
Home ধর্ম-সাধক / Religion-saint > হযরত শাহ বলু দেওয়ান (রঃ) / Hazrat Sah Balu Dewan (Rh.)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 91279 বার পড়া হয়েছে
হযরত শাহ বলু দেওয়ান (রঃ) / Hazrat Sah Balu Dewan (Rh.)
হযরত শাহ বলু দেওয়ান (রঃ)
Hazrat Sah Balu Dewan (Rh.)
Home District: Jessore, Chowgacha
Hazrat Sah Balu Dewan (Rh.)
Home District: Jessore, Chowgacha
আনুমানিক ষোলশো শতাব্দীতে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার ধোপাদি গ্রামে হযরত শাহ বলু দেওয়ান (রঃ) জন্মগ্রহণ করেন। অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। লোক মুখে শোনা যায় তিনি যা বলতেন তাই হতো। কিন্তু তাঁর জীবনকাহিনী সন্বন্ধে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য আজ আর পাওয়া যায় না। আর যা কিছু পাওয়া যায় তার সমপূর্ণটাই কিংবদন্তিতে ভরা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবনের প্রতিটি ঘটনাই রহস্যের জালে আবৃত। লোক মুখে শোনা যায় তিনি যাত্রাপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল ছুটি বিশ্বাস। তবে জন্মকাল সন্বন্ধে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য আজ আর পাওয়া যায় না। স্থানীয় বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গের অনুমান- তিনি ৩/৪ শো বছর আগে জন্মেছিলেন। কেউ কেউ বলেন জন্মবার অল্পকাল পরেই তাঁর পিতা মারা যান। আবার অনেকের মতে তাঁর পিতা অনেক দিন বেঁচে ছিলেন। এই দুটি মত তাঁর জীবনকাহিনীকে দুটি খাতে প্রবাহিত করেছে।
দ্বিতীয় মতানুসারে-বলুদেওয়ান ছেলেবেলা এমন সব আচরণ করতেন যে গ্রামের লোকে তাকে পাগল বলো আখ্যায়িত করত। তিনি তাঁর পিতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাই পিতা একদিন দুঃখ করে বলেছিলের “আল্লাহ তুমি আমার একটি মাত্র ছেলে দিলে তাও দিলে পাগল! ‘পিতার এরূপ দুঃখ প্রকাশের পর পরই তাঁর ভিতর যে অলৌকিক ক্ষমতা ছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাঁর এ অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ যে কিভাবে ঘটে সে সন্বন্ধে তাঁর জন্মস্থান যাত্রাপুরা ধোপাদী গ্রামে একটি কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে যে বলুর বয়স যখন ১০/১২ বছর তখন একদিন তার পিতার কাছে আব্দার জানায় যে সে মাঠে গরু চরাতে যাবে। পিতা প্রথমতঃ রাজি হননি। পরে ছেলের আব্দার উপেক্ষা করতে না পারায় রাজি হন। অনুমতি পেয়ে সে মাঠে যায় গরু চরাতে। গরুগুলি লোকের ক্ষেতের মধ্যে ছেড়ে দেয়। মনের আনন্দে গরুগুলো পরের ক্ষেতের ফসল খেতে শুরু করে। গ্রামের লোকেরা এসে তার পিতার নিকট নালিশ দেয়। পিতা তখন একজন রাখালকে দিয়ে গরু চরাবার সিদ্ধান্ত নেন। বলু পিতার এ সিদ্ধান্তের কথা শুনে পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গরু নিয়ে মাঠে যায় এবং পূর্বের মত পরের ক্ষেতে ছেড়ে দেয়। গ্রামের লোক এবার তার গরুগুলি খোয়াড়ে দিবার জন্য ধরতে যায়। এমন সময় বলুর ইশারায় গরুগুলি কতগুলি বক পাখি হয়ে পার্শ্ববর্তী গাছের ডালে বসে। সবাই হতবাক হয়ে যায় এবং বলু যে একজন সাধারণ মানুষ নয় তা বুঝতে পারে সবাই। চারিদিকে ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশ দেশান্তর থেকে লোক সমাগম শুরু হয়। এ সময় সে তার জন্মভূমি যাত্রাপুর ত্যাগ করে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার পিতা তাকে যেতে দিলেন না। গ্রামের কোন একটি স্থানে তার একটি আস্তানা তৈরী করে দেন। বলু কিছুদিন এখানি অবস্থান করেন। তারপর এ স্থান ত্যাগ করে অন্যদিকে চলে যান।
এই কিংবদন্তির উপর ভিত্তি করো যাত্রাপুর ধোপাদী প্রভৃতি গ্রামের লোকশিল্পীর একটি গান রচনা করেছেন। দল বেঁধে এই লোকশিল্পীরা লোকের বাড়ি বাড়ি এই গানটি গেয়ে বেড়ান। গ্রাম্য ভাষায় এ গানের নাম ফোলই গান। এ গানের কয়েকটি চরণ নিম্নরূপঃ
ছুটি বিশ্বাস বলে আল্লা কপালেতে ছিল,
একটা ছেলে দিলে বাবা পাগল কেন হলো।
ঐ কথা শুনে বলু নড়ি (লাঠি) হাতে নেয়,
নড়ি হতে নিয়ে বলু গরু রাখতে যায়।
গরু রাখতে যায় বলু ব্যাদন বিলের মাঠে,
গরু রাখতে যেয়ে বলু মাঠের ধানও খাওয়াই।
------------------------------------
যাহোক তাঁর এই অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশ ঘটার পর পিতার অনুরোধে তিনি কিছুদিন যাত্রাপুর অবস্থান করেন, পরে ধোপাদী গ্রামে গিয়ে অবস্থান নেন। এখানে আসার পর একই ভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষের ভীড় জমতে থাকে তার কাছে। অনেকেই তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করতে চায়। এ সময় তিনি বশির শাহ্ নামক ব্যক্তিকে দীক্ষা দেন। তিনিও বলুদেওয়ানের মত ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। এরপর তিনি এ স্থান ত্যাগ করে বেশ কয়েকটি স্থানে অবস্থানগ্রহণ করেন, যেমন- মুক্তদাহ, যশোর, ভেন্নাবেড়ে ও ভারতের পশ্চিম বাংলার কয়েকটি স্থান। এ সকল স্থানে আজও একটি করে দরগাহ রয়েছে। সর্বশেষে অবস্থান নেন তার মামা বাড়ীর গ্রাম হাজরাখানায় এবং এখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অন্য এক মতানুসরে- বলুদেওয়ান ছোট বেলায় পিতৃহারা হন। পিতার মৃত্যুর পর তার মা বলুকে নিয়ে নানা বাড়ী হাজরাখানা গ্রামে চলে আসেন। এখানেই তিনি বড় হতে থাকেন। তারপর একদিন কোন একটি ঘটনার মধ্যেদিয়ে তার অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। এই অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশ যে কিভাবে ঘটে সে সন্বন্ধে বেশকটি কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। এক কিংবদন্তী অনুসারে বলুর মামারা ছিল গরীব। তাই সে পরের বাড়ীতে নির্দিষ্ট মজুরীতে কাজ করত অর্থাৎ মাইনে থাকত। একদিন গৃহস্থ তাকে মাঠে গিয়ে সরিষা মাড়াই করতে বলে। কিন্তু সে তা না করে সরিষার গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সংবাদ গৃহস্থের কানে পৌঁছিলে তিনি মাঠে গিয়ে দেখেন সরিষা পুড়ে শেষ। তাই গৃহস্থ বলুকে মারার জন্য উদ্যত হয়। বলু হাসতে হাসতে বলে- অত বকাবকি না করে বাড়ী থেকে বস্তা নিয়ে আস।” তিনি তাই করলেন। ছাই উড়িয়ে দেখা গেল একটি সরিষায়ও আগুন ধরেনি। শুধুমাত্র সরিষার গাছগুলি পুড়ে গেছে। সবাই অবাক হয়ে গেল, এ ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। দূর দুরান্ত থেকে অগনিত মানুষ ভীড় জমাতে থাকে তার কাছে।
আর এক কিংবদন্তী অনুসারে- গ্রামের এক লোক রসের চুলায় জ্বাল দিচ্ছিল, এমন সময় বলু ওখানে যায়। বলু আসার পর লোকটি তাকে কিছুক্ষণ ঐ চুলায় জ্বাল দিয়ে দিতে বলে। তারপর ঐ ব্যক্তি জ্বালানী আনতে পাশেই কোথায় যায়। জ্বলানী নিয়ে আসার পর ঐ ব্যক্তি দেখতে পায় যে বলু চুলার আগুনের মধ্যে পা ঢুকিয়ে বসে আছে। চুলা জ্বলছে দউ দাউ করে। নিকটে আসতেই বলু তার পা বের করে নেয়। লোকটি তখন বলুর পা পরীক্ষা করে দেখে যে, পা সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তখন তিনি অবাক হয়ে যান এবং বলু যে অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন একজন বিশেষ মানুষ তা বুঝতে পারেন। এ ধরনের অসংখ্য কিংবদন্তী রয়েছে তার অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশ সম্পর্কে। যা হোক যে কোন একটি ঘটনার মধ্যেদিয়ে তার অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তখন দূর দুরান্ত থেকে মানুষের ভীড় জমতে থাকে তার কাছে। এ ঘটনার পর তার মা লোকালয় থেকে একটু দূরে বনের মধ্যে একটি মাটির ঘর তৈরি করে দেন। তখন থেকে তিনি ওখানেই অবস্থান করা শুরু করেন। এর পর তিনি এ স্থান ত্যাগ করে বেশ কয়েকটি স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ সকল স্থানে আজও একটি করে দরগাহ রয়েছে। তবে শেষ জীবনে তিনি হজরাখানা গ্রামেই অবস্থান নেন এবং এখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
এই মাযারকে কেন্দ্র করে প্রতি বৎসর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার উরস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁর নামে মেলা বসে। ঐদিন বহু দুর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার লোক এই তীর্থ কেন্দ্র দর্শন করে যায়। এমন জমজমাট মেলা যশোরের আর কোথায়ও পরিলক্ষিত হয় না।
চৌগাছা মহেশপুর সড়কের পাশেই হযরত শাহ বুলু দেওয়ান (রঃ) এর নামে ‘হযরত শাহ বুলু দেওয়ান দাখিলী মাদ্রাসা’ চলছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁর মাযারের সাথে একটা হুজরা খানা তৈরী করে দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র :
মোঃ তৌহিদুল আলম
সিনিয়র এসিন্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট
এন্ড ডেপুটি হেড অফ এসএমই ব্যাংকিং
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লি:
সম্পাদনা :
মো: তৌহিদুল আলম
মো: হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট :
২০.০৫.১১