
Home শিল্পী / Artist > হাসান / Hasan (1970)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89578 বার পড়া হয়েছে
হাসান
Hasan
পরিবারিক পরিচিতি :
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ হাসানুর রহমান (হাসান) ১৯---- সালে ঢাকাতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম তারিখ ১৯ এপ্রিল। পৈত্রিক বাড়ী যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার কাউড়িয়া গ্রামের মুন্সি বাড়ী। নানা বাড়ী যশোর শহরে ষষ্ঠীতলা পাড়ায় ‘অজন্তা হাউস’।
হাসানের পিতা সৈয়দ আজিজুর রহমান বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী, শাহবাগ এর ডিরেক্টর ছিলেন। মা রওশন আরা আজিজ একজন গৃহিণী। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে হাসান সবার ছোট। বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার, বড় বোন স্কুল শিক্ষক, মেঝ বোন ডাক্তার, ছোট বোন চকরিজীবি। ভাই-বোনদের অনেকেই যুক্তরষ্ট্রের বাসিন্দা। হাসানের একটি জমজ ভাই আছে।
শিক্ষাজীবন :
হাসান --- সালে ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল থেকে এস. এস. সি পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন করেন ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ১৯--- সালে। এখান থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ঢাকা কলেজে মাস্টার্স ভর্তি হন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
হাসানের বাল্য বেলা :
ছোট বেলা থেকেই হাসান হামদ, নাত ও কবিতা আবৃত্তিতে পারদর্শী ছিলেন। কবিতা লেখার অভ্যাসও ছিল কিছুটা। শিশু কবি হিসাবে তার বেশ পরিচিতি ছিল। অভিনয়েও তিনি পিছিয়ে ছিলেন না। স্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীতে তিনি অভিনয়, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। পারিবারিক অনুমতি না থাকায় তিনি এগুলো একরকম লুকিয়ে লুকিয়েই করতেন। এই ধরনের কর্মকান্ড শুধুমাত্র তার স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরের অন্য কোন সংগঠনের সাথে তার জড়িত হবার সুযোগ ছিল না। এমনকি গান শোনা, কবিতার বই পড়া বা সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রেও ছিল প্রতিবন্ধকতা।
বড় বোন হুসনা আফরোজ রেডিও ও টিভিতে নাটক করতেন। সুটিং এ যাবার সময় মাঝে মধ্যে ছোট ভাই হাসানকে সঙ্গে নিতেন। মূলত সেখান থেকেই তিনি সাংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি নিজে গান লিখে সুরারোপ করার চেষ্টা করতেন। এটা তিনি খেয়ালের বসেই করতেন। বড় হয়ে সঙ্গীতশিল্পী হবেন এমনটা কখনও ভাবেননি তিনি। ইচ্ছা ছিল বড় অভিনেতা হবেন।
হাসানের কিশোর বেলা :
১৯৮৯-৯০ সালের দিকে তিনি ইংরেজী গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। নিজেদের বাড়ীতে গান শোনা বা গাওয়ার সুযোগ না থাকায় স্কুলজীবনের শেষের দিকে বন্ধুদের বাসায় গিয়ে তিনি গান শুনতেন। প্রথম দিকে মাইকেল জ্যাকসন, জর্জ মাইকেল, স্কোরপিওন, মেইডেন প্রভৃতি শিল্পীদের গান শুনতেন। ১০ম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি কিছুটা হাইগ্রেড এর গান শোনা শুরু করলেন। এই সময় তার গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মায়।
১৯৮৯-৯০ সালের দিকে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে পল্লীগীতির উপর একটি সার্র্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হন। শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ ও পল্লীগীতির সুর আয়ত্ব করতেই তার এই পল্লীগীতি কোর্সে ভর্তি হওয়া। ছোট বেলা থেকেই তিনি সুরের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। অনুভব করতেন পল্লীগীতি বা মাটির গানে একমাত্র নির্ভেজাল সুর আছে। গানের ক্লাস শেষে তিনি বিভিন্ন বন্ধুর কাছ থেকে গানের বই, হার্মোনিয়াম ধার নিয়ে সংগীতচর্চা করতেন। বাড়ীতে সে সময় ক্যাসেট প্লেয়ার বা টেলিভিশন পর্যন্ত ছিল না। এমন প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যদিয়ে তিনি আজকের ব্যান্ড তারকা হাসান।
সঙ্গীতজীবন :
হাসানের সঙ্গীত জীবনের উত্থান হয় মূলত হঠাৎ করেই। একদিন বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতাঙ্গনের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আশিকুজ্জামান টুলুর সাথে তার পরিচয় হয়। হাসানের গান শুনে তিনি মুগ্ধ হলেন এবং তাকে প্রস্তাব করলেন যে, বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে ইংরেজী গানের সুরে বাংলা গানের একটা কমার্শিয়াল ক্যাসেট বের করা হবে, এ জন্যে তাকে গান গাইতে হবে। হাসান প্রস্তাব মেনে নিয়ে গান গাইলেন। কিন্তু ক্যাসেটটি অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচন্ড হিট হয়ে গেল। ক্যাসেটটির নাম ছিল কপি আর ২।
হাসানের প্রথম ব্যান্ড হচ্ছে ‘আর্ক’। পরবর্তীতে আর্ক থেকে বের হয়ে তিনি স্বাধীনতা নামে একটি ব্যান্ড তৈরী করেছেন। আর্কের সঙ্গে প্রায় নয় বছর ছিলেন তিনি। আর্কে যোগ দেয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মূলত টুলু এবং পঞ্চম এর ছত্রছায়ায় থেকে তিনি গানের প্রকৃত মর্যাদা অনুভব করেন।
১৯৯৬ সালে হাসান প্রথম তাজমহল নামে আর্কের একটি এ্যালবাম বের করেন। এই এ্যালবামে তার গাওয়া গানগুলি ছিলো নিজের লেখা এবং সুর। এই এ্যালবামটি সুপার হিট হওয়ার পর তিনি একজন ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেন। এই ক্যাসেটটি হিট হওয়ার কারণ হিসাবে হাসান মনে করেন, ব্যন্ড সঙ্গীত জগতে তার নতুন স্টাইলের প্রবর্তন। এটি ছিল কিছুটা পশ্চিমা ধাচের গাওয়া গান। এখানে তিনি অনুস্বরণ করেছিলেন পশ্চিমাদের কণ্ঠ, ভাব, সুর ইত্যাদি যেটা বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। আর এই কারণেই হাসান খুব অল্প সময়ে অনেক বেশী পরিচিতি পেয়েছিলেন।
আর্কের এ্যালবাম তৈরীর প্রায় দুই বছর পর ১৯৯৮ সালে তার ব্যান্ড আর্ক জন্মভূমি নামে আর একটি ক্যাসেট বের করলো। এই এ্যালবামটিও সুপার হিট হয়ে গেল। এটি তাজমহলের চেয়ে অনেক বেশী দর্শক জনপ্রিয়তা পেল। এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বেশী পাওয়া। এই ক্যাসেটটির মাধ্যমে হাসান নতুন একটা স্টাইলের প্রবর্তন ঘটালেন। এখানে ছিল তার নিজস্ব সুর, কথা ও স্টাইল।
হাসান মনে করেন ১৯৯৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি একটা সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে গেছেন। তার এই জনপ্রিয়তা এখন কমে গেলেও তার দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই
হাসান তার আর্কের সাথে শেষ ভলিউম স্বাধীনতা। | তারপর একটি একক এ্যালবাম বের করলেন ‘তাল’। পরবর্তী ৪ মাস আমেরিকাতে থাকার পর সেখান থেকে ফিরে এসে আর্কের নাম পরিবর্তন করে সমস্ত লাইনআপটা নিয়ে ২০০২ সালে নতুন আর একটি ব্যান্ড করলেন স্বাধীনতা ।স্বাধীনতার ব্যানারে প্রথম এ্যালবাম হচ্ছে ‘কারবালা’।
হাসান মনে করেন তিনি তার গানের কথায় ও সুরে পুরাপুরি সন্তষ্ট না। তার মধ্যে অনেক ভুল রয়েছে। তিনি এমন কিছু গান করতে চান যেটা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে, তখনই তিনি নিজেকে একজন স্বার্থক শিল্পী মনে করবেন।
হাসানের একক এ্যালবাম হচ্ছে ‘তাল’। আর বাকীগুলি মিশ্রণ। তাঁর মোট গানের সংখ্যা ২০০ এর বেশী।
স্বদেশ প্রেম :
হাসানের বাবা সরকারী চাকরি করতেন, বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছে। তাই তার জন্মও হয়েছে ঢাকাতে। যশোরের আলো বাতাসে বেড়ে উঠার সুযোগ তেমন একটা হয়নি। তবুও তিনি যশোরের ছেলে হিসেবে গর্ব বোধ করেন। তার নানা ও দাদা উভয়ের বাড়ী যশোরের ঝিকরগাছায়। তার প্রায় সকল আত্মীয় স্বজন যশোরে থাকেন। তাই যশোরের প্রতি তার ভালবাসা প্রবল।
যশোরের উন্নয়নমূলক কোন কর্মকান্ডে যশোরের মানুষ তাকে ডাকলে তিনি ধন্য হবেন। তিনি মনে করেন আল্লাহ যদি তাকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যশোরের জন্যে কিছু করার মত সামর্থ দেন তাহলে করবেন ইনশাআল্লাহ।
হাসানের পছন্দ :
হাসানের পছন্দের মধ্যে আছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, ঘুরে বেড়ানে ও টিভি দেখা। অতীতের স্মৃতিচারণ করতে তিনি বেশ পছন্দ করেন। ডাল ভাত তার প্রিয় খাদ্য। তরকারী কম খেতে পছন্দ করেন। কিছুটা টাইট ফিটিং জিন্সের প্যাণ্ট ও ফুলহাতা শার্ট তার পছন্দ। জুতার মধ্যে সু এবং রং এর মধ্যে কাল তার পছন্দের তালিকায়।
ব্যক্তিগত জীবন :
হাসানের বৈবাহিকজীবন শুরু হয় ২০০০ সালের আগস্ট মাসে কুমিল্লার মেয়ে ফারহানা মজিদ এর সাথে। তাদের একমাত্র সন্তান হাসিন। লালমাটিয়ায় নিজস্ব বাড়ীতে বসবাস করেন।
তথ্য সূত্র : সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট :
মার্চ ২০১২