কপোতাক্ষ আবারও হবে আর্শীবাদ ॥ এলাকাবাসির প্রত্যাশা
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ যুগ যুগান্তরের স্বাক্ষী, মহাকালের প্রতিচ্ছবি আর শষ্য ভাণ্ডারের পথিকৃত কপোতাক্ষের আজ বড়ই দুর্দিন। তলস্তর ভরাট হয়ে তার উপছে পড়া জলরাশিতে দু’কুলের শত শত বিঘা আবাদি জমিজমা গত কয়েক বছর যাবৎ জলবদ্ধতার করাল গ্রাসে নিপোতিত। কেবল আবাদী জমি নয়, বিভিন্ন স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান বছরের অধিকাংশ সময়ে জলাবদ্ধতার কবলে থাকে। একদা সাতক্ষীরা, যশোর এবং খুলনা কিয়দাংশের আর্শীবাদ কপোতাক্ষ অভিশাপে পরিণত হয়েছে। তবে সুখের কথা সরকার কপোতাক্ষ খননে অর্থ বরাদ্ধ করেছে এবং খনন কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কপোতাক্ষ জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাম আন্দোলনের পুরোধা, সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতিক সাতক্ষীরা-১ তালা কলারোয়া আসনের আন্দোলনের সমন্বয়ক সংসদ সদস্য এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ দৃষ্টিপাতকে জানান কপোতাক্ষ খননে কোন ধরণের অনিয়ম, দূনীর্তি সহ্য করা হবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন কপোতাক্ষ খননে শুরু হতে লুটপাট শুরু হয়েছে। নিয়মনীতি না মেনেই পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের ইচ্ছামত খননের কাজ শুরু করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন তদারকি কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত তা হইনি, তিনি অবিলম্বে কপোতাক্ষ খনন তদারকি কমিটি গঠনের প্রয়োজন বলে মনে করেন। কপোতাক্ষ নদের দৈর্ঘ্য প্রায় দুইশত কিলোমিটার। বর্তমানে সাতক্ষীরার তালা, কেশবপুর ও পাইকগাছা অংশে খনন কাজ চলছে। সূত্র জানায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে চার বছর মেয়াদী কপোতাক্ষ খননে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার খননে ৬১ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের টি আর এম (জোয়ার ভাটা নদী ব্যবস্থাপনার) বিষয়টি যথাযথ ভাবে পালন করা হইনি বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি টি আর এম ভুক্ত প্রায় ১৫৬২ একর জমির মালিকানা ক্ষতিপুরণের অর্থ বরাদ্ধের পরিমান খুবই সীমিত। কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটির দাবী পুরাতন ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ, পেরিফেরিয়াল বাঁধের ফাটল মেরামত (চারপাশের বাঁধ) বাঁধের উপর নির্মিত আউট নেট পাইপ প্রশস্থ করা (পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা) বেইলিব্রিজ উঁচুকরণ, সহজ শর্তে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, জনগনকে সম্পৃক্তকরণ করে মনিটরিং টিম গঠন করা। জনগণকে সম্পৃক্ত করনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড এক ধরনের চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বিএনপি পন্থী দুই জন চেয়ারম্যান সহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে এই খনন প্রকল্পে কাজ দিয়েছে। সূত্র জানায় কাজ পাওয়া জনপ্রতিনিধিরা প্রকারান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারদের ইচ্ছায় চলছে। এক দশকের বেশী সময় যাবৎ কপোতাক্ষ রক্ষা সহ তালা এলাকার নদী রক্ষা ও জলাবদ্ধতা নিরসনের আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত, বর্তমান সাংসদ এ্যাডঃ মুস্তফা লুৎফুল্লাহর প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসের সামান্যতম ঘাটতি নেই। তিনি বরাবরই বুজোয়া, পুজিবাদী এবং ধনীক শ্রেণীর স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে প্রান্তীক, সাধারণ, নির্যাতিত এবং অধিকার হারা গনমানুষের পক্ষে লড়ছিলেন। আর তাই কপোতাক্ষের অভিশাপে অভিশপ্ত হাজার হাজার মানুষ চেয়ে আছেন তাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের যথাযথ অগ্রনী ভূমিকা এবং অনিয়ম মুক্ত কপোতাক্ষ খনন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে।