বিষয়। শিক্ষার প্রসার ঘটানের জন্য শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত আছেন। এছাড়াও সাবেক ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ আরও অনেক সংগঠনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সমকালীণ বিষয়ের উপর সময়ের সংলাপ নামক একটি টকশো অনুষ্ঠানের উপস্থাপক।
নিজ জেলা মাগুরার মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রবল। এলাকার বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট কৃষকদের সার সংকট নিরসনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনানুসারে ভূমিকা পালনের করেন। এলাকার মানুষকে তিনি সাধ্যমত বিভিন্ন ভাবে উপকার করারও চেষ্টা করেন।
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২০১২