
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > মাগুরার ঐতিহ্য খামার পাড়ার দই
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84625 বার পড়া হয়েছে
মাগুরার ঐতিহ্য খামার পাড়ার দই
ভোজন বিলাসী মানুষের কাছে মিষ্টি হিসেবে মাগুরায় সবচেয়ে বিখ্যাত খামারপাড়ার দই।
কেবল মাগুরা নয় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই এই দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিয়েসহ যে কোন অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে ঐতিহ্যবাহী খামারপাড়ার দই একটি অনন্য খাদ্য উপকরণ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে এই দইয়ের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে খাটি দুধ ও অন্যান্য উপকরণের যথাযথ সংমিশ্রন। খামারপাড়ার অশ্বিনী ঘোষ এর বাবা বীরনাথ ঘোষ গত শতকের প্রথমদিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ এলাকায় এই দই উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে অশ্বিনী ঘোষ ও তার ছেলে অসিত ঘোষ তিন পুরুষ ধরে তাদের পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছেন। তাদের পাশাপাশি আরো ৩টি পরিবার খামারপাড়ায় এ দই উৎপাদনের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
দই তৈরীর রেসিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে খামারপাড়ার শ্রীকৃষ্ণ দধি ভান্ডারের মালিক অশ্বিনী ঘোষের ছেলে অসিত ঘোষ যশোর ২৪ রেডিওকে বলেন, ‘যে কোন খাবারই সুস্বাদু করে তুলতে কিছু গোপন বিষয় থাকে। খামারপাড়ার দই তৈরিতেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের নির্দিষ্ট গোয়ালার বাইরে থেকে পারতপক্ষে দুধ সংগ্রহ করি না। সংগ্রহকৃত সে দুধ প্রথমে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বাল দিয়ে পরে তাতে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী বীজ দই মিশ্রন করা হয়। তবে দই কতটা জমাট বাধবে তা মূলত নির্ভর করে তাতে কত ভালভাবে জ্বাল দেয়া হয়েছে। এরপর চিনির সংমিশ্রন করে আবার জ্বাল দেয়া হয়। পরে বড় কড়াইয়ে দিয়ে ঠান্ডা করে মাটির হাড়িতে ঢেলে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে দুধ জমাট বেধে দইয়ে রূপান্তরিত হয়। জমাট হওয়া দই ফ্রিজিং ছাড়াই কমপক্ষে ৫দিন ভালো থাকে। দই তৈরীতে আমাদের খরচ যদিও একটু বেশী পড়ে। তবে বিক্রি বেশী হওয়ায় এবং আমরা নিজেরাই দই তৈরির বেশীর ভাগ কাজ করি বিধায় লাভ কম হলেও আমরা তা পুষিয়ে নিতে পারি। এ দই তৈরী, বাজারজাত, দুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন কাজে খামারপাড়াসহ এ এলাকার কমপক্ষে ১০০ টি পরিবার জড়িত। এছাড়া দই বিক্রির মাটির পাতিল তৈরী ও সরবরাহ করেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন।’
খামারপাড়া আদি দধি ভান্ডারের মালিক দুলাল ঘোষ (৭০) যশোর ২৪ রেডিওকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত এক হাড়ি দইও কোনদিন ঘরে পড়ে থাকে না। যা উৎপাদন করি তাই বিক্রি হয়ে যায়। এ এলাকার যে কোন পরিবারের লোকজন ঢাকা, খুলনা কিংবা বিদেশে থাকলেও যাবার সময় তাদের খামারপাড়ার দই নিয়ে যাওয়া চাইই। তাছাড়া বিয়ে বা যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা দই সরবরাহ করে থাকি। সেক্ষেত্রে আসপাশের প্রায় ৫/৬ টি জেলায় আমরা নিয়মিত দই সরবরাহ করে থাকি।
তিনি আরো জানান সাধারণত আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে ১মন দই তৈরি ও বিক্রি করি। তবে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের মৌসুমে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে আমি এ ব্যবসার সাথে জড়িত আছি।’
শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী নবাব আলী ফকির যশোর ২৪ রেডিওকে জানান ‘আমাদের এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই যে কোন সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণই থাকে খামারপাড়ার দই। এ দই না থাকলে কোন খাবার অনুষ্ঠানই পূর্ণতা পায়না।’
খামারপাড়া বাজারের প্রাক্তন কৃতি খেলোয়াড় অমল বিশ্বাস যশোর ২৪ রেডিওকে জানান ‘স্বাদ, গন্ধ ও স্থায়ীত্বে খামারপাড়ার দই অনন্য। যে কেউ এ দই নিয়ে দূর দুরান্তে তাদের আত্মিয় স্বজনের কাছে চলে যেতে পারেন। এ জন্য আমরা দেশের বাইরে বিশেষ করে ভারতে যেতে হলে এ দই নিয়ে যাই। তাছাড়া এ এলাকার অনেক পরিবারের লোকজনই ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তারা দেশে এসে বিদেশে ফেরত যাওয়ার সময় এ দই নিয়ে যান। এ দই এত সুন্দরভাবে জমাট বাধে যে দীর্ঘক্ষণ উপুড় করে রাখলেও তা ভেঙ্গে পড়ে না।’
দুলাল ঘোষের ছেলে দিনেশ ঘোষ যশোর ২৪ রেডিওকে জানান, ‘আমাদের এলাকার বিদেশে থাকনে এমন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আমার কথা হয়েছে। খামারপাড়ার বিখ্যাত এ দই তারা বিদেশের বিভিন্ন বাজারে বাজারজাত করার পরিকল্পনা আমাকে জানিয়েছেন। আগামী কোরবানীর ঈদের সময় দেশে এসে তারা আমাকে এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে জানাবেন। আশা করছি আমাদের এ দই বিদেশে রপ্তানী করতে পারলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।’
এ প্রসঙ্গে শ্রীপুরের শ্রীখোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি যশোর ২৪ রেডিওকে জানান, ‘আমার এলাকার খামারপাড়ার দই এ অঞ্চলে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এ দইয়ের বিস্তৃতি বাড়াতে পারলে এ অঞ্চলের পুষ্টি চাহিদা ও দারিদ্র বিমোচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’
খামারপাড়া দই ভোজন রসিকদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত হওয়ায় এটির চাহিদা ক্রমশঃ বাড়ছে। তবে দুধ ও অন্যান উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়েছেন উৎপাদনকারীরা। তারা জানান বর্তমানে প্রতিকেজি দইয়ের উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ১০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে পাইকারী ১২০ দরে। যার খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৩০ টাকা। হাতে কেটে বিক্রি করলে প্রতি ১০০ গ্রাম বিক্রি হয় ১৫টাকা দরে। তবে মূল্য যাই হোক অব্যহত চাহিদার কারণে এই শিল্পটি অত্যন্ত দাপটের সাথে ৯ দশকেরও বেশী সময় ধরে জেলায় টিকে আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যার বিস্তৃতি বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
কেবল মাগুরা নয় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই এই দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিয়েসহ যে কোন অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে ঐতিহ্যবাহী খামারপাড়ার দই একটি অনন্য খাদ্য উপকরণ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে এই দইয়ের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে খাটি দুধ ও অন্যান্য উপকরণের যথাযথ সংমিশ্রন। খামারপাড়ার অশ্বিনী ঘোষ এর বাবা বীরনাথ ঘোষ গত শতকের প্রথমদিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ এলাকায় এই দই উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে অশ্বিনী ঘোষ ও তার ছেলে অসিত ঘোষ তিন পুরুষ ধরে তাদের পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছেন। তাদের পাশাপাশি আরো ৩টি পরিবার খামারপাড়ায় এ দই উৎপাদনের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
দই তৈরীর রেসিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে খামারপাড়ার শ্রীকৃষ্ণ দধি ভান্ডারের মালিক অশ্বিনী ঘোষের ছেলে অসিত ঘোষ যশোর ২৪ রেডিওকে বলেন, ‘যে কোন খাবারই সুস্বাদু করে তুলতে কিছু গোপন বিষয় থাকে। খামারপাড়ার দই তৈরিতেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের নির্দিষ্ট গোয়ালার বাইরে থেকে পারতপক্ষে দুধ সংগ্রহ করি না। সংগ্রহকৃত সে দুধ প্রথমে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বাল দিয়ে পরে তাতে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী বীজ দই মিশ্রন করা হয়। তবে দই কতটা জমাট বাধবে তা মূলত নির্ভর করে তাতে কত ভালভাবে জ্বাল দেয়া হয়েছে। এরপর চিনির সংমিশ্রন করে আবার জ্বাল দেয়া হয়। পরে বড় কড়াইয়ে দিয়ে ঠান্ডা করে মাটির হাড়িতে ঢেলে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে দুধ জমাট বেধে দইয়ে রূপান্তরিত হয়। জমাট হওয়া দই ফ্রিজিং ছাড়াই কমপক্ষে ৫দিন ভালো থাকে। দই তৈরীতে আমাদের খরচ যদিও একটু বেশী পড়ে। তবে বিক্রি বেশী হওয়ায় এবং আমরা নিজেরাই দই তৈরির বেশীর ভাগ কাজ করি বিধায় লাভ কম হলেও আমরা তা পুষিয়ে নিতে পারি। এ দই তৈরী, বাজারজাত, দুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন কাজে খামারপাড়াসহ এ এলাকার কমপক্ষে ১০০ টি পরিবার জড়িত। এছাড়া দই বিক্রির মাটির পাতিল তৈরী ও সরবরাহ করেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন।’
খামারপাড়া আদি দধি ভান্ডারের মালিক দুলাল ঘোষ (৭০) যশোর ২৪ রেডিওকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত এক হাড়ি দইও কোনদিন ঘরে পড়ে থাকে না। যা উৎপাদন করি তাই বিক্রি হয়ে যায়। এ এলাকার যে কোন পরিবারের লোকজন ঢাকা, খুলনা কিংবা বিদেশে থাকলেও যাবার সময় তাদের খামারপাড়ার দই নিয়ে যাওয়া চাইই। তাছাড়া বিয়ে বা যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা দই সরবরাহ করে থাকি। সেক্ষেত্রে আসপাশের প্রায় ৫/৬ টি জেলায় আমরা নিয়মিত দই সরবরাহ করে থাকি।
তিনি আরো জানান সাধারণত আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে ১মন দই তৈরি ও বিক্রি করি। তবে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের মৌসুমে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে আমি এ ব্যবসার সাথে জড়িত আছি।’
শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী নবাব আলী ফকির যশোর ২৪ রেডিওকে জানান ‘আমাদের এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই যে কোন সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণই থাকে খামারপাড়ার দই। এ দই না থাকলে কোন খাবার অনুষ্ঠানই পূর্ণতা পায়না।’
খামারপাড়া বাজারের প্রাক্তন কৃতি খেলোয়াড় অমল বিশ্বাস যশোর ২৪ রেডিওকে জানান ‘স্বাদ, গন্ধ ও স্থায়ীত্বে খামারপাড়ার দই অনন্য। যে কেউ এ দই নিয়ে দূর দুরান্তে তাদের আত্মিয় স্বজনের কাছে চলে যেতে পারেন। এ জন্য আমরা দেশের বাইরে বিশেষ করে ভারতে যেতে হলে এ দই নিয়ে যাই। তাছাড়া এ এলাকার অনেক পরিবারের লোকজনই ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তারা দেশে এসে বিদেশে ফেরত যাওয়ার সময় এ দই নিয়ে যান। এ দই এত সুন্দরভাবে জমাট বাধে যে দীর্ঘক্ষণ উপুড় করে রাখলেও তা ভেঙ্গে পড়ে না।’
দুলাল ঘোষের ছেলে দিনেশ ঘোষ যশোর ২৪ রেডিওকে জানান, ‘আমাদের এলাকার বিদেশে থাকনে এমন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আমার কথা হয়েছে। খামারপাড়ার বিখ্যাত এ দই তারা বিদেশের বিভিন্ন বাজারে বাজারজাত করার পরিকল্পনা আমাকে জানিয়েছেন। আগামী কোরবানীর ঈদের সময় দেশে এসে তারা আমাকে এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে জানাবেন। আশা করছি আমাদের এ দই বিদেশে রপ্তানী করতে পারলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।’
এ প্রসঙ্গে শ্রীপুরের শ্রীখোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি যশোর ২৪ রেডিওকে জানান, ‘আমার এলাকার খামারপাড়ার দই এ অঞ্চলে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এ দইয়ের বিস্তৃতি বাড়াতে পারলে এ অঞ্চলের পুষ্টি চাহিদা ও দারিদ্র বিমোচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’
খামারপাড়া দই ভোজন রসিকদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত হওয়ায় এটির চাহিদা ক্রমশঃ বাড়ছে। তবে দুধ ও অন্যান উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়েছেন উৎপাদনকারীরা। তারা জানান বর্তমানে প্রতিকেজি দইয়ের উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ১০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে পাইকারী ১২০ দরে। যার খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৩০ টাকা। হাতে কেটে বিক্রি করলে প্রতি ১০০ গ্রাম বিক্রি হয় ১৫টাকা দরে। তবে মূল্য যাই হোক অব্যহত চাহিদার কারণে এই শিল্পটি অত্যন্ত দাপটের সাথে ৯ দশকেরও বেশী সময় ধরে জেলায় টিকে আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যার বিস্তৃতি বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।