
যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবনটি বাইরে থেকে চাকচিক্য দেখালেও এর ভেতরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রতিষ্ঠানটির এখন বেহাল অবস্থা। প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে নির্বাচিত কোন কমিটি নেই। নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষকও। এখানে একজন কালচারার অফিসার ছিলেন। কিন্তু এ পদটিও প্রায় পাঁচ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। প্রশিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অনুশীলন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি হ্রাস পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। অনেকের মতে, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও এখানে সংস্কৃতি চর্চার প্রসার ঘটছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৮০-এর দশকে যশোরে শিল্পকলা একাডেমির যাত্রা শুরু। আর শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের নজর কাড়ে। পরে এটি আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে সদস্য নবায়নসহ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর থেকে শিল্পকলা একাডেমি নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। তবে ২০০৮ সালে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত বছর ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলেও এতদিন বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী রাফেজা পারভিন জানান, নতুন ভবনে একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম, ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ এবং পাঁচটি অফিস কক্ষ রয়েছে। এখানে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক, তবলা ও ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরমধ্যে গত ৪ বছর ধরে আবৃত্তি এবং নাটকের কোন প্রশিক্ষক না থাকায় এ দুটি বিভাগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সাতজন প্রশিক্ষক থাকলেও কারো কারো বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে প্রশিক্ষকদেরও অভিযোগের অন্তঃনেই। কারণ গত দেড় যুগেও তাদের সম্মানি কিংবা বিন্দুমাত্র সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। প্রশিক্ষকরা হলেন ওস্তাদ শাহ মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ, অর্ধে�দ্ধু প্রসাদ ব্যানার্জী, সঞ্জীব চক্রবর্তী, শিরিন সুলতানা, ফারুক হোসেন, বাসুদেব বিশ্বাস ও খন্দকার বদরুল ইসলাম। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এখানে কার্যকর কোন কমিটি নেই। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন নানা সমস্যায় নিমজ্জিত। এখানে ম্যাজিস্ট্রেট লিয়াকত আলী শেখ ভারপ্রাপ্ত কালচারার অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া একজন অফিস সহকারী এবং দুইজন পিয়ন রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষক অর্ধে�দ্ধু প্রসাদ ব্যানার্জী জানান, একটি কার্যকরী কমিটির অভাবে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত। নৃত্যের প্রশিক্ষক সঞ্জীব চক্রবর্তী জানান, ১৯৮০ সাল থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। ওই সময় মাসে ৬০০ টাকা সম্মানি ভাতা পেতাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত সম্মানির পরিমাণ বাড়েনি। প্রশিক্ষকের চেয়ে কর্মচারীর বেতন বেশি। একথা ভাবতেও লজ্জা লাগে। যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে এটি পরিচালিত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা : মোঃ হারুন অর রশিদ
তারিখঃ ১৫/১০/২০১২ ইং