
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > যশোর শহরের বুক চিরে যাওয়া ভৈরব নদের কান্না থামেনি
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89495 বার পড়া হয়েছে
যশোর শহরের বুক চিরে যাওয়া ভৈরব নদের কান্না থামেনি
যশোর শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদটি আজও গুমরে কাঁদছে। নদের বেদনাঘন আর্তি কারো কানে পৌঁছাচ্ছে না।

যশোরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অভিযোগ, যশোর শহরের ভৈরব নদটি যে যার মতো দখল করে নিচ্ছে। থামছে না, থামানো যাচ্ছে না, উদ্যোগও নেই। এই অবস্থায় যশোরের সচেতন নাগরিকরা একটা বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছেন বলে ভৈরব নদ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি সূত্রে জানা গেছে। শুধু যশোর বাবলাতলা ব্রিজ ও দড়াটানা ব্রিজ পয়েন্ট নয়, ডাকাতিয়া, নূরপুর, নওদাগ্রাম, বিরামপুর, পাগলাদাহ, ঘোপ, পুরাতন কসবা, বারান্দীপাড়া, নীলগঞ্জ, রাজারহাট, বসুন্দিয়া ও শিল্পশহর নওয়াপাড়াসহ চৌগাছার তাহেরপুর পয়েন্ট থেকে খুলনা পর্যন্ত ভৈরব নদ দখল হয়েছে। শিল্পশহর নওয়াপাড়া ও মহানগর খুলনার ভৈরব নদপাড়ও দখল হয়েছে। দখলদারদের দাপটের কারণে নওয়াপাড়ার নদী বন্দরের কাজকর্মে গতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে না। গোটা এলাকার কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও ব্যবসা-বাণিজ্য, জীব-বৈচিত্র্য ও বনজসম্পদ এবং পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদটি গঙ্গা থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভেতর দিয়ে সীমান্ত জেলা মেহেরপুরে ঢুকেছে। মেহেরপুরের সুবলপুর পয়েন্টে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে। ভৈরব আর মাথাভাঙ্গা অভিন্ন ধারায় দর্শনা রেলস্টেশন এলাকা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। কিন্তু ১৮৬১ সালে শিয়ালদহ-কুষ্টিয়া রেলপথ স্থাপনের সময় ভৈরব নদ ভরাট করে মাথাভাঙ্গা নদীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ওই পয়েন্ট থেকে দর্শনা ও জীবননগর হয়ে ভৈরব নদ এসে মিশেছে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষের সাথে। সেখান থেকে ভৈরব নদ যশোর ও শিল্পশহর নওয়াপাড়া হয়ে শিল্পনগরী খুলনা ছুঁয়ে সুন্দরবনের পশুর নদীতে গিয়ে মিশেছে। ভৈরব নদকে ঘিরেই মূলত যশোর, নওয়াপাড়া ও খুলনায় নগর, শহর ও শিল্প গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও হয় সম্প্রসারিত। ভৈরব নদে একসময় বড় বড় জাহাজ ভিড়তো। এখন ভৈরবে নদীপথ নেই বললেই চলে। নদটির গুরুত্ব রয়েছে অনেক। কিন্তু গুরুত্বটা অনুধান করছেন না সংশ্লি¬ষ্টরা। যার জন্য নদ বাঁচানো কিংবা দখলমুক্ত করার উল্লে¬খযোগ্য উদ্যোগ নেই। শুধু যশোর এলাকা নয়, বলা যায় পুরো ভৈরব নদটি দখল করে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বাস্তবে ভৈরব নদের বিশাল দেহটা এখন শুকিয়ে গেছে। অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে ভৈরব নদ। নদের করুণদশা দেখে সবাই আফসোস করেন। ভৈরব নদ দখলমুক্ত হলে যশোর শহরের চেহারা পাল্টে যেত। বিশেষ করে যশোর শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষায় ‘রিভার ভিউ’ গড়ে তোলার দাবিও রয়েছে। যা জনদাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দাবি পূরণ হচ্ছে না, আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবুও আশায় বুক বেঁধে যশোরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর সফরকালে নির্দেশনা দিতে পারেন ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ বাঁচানোর।
সূত্র: যশোরনিউজ২৪.কম