
Home সাংবাদিক / Journalist > মো. মসিউল আযম / Masiula Azam (1944)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99921 বার পড়া হয়েছে
মো. মসিউল আযম / Masiula Azam (1944)
মো. মসিউল আযম
Masiula Azam
Home District: Jessore
Masiula Azam
Home District: Jessore

যশোর জেলার সদর থেকে ৮ কিঃ মিঃ পশ্চিমে নিভৃত পল্লী ছাতিয়ানতলা গ্রামে ১৯৪৪ সালের ১ জুন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (অনার্স) সহ ১৯৬৯ সালে বাংলাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর ১৯৭০ সালে নিজ এলাকর প্রতিষ্ঠিত কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজে বাংলাসাহিত্যের একজন তরুন প্রভাসক হিসাবে মহান শিক্ষকতা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। সুদীর্ঘ ৩৩ বছর একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকার পর ২০০৪ সালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে চাকুরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
শিক্ষকতা পেশা হিসেবে চাকুরী জীবনের অবসান ঘটালেও তাঁর বহুমূখী কর্মধারার পরিচয় ও পরিষ্ফুটন শুরু হয় একাধারে ছাত্রাবস্থায়। সেই স্কুল জীবন থেকে সাহিত্য সেবা কাজে তাঁর প্রথম হাতেখড়ি। কলেজ জীবনে প্রবেশের পর তিনি ১৯৬৫-৬৬ সালে যশোর মাইকেল মধূসূদন কলেজ হতে প্রকাশিত দেয়াল পত্রিকা “শঙ্কচুড়” এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৭-৬৮ সালে কলেজের ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হবার পর কলেজ হতে প্রকাশিত বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন হতে সাহিত্য সেবার পাশাপাশি সাংবাদিকতার জীবনে তাঁর প্রথম পরিচয় ও প্রবেশ ঘটে। যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজে অধ্যায়ন কালে ১৯৬৩-৬৫ সালে যশোর জেলা পরিষদ হতে প্রকাশিত পাক্ষিক “জনকল্যাণ” পত্রিকার কলেজ প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতার জগতে তাঁর প্রথম পদার্পন। প্রায় সমসাময়িককালে খুলনা থেকে প্রকাশিত “দৈনিক জনবার্তা” পত্রিকার যশোর অফিসের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় তাঁর পরিষ্ফুটন হয়। এর পর ১৯৬৩-১৯৯৩ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩০ (ত্রিশ) বছরব্যাপী একাধারে বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকা যথাক্রমে যশোর হতে প্রকাশিত মাসিক “শতদল” এর সম্পাদনা “দৈনিক স্ফুলিঙ্গ”, “দৈনিক ঠিকানা”, “দৈনিক গণদাবী” এর সাংবাদিকতা এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা যথাক্রমে “সাপ্তাহিক পূর্বদেশ”, “সাপ্তাহিক চিত্রালী” এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকা “দৈনিক আজাদ” “দৈনিক বাংলার বাণী”, “দৈনিক দেশ”, “দৈনিক ইনকিলাব” ইত্যাদি পত্রিকার যশোরের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সাংবাদিকতার মূখ্য বিষয়বস্তু ছিল গ্রামবাংলার মানুষ এবং তাঁদের জীবন-জীবীকা সংশ্লিষ্ট। সাংবাদিকতা পেশাকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে তিনি ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিউিট, ঢাকা কতৃক আয়োজিত (খুলনা বিভাগে অনুষ্ঠিত) সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং ১৯৮৮ সালে গ্রামীন সাংবাদিক আইন ও সামাজিক ন্যায্যতা বিষয়ক ইনস্টিটিউট, ঢাকা কতৃক আয়োজিত আইন উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায্যতা শীর্ষক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। শুধু একজন সাধারণ সাংবাদিক হিসাবেই নয়, ১৯৮০-১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, যশোর জেলা শাখা, যশোর এর সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব হিসেবে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন।
শিক্ষকতা এবং সক্রিয় সাংবাদিকতার পেশা থেকে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করলেও সদা কর্মব্যস্ত মানুষটি তাঁর কর্মজীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, সংস্কৃতিক, সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে বিভিন্ন সময়ে সম্পৃক্ত করেছেন এবং বর্তমানেও তা সমভাবে অব্যাহত আছে। প্রায় অর্ধশতাধিক সংস্থা, সমিতি ও প্রতিষ্ঠানে তিনি বিভিন্ন পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেকে উজাড়ভাবে এখনও নিয়োজিত রেখেছেন। প্রায় ৭১ ছুঁই ছুঁই বয়সেও তাঁর অফুরন্ত কর্মপ্রেরণা ও সময় সচেতনতা সকলের জন্য বিশেষ করে যুব সমাজের জন্য রীতিমত ঈর্ষনীয় এবং অনুসরণযোগ্য। কেবলমাত্র দলীয় রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়া যশোর জেলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিয়োজিত প্রায় সকল সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, কমিটি ও সমিতিতে একজন সম্মানিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর অন্তর্ভূক্তি ও পদচারনা আজো অব্যাহত। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি জেলার একজন সুপরিচিত এবং সর্বজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
দীর্ঘ প্রায় চার দশকের বেশী সময় মানুষ গড়ার কারিগর, সমাজসেবক, সাংবাদিকতা ও শিল্প-সাহিত্য প্রেমী একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিভিন্ন সময়ে নানা পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
(১) ১৯৯৫ এবং ২০০৭ সালে মুন্সী মেহেরুল্লাহ ফাউন্ডেশন কতৃক সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য মুন্সী মেহেরুল্লাহ পদক লাভ।
(২) ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালীন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও অবদান রাখায় সাতক্ষীরা জেলা সাংবাদিক সমিতি কতৃক দক্ষিণাঞ্চলীয় শ্রেষ্ঠ সংগঠকের পুরষ্কার লাভ।
(৩) ২০০৪ সালে যশোর জেলা প্রশাসন কতৃক প্রদত্ত কৃতি ও প্রবীণ শিক্ষক হিসাবে সম্মাননা পদক লাভ।
(৪) ২০১০ সালে মাদক বিরোধী সচেতনতা মূলক কাজে অবদান রাখায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, যশোর কতৃক প্রদত্ত সম্মাননা লাভ।
(৫) ২০১০ সালে যশোর প্রেসক্লাব কতৃক প্রদত্ত জেলার সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য সম্মাননা লাভ।
(৬) ২০১০-২০১১ সালে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, ঢাকা কতৃক যশোরে মাদক বিরোধী জনসচেতনতা মূলক কাজে অবাদন রাখার জন্য প্রদত্ত “ভলান্টিয়ার অব দি ইয়ার” সম্মাননা লাভ।
(৭) ২০১৪ সালে পরিবেশের উপর বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকান্ডের জন্য যশোর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা লাভ। এছাড়া তাঁর কর্মময় জীবনের উপর আলোকপাত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিকগণ শ্রদ্ধাপূর্ণ নানা ধরনের ফিচার প্রকাশ করেছেন। ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া ও www.jessore.info পৃষ্টপোষক ও যশোর জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সাংবাদিক তালিকায় তিনি স্থান লাভ করেছেন।
জীবনের বার্ধ্যকে উপনীত হলেও কর্মবীর জনাব মসিউল আযম এখনও একজন পূর্ণ কর্মক্ষম ও সদাব্যস্ত মানুষ হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্থ, সদাহাস্যময় মানুষটি সমগ্র জীবনব্যাপী সমাজ সেবায় ব্যাপৃত থেকে একজন পূর্ণ আলোকিত ও সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে বিভিন্ন মহলে স্বীকৃত ও সমাদৃত।
তাঁর আদর্শগত আলোকবর্ত্তিকা পরশপাথরের স্পর্শের ন্যায় ব্যাপকভাবে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়–ক, এটিই সবার ঐকান্তিক কাম্য। বরেন্য ও আলোকিত মানুষটি আরও দীর্ঘায়ু হোক, একজন মহান দিশারী ও সমাজ সেবক হিসেবে নিজেকে আরও বহুদিন ব্যাপৃত রাখতে সক্ষম হোক, তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন থেকে আরও অনেকে অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজে পাক, মহান আল্লাহ পাকের দরবারে কায়মনবাক্যে এই প্রর্থনা করি।
লেখিকা পরিচিতি:
চৌধুরী ওয়াহিদা সুলতানা
প্রশিক্ষক,
শের-ই-বাংলা কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার ঢাকায় অনুষ্ঠিত।
বিসিএস কর্মকর্তাদের জন্য ৪ মাস ব্যাপী
ফাউন্ডেশন কোর্সের (৫৬ তম ব্যাচ)
নিদ্ধারিত কাজের অংশ হিসাবে নিজ এলাকায় একজন আলোকিত মানুষের উপর তৈরীকৃত প্রতিবেদন হিসাবে আগস্ট-২০১৪ মাসে দালিকৃত এবং উপস্থাপিত।
সর্বশেষ আপডেট:
মার্চ ২০১২