
Home সাংবাদিক / Journalist > ওয়াহেদ আলী আনসারী / Waheed Ali Ansari (1909-1991)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99903 বার পড়া হয়েছে
ওয়াহেদ আলী আনসারী / Waheed Ali Ansari (1909-1991)
ওয়াহেদ আলী আনসারী
Wahed Ali Ansari
Chowgacha, Jessore
পারিবারিক পরিচিতি:

বৃটিশ আমলে যশোর থেকে প্রকাশিত ‘দি যশোর গেজেট’ পত্রিকার প্রকাশক ওয়াহেদ আলী আনসারী ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারী যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি চৌগাছা উপজেলার গরীবপুর গ্রামে। পিতার নাম বাহার আলী বিশ্বাস। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বড় ভাই নেছার আলী বিশ্বাস, দ্বিতীয় আনসারী, তৃতীয় শাহাদাৎ আলী বিশ্বাস ও ছোট ভাই মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ এবং একমাত্র বোন আশরাফুন্নেসা খুকী।
শিক্ষা:
১৯৩০ সালে তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী এই মানুষটি বহুভাষী, সুপন্ডিত ও নিজ ধর্মীয় জ্ঞানের সুবিদিত অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে বাংলা, ইংরেজী, আরবী, ফারসী ও উর্দ্দু ভাষায় পারদর্শি ছিলেন। তাঁর সাহিত্য রচনায় শব্দ প্রয়োগে বাংলা, আরবী ও ফারসীর আধিক্য দেখা যায়।
সাংবাদিকতা:
১৯৪১ সালে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘যশোর গেজেট’ নামের পত্রিকাটি। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৭ সালে ‘চাঁদের হাট পুরস্কারে’ ভূষিত হন। বৃহত্তর যশোরসহ খুলনা অঞ্চলে যিনি মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই ওয়াহেদ আলী আনসারীর নামের সাথে আলোচ্ছটার দ্যুতি বিচ্ছুরিত হয়।
সেবামুলক কর্মকান্ড:
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজসেবক এই মানুষটি আমৃত্যু দেশমাতৃকার কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। বৃটিশ আমলে অনগ্রসর এলাকাবাসীকে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নেয়ার জন্য যশোরের যে কয়েকজন ব্যক্তি ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম সারির।
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত যশোর হোমিওপ্যাথী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। যশোরের মুসলিম একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও তার বিশেষ অবদান রয়েছে।
কোরআন গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি যশোরে প্রথম কোরআন প্রচার প্রেস ও পরবর্তীতে আনসারী প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
আক্ষেপের সাথে বলতে হয় সমাজে অনেক মানুষ যারা নীরবে নিভৃতে কাজ করে চলে যান, কিন্ত সমাজ তাদেরকে ভূলে যায়, তাদের মধ্যে একজন ওয়াহেদ আলী আনসারী।
রাজনীতি:
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর জেলার একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত এবং কংগ্রেসের অনুসারী ছিলেন তিনি।
সাহিত্য সাধনা:
সাহিত্য সাধনার ক্ষেত্রেও তাঁর অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। তিনি পবিত্র কোরআন শরীফকে আরবী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে তা কাব্য আকারে লিখেছেন। তাঁর নিজের ‘কোরআন প্রচার প্রেস’ থেকে সাত খন্ডে তা প্রকাশ করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-‘কাব্যে কোরআন’, ‘নাস্তা’, ‘শেখ ফরিদ’, ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ ইত্যাদি। ‘কাব্য-কোরআন’ তাঁর সাহিত্য সাধনার স্মারক চিহৃ। বৃটিশ আমলে সমাজে শিক্ষার আলো যখন মৃয়মান, তখন তার এই প্রয়াস নি:সন্দেহে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
এছাড়া যশোরের আরেক পন্ডিত কর্মবীর মুনসী মেহেরুল্লাহকে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে কয়েকজন মানুষ কাজ করেছেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্র সেনানী। তাঁর কোরআন প্রচার প্রেস থেকে কর্মবীর মুনসী মেহেরুল্লাহর অনেক পুস্তক প্রকাশ করা হয়। মনে প্রাণে মুনসী মেহেরুল্লাহর খাঁটি অনুসারী ও ভক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঝাউদিয়ার মেহেরুল্লাহ একাডেমী প্রাংগনে মুনসী মেহেরুল্লাহর ১২১ তম জন্ম বাষির্কীর সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ওয়াহেদ আলী আনসারী।
ওয়াহেদ আলী আনসারীর কোরআন প্রচার প্রেসের ম্যানেজার আহম্মদ আলী সাহিত্যরত্ম (১৯০৯-১৯৯১) তার “ফাগুণ এসেছে ফিরে” কাব্য গ্রন্থের “কপোতাক্ষর তীরে” কবিতায় লিখেছেন- “ কপোতাক্ষর এপার জ্বালিল জ্ঞানের মশাল/ গরীব পুরের গর্ব আনছারী/ জাতি জাগানোর অগ্রদূত/ মরেও তিনি অমর হয়েছেন/ বাংলায় কুরআন প্রচার / প্রতিভা অদ্ভূত!”
পরলোক গমন:
১৯৯১ সালের ২২ এপ্রিল যশোরের বারান্দি পাড়ার নিজ বাস ভবনে মহান এই পুরুষ ইন্তেকাল করেন।
তথ্য সম্পাদনা: মুরসালিন নোমানী
সিনিয়র রিপোর্টার, বাসস;
সদস্য, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
/
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল