
Home ধর্ম-সাধক / Religion-saint > অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূম / Professor Hasan Abdul kaiyum (1944)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 91263 বার পড়া হয়েছে
অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূম / Professor Hasan Abdul kaiyum (1944)
অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূম
Professor Hasan Abdul kaiyum
Home District: Magura, Sreepur
Professor Hasan Abdul kaiyum
Home District: Magura, Sreepur

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, মুফাস্সীরে কুরআন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার ব্যক্তিত্ব পীরে কামিল অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূম (আবুল হাসান মুহম্মদ আবদুল কাইয়ূম) ১৯৪৪ খৃষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল রোববার বৃহত্তর যশোরের মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার দ্বারিয়াপুর শরীফের ঐতিহাসিক পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হুজুর কেবলা হযরত মওলানা শাহ্সূফী আলহাজ্জ তোয়াজউদ্দীন আহমদ রহমাতুল্লাহি আলায়হি ছিলেন প্রখ্যাত পীর সাহেব কিবলা। মাতা হযরত শায়খা আলহাজ্জ মোছাম্মত জোহরা খাতুন (রা:) ছিলেন এক বিদূষী মহিলা যাকে বাংলার রাবেয়া বস্রী বলা হয়। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জনাব কাইয়ূম সবার বড়। ছোট ভাই আবু সালেহ দেশের প্রখ্যাত ছড়াকার, সাংবাদিক এবং বাংলা একাডেমী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত।
শিক্ষাজীবন:
হাসান আবদুল কাইয়ূমের শিক্ষা জীবনের হাতে খড়ি হয় মূলত মায়ের কাছে। তিনি পিতা ও গৃহ শিক্ষকের কাছে অতি শৈশবে কুরআন, দীনীয়াত, আরবী ও উর্দূভাষা শিক্ষা লাভ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় দ্বরিয়াপুর প্রাইমারী স্কুলে। পরবর্তীতে খুলনা বি. কে. ইনস্টিটিউট, মাগুরা হাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ১৯৬২ খ্রীস্টাব্দে তিনি ঢাকা সরকারী ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের মাদ্রাসা শাখা থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ইংরেজী সাধারণ শিক্ষা লাভের জন্য কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৭ খ্রীস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস, সমাজ কল্যাণ, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজী প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে ভর্তি হন। অতঃপর ১৯৭০ খ্রীস্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঐ বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন।
ছাত্র জীবনে তিনি বয় স্কাউটিং এবং ইউনিভারসিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর (UOTC) এ যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৬০-৬১ খ্রীস্টাব্দে লাহোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় জাম্বুরীতে যোগদান করেন। তিনি হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে শরীক হন। আর এজন্য গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এছাড়া প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন, ৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।
পেশাগত জীবন:
অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূমের পেশাগতজীবন শুরু হয় কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। তিনি স্বাধীনতা উত্তর কালে শ্রীপুর ডিগ্রী কলেজ, মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮০ খ্রীস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন এবং অচিরেই তিনি পরিচালক পদে উন্নীত হন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাপ্তাহিক অগ্রপথিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা (গবেষণা পত্রিকা), শিশু পত্রিকা সপ্তডিংগা ও সাহিত্য সাময়িকী ঐতিহ্যের সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় ১৯৭২ খ্রীস্টাব্দে নবকাল নামে মাগুরা থেকে একটি পাক্ষিক পত্রিকা এবং ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দে জগন্নাথ কলেজ থেকে উল্কা নামে একটি সাহিত্য সাময়িকীও প্রকাশিত হয়। হাসান আব্দুল কাইয়ূম ২০০৩ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
একজন পীরে কামিল এবং সব্যসাচী লেখক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। তিনি দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক। প্রতি শুক্রবারে প্রসঙ্গ ইসলাম নামে দৈনিক জনকণ্ঠে এবং The Daily Star- এ নিয়মিত কলাম লিখে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত সময় তাঁর প্রকাশনা ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ যেমন : তফসীরে তাবারী, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। ইসলামী বিশ্বকোষে তাঁর অনেকগুলো মৌলিক ও অনূদিত প্রবন্ধ নিবন্ধ রয়েছে। তাঁর তিন হাজারেরও অধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ অনুপম আদর্শ, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, খোকা-খুকুর ছড়া, ফুরফুরার চাঁদ, জিহাদ, কাদিরীয়া তরীকা, সাবির কাব্যে ইসলামী ভাবধারা ইসলাম ও জীবন, প্রনঙ্গ ইসলাম প্রভৃতি।
অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম তাঁর আব্বা হযুরের স্মরণে আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া নামে একটি জনকল্যাণমূলক সংস্থা গড়ে তুলেছেন। এই সংস্থার তিনি প্রেসিডেন্ট। দ্বারিয়াপুরে তিনি গড়ে তুলেছেন আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া নামে ইয়াতিমখানা মাদ্রাসা।
তিনি বেশ কয়েকবার হজ্জ করেছেন। ২০০২ ও ২০০৬ খ্রীষ্টাব্দে স্ত্রী-পুত্রসহ হজ্জ করেন। এছাড়াও তিনি এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩২টি দেশ সফর করেছেন।
কর্মের স্বীকৃতি:
অধ্যাপক হাসান অবদুল কাইয়ূম ইতোমধ্যেও বেশ কয়েকটা পদক ও সম্মননা লাভ করেছেন, যেমনঃ জাতীয় লেখক পরিষদের নববর্ষ পুরষ্কার ১৩৯৭, জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদের নজরুল স্বর্ণপদক ১৯৯৬, জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদের মওলানা ভাসানী স্বর্ণপদক ১৯৯১, আধ্যাত্নিক কবিতা পরিষদের সাহিত্য সম্মাননা ২০০০, মুসলিম সাহিত্য সমাজের শান্তি পদক ২০০৯ প্রভৃতি।
ব্যক্তিগত জীবন:
অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম ১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দে যশোর শহরে অবস্থিত খড়কী শরীফের ঐতিহাসিক পীর পরিবারের হযরত মওলানা শাহ সূফী মোহাম্মদ আবদুল মতীন সাহেবের কন্যা মাহমুদা বেগম মায়ার সাথে তাঁর বৈবাহিক জীবনের সূচনা হয়। তিনি দুই সন্তানের জনক। পুত্র আরিফ বিল্লাহ্ মিঠু দেশের প্রখ্যাত তরুণ ছড়াকার এবং একজন ব্যাংকার। কন্যা তসলিমা হাসিন মিতাও একজন লেখিকা। তাঁর জামাতা মকবুল হোসেন একজন উচ্চপদস্থ কর কর্মকর্তা।
তথ্য সূত্র : সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা : মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
শামিউল আমিন শান্ত
সর্বশেষ আপডেট :
মার্চ ২০১২