
Home কৃষি ও শিল্প (Agriculture and Industry) > যশোর এড়োল বিলে সোনালী ধানের চমক
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86138 বার পড়া হয়েছে
যশোর এড়োল বিলে সোনালী ধানের চমক
একটিমাত্র খাল বদলে দিয়েছে যশোরের কৃষকের ভাগ্য
হেমন্তের সকালে সাড়ে ৮টা মানে বেশ খানিকটা বেলা। যশোরের চৌগাছা উপজেলার এড়োল বিলে আলো ছড়াচ্ছে সূর্য। সেই আলো সোনালি ধানের গায়ে পড়ে চিকচিক করছে। ধানের ক্ষেতজুড়ে মুক্তদানার মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে শিশিরকণা। শীর্ষে গোছা গোছা ধানের শীষ। আমন ধান ক্ষেতের এমন ছবি বিলটির চারপাশ জুড়ে। অথচ গতবছর পর্যন্তও এই বিলের শত শত একর জমি আমন মৌসুমে অনাবাদি ছিল। এ বছর একটি মাত্র খাল এসব জমিকে আবাদি করে সোনারঙা ধানে ভরিয়ে তুলেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিল সংলগ্ন এক হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ২শ ৫০ জন কৃষক এবার আমনের আবাদ করে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন। তাদের ঘরে উঠতে শুরু করেছে আমন ধান। সব ধান কাটা হলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৬ হাজার ১শ মেট্রিক টন—এমন দাবি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বিএডিসির। বাজারমূল্যে এর দাম প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
বিএডিসি সূত্র জানায়, এড়োল বিলের উত্তরে শলুয়া এবং দক্ষিণে ফুলসরা গ্রাম। আরো ৫-৬টি গ্রাম যুক্ত এ খালের সাথে। সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি আবার যুক্ত করেছে ৭টি বিলকে। বিলগুলো হলো:বারুইহাটি বিল, চান্দার বিল, সিংগার বিল, বালিদাপাড়ার বিল, শলুয়ার বিল, চোস বিল ও এড়োল বিল। পাইপ কালভার্টের মাধ্যমে এড়োল বিলের মাঠের সাথে শলুয়া খালের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে বিলে পানি না জমে খাল দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তবে বিএডিসির করা এই খালের পাইপ কালভার্ট পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেন সাধারণ কৃষকরা। সংস্থাটির সহকারী প্রকৌশলী মো. জামাল ফারুক কৃষকদের অভিযোগ স্বীকার করে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকার কথা জানালেন। তিনি জানান, সংস্কারের মাধ্যমে খালকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে এই খালই সোনার ধানে কৃষকের গোলা ভরিয়ে দেবে। তবে খাল কাটার বাজেট থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বাজেট প্রকল্পে রাখা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শলুয়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক সিরাজুল বলেন, ‘৫০ বছর আগে এখানে আমন ধান হতে দেখেছি। এরপর যতবারই ধান লাগানো হতো পানিতে তা বুড়ে (ডুবে) যেত।’ ফুলসরার আব্দুল হক বলেন, ‘এই বিলে এই সময়তো ঘাস ছাড়া কিছুই হতো না। ডোঙা নিয়ে আসতাম ঘাস কাটার জন্যি। এখন এখেনে ধান হোয়েছে।’ কালিয়াকুণ্ডি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এখেনে আগে মাথা সমান পানি হয়ে যেত। বুড়ে যাবার ভয়তি সেকেন্ড ব্লক (আমন ধান) করতি সাহস পাতাম না।’
খালের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষের জন্য পাটা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে সাধারণ মানুষের। নতুন করে খাল কাটার আগে প্রতিবছর এলাকার চেয়ারম্যানের লোকেরা পাটা দিয়ে মাছ চাষ করে বলে খালের সুফল যায় নষ্ট হয়ে। শলুয়া গ্রামের খালে এরকম পাটার দেখাও মিলল। খালের মধ্যে এমনকি পাইপ কালভার্টের মুখেও পাটা দিয়ে পানির অবাধ প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে এলাকারই প্রভাবশালী কৃষকরা।
ফুলসরা গ্রামের আব্দুল হক পাটা দেয়ার কথা স্বীকার করে প্রতিবেদকের সামনেই তা অপসারণ করেন। এ সময় বিলের একাংশে জমে থাকা পানি বিপুল গতিতে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এই এলাকায় মাঠ পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত কৃষক টিক্কা, নাজমুল, কবীর, ইয়াহহিয়া, মিলন জানালেন, তারা ছানছি ঘাস তুলে ফেলছেন শস্য বুনবেন বলে। খাল কেটে তাদের এতটা উপকার হয়েছে যে শুধু আমন ধানই না, দেড় মাসেই তারা শস্য পাবেন। শস্য ওঠার পর তারা যথারীতি বোরো ধানের চাষ করতে পারবেন।
শুধু শলুয়া খাল নয়, বিএডিসি বৃহত্তর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একশ কিলোমিটারব্যাপী ২০টি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ইত্তেফাককে জানান, গত অর্থ বছরে যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৭টি খাল কাটা হয়েছে। এ বছর ৫টি এবং আগামী অর্থ বছরে অবশিষ্ট খাল কাটা হবে।
হেমন্তের সকালে সাড়ে ৮টা মানে বেশ খানিকটা বেলা। যশোরের চৌগাছা উপজেলার এড়োল বিলে আলো ছড়াচ্ছে সূর্য। সেই আলো সোনালি ধানের গায়ে পড়ে চিকচিক করছে। ধানের ক্ষেতজুড়ে মুক্তদানার মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে শিশিরকণা। শীর্ষে গোছা গোছা ধানের শীষ। আমন ধান ক্ষেতের এমন ছবি বিলটির চারপাশ জুড়ে। অথচ গতবছর পর্যন্তও এই বিলের শত শত একর জমি আমন মৌসুমে অনাবাদি ছিল। এ বছর একটি মাত্র খাল এসব জমিকে আবাদি করে সোনারঙা ধানে ভরিয়ে তুলেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিল সংলগ্ন এক হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ২শ ৫০ জন কৃষক এবার আমনের আবাদ করে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন। তাদের ঘরে উঠতে শুরু করেছে আমন ধান। সব ধান কাটা হলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৬ হাজার ১শ মেট্রিক টন—এমন দাবি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বিএডিসির। বাজারমূল্যে এর দাম প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
বিএডিসি সূত্র জানায়, এড়োল বিলের উত্তরে শলুয়া এবং দক্ষিণে ফুলসরা গ্রাম। আরো ৫-৬টি গ্রাম যুক্ত এ খালের সাথে। সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি আবার যুক্ত করেছে ৭টি বিলকে। বিলগুলো হলো:বারুইহাটি বিল, চান্দার বিল, সিংগার বিল, বালিদাপাড়ার বিল, শলুয়ার বিল, চোস বিল ও এড়োল বিল। পাইপ কালভার্টের মাধ্যমে এড়োল বিলের মাঠের সাথে শলুয়া খালের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে বিলে পানি না জমে খাল দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তবে বিএডিসির করা এই খালের পাইপ কালভার্ট পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেন সাধারণ কৃষকরা। সংস্থাটির সহকারী প্রকৌশলী মো. জামাল ফারুক কৃষকদের অভিযোগ স্বীকার করে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকার কথা জানালেন। তিনি জানান, সংস্কারের মাধ্যমে খালকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে এই খালই সোনার ধানে কৃষকের গোলা ভরিয়ে দেবে। তবে খাল কাটার বাজেট থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বাজেট প্রকল্পে রাখা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শলুয়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক সিরাজুল বলেন, ‘৫০ বছর আগে এখানে আমন ধান হতে দেখেছি। এরপর যতবারই ধান লাগানো হতো পানিতে তা বুড়ে (ডুবে) যেত।’ ফুলসরার আব্দুল হক বলেন, ‘এই বিলে এই সময়তো ঘাস ছাড়া কিছুই হতো না। ডোঙা নিয়ে আসতাম ঘাস কাটার জন্যি। এখন এখেনে ধান হোয়েছে।’ কালিয়াকুণ্ডি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এখেনে আগে মাথা সমান পানি হয়ে যেত। বুড়ে যাবার ভয়তি সেকেন্ড ব্লক (আমন ধান) করতি সাহস পাতাম না।’
খালের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষের জন্য পাটা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে সাধারণ মানুষের। নতুন করে খাল কাটার আগে প্রতিবছর এলাকার চেয়ারম্যানের লোকেরা পাটা দিয়ে মাছ চাষ করে বলে খালের সুফল যায় নষ্ট হয়ে। শলুয়া গ্রামের খালে এরকম পাটার দেখাও মিলল। খালের মধ্যে এমনকি পাইপ কালভার্টের মুখেও পাটা দিয়ে পানির অবাধ প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে এলাকারই প্রভাবশালী কৃষকরা।
ফুলসরা গ্রামের আব্দুল হক পাটা দেয়ার কথা স্বীকার করে প্রতিবেদকের সামনেই তা অপসারণ করেন। এ সময় বিলের একাংশে জমে থাকা পানি বিপুল গতিতে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এই এলাকায় মাঠ পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত কৃষক টিক্কা, নাজমুল, কবীর, ইয়াহহিয়া, মিলন জানালেন, তারা ছানছি ঘাস তুলে ফেলছেন শস্য বুনবেন বলে। খাল কেটে তাদের এতটা উপকার হয়েছে যে শুধু আমন ধানই না, দেড় মাসেই তারা শস্য পাবেন। শস্য ওঠার পর তারা যথারীতি বোরো ধানের চাষ করতে পারবেন।
শুধু শলুয়া খাল নয়, বিএডিসি বৃহত্তর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একশ কিলোমিটারব্যাপী ২০টি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ইত্তেফাককে জানান, গত অর্থ বছরে যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৭টি খাল কাটা হয়েছে। এ বছর ৫টি এবং আগামী অর্থ বছরে অবশিষ্ট খাল কাটা হবে।